Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

জীবন্ত ভূত – 2

ডক্টর দাস মিস্টার পল এর ডেড বডি দেখে বলেন। –দেখে মনে হচ্ছে হার্ট ফেল করেছে । কিন্তু সারা শরীরে ক্ষতের চিন্হ । রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে । ক্যাপ্টেন রামধনিয়া ডক্টর দাশ কে জিজ্ঞেস করলেন। –হার্ট ফেল কি কারণে হল জানা যাবে না ? সারা শরীরের মাংস খুবলানো। ডক্টর দাশ –পোস্ট মর্টেম না করলে জানা যাবে না । যন্ত্রণার চিৎকারে ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে । আবার কামড়ের বিষ ও হার্ট কে বন্ধ করে দিতে পারে । ক্যাপ্টেন–হয়তো অতো যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে নি। পোস্ট মর্টেম করার পর জানা গেল বিষাক্ত কামড়ের ফলে মৃত্যু হয়েছে মিস্টার পল এর।

মাঝ সমুদ্রে চারপায়ী আসেনি তা বোঝা গেল । হয়তো বন্দরে জাহাজ থাকা কালীন জাহাজ এ ঢুকে পড়েছে। পরের রাতে ও একই ব্যাপার ঘটল । পবিত্র সরখেল এর ডেড বডি বার হল । এবারও পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এ বিষাক্ত জন্তুর কামরে মৃত্যু ধরা পড়ল। আনাচে কানাচে খোঁজ চলল ঘাতকের । তবে মৃত্যুর ভয়েই লুকানো জায়গা গুলো বাদ দিয়েই খোঁজ চলল। অনেকেই এটাকে ভৌতিক ব্যাপার বলে ধরে নিল । আমরা তিন ভাই বোন এতক্ষণে কথা বললাম ।— তাহলে ভূত ছিল জাহাজে? ওরাই জ্যান্ত ভূত ? বুলেট কাকু উত্তর দিল না । আবার বলতে শুরু করল। —সাবমেরিন এ একটা নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে। তাই যেখানে সেখানেই নোঙ্গর করতে পারে না । তা ছাড়া শত্রু পক্ষ কোথায় ওৎ পেতে বসে আছে তা বলা যায় না ।

আমি বললাম–তার পর বুলেট কাকু ? বুলেট কাকু আবার শুরু করল। দু’দিন পেরিয়ে গেল । ডেড বডি গুলো পচন ধরে গেল। প্রায় । বেশির ভাগ লোকই রাত্রি হলে সাবমেরিন এ ভূত দেখতে শুরু করল । ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎই মনে হল আমার মাথায় কে যেন হাত ছোঁয়াচ্ছে । জেগে গেলাম । দেখলাম পল মাথার কাছে দাঁড়ানো । কি যেন বলছে ফ্যাঁস ফ্যাঁসে গলায় । কিছুই বুঝতে পারলাম না । ও হাঁটতে শুরু করল । আমিও ওকে অনুসরণ করতে লাগলাম। ঘরে ওর মৃত্যু হয়েছিল, সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল । কথাটা কারো কে বললাম না । লেফটেন্যান্ট পল এর দেহ ও মিস্টার সরখেল এর দেহের কী গতি করা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন ক্যাপ্টেন চখ। ঐ সব দেহের পচন শুরু হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ তে টেকা দায় ডুবো জাহাজ এ। ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া কে বললাম—ওদের সৎকার করা দরকার । নইলে ওদের আত্মার সদগতি হবে না। রনিতা বলল—তারপর কি হল বুলেট কাকু ?

বুলেট কাকু আবার শুরু করল । –বিশাখাপত্তনমের যাওয়ার পথে ওড়িশার পারা দ্বীপ পৌঁছে সব দেহ সৎকার করা হবে তা ঠিক হল। পারা- দ্বীপ থেকে বিশাখাপত্তনম হয়ে ডুবো জাহাজ যাবে মাদ্রাজ। কিন্তু পারাদ্বীপ পৌঁছাতে আরও কয়েক ঘন্টা সময় পার করতে হবে । তাই আমাদের মধ্যে কেউ কেউ চড়াও হল ক্যাপ্টেন এর ওপর । তারা কিছুতেই ঐ দুর্গন্ধে কাটাতে রাজি হল না । অবশেষে ক্যাপ্টেন এর নির্দেশে ই লেফটেন্যান্ট পল আর সরখেল এর দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হল সাগরে ।

বনিতা ঘেন্নায় বলল- এ মা , আমি কোন দিন পুরীর সমুদ্রে চান করবো না । যেন ওর গায়ে তখনই সমুদ্রের জল লেগে গেছে । আমি বললাম- বনি, একদম চুপ কর। বুলেট কাকু কে বললাম- তার পর কি হল কাকু? পারাদ্বীপ আর গেলে না? আর কখন ও দেখেছ লেফটেন্যান্ট পল কে?

বুলেট কাকু বলল- হ্যাঁ। কিন্তু অনেক পরে । আবার ও সেই দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটল। পারাদ্বীপ এ আমাদের যেতেই হল। এবারও ছয় জনের দেহ পারাদ্বীপ এ নামাতে হল। বনিতা- কাকু? আবার ও ছয় জনকে কামড়ালো?

-হ্যাঁ। ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া মিটিং কল করলেন। আমরা সবাই “বার” এ বসে সুরা পান করছি । এই সময়টা আমাদের সুরা পানের মাত্রা টা বেড়ে গিয়েছিল। হয়তো মরার ভয় কাটাতে ই । মিটিং এ ঠিক হল আমরা কেউ একা একা শোব না । এক একটা দলে জনা ছয়েক থাকব । দলবদ্ধ হয়েই থাকব। দরজা বন্ধ করে শোব না । পরদিন থেকেই শুরু হল সেই নিয়ম মেনে চলা । সন্ধ্যা নাগাদ পারাদ্বীপ বন্দর ছেড়ে ডুবো জাহাজ ডুবলো সাগর জলে । ঘন্টা খানেক পর ভরা কোটাল সমুদ্রের জলচ্ছাস দেখা যাবে । আর এক বিপদ শুরু হল। ক্যাপ্টেন সকলকেই তৈরি থাকতে বললেন। যে কোন সময়েই বিপদ আসতে পারে । ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া আর বসন্ত পড়োয়াল প্রাণ পন যুদ্ধ করে চলেছেন । যে ভাবেই হোক বিশাখাপত্তনম বন্দরে জাহাজ ভেড়াতে পারলে পারলে আর কোনো চিন্তার কিছুই নেই। ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়া , ক্যাপ্টেন পড়োয়াল কে জিজ্ঞেস করলেন—কি মনে হচ্ছে? ভরা কোটালের দাপটের আগে পৌঁছতে পারবো তো ? পড়োয়াল–রাম জী কা স্মরণ লেও । ঠিক পৌঁছে যাব আমরা । বনিতা–তারপর কি হল কাকু ? বুলেট কাকু–“বার ” এ বসে সুরা পান করতে করতে টি.ভি তে দেখলাম ভরা কোটাল এ সমুদ্রের ভয়াবহ রূপ । আমাদের সাথেই বসে ছিলেন ক্যাপ্টেন বসন্ত পড়োয়াল ।বললেন—যাই ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়ার কাছে সমুদ্রের ভাব গতিক বুঝে আসি ।

ক্যাপ্টেন বসন্ত পড়োয়াল সেই যে গেলেন , মিনিট কুড়ি তে ও ফিরলেন না। মিস্টার বোস বললেন — আমার মন কু ডাক ডাকছে । পড়োয়াল এতো দেরী করছে কেন? বুলেট কাকু বলল–আমিও ভয় পেয়ে গেলাম কথায় । পড়োয়াল এর ও যদি ঐ রকম কিছু হয় ! মিস্টার বোস আমাদের মধ্যে সিনিয়র । তিনি বলেন। —বুলেট, চল তো দেখে আসি । পড়োয়াল এর এত দেরি হচ্ছে কেন? বুলেট কাকু বলল—আমিও ভয় পেয়ে গেলাম ঐ কথায় । এতক্ষণে আমি বুলেট কাকু কে বললাম—ক্যাপ্টেন পড়োয়াল এর ও কি—থামিয়ে দিল বুলেট কাকু । বলল–না রে। কিছুই হয় নি । তবে ঝড়ের গতিতে জাহাজ এ র দিক পাল্টে গেছে । অন্য সময় কোস্ট গার্ড এর থেকেই খবর পাওয়া যায় । এখন ভরা কোটাল তাই খবর পাওয়ার উপায় নেই। এক মাত্র ভরসা লাইট হাউজ। বনি–লাইট হাউজ কি গো কাকু ? বুলেট কাকু—লাইট হাউজ থেকেই আলো ফেলে সমুদ্রের গতিপথ দেখিয়ে দেয় । সমুদ্রের ভেতরে বড় বড় পাহাড় আছে তা জানিস?

রনি–পাহাড় থাকলে কি হবে ? আমি বললাম- রনি, তুই ক্লাস ফাইভ এ পড়িস কে বলবে? একটা চলন্ত গাড়ি দেওয়ালে ধাক্কা লাগলে কি হয় তা বুঝিস না ? বোকা কোথাকার ! রনি রেগে গেল। বলল–যা, আমি তোদের সাথে বসবো না । বুলেট কাকু বলল- তুই আমার কাছে বোস । বাবলুর কেরামতি কতো তা বুঝবো, যখন আসল খুনি কে তা বলতে পারে । শোন, এরপর ই আমরা ঠিক করলাম একদল জাগবো বাকি রা ঘুমাবো। দিন কাটলেও রাতে আমরা জড়ো সড়ো। কে বলবে ডুবো জাহাজে এতগুলো জীবন্ত মানুষ আছে । ঝড়ের থেকেও ভয় ঘাতকের । ডক্টর ভেঙ্কটেশ্বর তাঁর ছোট্ট ল্যাব এ পরীক্ষা করে, তাছাড়া ক্ষতের আকার দেখে বুঝেছেন যে ঘাতক চার পায়ি জীব । নখ ও দাঁতের বিষে এদের মৃত্যু হয়েছে । সেদিন প্রায় মাঝ রাত হবে। টয়লেট থেকে ফিরেই মনে হল কেউ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । ছায়াটা চলতে লাগলো ।আমি তার পিছু নিলাম । গা ছম্ ছম্ করছিল । নিশুতি রাত । ছায়াটা সেই ঘরে আমাকে নিয়ে গেল । তারপর ছায়াটা আমার দিকে ফিরল । এবার ভয় পেলাম আমি । এ তো লেফটেন্যান্ট পল!!! আমায় অস্ত্রাগারের দিকটা দেখালো । আমি সে দিকে এগুতে গেলাম, কিন্তু এক ধাক্কায় আমাকে ফেলে দিল সেই ছায়া ।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress