Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবন রঙ্গ || Manisha Palmal

জীবন রঙ্গ || Manisha Palmal

মাঘের সূর্য ধীরে ধীরে অস্তাচলগামী হচ্ছে! মায়াবী আঁধারে চরাচরে ঢাকা পড়তে চলেছে। আজ “আইখ্যান দিন”! প্রান্তিক মানুষজনের শিকার যাত্রার শুভ দিন। সুন্দরী পলপলা নদী আর ঘন জঙ্গল যেন একে অপরকে আগলে রেখেছে। অসাধারণ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত অরণ্যভূমি আর এখানকার আরাধ্য দেবী মা স্বর্গবাউরী। মকর সংক্রান্তি আর আই খান দিনে ভক্তের ঢল নামে এখানে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও ওডিশা ও ঝাডখন্ড থেকেও বহু মানুষ আসে এখানে। হাতি ঘোড়ার ছলনে ভরে যায় মায়ের থান ।গ্রামীণ মেলায় লোকের ভিড়ে টুসু ঝুমুরের সুরে সুরে জঙ্গলমহলের বাতাস মুখর হয়ে ওঠে। আজও তাই হয়েছে। মায়ের মন্দিরে হাতি ঘোড়ার ছলনে স্তুপ জমে উঠেছে ধূপধুনা র সুগন্ধে মানুষের আনন্দ কোলাহলে মুখরিত সুন্দরী বনভূমি। আকাশ ও অরণ্য দুজনেই জল মুকুরে মুখ দেখে। অরণ্যে হাতির বড় উৎপাত ।পলপলা জলে জলকেলি করে মহাকালের দল। শুঁডের জলফোয়ারার জলকণা ভিজিয়ে দেয় নদীতটের ঘাসের বনকে। বেনা কাশের ঝাড় জলকণার স্ফটিকের হীরক দ্যুতিতে জ্বলজ্বল করতে থাকে। সূর্য ডোবার বেলাতে আস্তে আস্তে মায়ের থান জনশূন্য হয়ে পড়ছে। শেষ দলটিতে রয়েছে বাহা মনিরা। ওরা এসেছে ঝাডখন্ড থেকে— ছেলে মেয়ে মিলিয়ে 8 জনের দল! জনশূন্য ঠাকুর থানে ফুল ধুপ ধুনা ফলমূলের গন্ধ মিলেমিশে মনটাকে ভরে দিচ্ছে। মাঘের হিমেল বাতাসে ভেসে ভেসে সেই সুবাস চলেছে সুন্দরী পলপলা নদীর ওপর দিয়ে জঙ্গলের গভীরে। বাহার মনও সেই সুবাসের মত আনন্দের আবেশে ভরে আছে—- কারণ এই মেলায় ও ওর মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছে—- রানী ঝোরের সা জোয়ান” নবীন”— মা’স্বর্গ বাউরির দেহুরি বংশের ছেলে। যেন সতেজ শালতরু– যেমন দীঘল চেহারা তেমনি সুন্দর বাঁশি বাজায়! এই বাঁশিই বাহা ও নবীনকে কাছাকাছি এনেছে। এখান পরবের শিকারি দলের পান্ডা নবীন। জঙ্গল থেকে খরগোশ তিতির ঘুঘু শিকার করেছে। এ জঙ্গলে হুডার বা নেকড়ে ও আছে তবে সংখ্যায় কম। আর আছে মহাকাল— হাতির দল! সূর্য ডোবার রাক্ষসী বেলায় সুন্দরী পলপলার জল তোলপাড় করে এরা। তারপর ধীরে ধীরে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের সবজি খেতে হামলা চালায় তছনছ করে দেয় রবি ফসলের সাজানো সম্ভার। শুরু হয় হাতিখেদানো অভিযানের —এখানেও নবীন নেতৃত্ব দেয়! বাহা মনির কিশোরী মনে গভীর ছাপ ফেলেছে নবীনের কর্মকাণ্ড। নিজের অজান্তেই মন হারিয়েছে কিশোরীটি। এই সেই চিরন্তন লীলা জীবন রঙ্গের। দলের সবার সঙ্গে ফিরে চলেছে নিজের গ্রামের পথে। ওর মন কিন্তু পড়ে আছে স্বর্গ দেহুরির থানে। নবীনের বাঁশির সুর ,সাহস ,নেতৃত্ব দেবার সহজাত ক্ষমতা বাহার মন হরণ করেছে!

হঠাৎই ওদের রাস্তার বাম পাশের জঙ্গলে আলোডন—– মহাকাল!! ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা বাহা হঠাৎ একটা সবল হাতের হ্যাঁচকা টানে পাশের ডুঙ্গরির ঢালে টেনে নেয় ওকে। পাহাড়ের ঢালে পাথরের খোঁদলে আশ্রয় নেয় দুজনে। নিজের হৃদপিন্ডের শব্দ এখনো বাহার কানে বাজছে। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলও। মহাকালের দলের সামনে পড়লে আর বেঁচে ফেরার অবস্থা থাকত না। ওকে মৃত্যুর পথ থেকে জীবনে টেনে এনেছে “নবীন”—- ওর স্বপ্নের রাজকুমার! ও বোঝে মাস্বর্গ বাউরীর ইচ্ছে এটাই। নবীনের হাত ধরে জীবন পথে এগিয়ে যায় বাহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *