জীবন্ত ভূত – 2
ডক্টর দাস মিস্টার পল এর ডেড বডি দেখে বলেন। –দেখে মনে হচ্ছে হার্ট ফেল করেছে । কিন্তু সারা শরীরে ক্ষতের চিন্হ । রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে । ক্যাপ্টেন রামধনিয়া ডক্টর দাশ কে জিজ্ঞেস করলেন। –হার্ট ফেল কি কারণে হল জানা যাবে না ? সারা শরীরের মাংস খুবলানো। ডক্টর দাশ –পোস্ট মর্টেম না করলে জানা যাবে না । যন্ত্রণার চিৎকারে ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে । আবার কামড়ের বিষ ও হার্ট কে বন্ধ করে দিতে পারে । ক্যাপ্টেন–হয়তো অতো যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে নি। পোস্ট মর্টেম করার পর জানা গেল বিষাক্ত কামড়ের ফলে মৃত্যু হয়েছে মিস্টার পল এর।
মাঝ সমুদ্রে চারপায়ী আসেনি তা বোঝা গেল । হয়তো বন্দরে জাহাজ থাকা কালীন জাহাজ এ ঢুকে পড়েছে। পরের রাতে ও একই ব্যাপার ঘটল । পবিত্র সরখেল এর ডেড বডি বার হল । এবারও পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এ বিষাক্ত জন্তুর কামরে মৃত্যু ধরা পড়ল। আনাচে কানাচে খোঁজ চলল ঘাতকের । তবে মৃত্যুর ভয়েই লুকানো জায়গা গুলো বাদ দিয়েই খোঁজ চলল। অনেকেই এটাকে ভৌতিক ব্যাপার বলে ধরে নিল । আমরা তিন ভাই বোন এতক্ষণে কথা বললাম ।— তাহলে ভূত ছিল জাহাজে? ওরাই জ্যান্ত ভূত ? বুলেট কাকু উত্তর দিল না । আবার বলতে শুরু করল। —সাবমেরিন এ একটা নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে। তাই যেখানে সেখানেই নোঙ্গর করতে পারে না । তা ছাড়া শত্রু পক্ষ কোথায় ওৎ পেতে বসে আছে তা বলা যায় না ।
আমি বললাম–তার পর বুলেট কাকু ? বুলেট কাকু আবার শুরু করল। দু’দিন পেরিয়ে গেল । ডেড বডি গুলো পচন ধরে গেল। প্রায় । বেশির ভাগ লোকই রাত্রি হলে সাবমেরিন এ ভূত দেখতে শুরু করল । ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎই মনে হল আমার মাথায় কে যেন হাত ছোঁয়াচ্ছে । জেগে গেলাম । দেখলাম পল মাথার কাছে দাঁড়ানো । কি যেন বলছে ফ্যাঁস ফ্যাঁসে গলায় । কিছুই বুঝতে পারলাম না । ও হাঁটতে শুরু করল । আমিও ওকে অনুসরণ করতে লাগলাম। ঘরে ওর মৃত্যু হয়েছিল, সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল । কথাটা কারো কে বললাম না । লেফটেন্যান্ট পল এর দেহ ও মিস্টার সরখেল এর দেহের কী গতি করা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন ক্যাপ্টেন চখ। ঐ সব দেহের পচন শুরু হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ তে টেকা দায় ডুবো জাহাজ এ। ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া কে বললাম—ওদের সৎকার করা দরকার । নইলে ওদের আত্মার সদগতি হবে না। রনিতা বলল—তারপর কি হল বুলেট কাকু ?
বুলেট কাকু আবার শুরু করল । –বিশাখাপত্তনমের যাওয়ার পথে ওড়িশার পারা দ্বীপ পৌঁছে সব দেহ সৎকার করা হবে তা ঠিক হল। পারা- দ্বীপ থেকে বিশাখাপত্তনম হয়ে ডুবো জাহাজ যাবে মাদ্রাজ। কিন্তু পারাদ্বীপ পৌঁছাতে আরও কয়েক ঘন্টা সময় পার করতে হবে । তাই আমাদের মধ্যে কেউ কেউ চড়াও হল ক্যাপ্টেন এর ওপর । তারা কিছুতেই ঐ দুর্গন্ধে কাটাতে রাজি হল না । অবশেষে ক্যাপ্টেন এর নির্দেশে ই লেফটেন্যান্ট পল আর সরখেল এর দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হল সাগরে ।
বনিতা ঘেন্নায় বলল- এ মা , আমি কোন দিন পুরীর সমুদ্রে চান করবো না । যেন ওর গায়ে তখনই সমুদ্রের জল লেগে গেছে । আমি বললাম- বনি, একদম চুপ কর। বুলেট কাকু কে বললাম- তার পর কি হল কাকু? পারাদ্বীপ আর গেলে না? আর কখন ও দেখেছ লেফটেন্যান্ট পল কে?
বুলেট কাকু বলল- হ্যাঁ। কিন্তু অনেক পরে । আবার ও সেই দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটল। পারাদ্বীপ এ আমাদের যেতেই হল। এবারও ছয় জনের দেহ পারাদ্বীপ এ নামাতে হল। বনিতা- কাকু? আবার ও ছয় জনকে কামড়ালো?
-হ্যাঁ। ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া মিটিং কল করলেন। আমরা সবাই “বার” এ বসে সুরা পান করছি । এই সময়টা আমাদের সুরা পানের মাত্রা টা বেড়ে গিয়েছিল। হয়তো মরার ভয় কাটাতে ই । মিটিং এ ঠিক হল আমরা কেউ একা একা শোব না । এক একটা দলে জনা ছয়েক থাকব । দলবদ্ধ হয়েই থাকব। দরজা বন্ধ করে শোব না । পরদিন থেকেই শুরু হল সেই নিয়ম মেনে চলা । সন্ধ্যা নাগাদ পারাদ্বীপ বন্দর ছেড়ে ডুবো জাহাজ ডুবলো সাগর জলে । ঘন্টা খানেক পর ভরা কোটাল সমুদ্রের জলচ্ছাস দেখা যাবে । আর এক বিপদ শুরু হল। ক্যাপ্টেন সকলকেই তৈরি থাকতে বললেন। যে কোন সময়েই বিপদ আসতে পারে । ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া আর বসন্ত পড়োয়াল প্রাণ পন যুদ্ধ করে চলেছেন । যে ভাবেই হোক বিশাখাপত্তনম বন্দরে জাহাজ ভেড়াতে পারলে পারলে আর কোনো চিন্তার কিছুই নেই। ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া , ক্যাপ্টেন পড়োয়াল কে জিজ্ঞেস করলেন—কি মনে হচ্ছে? ভরা কোটালের দাপটের আগে পৌঁছতে পারবো তো ? পড়োয়াল–রাম জী কা স্মরণ লেও । ঠিক পৌঁছে যাব আমরা । বনিতা–তারপর কি হল কাকু ? বুলেট কাকু–“বার ” এ বসে সুরা পান করতে করতে টি.ভি তে দেখলাম ভরা কোটাল এ সমুদ্রের ভয়াবহ রূপ । আমাদের সাথেই বসে ছিলেন ক্যাপ্টেন বসন্ত পড়োয়াল ।বললেন—যাই ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়ার কাছে সমুদ্রের ভাব গতিক বুঝে আসি ।
ক্যাপ্টেন বসন্ত পড়োয়াল সেই যে গেলেন , মিনিট কুড়ি তে ও ফিরলেন না। মিস্টার বোস বললেন — আমার মন কু ডাক ডাকছে । পড়োয়াল এতো দেরী করছে কেন? বুলেট কাকু বলল–আমিও ভয় পেয়ে গেলাম কথায় । পড়োয়াল এর ও যদি ঐ রকম কিছু হয় ! মিস্টার বোস আমাদের মধ্যে সিনিয়র । তিনি বলেন। —বুলেট, চল তো দেখে আসি । পড়োয়াল এর এত দেরি হচ্ছে কেন? বুলেট কাকু বলল—আমিও ভয় পেয়ে গেলাম ঐ কথায় । এতক্ষণে আমি বুলেট কাকু কে বললাম—ক্যাপ্টেন পড়োয়াল এর ও কি—থামিয়ে দিল বুলেট কাকু । বলল–না রে। কিছুই হয় নি । তবে ঝড়ের গতিতে জাহাজ এ র দিক পাল্টে গেছে । অন্য সময় কোস্ট গার্ড এর থেকেই খবর পাওয়া যায় । এখন ভরা কোটাল তাই খবর পাওয়ার উপায় নেই। এক মাত্র ভরসা লাইট হাউজ। বনি–লাইট হাউজ কি গো কাকু ? বুলেট কাকু—লাইট হাউজ থেকেই আলো ফেলে সমুদ্রের গতিপথ দেখিয়ে দেয় । সমুদ্রের ভেতরে বড় বড় পাহাড় আছে তা জানিস?
রনি–পাহাড় থাকলে কি হবে ? আমি বললাম- রনি, তুই ক্লাস ফাইভ এ পড়িস কে বলবে? একটা চলন্ত গাড়ি দেওয়ালে ধাক্কা লাগলে কি হয় তা বুঝিস না ? বোকা কোথাকার ! রনি রেগে গেল। বলল–যা, আমি তোদের সাথে বসবো না । বুলেট কাকু বলল- তুই আমার কাছে বোস । বাবলুর কেরামতি কতো তা বুঝবো, যখন আসল খুনি কে তা বলতে পারে । শোন, এরপর ই আমরা ঠিক করলাম একদল জাগবো বাকি রা ঘুমাবো। দিন কাটলেও রাতে আমরা জড়ো সড়ো। কে বলবে ডুবো জাহাজে এতগুলো জীবন্ত মানুষ আছে । ঝড়ের থেকেও ভয় ঘাতকের । ডক্টর ভেঙ্কটেশ্বর তাঁর ছোট্ট ল্যাব এ পরীক্ষা করে, তাছাড়া ক্ষতের আকার দেখে বুঝেছেন যে ঘাতক চার পায়ি জীব । নখ ও দাঁতের বিষে এদের মৃত্যু হয়েছে । সেদিন প্রায় মাঝ রাত হবে। টয়লেট থেকে ফিরেই মনে হল কেউ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । ছায়াটা চলতে লাগলো ।আমি তার পিছু নিলাম । গা ছম্ ছম্ করছিল । নিশুতি রাত । ছায়াটা সেই ঘরে আমাকে নিয়ে গেল । তারপর ছায়াটা আমার দিকে ফিরল । এবার ভয় পেলাম আমি । এ তো লেফটেন্যান্ট পল!!! আমায় অস্ত্রাগারের দিকটা দেখালো । আমি সে দিকে এগুতে গেলাম, কিন্তু এক ধাক্কায় আমাকে ফেলে দিল সেই ছায়া ।