ঠাম্মার গোপাল
ঠাকুমা ফুল বেলপাতা নিয়ে ঠাকুরঘরে যাচ্ছিলেন।আজ গোপালের ইস্কুল ছুটি। সে তাই ঠাকুমার সাথে গিয়ে তার কাজকর্ম দেখছিল।
ঠাকুমা ঠাকুরের সিংহাসনে ফুল বেল পাতা দিয়ে বলছিল, ঠাকুর! আমার গোপালসোনাকে ভালো রেখো। কাল ওর পরীক্ষা যেন ভালো হয় দেখো তুমি। আমি উপোষ দেবো। ও পরিক্ষা দিয়ে ফিরলে জল বাতাসা খাবো।
এই বলে ঠাকুরের সামনে জল বাতাসা দিয়ে প্রণাম করল। গোপালকে দেখতে একেবারে গোপালঠাকুরের মতো। তেরো চৌদ্দ বছরের ছেলে বেশ মেধাবী । পড়ার ফাঁকে বিজ্ঞান কোষ ও রামায়ণ মহাভারত নিয়ে নাড়াচাড়া করে। গোপাল পাশ থেকে হাত জোর করে বলল কি ঠাকুর বুঝলে কিছু? ঠাকুমাও বলল উঃ তোকে নিয়ে আর পারিনা বাপু। নাতি ঠাকুমাকে ডেকে বলল ঠাকুমা দেখ সিংহাসনটা দুলছে গো। এতো ফুল দিয়েছো তোমার ঠাকুর হামাগুড়ি দিয়ে এবার বার হয়ে আসার চেষ্টা করছে দেখ। আঁৎকে উঠল ঠাকুমা বললো কি রে গোপালসোনা কে ওখানে? কে আবার সিংহাসনে ফুলের মধ্যে তোমার গোপালঠাকুর গো ঠাম্মি। ঠাম্মার সঙ্গে ফাজলামি? এতো ফুল দিয়ে ঢেকেছো তোমার ঠাকুরের শ্বাস আটকে আসছে বোধ হয়। ও এই কথা। একটা দুটো ফুল দিতে কি হয় তোমার? কম ভক্তি হয় নাকি? ফুলের সাথে গাছ বাঁচে, পয়সাও কিছু বাঁচে।তাতে আমার দুটো লজেন্স হয়ে যায়। নাও, সরাও দিকিনি বেলপাতা গুলো, গোপালঠাকুর বেরবে আমার সাথে খেলবে।
কি খেলবে তোর সাথে? ফুল সরালেই তুমি দেখবে ও আমার সাথে মাঠে গিয়ে বল খেলবে। তোর সঙ্গে ঠাকুর খেলবে কেন? ও তোমার ঠাকুর নাকি? ওতো আমার বন্ধু।
দাঁড়াও ঠাম্মি বলেই গোপাল সব ফুল ফেলে ঠাকুরকে কোলে নিয়ে বলল আমার সাথে খেলবি চল।
ঠাকুমা আঁৎকে উঠে হা রে রে করে বললেন,
এ কী করছিস!
রমলা তাড়াতাড়ি প্রণাম ঠুকে বললো ঠাকুর ওর অপরাধ তুমি ক্ষমা কোরো।
গোপাল শুনে বলল,এ কী রে বাবা! আমি আবার কি অপরাধ করলাম।একটু বলবে খুলে?
ও এখন তুমি বুঝবে না বড় হলে বুঝবে। আমি বড় হয়েছি,অনেক কিছু বুঝি।ক্লাস সেভেনে পড়ি।
রোজ ওই এক খাবার ঠাকুরের পছন্দ হয়? একটু ভালো মন্দ খাবারও তো তাকে দিতে পারো। ভালো মন্দ মানে কি বিরিয়ানি ফ্রায়েড রাইস? তা না দিতে পারো অন্তত আমরা যা খাই তা তো দিতে পারো। কি দেব মাছ মাংস ডিম। কি সব্বনেশে কথা গো। ও বৌমা শুনে যাও।তোমার ছেলে কি বলে।রমলা গলা ছাড়লেন। বৌমা ছুটে এসে বলে কি বলে মা?
তোমার ছেলে বলে ঠাকুরকে আমিষেরছোঁয়া, পেঁয়াজ রসুন, মাছ মাংস দিতে।
ওসব বলতে নেই বাবা।
কেন বলতে নেই মা?তোমরা যে উপোষ করে নিজেদের কষ্ট দিয়ে ঠাকুরের সেবা কর তাতে কি সে খুশি হয় ভাবো? মোটেই না।
ঠাকুমা বলে শুনছো বৌমা গোপাল কি বলে?
গোপাল বলে ঠাকুর যদি জ্যান্ত হতো ঠকুমা তোমার এই জল বাতাস খেয়ে ওর সুগার হয়ে যেতো।সে তখন আমিষই খেতে চাই তো।
আর পারি না বাপু ছেলেকে নিয়ে। মা ঘর থেকে বেরবার আগে রমলাকে বলে এবার সামলান আপনার আদরের নাতিকে।
ঠাকুমা তখন ঠাকুরের কাছে গড় হয়ে ঠাকুরকে বলেন ঠাকুর ওকে মার্জনা কোরো,ওকে একটু বুদ্ধি-শুদ্ধি ও ভক্তি দিও।