জীবনের রঙিন অধ্যায়
ছেলেবেলার কথা মনে পড়লে পরম সুখ অনুভূত হয়, যেটা ছিল জীবনের রঙিন অধ্যায়। বয়সের পড়ন্ত বেলায় স্মৃতিচারণে শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলো আজও পিছু ডাকে। ফিরে পেতে ইচ্ছে করে ছেলেবেলা। জীবনের সবচেয়ে মধুর সময়। তখন কিন্তু ভাবতাম, বড় হলে না জানি কত সুখে থাকতাম।
এখন বড় হয়ে প্রতিমুহূর্তে বারবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে ছেলেবেলার সেই সহজ সরল মাধুর্য্য ভরা দিনগুলো।
ছিলোনা কোনো চিন্তা ভাবনা। শুধু আনন্দ আর হুল্লোড়ে ছোটবেলা কাটিয়ে কখন যে যৌবনের আঙিনায় পৌঁছে গিয়েছি বুঝতেও পারিনি। বুঝতে যখন পারি, তখন সেই সারল্য মাখা দিনগুলো হারিয়ে গেছে মহাকালের গভীর অতলে।
এরপর জীবন কাটানো মাথার উপর চেপে বসা দুশ্চিন্তা আর ছেলেবেলার স্মৃতচারণা নিয়ে। তখন বুঝতাম না জীবনের মানে।
স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি কালবৈশাখীর ঝড়ে আম কুড়ানো, বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে জল – কাদা মেখে স্কুল ফেরত বাড়িতে এসে মায়ের বকুনি, চড়-থাপ্পর; কতনা শাসন। তখন কেবল মনে হতো কবে বড় হব। বকা থেকে রেহাই পাবো।
পাড়ার ছেলেমেয়ে মিলে রোজ বিকালে নানারকম খেলা, সে এক অনাবিল আনন্দ।
পড়তে বসে বইয়ের ভাঁজে গল্পের বই নিয়ে লুকিয়ে পড়া; এখনকার প্রজন্ম সেই আনন্দের স্বাদই পায়নি। শুধু পড়ার ঝুলি কাঁধে ব্যস্ততা। মোবাইল -ল্যাপটপ তাদের সঙ্গী। পাড়ায় মিলেমিশে খেলার সুযোগ, সময় নেই। ওদের দেখে আরও বেশি করে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়।
ছেলেবেলায় খেলতে বেড়িয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়াতাম। সেকারণে অনেক বিপদেরও সন্মুখীন হতে হয়েছে। একটা শিহরণ জাগানো ঘটনা বলি। কি বিপদ থেকেই না বেঁচেছিলাম সেদিন!
শীতকালে একদিন দুপুরে পাড়ার বন্ধুরা মিলে দূরে লালপাহাড়ের উদ্দেশ্যে চলেছি। প্রচুর চুকুর ফল গাছ থাকায় পাহাড়ের নাম লালপাহাড়।
রাস্তায় একটা বড় নালা পেরিয়ে যেতে হয়। সেতু আছে।
আমরা সেতুতে উঠে দেখি নালার জলে ছোট মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে। বেশি জল না থাকায় আমরা মাছ ধরতে নেমে যাই।
হঠাৎ কোথা থেকে প্রবল বেগে জল আসতে থাকে। আমরা সবাই উপরে উঠতে পারলেও সীমা নামে একটা মেয়ে জলের তোড়ে ভেসে চলে। আমরা বাঁচাও বাঁচাও করে নালার পাশ দিয়ে ওর সাথে ছুটতে থাকি।
আমাদের চিৎকার শুনে পাশের জমি থেকে দুই চাষি দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে সীমাকে জল থেকে তুলে আনে। সীমা অজ্ঞান। আমরা ভয়ে কাঁদছি।
দুই চাষি ওকে নিয়ে ছুটে চলে লালপাহাড়ের গায়ে থাকা এক সাধুর কাছে। সাধু সীমাকে কোলে উপুড় করে নিয়ে পিঠে চাপ দিয়ে ওর মুখ থেকে জল বের করে জ্ঞান ফিরিয়ে আনেন। বাড়ি ফিরে আসতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ায় খুব বকা, মার খাই। সীমার অবস্থা দেখে ওর মা জিজ্ঞাসা করতেই সব বলে দেয়।
সাধুর কথা জানাজানি হওয়ায় অনেকেই যাওয়া আসা শুরু করে।
অনেক দিন পর শোনা যায় সাধুটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সাধু একজন খুনি আসামি। ছদ্মবেশে ওখানে সাধু সেজে ছিল। ভয়ে কোনোদিন আর ওদিকে যাইনি।