Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » টানেলে একাকী || Shamsur Rahman

টানেলে একাকী || Shamsur Rahman

একটি টানেলে
কাটিয়ে দিলাম হিমযুগ এবং প্রস্তরযুগ, তাম্রযুগ,
লৌহযুগ খুব একা একা,
কাছাকাছি কেউ নেই এবং দূরেও ঘর কুয়াশায় কারো
অস্তিত্ব ফোটে না, শুধু ব্যর্থ যৌবনের মতো একটি কুকুর আজও
সঙ্গে সঙ্গে থাকে।

কতকাল আমি সূর্যোদয়
দেখিনি, শুনিনি কোনো দোয়েলের শিস। কালেভদ্রে
যেন কোনো বাজিকর টানেলের দেয়ালে ফোটায়
আলোর গোলাপ, ঝিল্লীস্বর শুনে টের পাই রাত।
যদিও প্রায়শ শ্বাসকষ্ট হয়, তবু নিশ্বাস নেবার মতো
অবশ্য থেকেই যায় কিছু অক্সিজেন।

টানেলের ভেতরে হঠাৎ
কখনও চিৎকার শুনে আতঙ্কে শরীর শজারুর
কাঁটা হয় আর চোখ ফেটে যায় আনারের মতো। চতুর্দিকে
দৃষ্টি ছোটে, ঘুরি দুটি হাত প্রসারিত করে, অথচ আমার
নিজস্ব অস্পষ্ট ছায়া ছাড়া কাউকে পাই না খুঁজে
কোথাও এখন।

কখনও কখনও
মনে হয়, কী যেন কিসের ঘোরে চলে গেছি সুদূর কোথাও
স্বপ্নচর পাখির পাখায় ভর করে, কাছে আসে
বাহাদুর শাহ জাফরের গজলের মতো এক
বিরান বাগান আর মোগল মিনিয়েচার কিছু অস্তরাগে কান্নারুদ্ধ
রক্তাভ চোখের মতো পুরাণসম্ভব।

অপরাহ্নে ডিভানে শায়িতা
মহিলা আমাকে ডেকে পিকাসোর ত্রিমুখী রমণী হয়ে যান
চোখের পলকে, আমি তার স্তনদ্বয়, অভিজাত নাভিমূল,
রমণীয়, উল্লসিত যোনি থেকে দূরে, ক্রমশ অনেক দূরে
চলে যেতে থাকি তিনি কবিতার পংক্তির মতন
কেবলি ওঠেন বেজে অস্তিত্বে আমার।

এ কোথায় এসে
দাঁড়ালাম অবশেষে? তবে কি প্রকৃত রোবটের
কাল শুরু হলো আজ? সকলেই রোবট তাহলে ইদানীং?
কান্তিমান লাইনো টাইপগুলি করেছে নির্মাণ
অদ্ভুত জগৎ এক; রাশি রাশি টাইপ কি দ্রুত
বেলা অবেলায়।

অবলীলাক্রমে
মিথ্যাকে বানায় সত্য, সত্যকে ডাগর মিথ্যা আর
রমণ, বমন, বিস্ফোরণ, যূথবদ্ধ আত্মহনন ইত্যাদি
শব্দাবলি দশদিকে সহজে রটিয়ে দেয় এবং সাজায়
সুচারু যান্ত্রিকভাবে কবিতার পংক্তিমালা মিল-
অমিলের উদ্ভট নক্‌শায়।

অসম্ভবে হয়েছি সওয়ার
আকৈশোর; অতিকায়, মৎস্যপৃষ্ঠে করেছি ভ্রমণ
সমুদ্দুরে বহুকাল, জলপরীদের দিব্যলালিম স্তনাগ্র ছুঁয়ে-ছেনে
গেছে বেলা পাতালের জলজপ্রাসাদ আর খসিয়ে নিজের
বুকের পাঁজর থেকে হাড় বানিয়েছি দেবতারও
ঈর্ষণীর বাঁশি।

অথচ উচ্চাভিলাষহীন
গৌরবের হেমবর্ণ চূড়া থেকে বহুদূরে আছি,
দেখি কয়লার গুঁড়ো, স্বপ্নবৎ ঊর্ণাজাল, কীটপতঙ্গের
ঘর-গেরস্থালি, দেখি জানু বেয়ে ওঠে নীল পোকা, মাঝে-মাঝে
বাদুড়ের ডানা কাঁপে, সিল্কের রুমাল যেন; থাকি দীর্ঘ কালো
টানেলে একাকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress