Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ট্রেকার্স || Bani Basu » Page 16

ট্রেকার্স || Bani Basu

আরও দু’দিন পর টেলিফোনে একটা কর্কশ স্বর বলল, ‘পঁচিশ লক্ষ টাকা চাই। নইলে আপনাদের মেয়েকে পাবেন না।’

সারারাত দু’জনে নিঘুম বসে। সংযুক্তা বললেন, “কুড়িয়ে-বাড়িয়ে ওই পঁচিশ লাখ টাকাই আমাদের এফডি শেয়ার সব মিলিয়ে আছে। এই অঙ্কটা কার মাথা থেকে বেরোল?”

ধ্রুব বললেন, “ওর সামনে আমরা কি কখনও ফিনান্স আলোচনা করেছি?”

“মনে তো পড়ছে না, বলাও তো কিছু যায় না।”

“তা হলে আর কথা নয়, টাকাটা জোগাড় করি।”

“পুলিশে বলবে না?”

“না। যদি ওর কোনও ক্ষতি করে? সংযুক্তা, তুমিই তো বলেছিলে, ও তোমার কাছে কান্নাকাটি করেছিল ওকে যেন আমরা কখনও তাড়িয়ে না দিই?”

“কিন্তু পঁচিশ লাখ টাকা! আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়।”

“তোমার মাস মাইনে থাকবে, আমার পেনশন থাকবে।”

“শোনো, একটু ভাবো।”

সুতরাং তাঁরা ভাবতে লাগলেন। ইতিমধ্যে টাকা জমা দেবার তারিখ বলে দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে যে-কোনও দিন রাতে বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে যে ওভারহেড ব্রিজ রয়েছে, তার মাঝবরাবর রেখে চলে যেতে হবে।

পঞ্চম দিন মাঝরাতে দরজার বেল বাজল প্রাণপণ জোরে। স্বামী-স্ত্রী একজনের হাতে লাঠি, অন্যজনের হাতে ছুরি। সারা বাড়ির আলো জ্বেলে নীচে নেমে এলেন। ফুটোয় চোখ রেখে কিছুই দেখা গেল না।

“কে?” গম্ভীর গলায় ধ্রুবজ্যোতি বললেন।

“শিগগির খোলো, আমি মিলু।”

চট করে দরজা খুলেই স্তব্ধ দাঁড়িয়ে গেলেন দু’জনে। ছেঁড়া-খোঁড়া রক্তভেজা সাদা কমলাপাড় শাড়ি কোনও মতে জড়ানো, মিলু টলছে। ভেতরে ঢুকেই বসে পড়ল, তারপর ওখানেই শুয়ে পড়ল।

দু’জনে কোনও মতে ধরে-ধরে তাকে তার নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। সংযুক্তা কাপড় ছাড়িয়ে, সমস্ত শরীর মুছে বেশ করে জল দিলেন মাথায়। সামান্য একটু হাঁ করল সে। জল দিলেন এক গণ্ডুষ। ধ্রুব নিজেই বুদ্ধি করে ফ্রিজ থেকে দুধ বার করে এনেছেন। এখন গরম করলেন একটু, এক গ্লাসের মতো দুধ খেল মিলু, তারপর পাশ ফিরে চোখ বুজল।

শরীরময় আঁচড় কামড়ের দাগ। সংযুক্তার গলা কাঁপছে। তিনি কোনও মতে একটা শাড়ি দিয়ে শরীরটা ঢেকে রেখেছেন। ধ্রুব বললেন, “ডাক্তারকে কল দিই?”

সংযুক্তা বললেন, “ফার্স্ট এড বক্সটা আনো, আমরাই পারব।”

ঘন্টাখানেক পরে আবার একটু রাম মেশানো দুধ খাওয়ালেন সংযুক্তা। ধ্রুবকে বললেন, “তুমি পাশের ঘরে শুতে যাও, ডাকলেই যাতে আসতে পারো। আমি এখানেই শুচ্ছি।”

ধ্রুব সব ঘরের আলো নেভালেন একে-একে। টেলিফোন রিসিভারটা ক্রেড্ল থেকে নামিয়ে রাখলেন। তারপর কী ভেবে ভারী সদর দরজাটার কোল্যাপসিব্ল টেনে তালা দিয়ে দিলেন।

ধ্রুবর শেষরাতের দিকে ঘুম এসেছিল। যখন উঠলেন, তখন সকাল। রান্নাঘরে বাসন মাজার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি মিলুর ঘরে গিয়ে দেখলেন মিলুর নাকের তলায় হাত রেখে সংযুক্তা ঝুঁকে রয়েছেন। তাঁর পায়ের শব্দে তাড়াতাড়ি মুখ তুলে বললেন, “বেঁচে আছে তো?”

ধ্রুব এগিয়ে গিয়ে নাড়ি ধরলেন, “খুব ক্ষীণ”! বললেন, “ডাক্তার ডাকা উচিত। কিন্তু সে যদি রটন্তীকুমার হয়, মুশকিল। তার চাইতে ওকে আগে জাগতে দাও।”

শাড়িটা এক ধারে পাকিয়ে রয়েছে। রক্তাক্ত। তিনি বললেন, “এত রক্ত! তারপর শাড়িটা ভাল করে ছোট্ট একটা পুঁটলি করলেন, খাটের তলায় ঢুকিয়ে দিলেন।

বেলা বারোটার পর চোখ মেলল মিলু। সামনে ধ্রুবকে দেখে তাঁর একটা হাত ধরল। মুঠো করে ধরেই রইল। সংযুক্তা রান্না, চান এসব করতে গিয়েছেন।

“এখন একটু ভাল লাগছে?” ধ্রুব জিজ্ঞেস করলেন।

“কিছু খেতে দাও,” মিলু বলল।

সংযুক্তা দুধ-ভাত মেখে, মাছ-ভাজা আর আলুভাতে নিয়ে এলেন। বেশ জ্বর মিলুর। তা-ও সবই খেল ভাল করে। সংযুক্তাই খাইয়ে দিলেন। তারপর নির্জীবের মতো পড়ে রইল। প্যারাসিটামল দুটো দিলেন ধ্রুব।

বিকেলে দু’জনে চা নিয়ে নীচেরই বসার ঘরে বসেছেন, মিলু টলতে টলতে এল। বোঝাই যাচ্ছে খুব দুর্বল, মাথা টলছে। ফিসফিস করে বলল, “বাবা, আমি দুটো লাশ ফেলেছি।”

“সে কী রে? কী বলছিস?”

“ওরা আমার গলায় ছুরি ধরে অত্যাচার করতে পারে, আমি খুন করতে পারি না? পাছে ওষুধ দেয়, মদ দেয়, তাই এই ক’দিন কিচ্ছু খাইনি মা। জলটা শুধু শুঁকে নিয়ে খেতুম।”

“কী করে খুন করলি?”

“বিবেকানন্দ পার্কের মোড় থেকে মুখে চাপা দিয়ে একটা সাদা মারুতিতে করে নিয়ে গেল। ক্লোরোফর্ম দিচ্ছিল, আমি ঝটকা দিয়ে তোয়ালেটা ফেলে দিয়েছি। তখন আমারই শাড়ির আঁচল আমার মুখে গুঁজে দিল। হাত দুটো পিছন দিকে ক্রস করে ধরে বসে রইল। কালীঘাটের গলিতে নিয়ে গেল। গলায় ছুরি ধরে দু’জন পর-পর অত্যাচার করল। কী গালাগাল দিচ্ছিল।”

“তুই চিনিস না?”

“একটাকে চিনি পটকা। ইস্কুলের সামনে ঘোরাফেরা করত। পিছন-পিছন আসত। অন্যটাকে চিনি না।”

“বোস,” ধ্রুব উঠে ওকে বসিয়ে দিলেন। সংযুক্তা চা আনলেন, “খা।” ওর হাত ঠকঠক করে কাঁপছে।

“রোজ মদ খেত, কাল খুব খেয়েছিল। আমার হাত বাঁধা, পা-দুটো খোলা ছিল। পিছলে-পিছলে এগিয়ে গিয়ে ছুরিদুটো জড়ো করে নিলুম। হাতের বাঁধন ছিঁড়তে প্রাণ বেরিয়ে গিয়েছে। তারপর একটু সাড় আসতে দুটো ছুরি দু’জনের ঠিক গলায় বসিয়ে দিয়েছি। উঃ কী রক্ত, মা গো! আমি দোর খুলে ছুটতে ছুটতে…”

তার হাত থেকে কাপটা পড়ে চুরমার হয়ে গেল। চা ছিটকে গেল চারদিকে। বসে বসে কাঁপছে মিলু। “আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিও না বাবা।”

ধ্রুবজ্যোতি ঠোঁটে আঙুল রেখে বললেন, “চুপ, ঘরে চল।” আবার প্যারাসিটামল দিলেন। পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন সংযুক্তা। ট্রাংকুইলাইজার দিয়েছিলেন।আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল মিলু।

“ও কি সত্যি ওটা করতে পেরেছে?” সংযুক্তা ফিসফিস করে বললেন।

“বুঝতে পারছি না। যদি সত্যি ছুরি গলার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে থাকে, আমি জানি না। বেঁচে থাকলে কেলেঙ্কারি হবে।”

“অন্য কেউ যদি জেনে থাকে…পুলিশে যাবে না, রিভেঞ্জ নেবার চেষ্টা করবে। তুমি আমিও বাদ যাবো না। ধরা পড়লে ম্যান স্লটার, সেলফ ডিফেন্সের কেস। অল্প সময়ের জেল, তবু সে জেলই। আর যদি একটাও মরে না থাকে, কি তৃতীয় কেউ জানে, তো জীবনভর রিভেঞ্জের ভয়। এখন ডাক্তার ডাকাও যাবে না। ও ক্রমাগত এই সব বলে যেতে থাকবে।”

কাজের লোকটি আসে যায়। শোনে মিলুদিদির অসুখ করেছে, তাই শয্যাশায়ী। রক্তমাখা কাপড়টা ছাদে নিয়ে গিয়ে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেন ধ্রুব। বলতে লাগলেন, “প্রমাণ লোপ করছি, প্রমাণ লোপ করছি।”

প্রতিদিন খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে খবরের কাগজ দেখেন। তৃতীয় দিন খবরটা বেরোল তৃতীয় পাতার কোণের দিকে। কালীঘাট সেকেন্ড বাইলেনের একটি বাড়ির একতলার ঘরে কটাগোবিন্দ নামে একটি মস্তান থাকত, সে খুন হয়েছে। তার সঙ্গে আরও একটি মৃতদেহ, অল্পবয়সি একটি ছেলের। তার পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে। ঘরে মদের বোতল, দুটি ছোরা পাওয়া গিয়েছে। ছোরা দুটি রক্তে ভিজে গিয়েছে একেবারে। এবং লোক দুটি বদ্ধ মাতাল ছিল।

ধ্রুব বললেন, “ছোরায় আঙুলের ছাপ পাওয়া গিয়েছে কি না বলছে না দেখেছ?”

সংযুক্তার গলা দিয়ে স্বর ফুটল না।

“ভাবো, একটা মেয়ে তার ষোলো-সতেরো বছরের জীবনে কতবার ধর্ষিত হল? সে প্রাণপণে চেষ্টা করছে এর থেকে বেরোতে। আমরা চেষ্টা করছি বার করে আনতে। কিছুতেই পারছে না, পারছি না। এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু আছে?”

সংযুক্তা অবশেষে বললেন, “আমি হলেও লোক দুটোকে খুনই করতাম। আমি ওর কোনও দোষ দেখছি না। এইসব মস্তান-গুন্ডাদের পুলিশ প্রোটেকশান দেয়। আমার ধারণা, ও যদি থানায় যেত ওর আরও বিপদ হত। আসলে সেই দারোগাবাড়ির অভিজ্ঞতা ওর মনে আছে। তাই ও থানায় যায়নি ভাগ্যিস!”

“কিন্তু কী কী পাওয়া যেতে পারে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে সেটাই আমাকে ভাবাচ্ছে,” ধ্রুব বললেন। তিনি অনবরত পায়চারি করে যাচ্ছেন।

সংযুক্তা বিড়বিড় করে বললেন, “এই সমস্ত নিষ্ঠুর বাস্তবের সামনে এলে তোমাদের সব সাহিত্য-শিল্প কেমন যেন অর্থহীন মনে হয়।”

হঠাৎ ধ্রুবর মনে পড়ে গেল দিয়া আর বাবাইও ধর্ষিত হয়েছিল। ওদের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। হাই-ক্লাস, ডিসকো থেক, স্মার্ট, বুদ্ধিমতী টাকা-পয়সাওয়ালা মেয়ে সব। আর এ? লো-ক্লাস। বিজয় সুরের ভাষায় ‘ঝিয়ের মেয়ে’। তাঁদের প্রযত্নে আছে, প্রাণপণে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। গ্রাহাম্স প্লেসের হাই-ফাই ক্লাব আর কালীঘাট বাই-লেনের ঘুপচি ঘর, আকাশ-পাতাল তফাতের হলেও ঘটনাটা এক—ধর্ষণ। অত্যাচার একই, অপমান একই। মেয়েদের সব বয়সের পুরুষই যৌনসামগ্রী বলে দেখছে। ঈশ্বরগুপ্ত-টুপ্তর সময়ে মেয়েরা যখন প্রথম পড়তে বেরোল, তখন ধর্ষণ ছিল না। কিন্তু এই দৃষ্টিই ছিল। তবে তখন যে-বয়সে বিয়ে দেওয়া হত, বিবাহের মধ্যেও ধর্ষণ হত। এবং অনেক মেয়ে মারা যেত। তারপর সহবাসে সম্মতি অ্যাক্ট হল, বিয়ের বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হল, বাবুদের গণিকা-পল্লিতে যাওয়ার ফ্যাশন উঠে গেল। এখন গণিকাবৃত্তি, লালবাতি এলাকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যৌন আহ্লাদের জন্য বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও রয়েছে, লালবাতি সহাবস্থান করছে শিষ্ট সমাজের সঙ্গে। চতুর্দিকে বিরাট-বিরাট হোর্ডিং সুন্দরী মেয়েদের, স্বল্প পোশাক-বক্ষবিভাজিকা দৃশ্যমান। এইসব মডেল যে-পোশাক পরে, যে-পোজ দেয়, মুখচোখের ভাষা যা হয়, তাতে করে তো তার সোনাগাছি, হাড়কাটা গলির সন্ধ্যায় পণ্যস্ত্রীদের হাবভাবই মনে পড়ে যায়। সব সময়ে এই সব ছবি ওসকাচ্ছে ছেলে-বুড়ো সবাইকে। গুন্ডা-মস্তানের কথা তবু বোঝা যায়, কিন্তু ভদ্রঘরের ছেলেপুলেদের সাহস হয় তো? প্রবৃত্তিকে সংযত করার সামান্য ক্ষমতাও কি এরা চর্চা করতে উৎসাহ পায় না?

তাঁর ভিতরে হঠাৎ একটা সংকল্পের প্রচন্ড জোর এল। এতদিন প্রজেক্ট হিসেবে নিয়েছিলেন, এখন তিনি মিলুকে একটা পবিত্র দায় বলে নিলেন। নিজের সমস্ত হিতকারী ক্ষমতার শেষ প্রমাণ হিসেবে, কন্যা হিসেবে নিলেন। ভিতর থেকে জোয়ারের স্রোতের মতো স্নেহ এল। কী রকম একটা সেন্টিমেন্টাল বোধ করলেন। জোর কদমে গেলেন মিলুর ঘরে। সে এখনও শুয়ে, পাশে সংযুক্তা বসে একটা বই পড়ছেন। ঘরে মৃদু স্বরে মিউজিক বাজছে, সেতার।

তিনি খাটের প্রান্তে সন্তর্পণে বসলেন। সংযুক্তা একটু অবাক হয়ে চাইলেন। তিনি মিলুর মাথায় আস্তে হাত রাখলেন। জ্বর নেই, কিন্তু কেমন নেতিয়ে আছে। ওকে একটু ট্রাঙ্কুইলাইজার রোজ দেওয়া হচ্ছে তো! সে কারণেও থাকতে পারে। মাথায় হাত অনুভব করে মিলু একটু নড়ে উঠল। অস্ফুটে বলল, “বাবা!”

“হ্যাঁ রে, ঘুম আসছে?”

“আসছে, কিন্তু হচ্ছে না।”

“কেন? এখনও কি ভয় করছে?”

ওদিক থেকে সংযুক্তা ভুরু কুঁচকে চোখের ইশারা করলেন।

“কষ্ট হচ্ছে, ভয় হচ্ছে,” মিলু বলল।

“কীসের কষ্ট বুঝতে পারছি, কিন্তু ভয় কীসের?”

“বাবা, খুনি বলে পুলিশ আমায় ধরবে?”

“ধরবে না, নিশ্চিন্ত থাক। আমি আছি, ওটাকে খুন বলে না। সেলফ-ডিফেন্স বলে। দিজ পিপ্‌ল শুড বি টার্মিনেটেড। দে আর মনস্টার্স অ্যান্ড ভার্মিনস অ্যাট দ্য সেম টাইম। কিন্তু মিলু, তোকে উঠে দাঁড়াতে হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। সব সময়ে জানবি, বাবা মা পাশে আছে। সব ভুলে যা।”

“কতবার ভুলতে হবে বাবা? আর তোমরা আছ কিন্তু ভগবান নেই।”

“অ্যাকসিডেন্ট যদি একটা মানুষের জীবনে একাধিকবার ঘটে, কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা তো প্রত্যেকবারই করবে সে। ট্রমা-ফমা বাজে জিনিস, আমল দিস না। আর ভগবান? তুই-ই ভগবান, আমরাই ভগবান, এখনও বুঝিসনি?”

মিলু আস্তে আস্তে ফিরে শুল। তারপর দুটো হাতে ভর দিয়ে উঠে বসল।

“বাবা! কী বললে আবার বলো।”

“তুই-ই ভগবান। আমরা, এই সংযুক্তা আর আমি তোর মা-বাবা, আমরাই ভগবান।”

“সত্যি বলছ?”

“একদম সত্যি। আমাদের চারদিকে শয়তানের অত্যাচার তাই আরও বেশি।”

“তা হলে তো ভগবান না হওয়াই ভাল বাবা, এত শয়তান! এত শয়তান! কী করে যুদ্ধ করব?”

“প্রাথমিক লড়াইগুলো খুব শক্ত ছিল, সেগুলোতে জিতে এসেছিস। আর এরকম লড়তে হবে না। এবার অন্য রকম লড়াই, আনন্দের লড়াই।”

“কীরকম?”

“তোকে কবিতা পড়তে হবে, গান শিখতে হবে, যা-যা ভালবাসিস তা করতে হবে।”

“বাবা, আমাকে গান শেখাবে সত্যি?”

“আমার মনে হয় তোর শেখা উচিত।”

“আমার ভীষণ ইচ্ছে বাবা।”

“শিখবি, কী শিখবি ভাব। গানের কথা ভাব। তাড়াতাড়ি, খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠ।”

তিনজনে চুপচাপ বসে রইলেন অনেকক্ষণ। তারপরে খাবারগুলো গরম করে একটা ট্রলি ঠেলে সংযুক্তা মিলুর ঘরে নিয়ে এলেন। তিনজনেই ওখানে বসে বসে খেয়ে নিলেন। লুচি, আলু-ছেঁচকি, মাংস আর ছানার লেবু সন্দেশ।

“তোর কী মনে হচ্ছে সায়েন্স নিবি না হিউম্যানিটিজ?”

“হিউম্যানিটিজ, সায়েন্স পাব না।”

“সায়েন্স পাবি না বলেই কি হিউম্যানিটিজ নিতে চাইছিস?”

“না, সায়েন্সও ভাল লাগে, কিন্তু আর্টস আরও ভাল লাগে।”

“মিশিয়ে নেওয়া গেলে নিস। গানটাও এখুনি শুরু করে দে। কার কাছে শিখতে পারিস, কোনও আইডিয়া আছে?”

“ভারতীদি শেখান এখানে। গীতবিতান আছে, দক্ষিণী আছে।”

“না, আগে বাড়িতে একটু বেস তৈরি কর। ক্ল্যাসিক্যাল শেখা দরকার। আমি দেখছি।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress