জীবন্ত ভূত – 3
জ্ঞান ফিরতে বুঝলাম, মৃত্যুর হাত থেকে আমায় বাঁচিয়েছে লেফটেন্যান্ট পল । সবাই আমায় ঘিরে রেখেছে। আমার জন্য ওরা বিশেষ চিন্তিত। শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে ছাড়া পেলাম আমি । তখন ওদের কাছে পুরো ব্যাপারটা চেপে গেলাম আমি । পাছে সবাই ভয় পায় । সেদিন রাত একটা হবে । সেই ঘরের মধ্যে কাশির শব্দ শুনলাম। বিড়াল এর গলায় কাঁটা বিঁধলে যেমন হয় ঠিক তেমনই শব্দ। যাদের জেগে থাকার কথা তারা ঘুমে ঢুলছিল । সবাই কে ডেকে তুললাম আমি । ঐ শব্দের কথা ও বললাম । আর বললাম- চল সবাই দল করে ঐ ঘরে ঢুকি । তা হলে ঘাতক কে ঘায়েল করতে সুবিধা হবে । আমার কথায় কাজ হল না । সবাই বলল, জেনে শুনে মরণ ফাঁদে পা দেওয়া বোকামি । তবে এটা সবাই মেনে নিল যে ভূত ই হোক বা নরমাংস ভোজী ই জন্তুই হোক , কিছু না কিছু ঐ ঘরে আছে। আমার ডিয়ারেস্ট ফ্রেন্ড হাসান কে আলাদা করে সব ই বললাম । আমাদের সিনিয়র মোস্ট মিস্টার বোস সব শুনে বললেন। – ঐ ঘর সিল করে দেব।
হাসান বলল- আমাদের এতোগুলো লোক কার দ্বারা মারা গেল, তা না জানলে আমাদের শান্তি হবে না । ঠিক তখনই ঘরের মাইক্রোফোন বেজে উঠল । ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়ার গলা ।ফ্রেন্ডস, বিশাখাপত্তনম এর পথ পেয়ে গেছে আমাদের সাবমেরিন। লাইট হাউজ পথ দেখাচ্ছে । আমরা সবাই হৈহৈ করে উঠলাম । উচ্ছসিত হয়ে আমরা ঐ ঘরের কথা একেবারেই ভুলে গেলাম । সবাই শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । জেগে গেলাম মাইক এ আমার নাম শুনে । ও ঘরে আরও দশ জনের মধ্যে কুক ও কাল মারা গেছে । তাই ক্যান্টিন এর দায়িত্ব নেবার নির্দেশ মাইক এ শোনাল । কারণ যারা বেঁচে আছে তাদের খাবার চাই । রাগ হল নিজের ওপর । সময় মতো গেলে হয়তো ওদের বাঁচানো যেত । এখন আর শোক দেখিয়ে কি লাভ । পৌঁছে গেলাম সেখানে । দুধ জ্বাল দিয়ে সবাই কে দেওয়ার পরেও বেশ কিছুটা রয়ে গেল সসপ্যান এ । ফিরে এসে দেখি স্যসপ্যান খালি । তলানি দুধ টুকু নড়ছে । তারমানে তখনই দুধ টা খেয়েছে । এ দিক ও দিক তাকাতে চোখে পড়ল একটা বিভৎস বিড়াল জাতীয় চার পায়ি। তাগড়াই লেজ তার । লাল টকটকে চোখ তার । সেই চোখের দিকে তাকানো যায় না । সুরুৎ করে কোথায় ঢুকে গেল ।
সেদিন বিকেলে বিশাখাপত্তনম বন্দরে পৌঁছলাম । দারুণ সুন্দর জায়গা । সমুদ্রের ধার ঘেঁষে পাহাড় চলেছে । পাহাড়ের ওপরের ঘর বাড়ির আলো দেখে মনে হচ্ছিল পাহাড়ে ও তারা দেখছি । ভালো লাগলে ও ঐ বিড়াল টার কথা ভুলতে পারছি না । অত লোক যার দ্বারা নিধন হয়েছে তাকে না মেরে শান্তি নেই। রাতে আবার জাহাজ ছাড়বে । এবার মছলিপত্তনম হয়ে মাদ্রাজ যাব আমরা । নতুন কুক এলে ও পাঁউরুটি খেতে হল । কারণ দশটা ডেড বডি বিশাখাপত্তনম এ নামতে দেখে ঘাবড়ে গেল কুক্ । লেফটেন্যান্ট পল এর ইশারাটা মনে হল । ভাবলাম , ছাড়বো না ওদের । হাসান কে বললাম সে কথা ।হাসান, আমার সাথে চল ঐ ঘরে । আমি আগে ঢুকবো ।আমাকে ওরা আক্রমণ করলে তুই আমার কথা চিন্তা না করে একে একে গুলি করবি । দরকার হলে আমার ওপরে ও গুলি চালিয়ে দিবি আমাকে যন্ত্রণার থেকে বাঁচানোর জন্য ।
হাসান- পাগল হয়েছিস তুই বুলেট ? ঐ অবস্থায় আমি তোর ওপরে গুলি চালাবো ? তা পারবো না । বরং আমি আগে যাব । তুই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবি ।
বুলেট- দ্যাখ্, তোর সংসার আছে । এখানে জানতে পারলে আমাদের কেউ ঢুকতে দেবে না ঐ ঘরে ।তাই বলি জন্তুগুলো কে শেষ করতে পারলে তো কথাই নেই । নইলে আমায় গুলি করে যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দিবি ।
হাসান- আমার ভয় করছে রে বুলেট ।
বুলেট- ওরা সংখ্যায় বেশি হলে যতোটা পারিস ওদের মারার চেষ্টা করবি । বেশি সংখ্যক আমাকে আক্রমণ করলে যত তাড়াতাড়ি আমায় গুলি চালিয়ে মেরে ফেলবি ততোই আমার কষ্ট কমবে । তোকে তাড়া করলে সঙ্গে সঙ্গেই দরজা বন্ধ করতে ভুলিস না । তোর ফেরা চাই ই চাই । দরকার হলে সাবমেরিন টা কে ধংস করতে হবে । রনি,বনি, আমি একসঙ্গে বলে উঠলাম, – বুলেট কাকু,তুমি ঐ ঘরে ঢুকলে ?
বুলেট কাকু- হ্যাঁ রে। আলো জ্বেলে বসে রইলাম ঘাতকের অপেক্ষায় । এলো না । আমি হাসান কে বললাম–তুই দরজার বাইরে অপেক্ষা কর । এ দিকে আসবি না । আমি দশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবো । আমার এই বলিদান ব্যর্থ করিস না । হাসান ঘরের বাইরে দরজায় দাঁড়াল হাতে তার রিভলভার । আমি অস্ত্রাগারের সিঁড়ির দিকে যেতে দেখলাম অগুনতি ভাম জুলজুল চোখে চেয়ে আছে। হিংস্র চাহনী। এ ভাবে কেন সবাই মরছে তা বুঝলাম । আমার ও ঐ অবস্থা হবার আগে গুলি চালালাম। ক’টা কে মেরেছি জানি না । তার আগেই একে একে আমার পা বেয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ল । কানে এলো হাসান এর গলা—চলে আয় বুলেট । কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । হাসান কে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বললাম—-এদিকে এগোবি না । এগুলেই গুলি করব তোকে । আমাকে কষ্টের থেকে বাঁচাতে গুলি করে পালা হাসান । দরজা বন্ধ করতে ভুলিস না । এরপর কানে এল তিন টে গুলির শব্দ । বুঝলাম হাসান আমায় যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দিতেই গুলি করল । রনি, বনি ঘুমিয়ে পড়েছিল । ওদের ওঘরে যেতে বললাম । বুলেট কাকু বলল–বাবলু তুই ও যা । আমি একা শোব । ঘুম থেকে উঠেই রনি,বনি কে বললাম–মা কে বুলেট কাকুর বলা গল্প টা বলিস না । ঘরে বুলেট কাকু কোথাও নেই । মা রাগারাগি করছিল ।- একেবার আমাকে বলে গেল না ছেলে টা ? ব্রেকফাস্ট করতে বসেছি এমন সময় দরজায় কলিং বেল বাজল। মা বলল- দেখ তো বাবলু কে এসেছে? কুড়িয়ার ডেলিভারি বয় আমার হাতে চিঠিটা দিল। বাবা আমার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলেন । খুব মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়লেন । তারপর আমাদের দিকে চেয়ে বললেন ।তোমরা পড়তে যাও । আমি বুঝলাম বাবা আমাদের কাছে কিছু গোপন করতে চাইছেন । রনি,বনি উঠে গেল । আমার মন চাইছিল না উঠে যেতে । আমি জানি এটা বুলেট কাকুর ব্যাপারেই হবে । গুলির শব্দ হল, বুলেট কাকু কে শান্তি দিতে । যেখানে অত লোক মরে গেল আর বুলেট কাকু বেঁচে রইল? ঘর থেকে সরে গেলেও কান খাড়া রাখলাম বাবা মায়ের কথা শোনার জন্য । বাবার গলা- জান বুলেট আর নেই । মা বললেন- কবে? কখন ?কাল যে এসেছিল ? বাবার গলা- তিন বছর আগেই মারা গেছে । কান্না চাপতে পারলাম না । আমার কান্নার শব্দে সবাই ছুটে এল । বাবা বললেন- কেঁদো না ,বুলেট দশের জন্য প্রাণ দিয়েছে । তাই বুলেট কে মরণোত্তর পুরস্কার দেবে। আমাকে ই সেই পুরস্কার নিতে হবে ।
আমি বললাম- আমি জানি বাবা,বুলেট কাকু কাল বলেছে সব । অসংখ্য ভাম জাহাজের অনেক কে মেরে ফেলে তখন বুলেট কাকু সাহস করে ওদের আস্তানায় ওদের মারার জন্য ঢোকে । ভাম যখন বুলেট কাকুকে আক্রমণ করে তখন বুলেট কাকু হাসান কাকুকে বলে বুলেট কাকু কে গুলি করতে বলেন । বুলেট কাকুকে যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দিতে হাসান কাকু কে বলে বুলেট কাকু । বুলেট কাকু কে কষ্টের থেকেই মুক্তি দিয়েছে হাসান কাকু । আমার সাথে কান্নায় ভেঙে পড়ে রনি ও বনি ।