Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » টেড হিউজ || Sankar Brahma

টেড হিউজ || Sankar Brahma

ওয়েস্ট রাইডিং অব ইয়র্কশায়ারের মিথোলম্রোড এলাকার ১নং অ্যাস্পিনল স্ট্রিটে, ১৭ই আগস্ট, ১৯৩০ সালে হিউজের জন্ম হয়।
হিউজের বাবা ছিলেন উইলিয়াম হেনরি এবং মা এডিথ হিউজ। বাবা হেনরি ছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত একজন কাঠমিস্ত্রি এবং মা এডিথ ছিলেন উইলিয়াম ডি ফেরিয়ার্সের উত্তরসূরি।
উইলিয়াম হেনরি ও এডিথ (বিবাহ-পূর্ব ফারার) হিউজ দম্পতির সন্তান তিনি। টেড হিউজের শৈশব কাটে কেলভার নদীর তীরে, কন্ডরভ্যালি ও পেনিন মুরল্যান্ডের দারুণ শান্ত এক গ্রামীণ পরিবেশে।। হিউজের বোন অলউইন তার তুলনায় দুই বছরের বড় ও ভাই জেরাল্ড দশ বছরের বড় ছিলেন। তাঁর মায়ের দিক থেকে তাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন উইলিয়াম ডি ফেরিয়ার্স। ফেরিয়ার্স উইলিয়াম দ্য কনকুয়েরারের সাথে একাদশ শতকে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। ক্যামব্রিজশায়ারের লিটল গিডিংয়ে ধর্মীয় সম্প্রদায়ে এডিথের পূর্ব-পুরুষের সন্ধান মেলে। সাম্প্রতিক প্রজন্মের
তার পরিবারের সাম্প্রতিক প্রজন্মের অধিকাংশ সদস্যই বেশিরভাগই এই এলাকার পোশাক এবং মিলিং শিল্পে কাজ করেছিলেন। হিউজের বাবা উইলিয়াম আইরিশ বংশোদ্ভূত কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। তিনি ল্যাঙ্কাশায়ার ফাসিলিয়ার্সে তালিকাভূক্ত ছিলেন ও ওয়াইপ্রেসে যুদ্ধ করেছেন। সৌভাগ্যক্রমে বুকপকেটে থাকা বেতন-বহির কারণে বুলেটবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে বেঁচে যান উইলিয়াম। ১৯১৫-১৬ সময়কালে ডার্ডানেলেস অভিযানে মাত্র ১৭জনকে নিয়ে ফিরে আসা রেজিমেন্টের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। হিউজের শৈশবের কল্পনায় স্থির হয়ে আসা ফ্লন্ডার্স ফিল্ডসের গল্পকথা পরবর্তীতে আউট শিরোনামীয় কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। হিউজ উল্লেখ করেন যে, আমার প্রথম ছয় বছরের সবটুকুই আকৃতিযুক্ত ছিল।

শৈশবে শিকার করা, মাছ ধরা, সাঁতার কাটা ও নিজ পরিবারের সাথে বনভোজন করতে ভালোবাসতেন টেড হিউজ। সাত বছর বয়স পর্যন্ত বার্নলি রোড স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর তার পরিবার মেক্সবোরায় স্থানান্তরিত হলে শোফিল্ড স্ট্রিট জুনিয়র স্কুলে ভর্তি হন তিনি। তার পিতামাতা সংবাদপত্র বিক্রয় ও তামাকজাতপণ্য বিক্রয়ের দোকান পরিচালনা করতো।
ম্যাক্সবোরা স্কুলে পড়ার সময়ই হিউজের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সেখানকার বেশ কজন শিক্ষক হিউজকে লেখায় উদ্বুদ্ধ করেন। ফলে শৈশবেই কবিতার প্রতি আগ্রহ জন্মায় হিউজের। মিস ম্যাকলিওড ও পলিন মেইন হপকিন্স ও এলিয়টের কবিতাগুলো তার সামনে তুলে ধরেন। বড়বোন অলউইনও কবিতার সমঝদার ছিলেন এবং হিউজের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়েছিলেন তখন।
এছাড়াও, জন ফিশার নামীয় শিক্ষকও তাকে সহায়তা করতেন।
বিখ্যাত কবি হ্যারল্ড ম্যাসিংহামও এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতেন ও ফিশারের কাছ থেকে দীক্ষা নিতেন।
১৯৪৬ সালে হিউজের শুরুর দিকের কবিতাগুলোর মধ্যে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট ও একটি ছোটোগল্প গ্রামার স্কুলের সাময়িকী দ্য ডন ও ডিয়ার্নে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে আরও কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৬ বছর বয়সকালে অন্য কেউই ভাবতে পারেননি যে তিনি কবি হবেন।
সেই বছরেই ক্যামব্রিজের পেমব্রোক কলেজে ইংরেজিতে উন্মুক্ত প্রদর্শনীর সুযোগ লাভ করেন। তবে, জাতীয় সেবাকার্যকেই প্রাধান্য দেন তিনি। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সময়কালে দুই বছরের জন্য জাতীয় সেবাকার্যে তুলনামূলকভাবে খুব সহজেই উতরিয়ে যান। পূর্ব ইয়র্কশায়ারের তিনজন ব্যক্তির নির্জন অবস্থানে আরএএফের গ্রাউন্ড ওয়ারলেস মেকানিক হিসেবে নিয়োগ পান। এ সময়ে তার কোন কিছুই করার ছিল না। তিনি শুধু শেকসপিয়রের লেখাগুলো পড়তেন ও পুণঃপুণঃ পড়তেন এবং ঘাসের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতেন। মনেপ্রাণে অনেক নাটক শিখতেন ও ডব্লিউ. বি. ইয়েটসের অনেক কবিতা মুখস্থ করতেন।
এলিয়টের কবিতার সঙ্গে এভাবেই ছোট্ট হিউজের পরিচয় ঘটে যায়, যা পরবর্তী সময়ে তার ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
আধুনিক কবিদের মধ্যে হিউজ ইতিপূর্বে এলিয়ট, ডিলান টমাস, লরেন্স এবং অডেন পড়েছিলেন। তিনি ডিলান থমাসের ডেথস অ্যান্ড এন্ড এন্ট্রান্স (১৯৪৬ সাল) কে একটি পবিত্র বই হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন যখন এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। তবে কাব্যিক প্রভাবগুলি তার প্রথম দিকের রচনাগুলিতে সবচেয়ে স্পষ্ট ছিল ইয়েটস, হপকিন্স এবং থমাস, র্যানসম এবং অন্যান্য আমেরিকানরা – শ্যাপিন, লোয়েল, মেরউইন, উইলবার – তার কাব্যিক সৃষ্টি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব করেছিলেন। হিউজও উইলিয়াম ব্লেক এবং রবার্ট দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। কবরের সাদা দেবী । ১৯৫৬ সালে, হিউজ একটি প্রাণবন্ত উদ্দেশ্যের সাথে কবিতা রচনা করছিলেন এবং প্লাথ একটি প্রতিযোগিতায় তার গানের একটি সংগ্রহে প্রবেশ করেন, যার পুরস্কার ছিল হার্পার প্রকাশনা। বিচারক অডেন, স্পেন্ডার এবং মারিয়ান মুর হিউজের পাণ্ডুলিপি নির্বাচন করেন। দ্য হক ইন দ্য রেইন এইভাবে ১৯৫৭ সালে লন্ডন এবং নিউইয়র্কে প্রকাশিত হয়েছিল এবং প্রচুর সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল।
স্কুলে পড়ার সময়, ১৯৪৬ সালে স্কুলের সাময়িকী ‘দ্য ডন’ ও ‘ডিয়ার্ন’-এ হিউজের কবিতা ‘ওয়াইল্ড ওয়েজ’ ও একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৪৮ সালে এখানে আরও কিছু কবিতা প্রকাশিত হলে হিউজের কাব্য প্রতিভা সকলকে চমকিত করে। সেই বছরে ক্যামব্রিজের পেমব্রোক কলেজে তিনি উন্মুক্ত প্রদর্শনীর সুযোগ পান। উচ্চ বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি পূর্ব ইয়র্কশায়ারে আরএএফের গ্রাউন্ড ওয়ারলেস মেকানিক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু মাত্র দুই বছর পরেই তিনি এই কাজে ইস্তফা দিয়ে প্রায় অলস সময় কাটাতে থাকেন এবং পুরোপুরি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। শেক্সপিয়ার, ইয়েটসসহ অনেকের লেখা তিনি তখন বারবার পড়তে থাকেন এবং অনেক কবিতা মুখস্থ করতে থাকেন।
১৯৫১ সালে এম.জে.সি হগার্টের তত্ত্বাবধানে পেমব্রোক কলেজে হিউজ ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং হগার্ট তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেন। হিউজ সেই সময়ে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেননি কিংবা কবিতা লেখেননি। তৃতীয় বর্ষে পা দিয়ে বিষয় পরিবর্তন করে হিউজ নৃতত্ত্ব ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে আসেন এবং তখন তিনি কবিতা লেখায় মনোযোগী হন।
একই সময়ে হিউজ কল্পপুরাণের দিকেও প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়েন। এ সময়ে তিনি ‘ড্যানিয়েল হিয়ারিং’ ছদ্মনামে গ্রান্টায় ‘দ্য লিটল বয়েজ এন্ড দ্য সিজন্স’ শিরোনামে কবিতা লেখেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে লন্ডন ও ক্যামব্রিজে বসবাস করেন টেড হিউজ। এ সময়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ-কর্মে যোগ দেন। গোলাপ বাগানমালী, নৈশপ্রহরী ও জে. আর্থার র‌্যাঙ্ক নামীয় ব্রিটিশ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের পাঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। লন্ডন চিড়িয়াখানা পরিষ্কারের কাজেও তিনি অংশ নেন। এর ফলে খুব কাছে থেকে প্রাণীজগৎকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয় তার।

হিউজের সমসাময়িকদের মধ্যে ছিলেন:

বিটলস (১৯৬০-১৯৭০ সাল): জন লেনন, পল ম্যাককার্টনি, জর্জ হ্যারিসন, এবং রিঙ্গো স্টার তাদের সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রগতিশীল রক ব্যান্ড হয়ে ওঠেন, যা ১৯৬০-য়ের দশকে ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে শৈল্পিক সৃজনশীলতা এবং আত্মবিশ্বাসের বিস্ফোরণকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

স্যামুয়েল বেকেট (১৯০৬-১৯৮৯ সাল): আইরিশ নাট্যকার এবং কবি যিনি একটি অযৌক্তিক মহাবিশ্বে অর্থ এবং স্থায়ী সুখ খোঁজার জন্য মানুষের প্রচেষ্টার মধ্যে একটি অন্ধকার হাস্যরস এবং নিরর্থকতার অনুভূতি খুঁজে পেয়েছেন।

কার্ল জং (১৮৭৫-১৯৬১ সাল): সুইস বিশ্লেষণাত্মক মনোবিজ্ঞানী যিনি তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে “আর্কিটাইপ” – পরিচিত মিথ, প্রতীক এবং চিত্রগুলি – মানবজাতির “সম্মিলিত অচেতন” এর অংশ।

ফিলিপ লারকিন (১৯২২-১৯৮৫ সাল): একজন বিদগ্ধ, ব্যঙ্গাত্মক এবং নস্টালজিক কবি যিনি ১৯৮৪ সালে হিউজের পদে নিযুক্ত হওয়ার পরে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে তিনি ইংরেজ কবি বিজয়ী হয়ে উঠবেন।

রবার্ট লোয়েল (১৯১৭-১৯৭৭ সাল), আমেরিকান কবি যিনি হিউজের মতো, প্রযুক্তিগতভাবে পরিশীলিত এবং ভারী প্রতীকী শ্লোক লিখেছেন।

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের একটি কবিতা “লাইনস রাইটেন আ ফিউ মাইলস অ্যাবোভ টিনটার্ন অ্যাবে” (১৯৭৮ সাল)। রোমান্টিক সময়ের এই ক্লাসিক কবিতাটি প্রকৃতির শক্তির উপর ওয়ার্ডসওয়ার্থের দর্শনকে ধারণ করে।

ওয়াল্ডেন (১৮৫৪ সাল), হেনরি ডেভিড থোরোর প্রবন্ধ এবং স্মৃতির সংগ্রহ। থোরো বিখ্যাতভাবে দুই বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন, বেশিরভাগই নির্জনে, ম্যাসাচুসেটসের ওয়াল্ডেন পুকুরের কাছে একটি কেবিনে। তার বইটিতে ওয়ালডেনের প্রাণী এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অনেক ঘনিষ্ঠ বর্ণনা রয়েছে।

Birds, Beasts, and Flowers (১৯২৩ সাল), ডি.এইচ. লরেন্সের কবিতার সংকলন। এই কবিতাগুলি প্রাণী এবং গাছপালাগুলির মাঝে মাঝে মর্মান্তিক এবং মজাদার প্রকৃতির বর্ণনা করে, দেখায় যে তারা জন্ম, জীবন এবং মৃত্যুর চক্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অচেতন উপায় থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

দ্য কল অফ দ্য ওয়াইল্ড (১৯০৩ সাল), জ্যাক লন্ডনের একটি উপন্যাস। এই সংক্ষিপ্ত উপন্যাসটি একটি গৃহপালিত পোষা কুকুর, বাকের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে, যে নেকড়েদের দলটির নেতা হওয়ার জন্য একটি আদিম পৃথিবীতে ফিরে আসে।
২৫শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ সালে হিউজ ও তার বন্ধুমহল সেন্ট বোটলফের পর্যালোচনার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মিলনমেলার আয়োজন করে। এতে হিউজের চারটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানেই ফুলব্রাইট বৃত্তিধারী ও ক্যামব্রিজে পড়াশোনার জন্য আসা মার্কিন কবি সিলভিয়া প্লাথের সাথে সাক্ষাৎ হয় তার। ইতোমধ্যেই সিলভিয়া প্লাথ ব্যাপকভাবে প্রকাশ করে ফেলেছেন, অগণিত পুরস্কার লাভ করেছেন। সিলভিয়া প্লাথ মূলতঃ সতীর্থ কবি লুকাস মেয়ার্সের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই এখানে আসেন। এখানে এসে হিউজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপরে হিউজের প্রতি তার গভীর অনুরাগ জন্মায়। আরও একমাস পর প্যারিসে যাবার পথে লন্ডনে আবারও সাক্ষাৎ ঘটে তাদের। তিন সপ্তাহ পর পুনরায় প্লাথ ফিরে এসে সাক্ষাৎ করেন হিউজের সঙ্গে।
হিউজ ও প্লাথের মধ্যকার প্রণয়লীলা চলতে থাকে। প্রথম সাক্ষাতের চার মাস পর ১৬ জুন, ১৯৫৬ তারিখে মারটিয়ার হলবর্নের সেন্ট জর্জে তাদের বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। জেমস জয়েসের সম্মানার্থে ব্লুমসডে তারিখকে বিয়ের জন্য বেছে নেন তারা। প্লাথের মা-ই কেবলমাত্র বিবাহের অতিথি ছিলেন ও তিনি তাদের সাথে মধুচন্দ্রিমা স্পেনীয় উপকূলবর্তী এলাকা বেনিডর্মে যান। হিউজের আত্মজীবনীকারকেরা মন্তব্য করেছেন যে, প্লাথের মানসিক অবসাদ ও আত্মহননের চেষ্টা আরও পরে হয়েছিল। বার্থডে লেটার্সে এর প্রতিফলন ঘটিয়ে হিউজ মন্তব্য করেন যে, প্লাথের সাথে তার কোন পার্থক্য দেখা যায়নি। প্রথমদিকের বছরগুলোয় তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বেশ মধুর ছিল।
ক্যামব্রিজে ফিরে আসার পর তারা ৫৫ নং এলটিসলি অ্যাভিনিউতে বসবাস করতে থাকেন। ঐ বছরে তাদের সৃষ্ট কবিতাগুলো দ্য নেশন, পয়েট্রি ও দি আটলান্টিকে প্রকাশিত হয়েছিল। প্লাথ হিউজের পাণ্ডুলিপি ‘হক ইন দ্য রেইন’ শিরোনামীয় কবিতাসমগ্রের জন্য টাইপ করেন। এ কবিতাসমগ্রটি ইয়ং মেন্স ও ইয়ং ওম্যান্স হিব্রু অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক কর্তৃক কবিতা কেন্দ্র থেকে পরিচালিত কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিল। প্রথম পুরস্কারটি হার্পার থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ সালে হিউজের বিশ্বব্যাপী সমালোচনাকে ঘিরে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এরফলে সমারসেট মম পুরস্কার জয় করেন তিনি।
এই দম্পতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। এরফলে প্লাথ তার প্রাক্তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্মিথ কলেজে শিক্ষকতা পেশায় মনোনিবেশ ঘটান। এ সময়ে হিউজ আমহার্স্টের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। ১৯৫৮ সালে লিওনার্ড বাস্কিনের সাথে তারা সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তীকালে বাস্কিন হিউজের অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদচিত্র এঁকে দিতেন। এরপর এ দম্পতি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন।
হেপ্টনস্টলে কিছুদিন অবস্থানের পর লন্ডনের প্রাইমরোজ হিলের একটি ছোট ফ্লাটে অবস্থান করেন। উভয়েই লেখার জগতে নিমগ্ন থাকতেন। বিবিসিতে অনুষ্ঠান পরিচালনার কাজ করাসহ হিউজ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সমালোচনা পর্যালোচনা ও মত বিনিময় কাজে সম্পৃক্ত হন।
১৯৬০-য়ের দশকের গোড়ার দিক থেকে, হিউজ প্রচুর গদ্য প্রকাশ করেছিলেন, যাতে তার পরবর্তী কবিতা বোঝার জন্য মূল্যবান ইঙ্গিত রয়েছে।
এই সময়ে তিনি কিছু কবিতা লিখেন যা হয়তো উডো (১৯৬৭) রেকলিংস (১৯৬৬) প্রকাশিত হয়ে থাকবে। মার্চ, ১৯৬০ সালে লাপারক্যাল প্রকাশিত হয় ও হথর্নডেন পুরস্কার জয় করে। একসময় তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তিনি কেবলমাত্র প্রাণীজগৎকে ঘিরেই লিখে চলেছেন যা তাকে প্রাণীদের কবি হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
হিউজ ও প্লাথ দম্পতির দুই সন্তান ছিল। ১৯৬০ সালে ফ্রেদা রেবেকা ও ১৯৬২ সালে নিকোলাস ফারার জন্মগ্রহণ করে। ১৯৬১ সালে ডেভনের নর্থ টটনের কোর্ট গ্রীন নিবাস ক্রয় করেন তারা।
১৯৬২-এর গ্রীষ্মকালে আসিয়া ওয়েভিল (জন্ম.১৯৬২ সাল– মৃত্যু ; ১৯৬৯ সাল) নাম্নী এক রমণীর সাথে মন দেয়া-নেয়ায় অগ্রসর হন টেড হিউজ। স্বামী নিয়ে প্রাইমরোজ হিলের ফ্লাটে অর্ধ-গৃহ ভাড়া নিয়ে থাকতেন ওয়েভিল। তাদের এক সন্তান হয়। নাম – আলেকজান্দ্রা উইভিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালের শরতে হিউজ ও প্লাথ পৃথকভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। প্লাথ সন্তানদেরকে নিয়ে নতুন ফ্লাটে চলে যান।
১৯৬১ সালে দ্বিতীয় সন্তান আগমনের পূর্বে হিউজ শারীরিকভাবে আঘাত করতেন বলে প্লাথ অভিযোগ করেন। এসব কারণে সৃষ্ট হওয়া মানসিক অবসাদ থেকে সিলভিয়া বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালান এবং এক সময় সে চেষ্টা সফল হয়। মৃত্যুর আগে সিলভিয়া হিউজকে একটি চিঠি লেখেন, যাতে লেখা ছিল, ‘আমি লন্ডন ছেড়ে যাচ্ছি। আর কোনোদিন তোমার মুখ দেখতে চাই না।’
আত্মহত্যার আগে চিঠিটি ডাকযোগে সিলভিয়া নিজেই হিউজকে পাঠিয়েছিলেন এবং একদিন পরই চিঠিটি হিউজের হাতে পৌঁছে যায়। পরদিনই হিউজ চিঠিটি নিয়ে সিলভিয়ার কাছে ছুটে আসেন। সিলভিয়া চিঠিটি হিউজের হাত থেকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ পুড়িয়ে ফেলেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে হিউজ তার ‘লাস্ট লেটার’ কবিতাটি রচনা করেন। সেখানে লেখা হয়,
‘Over everything, Late afternoon, Friday,
¸ last sight of you alive.
Burning your letter to me, in the ashtray,
With that strange smile.
Had I bungled your plan?’

যদিও হিউজ কবিতাটি লিখেছিলেন সিলভিয়ার মৃত্যুর পরপরই, ১৯৬৩ সালেই, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, হিউজ এটি তার জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। কবিতাটি প্রকাশিত হয় হিউজের মৃত্যুরও অনেক পরে, ২০১০ সালে।
২০১৭ সালে প্রকাশিত পূর্বেকার অপ্রকাশিত চিঠিপত্রগুলোয় দেখা যায় যে, ১৯৫৬ সালে বিয়ে করার পর মাত্র ৩০ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে প্লাথ আত্মহননের দিকে এগিয়ে যান। কিছু নারীবাদী ও কিছু মার্কিন শুভাকাঙ্খী প্লাথের মৃত্যুর জন্য হিউজকে দায়ী করে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ বার্থডে লেটার্সে তাদের মধ্যকার ভঙ্গুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়। সে সব কবিতায় প্লাথের আত্মহননের বিষয়ে তথ্যাদি তুলে ধরা হলেও কোনটিতেই সরাসরি তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি। ২০১০ সালের অক্টোবরে লেখা একটি কবিতা লাস্ট লেটারে দেখা যায় যে, প্লাথের মৃত্যুর তিনদিন পূর্বেকার ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
মানসিক অবসাদ ও আত্মহননের চেষ্টার অতীতকে পাশ কাটিয়ে অবশেষে ১১ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে প্লাথ সফলতার মুখ দেখেন। কিছু ব্যক্তির অভিমত, হিউজ প্লাথকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। অনেক নারীবাদী হিউজকে প্লাথের নাম উচ্চারণে হত্যার হুমকি দেয়।
বিপত্নীক হিউজ প্লাথের ব্যক্তিগত ও সাহিত্যিক কর্মকান্ডের মালিকানাস্বত্ত্ব লাভ করেন। অ্যারিয়েলসহ (১৯৬৬) তার পাণ্ডুলিপি প্রকাশনার দেখাশোনার অধিকারী তিনি। কিছু নারীবাদী অভিযোগ করেন যে, তাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়ার পর তার সাহিত্যকর্মের দায়িত্বভার গ্রহণের অধিকার নেই হিউজের। তিনি দাবী করেন যে, প্লাথের শেষ খণ্ডটিকে ধ্বংস করে ফেলেছেন যাতে তাদের মধ্যকার শেষদিকে কয়েকমাসের বিস্তারিত ঘটনার কথা উল্লেখ ছিল।
মৃত্যুর এক মাস আগে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বার্থডে লেটারস’ই এই কথাটির উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। এখানকার ৮৮টি কবিতাজুড়ে আছেন সিলভিয়া। এছাড়া ‘দ্য লাস্ট লেটার’ কবিতার শেষে হিউজ লেখেন,
‘Then the voice like a selected weapon
Or a measured injection,
Coolly delivered its four words
Deep into my ear: `Your wife is dead’.

অতিরিক্ত নারীসঙ্গই হিউজের ব্যক্তিজীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল এবং হিউজকে অনেকাংশে হিতাহিত বোধশূন্য করেছিল বলে মনে করা হয়।
প্লাথের আত্মহত্যার পর তিনি দ্য হাউলিং অব ওল্ভস এবং সং অব এ র‌্যাট শিরোনামীয় দুইটি কবিতা লিখেন। এরপর পরবর্তী তিন বছর কোন কবিতা লেখেননি। সম্প্রচারকার্যে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন, সমালোচনাধর্মী প্রবন্ধ ও প্যাট্রিক গারল্যান্ড এবং চার্লস অসবর্নকে সাথে নিয়ে আনন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আশাবাদী যে, বহিঃবিশ্বের সাথে ইংরেজ কবিতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
প্লাথের আত্মহত্যার ছয় বছর পর হিউজের চার বছর বয়সী কন্যা আলেক্সান্দ্রা তাতিয়ানা এলিসকে (ডাকনাম: শুরা) খুন করে ওয়েভিল নিজেও ১৯৬৯ সালের ২৩ মার্চ সিলভিয়ার মতোই গ্যাসচুল্লির মধ্যে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করেন। যা হিউজকে ভীষণ মর্মাহত করে।
তাদের মৃত্যুর ফলে হিউজকে প্লাথ ও ওয়েভিলের মৃত্যুর সাথে দায়ী করা হয়। এই ঘটনায় হিউজ দারুণভাবে মর্মাহত হন। তিনি ক্রো’র ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি। ১৯৭৫ সালে কেভ বার্ডস প্রকাশের পূর্ব-পর্যন্ত অসমাপ্ত ছিল।
১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে হিউজ ক্যারল অরচার্ড (জন্ম. ১৯৭০ সাল; স্বীয় মৃত্যু ১৯৯৮ সাল) নাম্নী এক সেবিকাকে বিয়ে করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক বজায় ছিল। পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের হেবডেন ব্রিজের কাছে লাম্ব ব্যাংক গৃহ খরিদ করেন ও কোর্ট গ্রিনের সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। তিনি ডেভনের উইঙ্কলেইয়ের কাছে ছোট খামারে চাষাবাদ করতেন। এটিকে তিনি তার কবিতাসমগ্রের শিরোনাম থেকে এনে মুরটাউন নামে ডাকতেন। এরপর তিনি ইডসলেইয়ের বন্ধু মাইকেল মরপার্গোর প্রতিষ্ঠিত ফার্মস ফর সিটি চিলড্রেন নামীয় দাতব্যসংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অক্টোবর, ১৯৭০ সালে ক্রো প্রকাশিত হয়।
শেষ জীবনে টেড হিউজ
যুক্তরাজ্যের রাজকবি হন। টেড ’১৯৮৪ সালে রাজকবি হন, মৃত্যুর পূর্বে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক অর্ডার অব মেরিট সম্মাননা লাভ করেন। ডেভনের গৃহে বসবাস করতে থাকেন। ২৮শে অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হলে তার দেহাবসান ঘটে। লন্ডনের সাউদওয়ার্কে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ৩ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে তার শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। নর্থ টটন চার্চে এ শবানুষ্ঠানের পর এক্সটারে তাকে সমাহিত করা হয়। আর সাইমন, ২০১৯ সাল থেকে রাজকবি হিসেবে রয়েছেন।
বিখ্যাত ইংরেজ কবি, নাট্যকার ও শিশুতোষ লেখক ছিলেন। সমালোচকদের মতে, তিনি তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা কবি ছিলেন ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা লেখক ছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সাল থেকে মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত পয়েট লরেটের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ২০০৮ সালে টাইমস সাময়িকী ১৯৪৫ থেকে ৫০ সেরা ব্রিটিশ লেখকের তালিকায় হিউজকে চতুর্দশ অবস্থানে রাখা হয়। অনেক সমালোচক তার
কবিতা শৈলীকে অনেক মনে করেছিলেন একগুয়ে আর অমার্জনীয়।
হিউজ ও প্লাথ দম্পতির পুত্রসন্তান ছিলেন নিকোলাস হিউজ। ১৬ই মার্চ, ২০০৯ তারিখে অবসাদজনিত কারণে আলাস্কায় নিজ গৃহে তিনিও আত্মহননের পথ বেছে নেন। জানুয়ারি, ২০১৩ সালে ক্যারল হিউজ ঘোষণা করেন যে, তিনি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে স্মৃতিকথা লিখবেন।
২০১৭ সালে প্লাথের লিখিত চিঠিপত্রাদি খুঁজে পাওয়া যায়। ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে পর্যন্ত এ লেখাগুলোয় দাবী করা হয় যে, হিউজ দুইদিন পূর্বে ১৯৬১ সালে প্লাথকে পিটান। হিউজ প্লাথকে মৃত দেখতে চান। এই চিঠিগুলো ড. রুথ বার্নহাউজকে (তৎকালীন: ড. রুথ বেউসার) লেখা হয়েছিল।

Pages: 1 2 3
Pages ( 1 of 3 ): 1 23পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress