টুকুনের অসুখ – সতেরো
ইন্দ্র বলল, বেশ হাত দেখছি।
—বেশ বলছ?
—এমন একটা জ্যামের ভিতর থেকে বেশ কায়দা করে গাড়িটা বের করে দিলে।
—তাহলে আমি একা একা চালাতে পারব বলছ?
—সে তো কবে থেকে তুমি চালাতে পারো।
—তবে মা দিচ্ছে না কেন?
—মাসিমার ভীষণ ভয়।
টুকুনের বলতে ইচ্ছা হল ভয় না হাতি। মা একা ছেড়ে দিচ্ছেন না, পাশে সেই যে যুবক বড় হচ্ছে ফুলের উপত্যকায়, সেখানে সে না চলে যায়। মা টের পেলে বলেছিল একদিন, টুকুন এটা তোমাকে মানায় না।
টুকুন যেন বুঝতে পারছে না, এমনভাবে বলেছিল, কী মানায় না মা?
—তুমি তা ভালো করেই বোঝ।
টুকুনের মনে হল, সেটা সে আজও ঠিক বোঝে না। সে আসত পালিয়ে পালিয়ে। পাঁচিল টপকে আসত। তার এমন নিত্য আসার সময় একদিন ধরা পড়ে গেলে—বাড়িতে হইচই। মা, বাবা, সব মানুষেরা ওকে বলেছিল, ছিঃ ছিঃ টুকুন, তুমি কত বড় বংশের মেয়ে।
টুকুনের বলার ইচ্ছা হয়েছিল, সে এলে আমি মা আমার ভিতরে থাকি না। কী সুন্দর এক জগতের সে বাসিন্দা মা। সে তার ফুলের উপত্যকায় নিয়ে যাবে মা, সেখানে গেলে মানুষের বুঝি কোনও দুঃখ থাকে না!
মা বলেছিল, আমাদের দিকটা একবার ভেবো।
সুবল কিছু বলছিল না। সে সত্যি অপরাধ করে ফেলেছে। তার উচিত হয়নি এভাবে। সে কিছুটা মাথা নীচু করে রেখেছিল। কেবল মজুমদার সাহেব পাইপ টানতে টানতে কেমন একটা মজা অনুভব করেছিলেন। এবং সে যে একেবারে ভীষণ কিছু করে ফেলেনি সেটা যেন মজুমদার সাহেব হ্যাঁ বা না—র ভিতর কিছুটা প্রকাশ করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি এমনভাবে কথা বলেছিলেন যে, দ্যাখো সুবল, তুমি এভাবে না এসে সদর দিয়ে এলেই পারো। তুমি তো সুবল ফুল বিক্রি করে খাও। তোমার তো মানুষের ভালো দেখাই স্বভাব। তুমি কেন তবে এভাবে আসবে।
সুবলও ভেবেছিল, তা ঠিক, এভাবে না এসে সে সদর দিয়েই আসবে। সে বলেছিল, আমি সদর দিয়েই তবে আসব।
টুকুনের মার চোখ মুখ ভীষণ খারাপ দেখাচ্ছে। কী নির্লজ্জ বেহায়া। দ্যাখো। মান অপমান বোধটুকুও নেই। টুকুনের মা কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তবে এতদিন নচ্ছার ছোঁড়াটা এভাবে পালিয়ে এসে কীনা করেছে। সে বলল, তুমি আসবে না। এলে তোমাকে পুলিশে দেব।
টুকুন বলল, পুলিশে দেবে কেন মা? সে চোর না মিথ্যাবাদী।
—দেখছো মেয়ের সাহস। বলেই টুকুনের মা ভীষণ জেদি মেয়ের মতো দুপদাপ কিছুদূর গিয়েই আবার ফিরে এল। এবং মজুমদার সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, সব তোমার আসকারাতে। তুমিই এজন্য দায়ী।
—রাগ করছ কেন? ব্যাপারটা একবার ভেবে দ্যাখো না।
—ভাববার কী আছে! তুমি বরং ভাবো। তোমাদের যা খুশি করবে। আমি কিচ্ছু বলব না। এতবড় বাড়ি, তুমি এতবড় মানুষ, তার মেয়ে এমন হলে মান সম্মান আমাদের থাকবে!
আর তখনই মজুমদার সাহেব দেখলেন, পার্লারে বেশ লোকজন জমে গেছে। সদর থেকে দারোয়ান হাজির। আমলা কর্মচারীরা হাজির। তিনি বললেন আপনারা যান। এবং এই যান বলতেই যান—একেবারের কথাতেই কেমন নাটকের কুশীলবের মতো যবনিকার অন্তরালে অদৃশ্য হয়ে গেল। এখন মাত্র আছেন, তিনি টুকুনের মা, টুকুন আর সুবল। মজুমদার সাহেব বললেন, সুবল বোস। তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাদের সুবলের চোখ দুটো ভারী সুন্দর।
টুকুন বলল, ওর মুখটাও ভারী সুন্দর। আর সুবল কী লম্বা, না বাবা।
সুবল এসব বুঝতে পারছে না। ওর চেহারার প্রশংসা হচ্ছে। সে সাদা পায়জামা পরছে। ঝোলা গেরুয়া পাঞ্জাবি। সে রঙবেরঙের ব্যাগ রেখেছে বগলে। ভিতরে নানা বর্ণের ফুল। এবং আশ্চর্য গন্ধের ফুল। এই ঘরে এমন ফুলের সৌরভ যে বেশিক্ষণ রাগ নিয়ে বসে থাকা যায় না। ফুলের সৌরভে মন প্রসন্ন হয়ে যায়। এবং সবারই মন যখন প্রসন্ন হয়ে যাচ্ছিল, বাড়ির সবারই অর্থাৎ দাসীবাঁদিদের পর্যন্ত তখনও কিনা টুকুনের মা ভীষণ অপ্রসন্ন। সেই ছোঁড়া তিন চার বছর যেতে না যেতে কী হয়ে গেল। ট্রেনের সুবল আর এ সুবল একেবারে আলাদা মানুষ। আর বেশ জালটি পেতেছে। অসুখ ভালো করার নামে সেই যে ছারপোকার মতো লেগে থাকল আর যাবার নাম নেই। সে বলল, বাপু তুমি এখানে আসবে না। আমি সোজা কথার মানুষ, সোজা ভাবে বুঝি। টুকুন এখন বড় হয়েছে। সুবলও যে বড় হয়েছে। সুবলও যে বড় হয়েছে সেটা বলল না।—খুব খারাপ এভাবে আসা।
—আর আসব না। সুবল এমন বলে উঠতে চাইলে, মজুমদার সাহেব লক্ষ্য করলেন টুকুনের চোখ মুখ কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে।
তিনি কী বুঝতে পেরে বললেন, না না, তুমি আসবে বৈকি।
টুকুনের মুখ চোখ ফের এটুকু বলে লক্ষ্য করতেই বুঝলেন, যে রক্তশূন্যতা সহসা তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, এ কথার পর তা আবার কেমন স্বাভাবিক হয়ে গেল। তিনি এবার বললেন, রোজ আসবে না। ওর তো এখন অনেক কাজ। পড়াশোনাটা আবার আরম্ভ করতে হচ্ছে। সকালে ইন্দ্র গাড়ি চালানো শেখায়। বুধবার সন্ধ্যায় টুকুন ক্লাবে সাঁতার শিখতে যায়। সোমবার রাতে গিটার বাজনা শিখছে। সুতরাং বুঝতেই পারছ খুব ব্যস্ত টুকুন। টুকুনের ভালো তো তুমি চাও। তুমি বরং এক কাজ করবে। রবিবার বিকেলে তুমি আসবে। টুকুন সেদিন ফ্রি থাকার চেষ্টা করবে। কী বলিস টুকুন!
এসব শুনে টুকুনের মা কী যে করবে ভেবে পাচ্ছিল না। মানুষটা যে দিন দিন কী হয়ে যাচ্ছে! কোথাকার কে একটা ছেলে—তাকে মুখের ওপর বলতে পারছে না, না তুমি আসবে না। কী অসহায় চোখ মুখ মানুষটার। টুকুনের মার এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটা কেমন গরম হয়ে যাচ্ছে। ওর নিজের হাত পা কামড়াতে ইচ্ছা হচ্ছিল। মেয়েটাকে এভাবে একটা অপোগণ্ড মানুষের সঙ্গে ছেড়ে দিচ্ছে! মান সম্ভ্রম বলে কিছু নেই আর কী আশ্চর্য মানুষটা সুবলের সঙ্গে কথা বলছে ঠিক সমকক্ষ মানুষের মতো।—তুমি সুবল এখন কী করছ? আহা ঢং! সে নিজের কাপড়ের আঁচল অস্থির হয়ে একবার আঙুলে জড়াচ্ছে আবার খুলছে। ওপরে সিলিংফ্যানটা পর্যন্ত তাকে ঠান্ডা করতে পারছে না। ঘড়িতে সাতটা বাজে। চারপাশে নানারকম আলো জ্বলছে। দেয়ালে সব বিচিত্র ছবি। নানা রঙের ছবি। কোথাও বাঘ হরিণের পেছনে ছুটছে। কোথাও শিকারি, টুপি খুলে গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছে, আবার কোনও ছবিতে সূর্যের রং চড়া। আর সূর্য ওঠার নাম নেই অথচ একদল রাজহাঁস জলের ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে। এবং ঝাড়লণ্ঠনে একটা চড়ুই পাখি, আলো—আঁধারের খেলায় এসময় বেশ মেতে গেছে। ঠিক নীচে জেরার মুখে সুবল।
এটা চড়াই পাখি না সুবলের পাখি রাতের বেলায় টের পাওয়া কঠিন। এবং কঠিন বলেই পাখিটা নিজের খুশিমতো কার্নিশে বসে বেশ ডেকে চলেছে। সে বুঝতে পারছিল বুঝি বেচারা টুকুনের মা বেশ বিপাকে পড়েছে। এই বিপাক থেকে রক্ষা পাবার কী যে উপায় স্থির করতে না পেরে খুব অস্থিরচিত্ত হয়ে গেছে।
এবং এভাবে টুকুনের সঙ্গে মাত্র রবিবার এক বিকেলে, একটা বিকেলই মাত্র সুবল থাকে তার সঙ্গে। সপ্তাহে এসময়টা টুকুনের খুব মনোরম। সে যেন এসময়টার জন্য সারাটা সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকে। আজ শনিবার ইন্দ্র ওকে রেড রোডে নিয়ে এসেছে। রেড রোডে ইন্দ্র গাড়ির স্টিয়ারিং টুকুনের হাতে দিয়ে বেশ চুপচাপ বসে আছে। টুকুন নানাভাবে বেশ অনায়াসে গাড়ি চালাতে পারছে বলে ইন্দ্রের ভাবনা কম। আর টুকুন সেই স্ল্যাকস এবং ঢোলা ফুলহাতা সার্ট অর্থাৎ ফুলফল আঁকা সিল্কের পাতলা পোশাক পরে বেশ অনায়াসে গাড়ি চালিয়ে মাঠের চারপাশে, কখনও গঙ্গার ধারে ধারে আবার এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসের পাশ দিয়ে এবং মেডিকেল কলেজ ঘুরে সোজা ফুলবাগান পার হয়ে ভি—আই—পি। তারপর আরও সোজা লেক টাউন, কেষ্টপুর এবং দমদম বিমান ঘাঁটি ডাইনে ফেলে কোনও গ্রামের ভিতর গাছের ছায়ায় সহসা গাড়ি থামিয়ে দিলে মনেই হয় না কিছুকাল আগেও এ—মেয়ের কথা ছিল মরে যাবে। আগামী শীতে অথবা বসন্তে মরে যাবে। সুবল এসে ঠিক এক জাদুকরের মতো তাকে কী করে যে ভালো করে তুলেছে?
এভাবে টুকুন আজ বিশ্বাসই করতে পারে না, তার একটা অসুখ ছিল। সে যে শুয়ে থাকত সব সময় এবং হেঁটে যেতে পারত না, এমনকি দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল, কিছুতেই সে তা বিশ্বাসই করতে পারে না। সে যেন এমনই ছিল। তার কথা ছিল অনেক দূর যাবার। ঠিক মানুষের খোঁজে সে আছে। ইন্দ্র চেষ্টা করছে ওর পাশে পাশে থাকার। কিন্তু ইন্দ্রকে সে এখনও তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। ইন্দ্রকে পাত্তা দিলে মা খুব খুশি হবে—অথচ সে কেন যে পারে না। বেশ এই যে গাছের নীচে সে এবং ইন্দ্র বসে আছে, ইন্দ্র ফ্লাস্ক থেকে টুকুনকে চা ঢেলে দিচ্ছে, সবটাই কেমন আলগা মানুষের মতো ব্যবহার। এবং চা ঢেলে দেবার সময় ইন্দ্র দেখল, কী সুন্দর আঙুল, চাঁপার ফুলের মতো ছুঁয়ে দিলেই কেমন মলিন হয়ে যাবে—আর বাহুতে কী লাবণ্য—এবং টুকুনকে এত বেশি ঐশ্বর্যময়ী মনে হয় যে, একটু ছুঁতে পেলেই—সব হয়ে যায়—সে এই ভেবে টুকুনের পাশে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলে, টুকুন বলল, তুমি আমাকে একজায়গায় নিয়ে যাবে?
—কোথায়?
এমন একটা জায়গা, যেখানে কেবল ফুল ফোটে।
—জায়গাটা কোথায় আমার চেনা নেই।
সুবল সেখানে থাকে।
—সেই ফুলয়ালা সুবল!
সেই ফুলয়ালা সুবল, কথাটা তার ভালো লাগে না। সুবল সম্পর্কে সে আরও কিছু বলতে পারত, কিন্তু ইন্দ্র এই নিয়ে ঠাট্টা—তামাশা করবে। মাকে গিয়ে বলবে। সুবলকে নিয়ে ঠাট্টা—তামাশা তার ভালো লাগে না। মার কাছে সুবল একটা শয়তানের মতো। সুবলকে কীভাবে জব্দ করা যায়, অথবা সুবল একটা উইচ, সে মন্ত্রের দ্বারা বশ করেছে টুকুনকে, এসব গ্রাম্য লোকেরা নানারকমের তুকতাক জানে, এমন এক সুন্দর রূপবতী কন্যা আর ধন—দৌলত দেখে টুকুনকে সুবল বশীকরণ করেছে, এসব মা সব সময় ভেবে থাকে। আত্মীয়স্বজনের কাছে মা এসব বলে না। কেবল ইন্দ্রের বাবা এলে মা সব বলে। কী যে করা এখন। কারণ মার ইচ্ছা কোনও শুভ দিনে ইন্দ্র এসে ওর হাত ধরুক এবং এই যে কলকাতা শহর, রাস্তাঘাট, অথবা মেম
রিয়েল—কখনও কখনও উটকামাণ্ড একটা বড় নীল উপত্যকায় ইন্দ্রের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, এসব হলেই মা ভাবে টুকুন নিরাময় হয়ে যাবে। টুকুনের একটা অসুখ ছেড়ে আর একটা অসুখ এবং এটা মার কাছে ভীষণ অসুখ। বরং মার ইচ্ছা টুকুন আবার শুয়ে থাকুক, সে আর উঠতে না পারলে কোনও কষ্টই যেন নেই তার, তবু যে পারিবারিক সম্ভ্রম বজায় থাকে। মেয়েটা যা করছে, কিছুতেই পারিবারিক সম্ভ্রম আর রাখা যাচ্ছে না। মার হতাশ মুখ দেখলে টুকুন তা টের পায়।
টুকুন দেখল, বেশ একটা জায়গা, এমন নিরিবিলি জায়গায় তার বসে থাকতে ভালো লাগে। কাল সুবল আসবে। সুবল বলেছে, একটা বাওবাবের চারা পেলেই লাগিয়ে দেবে তার উপত্যকায়। এবং গাছটা ডালপালা মেলে ধরলে টুকুনকে নিয়ে যাবে। টুকুনকে এসেই যা সব গল্প করে তার ভিতর থাকে, কেবল বুড়ো মানুষটা। নদীতে যে সে সাঁতার কাটে তাও বলে থাকে এবং কখনও তার কিছু ভালো না লাগলে নদীর ওপারে যে বন আছে, বনের ভিতর সে একা একা হেঁটে বেড়ায়—সে সব কথাও বলে।
অথবা টুকুনের ভারী সুন্দর লাগে যখন সুবল বলে, মাঠের ভিতর শীতের জ্যোৎস্নায় ভাত ডাল রান্না ও মাছের ঝোল রান্না। জ্যোৎস্নায় কলাপাতা বিছিয়ে ঘাসের ওপর বিছিয়ে খাওয়া ভারী মনোরম। এসব বললে, টুকুনের সেই ছোট্ট রাজপুত্রের মতোই মনে হয়, সুবল এমন একটা দেশের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে যেখানে তাকে আজ হোক কাল হোক চলে যেতেই হবে। সুবল কলাপাতা কেটে আনবে গাছ থেকে, সে ডাল ভাত রান্না করবে। রান্না করতে সে ঠিক জানে না। সুবল তাকে ঠিক শিখিয়ে নেবে। সে যা জানে না সুবলের কাছে জেনে নেবে। বিকেল হলে সে এবং সুবল যাবে নদীতে। কোনও মানুষজন না থাকলে নদীর অতলে ডুবে ডুবে লুকোচুরি খেলতে তার ভীষণ ভালো লাগবে।
ইন্দ্র দেখছে, টুকুন অনেকক্ষণ কিছু কথা বলছে না। কেমন চোখ বুজে ঘাসের ওপর শুয়ে আছে।
ইন্দ্র বলল, কী ভাবছ টুকুন?
—ভাবছি, সুবল এখানে কোথায় বাওবাব পাবে?
—ইন্দ্র বলল, বাওবাব মানে?
—বা তুমি জানো না, বাওবাব এক রকমের গাছ, খুব পাতা, ওর শেকড় অনেকদূর পর্যন্ত চলে যায়।
—এমন গাছের নাম তো আমি জীবনে শুনিনি বাবা।
—টুকুন কেমন অবাক হল, বলল, বলছ কী, তুমি বাওবাব গাছের নাম জানো না! সে কী!
ইন্দ্র বলল, সুবল তোমার মাথাটি বেশ ভালো ভাবে খেয়েছে।
—তুমি ইন্দ্র যা জানো না, তা বলবে না।
—তবে কে এসব খবর দিচ্ছে তোমাকে।
—কে দেবে? বইয়ে এসব লেখা আছে।
—কোন বইয়ে?
টুকুন ওর সেই বইটার নাম করলে ইন্দ্র বলল, ওগুলো রূপকথা।
টুকুন বলল, মানুষের জীবনটাতো রূপকথার মতো। তাই না! এই যে সুবল কে কোথাকার মানুষ, এখন ফুলের গাছ কেবল লাগায়। কত রকমের সে ফুল নিয়ে আসে।
ইন্দ্র কেমন খেপে গেল এসব শুনে। মাসিমা ঠিকই বলছেন, তোমার একটা অসুখ সেরে আর একটা হয়েছে।
টুকুন লাফ দিয়ে উঠে বলল—সেটা কী?
—এই যে তুমি সব রূপকথা বিশ্বাস করছ।
—তোমরা বুঝি কর না?
—আমরা কী করি আবার?
—অনেক কিছু কর। তোমার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা ভাবছে মা। ইন্দ্র এবার কেমন মিউ মিউ করে জবাব দিল, সেটার সঙ্গে রূপকথার কী মিল আছে?
—মায়ের কাছে এটা রূপকথার শামিল। মা তোমাকে নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখছে। অথচ জানো, মা জানে না, আমি বিয়ে—থা করছি না।
—সেটা তোমার ইচ্ছায় হবে বুঝি?
—কার ইচ্ছায় তবে?
—মাসিমা মেসোমশাইয়ের।
টুকুন উঠে দাঁড়াল। কী যেন খুঁজছে মতো। সে বলল কোথায় যে সুবল বাওবাব পাবে। নদীটা ওর ফুলের জমি ভেঙে নিচ্ছে। বাওবাবের চারা নদীর পাড়ে পাড়ে লাগিয়ে দিতে পারলে খুব ভালো হত। ওর শেকড় অনেক দূর চলে যায়। ছোট্ট গ্রহাণুর পক্ষে যা খুব খারাপ পৃথিবীর পক্ষে তা খুব দরকারি।