Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঝিলের ধারে বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay

ঝিলের ধারে বাড়ি || Shirshendu Mukhopadhyay

সদাশিববাবু সকাল বেলায়

সদাশিববাবু সকাল বেলায় তাঁর পুব দিকের বারান্দায় শীতের রোদে বসে পাঁচ রকম তেতো পাতার এক কাপ রস আস্তে-আস্তে তারিয়ে-তারিয়ে খাচ্ছিলেন। এ-হল পঞ্চতিক্ত। ভারী উপকারী। সামনে বেতের টেবিলে গত কালকের তিনখানা খবরের কাগজ, একখানা পঞ্জিকা, ডায়েরি আর কলম। আজ বন্দুক পরিষ্কার করার দিন। তাই বচন পাশে আর-একটা কাঠের টেবিলে তিনখানা ভারী বন্দুক, বন্দুকের তেল, শিক, ন্যাকড়া সব সাজিয়ে রেখে গেছে। রসটা শেষ করেই সদাশিববাবু খবরের কাগজে চোখ বোলাবেন। তার পর পঞ্জিকা খুলে আজকের তিথিনক্ষত্র ভাল করে ঝালিয়ে নেবেন। ডায়েরিতে কাল রাতে যা লিখেছেন, তার ওপর একটু সংশোধন করবেন। তার পর বন্দুক পরিষ্কার করতে বসবেন। এক-এক দিন এক-এক রকম কাজ থাকে। কোনও দিন বন্দুক পরিষ্কার করা, কোনও দিন এগারোটা দেওয়ালঘড়িতে দম দেওয়া, কোনও দিন পুরনো জিনিসপত্র রোদে বের করে ঝাড়পোঁছ করা, কোনও দিন চিঠি লেখা ইত্যাদি।

চার দিকে প্রায় কুড়ি বিঘে জমি আর বাগান দিয়ে ঘেরা সদাশিববাবুর বাড়িটা খুবই বিশাল। এ-বাড়িতে যে কতগুলো ঘর আছে, তার হিসেব সদাশিববাবুরও ভাল জানা নেই। শোনা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষেরা ডাকাত ছিলেন। ডাকাতি করে ধনসঞ্চয়ের পর জমিদারি কিনে ব্রিটিশ আমলে ‘রাজা’ উপাধি পেয়েছিলেন। এ বাড়িতে আগে কালীপুজোয় নরবলি দেওয়া হত। সদাশিববাবুর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ-কেউ তান্ত্রিক ছিলেন, এবং একজন শবসাধনায় সিদ্ধিলাভ করে অনেক অলৌকিক কাণ্ডকারখানাও করতেন। কুলপঞ্জিকায় এ সব ঘটনার কিছু-কিছু হদিস সদাশিববাবু পেয়েছেন। তবে এখন সবই ইতিহাস।

সদাশিববাবুর একটি মাত্র ছেলে। সেই ছেলে কলকাতায় বেশ বড় চাকরি করে। নাম রামশিব। রামশিবের এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়ে অনন্যার বয়স বছর পনেরো, ছেলে বিহুশিবের বছর-দশেক বয়স। দুজনেই কলকাতার নামজাদা ইংরেজি স্কুলে পড়ে। তারা দাদুর বেজায় ভক্ত এবং বেজায় বন্ধুও। সপ্তাহে শনিরবিবার এসে দাদুর কাছে থেকে যায়। অনেক সময়ে রামশিব নিজেই মোটর চালিয়ে নিয়ে আসে, নয়তো ড্রাইভার ভুজঙ্গই আনে। সারা সপ্তাহ সদাশিব নাতি আর নাতনির জন্য অপেক্ষা করেন।

সদাশিবের স্ত্রী এখনও বেশ শক্তপোক্ত আছেন সদাশিবের মতোই। সারা দিনই নানা রকম কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই রাঁধছেন, এই ডালের বড়ি দিচ্ছেন, এই নাড় পাকাচ্ছেন, এই আচার বানাচ্ছেন। সপ্তাহান্তে নাতি-নাতনি এসে খাবে বলে হরেক রকম খাবার বানিয়ে রাখেন। সদাশিব তাঁর টিকিও নাগাল পান না সারা দিন।

তবে সদাশিবের আছে বচন মণ্ডল। সব কাজের কাজী।

সেই বচন মণ্ডলই হঠাৎ এসে উদয় হল। এবার খুব সাঙ্ঘাতিক রকমের শীত পড়েছে বলে সদাশিববাবুর পুরনো কাশ্মিরি একখানা ফুলহাতা সোয়েটার বচনকে দেওয়া হয়েছে। বচন সাইজে সদাশিবের অর্ধেক। সেই ঢলঢলে সোয়েটার হাতাটাতা গুটিয়ে পরে, মাথায় একখানা মিলিটারি টুপি চাপিয়ে যা একখানা সং সেজেছে, তাতে দিনে-দুপুরে দেখলেও লোকে আঁতকে ওঠে। বচন মণ্ডল বয়সে ছোঁকরা, তবে হাবভাব বিচক্ষণ বৃদ্ধদের মতোই। মুখে বড়-একটা হাসি নেই। বরং দুশ্চিন্তার ছাপ আছে।

বচন উদয় হয়ে বলল, “আজ্ঞে, তিনজন বাবু দেখা করতে এয়েছেন।”

শীতের সকালে এই সবে সওয়া ছ’টা, এর মধ্যে কারা এল? সদাশিব জিজ্ঞেস করলেন, “কারা রে?”

“এখানকার লোক নয়। বাইরের। মোটরগাড়ি নে এয়েছেন। পেল্লায় মোটর। ঢুকতে দিইনি বলে আগ করেছেন খুব।”

“ঢুকতে দিসনি কেন?”

সঙ্গে যে পেল্লায় এক রাগী কুকুর। বাগানে খরগোশ ছাড়া আছে, বেড়ালছানারা বাইরে রোদ পোয়াচ্ছে, রহিম শেখের মুরগিরা দানা খাচ্ছে, হরিণ চরছে, আমাদের তিনঠেঙে ভুলুও আছে। কাকে কামড়ায় কে জানে!”

সদাশিববাবু কুঁচকে বললেন, “অ। তা বাবুরা সাত-সকালে কুকুর নিয়ে এলেন কেন? তা যাক গে, কী চায় জিজ্ঞেস করেছিস?”

“করেছি। তবে তাঁরা জবাব দিতে চাইছেন না। কটমট করে তাকাচ্ছেন।”

“বটে! মতলবখানা কী?”

“খারাপও হতে পারে, ভালও হতে পারে।”

“তা বাবুদের বল্ গে, কুকুর গাড়িতে রেখে এবং গাড়ি বাইরে রেখে পায়ে হেঁটে আসতে।”

“তাই বলি গে।” বচন চলে গেল। সদাশিববাবু ভ্রূ কুঁচকেই রইলেন। এই জায়গা হল কেটেরহাট, যাকে বলে ধাঁধাড়া গোবিন্দপুর। কাছেই বাংলাদেশের সীমানা। এ রকম জায়গায় বাবুভায়েরা বড় একটা আসেন না। এঁরা কারা এলেন তবে?

পঞ্চতিক্তের গেলাসখানা খালি করে রেখে দিলেন সদাশিববাবু। তার পর খবরের কাগজ তুলে নিলেন। এখান থেকে ফটক অবধি অনেকখানি পথ। বাবুভায়েদের হেঁটে আসতে সময় লাগবে।

বেশ কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ তিনঠেঙে ভুলুর চ্যাঁচানিতে সদাশিববাবু বুঝলেন, বাবুভায়েরা আসছেন। ভুলুর মাত্র তিনটে ঠ্যাং হলে কী হয়, গলায় দশটা কুকুরের জোর। তিন ঠ্যাঙে নেচে নেচে সে যে-কোনও আগন্তুককেই বকাঝকা করতে ছাড়ে না।

সদাশিববাবু খবরের কাগজখানা নামিয়ে রাখলেন। সামনে অনেকটা ঘাসজমি, তার পর সবজির বিস্তৃত বাগান, তার ধারে-ধারে নারকোল, পাম আর ইউক্যালিপটাস গাছের সারি। মোরামের পথ ধরে গাছপালার ফাঁক দিয়ে জনা-তিনেক কোটপ্যান্ট-পরা লোককে আসতে দেখা গেল, তাদের আগে-আগে বচন আর ভুলু।

বচন আগে-আগে বারান্দায় উঠে এসে বলল, “এই যে এঁরা..”

যে তিনজন তোক সামনে এসে দাঁড়াল, তাদের তিনজনের বয়সই ত্রিশের কাছে-পিঠে। বেশ শক্ত-সমর্থ চেহারা। একজনের গায়ে কালো চামড়ার একটা জ্যাকেট, একজনের গায়ে গাঢ় হলুদ পুল-ওভার, তৃতীয়জনের পরনে নেভি ব্লু স্যুট।

তৃতীয়জনকেই নজরে পড়ে বেশি। বেশ লম্বা, সুঠাম চেহারা, মুখে বুদ্ধির ধার এবং ব্যক্তিত্বের ছাপ আছে। কোনও হেঁ হেঁ-ভাব নেই। মনে হচ্ছিল, এ-ই পালের গোদা।

প্রথম কথাও সে-ই বলল, “নমস্কার। আমরা একটা বিশেষ প্রয়োজনে আপনার কাছে এসেছি।”

সদাশিববাবু বিনয়ী লোক পছন্দ করেন। এ-লোকটার গলায় অবশ্য বিনয় নেই, স্পর্ধাও নেই। কাজের লোক।

সদাশিববাবু বললেন, “বসুন।” তিনজন তিনখানা বেতের চেয়ারে বসল। সদাশিববাবু খুব কূটচক্ষে তাদের ভাবভঙ্গি লক্ষ করছিলেন। না, কোনও জড়তা নেই, কাঁচামাচু ভাব নেই, বিগলিত ভঙ্গি নেই। পা ছড়িয়ে দিব্যি আরামের ভঙ্গিতেই বসল।

লিডার লোকটা বলল, “যা বলছিলাম..”।

সদাশিববাবু ভ্রূ কুঁচকে বন্দুকের আওয়াজে বললেন, “নাম?”

“ওঃ, হ্যাঁ,” বলে লোকটা একটু হাসল, “আমার নাম অভিজিৎ আচার্য। আমি একজন সায়েন্টিস্ট। আর এঁরা হলেন…”।

সদাশিববাবু আবার বন্দুকের আওয়াজ ছাড়লেন। “সায়েন্স মানে কী? ফিজিক্স না কেমিস্ট্রি? না…”

অভিজিৎ চমকাল না। মৃদুস্বরে বলল, “সে-প্রসঙ্গ অপ্রয়োজনীয়। তবু বলছি, আমার বিষয় হল, এনটেমোলজি। পোকা-মাকড় নিয়ে..”

সদাশিববাবু মাথা নেড়ে বললেন, “জানি। আর এঁরা?”

“এঁরা আমার সহকর্মী। সুহাস দাস আর সুদর্শন বসু।”

“এবার প্রয়োজনটার কথা বলুন।”

অভিজিৎ দুই সঙ্গীর দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে সদাশিববাবুর দিকে চেয়ে বলল, “বড় ঝিলের ধারে আপনার একটা বাড়ি আছে। সেই বাড়িটা আমরা কিছু দিনের জন্য ভাড়া নিতে চাই।”

সদাশিববাবু খুবই অবাক হলেন। বললেন, “ঝিলের ধারের বাড়ি ভাড়া নেবেন? বলেন কী?”

“আমরা একটু রিসার্চ করতে চাই। একটা ভাল স্পট বহুদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এরকম সুটেবল স্পট আর দেখিনি।”

সদাশিববাবুর টাকার অভাব নেই। পৈতৃক সম্পত্তির সূত্রে তাঁর জমানো টাকা বিস্তর। বিষয়-সম্পত্তিও বড় কম নেই। তিনি জীবনে বাড়িতে ভাড়াটে বসাননি। সুতরাং মাথা নেড়ে বললেন, “ভাড়া-টাড়া আমি কাউকে দিই না। ও-সব হবে না। তবে রিসার্চের কাজ হলে দু-চার দিন আপনারা এমনিতেই এসে থাকতে পারেন।”

অভিজিৎ চেয়ারটা একটু সামনে টেনে আনল, তার পর বলল, “রিসার্চের কাজ এক-দু দিনে তো কিছুই হয় না। মাসের পর মাস লেগে যায়। আরও একটা কথা হল, কাজটা একটু অ্যাডভান্সড স্টেজের এবং খুবই গোপনীয়। সেই জন্যই আমরা এরকম একটা রিমোট জায়গা খুঁজে বের করেছি। এ-কাজে একটা খুব বড় সংস্থা আমাদের টাকা দিচ্ছে। ভাড়াও তারাই দেবে।”

সদাশিববাবু একদৃষ্টে লোকটার দিকে চেয়েছিলেন। বললেন, “কাজটা অ্যাডভান্সড স্টেজের এবং গোপনীয় বলছেন? কী রকম কাজ, তা বলতে বাধা আছে?”

অভিজিৎ একটু ভাবল। তার পর বলল, “শুধু বাধা নয়, বিপদও আছে।”

সদাশিববাবুর ভূ ওপরে উঠে গেল। তিনি তীক্ষ্ণ চোখে আগন্তুককে লক্ষ করে বললেন, “বিপদ! রিসার্চ ওয়ার্কে আবার বিপদ কিসের?”

অভিজিৎ নিজের দুই সঙ্গীর সঙ্গে একটা গোপন অর্থপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করে নিয়ে বলল, “সব কথা খুলে বলতে পারছি না বলে আমাকে মাফ করবেন। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, আমাদের কাজে যদি আমরা সফল হই, তবে দেশের উপকার হবে।”

সদাশিববাবু একটু হাসলেন। তার পর বললেন, “আমার বয়স কত জানেন?”

“জানি। সাতাত্তর। আপনি ছ’ ফুট এক ইঞ্চি লম্বা। ওজন বিরাশি কেজি। আপনি ইংরেজি অনার্স আর এম. এ.-তে ফাস্ট ক্লাস পেয়েছিলেন। এক সময়ে দুর্দান্ত স্পোর্টসম্যান ছিলেন। টেনিসে ছিলেন ইন্ডিয়া নাম্বার থ্রি। ফ্রি রাইফেল শুটিং-এ ছিলেন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন। ভাল ক্ল্যাসিক্যাল গান গাইতে পারতেন। শিকারি ছিলেন। আরও বলতে হবে কি?”

সদাশিব এত অবাক হয়ে গেলেন যে, কয়েক সেকেন্ড কথা এল না মুখে। তার পর সোজা হয়ে বসে বললেন, “দাঁড়াও, দাঁড়াও ছোঁকরা। তুমি তো ডেঞ্জারাস লোক হে! অ্যাঁ! এত খবর তোমাকে দিল কে?”

অভিজিৎ মৃদু-মৃদু হাসছিল। বলল, “আপনার সম্পর্কে যা কিছু জানি, সেগুলো লোকের মুখে শোনা। আর লোকেরা শুনেছে। আপনারই মুখে।”

“তার মানে?”

“সদাশিববাবু, বয়স হলে মানুষ তার অতীতের কথা লোককে বলতে ভালবাসে। আপনিও ব্যতিক্রম নন। এই কেটেরহাটের লোকেরা আপনার সেই স্মৃতিকথা শুনে-শুনে মুখস্থ করে ফেলেছে। আমরা আপনার বাড়িটার খোঁজে এসে আপনার সম্পর্কেও অনেক কথা তাদের মুখেই শুনেছি।”

সদাশিববাবু একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন, “তাই বলো। আমি ভাবলাম বুঝি পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছ।”

সদাশিববাবু নিজেও টের পাননি, কখন তিনি অভিজিৎকে ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করেছেন।

অভিজিৎ মাথা নেড়ে বলল, “না, গোয়েন্দা লাগানোর তো কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু বয়সের কথাটা কেন বলছিলেন তা বুঝতে পারিনি।”

সদাশিববাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, “ঃ। বয়সের কথাটা বলছিলাম তোমাদের লম্বা-চওড়া কথা শুনে। বাঙালিরা হচ্ছে ভেত, গেতো আর তেতো। তাদের দিয়ে বড় কাজ হওয়ার কোনও আশাই আর নেই। তা, তোমরা এমন কী সাঙ্ঘাতিক কাজ করছ হে বাপু, যাতে দেশের উপকার হবে। আবার নাকি তাতে বিপদও আছে! আবার নাকি সেটা খুব টপ সিক্রেট!”

অভিজিতের মুখটা ম্লান হয়ে গেল। খানিকক্ষণ চুপ থেকে সে বলল, “কথাটা আপনি ভুল বলেননি। বাঙালিরা–ওই আপনি যা বললেন, “তাই–ভেতো, তেঁতো আর তেতো। তবে আমার শিক্ষাটা হয়েছিল বিদেশে। সেখানে দিনের মধ্যে আঠেরো ঘণ্টা খাটতে হয়। তাই আমি পুরোপুরি বাঙালি হয়ে উঠতে পারিনি। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমার কাজটা কতদূর সাঙ্ঘাতিক তা আমিও জানি না। এমনও হতে পারে যে, সব পরিশ্রমই পণ্ড হয়ে যাবে, কিছুই ঘটবে না। কিন্তু যে-কোনও সত্যানুসন্ধানীকে তো এ রকম হতাশার মুখোমুখি বার বারই হতে হয়।”

সদাশিববাবু ছোঁকরার কথাবার্তা শুনে অখুশি হলেন না। কথাগুলো খুব খারাপ তো বলছে না। তিনি নড়েচড়ে বসে বললেন, “তা বেশ। কাজ করার ইচ্ছে তো খুবই ভাল। বাঙালিরা কিছু করলে আমি খুশিই হই।”

“তা হলে বাড়িটা কি আমরা ভাড়া পাব?”

সদাশিববাবু একটু চিন্তা করলেন। তার পর বললেন, “ও-বাড়িতে বহুকাল কেউ থাকেনি, সংস্কারও কিছু হয়নি, বুড়ো দারোয়ান সিদ্ধিনাথই যা দেখাশোনা করে। তাকে অবশ্য মাইনে দিয়ে পুষতে হয়। আমি বলি কি, আমাকে ভাড়া দিতে হবে না, তোমরা যে ক’ মাস থাকবে, সিদ্ধিনাথকে মাসে-মাসে চারশো টাকা করে দিয়ে দিও।”

অভিজিৎ মাথা নেড়ে বলল, “আমরা রাজি।”

“আর সাফ নুতরো যা করবার, তাও তোমাদেরই করিয়ে নিতে হবে।”

অভিজিৎ খুব বিনীত ভাবে বলল, “যে আজ্ঞে। তবে আমরা বাড়িটাতে ইলেকট্রিক ফেন্স লাগাব, জেনারেটর বসাব, ঘরগুলোতে কিছু যন্ত্রপাতি বসাতে হবে। আপনার অনুমতি চাই।”

“ঠিক আছে। যা করার করো। আর ইয়ে, মাঝে-মাঝে এসে দেখা করে যেও। কেমন কাজকর্ম হচ্ছে ব’লো। কোনও অসুবিধে হলে তাও জানিও। আগেই বলছি, ও-বাড়িতে সাপখোপ থাকতে পারে। আর সিদ্ধিনাথ নাকি প্রায়ই ভূত দেখে।”

এবার তিনজনেই চাপা হাসি হাসল।

চা খেয়ে অতিথিরা বিদায় নিল।

সদাশিব বন্দুক পরিষ্কার করতে বসলেন। বসে ভাবতে লাগলেন, কাজটা ঠিক হল কি না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 1 of 9 ): 1 23 ... 9পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress