Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবন্ত ভূত || Shipra Mukherjee

জীবন্ত ভূত || Shipra Mukherjee

জীবন্ত ভূত – 1

সময়টা শীতের। ক’দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছিল বলেই আমাদের সময় কাটছিল না । কারণ সারাদিন ঘরে বসে কাটছিল। এরই মধ্যে বাবা বাড়ি এসে বললেন, – তোদের বুলেট কাকু আসছে ।

খবরটা শুনে আমরা ভাই বোনেরা যার পর নাই খুশি হলাম। একে শীত তাতে আবার বুলেট কাকুর গল্প জমবে ভাল । বুলেট কাকু এলে মায়ের রাগটা বাড়ে । তার কারণ টা হল লেপ, বালিশ আর বিছানার ওপরে খাবারের ডিস, বাটি, চায়ের কাপ এর ছড়াছড়ি । তার থেকে বড় রাগের কারণ বুলেট কাকুর সিগারেট খাওয়া ।

মা বাবা কে বলেছিল- বুড়ো একটা লোকের কি একটুও আঙ্কেল বলে জিনিস নেই ? নিজেও চব্বিশ ঘন্টা রাশি রাশি ধোঁয়া গিলছে । বাচ্চাদের ও গেলাচ্ছে।
– আরে বাবা, ওটা অভ্যাস।
– নিজে গিলেছে বেশ । কিন্তু বাচ্চা গুলো কে ও ধোঁয়া গেলাচ্ছে । বলিহারি বাচ্চাদের । ঐ দামড়া এলেই বাচ্চা গুলো হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিছানায় গল্প শুনতে । বাবা ও হাসতে হাসতেই মাকে কথা শোনালো।
– সে কি গো, তিরিশের যুবক টা কে তোমার বুড়ো মনে হল ? তবে এটা বুলেট এর ভারী অন্যায় চব্বিশ ঘণ্টা বসে বসে সিগারেট খাওয়া ।
– তুমি আর বুলেট এর হয়ে গাওনা গেওনা ।
– আহা! তুমি বললে না ,ছেলে গুলো কে সিগারেট এর ধোঁয়া গেলায় । দাঁড়াও কালই বুলেট কে মানা করে দেবো এখানে আসতে ।
– মরণ আমার আর কি! যেমন বুলেট তেমন তাঁর পাতানো দাদা । কিছু বলার নেই আবার আদিখ্যেতার ও দরকার নেই ।

বাবা হাসতে হাসতেই উঠে গেল জানালার কাছে । তখনই বাবা বলল- যাই বল না কেন, ছেলেটা বাচ্চাদের ভাল বাসে।
– সেই জ্বালায় তো কিছুই বলতে পারি না । সেই হেন বুলেট কাকু এসেছে । আমায় দেখে ই বলল।
– কী রে, বাবুল না ? বাব্বা, তুই দেখি বেশ বড় হয়ে গেলি ! এবার জম্পেশ করে লেপের তলে আড্ডা হবে কি বল? রনি, বনি কোথায় ?
– বোনে রা স্কুলে গেছে । এই এল বলে । কাল থেকে আমরা তোমার অপেক্ষায় আছি । তবে কাকু তোমার স্মোকিং টা একটু কমাতে হবে।
– এই ব্যাটা, তোকে এ সব কে বলল রে ?
– কে আবার? “মাস মিডিয়া ” । আমরা জানতে পেরে গেছি যে ,তুমি স্মোক করলে তোমার যা ক্ষতি হবে তার থেকে অনেক বেশি গুন ক্ষতি হবে আমাদের ।
– বটে? ঠিক আছে। যে কয়দিন এখানে থাকছি, নো স্মোকিং । ঠিক আছে?
– পারবে?
– পারবো না মানে? না পারলে ধরে নিতে হবে আমি তোদের একটুও ভালবাসি না ।
– কাকু, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি । বলেই জাপ্টে ধরলাম কাকু কে। উত্তরে বুলেট কাকু বলল ।- জানি রে । আমিও তোদের ভালবাসি । তাই তো ছুটে এলাম । রাতে খাওয়া সারার পর বুলেট কাকু বলল ।
– রনিতা,বনিতা আর বাবলু আজ কি গল্প শুনবি বল ?
– ভূতের গল্প । আমরা চেঁচিয়ে উঠলাম । বুলেট কাকু- না রে ,ভূতের গল্প আর ভাল লাগছে না । তোদের বরং আজ জীবন্ত ভূতের গল্প বলি। এরই মধ্যে মা যে কখন এসেছেন তা খেয়াল ই করি নি । মা বলেন,- কি গো ঠাকুর পো ,তুমি নাকি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছো ? খুব ভাল করেছ ? অযথা সুস্থ শরীর কে ব্যস্ত করা । যাই শুয়ে পড়ি । রনি,বনি আর একটু পড়ে চলে আসিস । বাবলু, কাকুর সাথে শুবি তো? আমি বললাম- হ্যাঁ মা । বুঝলি। – কাকু ,গল্প শুরু করল । বছর তিনেক আগের ঘটনা । সাব মেরিন এ চলেছি আমরা তিরিশ জন। হ্যাঁ তিরিশের মতোই হবে । সাব মেরিন অর্থাত ডুবো জাহাজ । জলের তলে চলে সাব মেরিন। ওপরে এমন ভাবে কাঁচ লাগানো থাকে যাতে ওপরের জিনিস আর দূরের জিনিস দেখা যায়।

জাহাজ ঘাটায় সিঁড়ি দিয়েই ওপরে উঠে তারপর পাড়ে নামতে হয় । আবার সিঁড়ি দিয়েই নীচের দিকে দুটো তলা পার হলে সাবমেরিন চালানোর যন্ত্র পাতি মানে মেশিনারি। প্রকৃতির আলো হাওয়ার কোন ও ব্যপার নেই সেখানে । বনি বলল- তোমার ভয় করে না বুলেট কাকু ? বুলেট বলল- না রে । ভেতরের ব্যাবস্থা দেখলে তুই বুঝতেই পারবি না যে তুই জলের তলে আছিস । আমি বললাম- কী দারুণ ! বুলেট কাকু- দারুণ তো বটেই । খাবার ঘর, রান্নার ঘর, শোবার ঘর, বসার ঘর সবই আছে । সেই রকম একটা ডুবো জাহাজ এ আমরা চলেছি । কলকাতার থেকে মাদ্রাজ এর দিকে। তারপর কি হল বুলেট কাকু ? জ্যান্ত ভুত টা এলো? – রনি বলল। বুলেট কাকু বলল- এমন বার বার প্রশ্ন করলে ভূত টা আসবে কি করে? আমি বললাম- রনি,বনি একদম চুপ করে থাক । এবার বলো কাকু । আমরা চুপ করে শুনবো ।

বুলেট কাকু বলতে শুরু করলো ।- জানিস সে রাতে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো । আমরা সবাই শুয়ে পড়েছি। রাত প্রায় দু’ টো হবে । আমি জেগে গেলাম। একটা আর্ত চিৎকার শুনে বিছানার থেকে নেমে দাঁড়ালাম। হাসান ও লাফিয়ে নেমেছে বিছানার থেকে । বুঝলাম শব্দ টা আসছে লেফটেন্যান্ট পল এর ঘর থেকেই । ছুটে গেলাম সেদিকেই। দেখলাম সবাই দরজায় দাঁড়ানো । দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। মুহূর্তে শব্দ থেমে গেল । লোহার দরজা ভাঙা সোজা কথা না । তাই সবাই সকালের অপেক্ষায় রইলাম। যে যার ঘরে ফিরে গেলাম। সকালে পল এর ডেড বডি বার করা হল।

Pages: 1 2 3
Pages ( 1 of 3 ): 1 23পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress