জীবনের জলছবি
শঙ্করদেব পাবলিশার্স আসামের একটি বিখ্যাত পাবলিশার্স হাউস। এখান থেকে প্রতি বছর গুয়াহাটি বইমেলায় জনপ্রিয় লেখকদের সাথে নবীন লেখকেরও প্রথম প্রকাশ পাঠকদের কাছে চমক থাকে। প্রতিষ্ঠানের কর্নাধার শঙ্করলাল বেজবরুয়া সাহিত্যমন্ডলে এক পরিচিত নাম। উনার সততা, অমায়িক ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করে। পাঠককুলও অপেক্ষায় থাকে নতুন কিছু পাওয়ার অপেক্ষায়।
এই বছরও প্রকাশনী হাউসে যথারীতি ব্যস্ততা চলছে। শঙ্করবাবু স্ত্রী বিনীতাদেবীকে বিশেষ অনুরোধ এই বছরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য। এই উপলক্ষে বস্রনগরী শুয়ালকুচি থেকে দক্ষ কারিগরের তৈরী পাটের মেখলাচাদর এসেছে।
বিনীতাদেবী শঙ্করবাবুর জীবনে সুখদুঃখের চিরসাথী। পঁচিশবছরের বৈবাহিক জীবনে শঙ্করবাবুকে প্রতিটি পদক্ষেপে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। তাই আজ প্রতিষ্ঠানটি মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
বিনীতাদেবীরও ছোটবেলার থেকে লেখার শখ। স্কুলের বার্ষরিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশ পেত। বিয়ের পর সংসারের ব্যস্ততায় তেমন করে লেখা আর হয়ে উঠে না। তবুও সময় পেলে নীল ডাইরীর পাতায় আপন অনুভবকে লিখে রাখেন স্বামীর অগোচরে।
আজ অনুষ্ঠানের দিন। বইমেলার মিডিয়াকর্নারে আয়োজন করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চারিদিকে ব্যস্ততা। গোষ্ঠীর দৈনিক পত্রিকা ‘প্রাগভূমি’ থেকে গত কয়েকদিন যাবৎ ঘোষণা হচ্ছে, জনপ্রিয় লেখকদের সাথে একজন অনামী লেখকের গ্রন্থ প্রকাশ এবারের বিশেষ আকর্ষণ। বিনীতাদেবী এই ব্যাপারে শঙ্করবাবুকে কিছু জিজ্ঞেস করলে, কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
মঞ্চে চাঁদের হাট বসেছে। নীলাভ সৌরভ, দিগন্ত কুমার, অনামিকা বরুয়া ইত্যাদি দিগপালদের সাথে বসে নিজেকে বেমানান বোধ করছেন। শঙ্করবাবু উদ্বোধনী ভাষণ শুরু করলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা অনামী লেখকের উপন্যাসগ্রন্থ প্রকাশ করতে চলেছি। কিন্তু চমক অন্য জায়গায়। লেখকও জানেন না যে উনার লেখা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আমারই সহধর্মিনী বিনীতাদেবী। তিনি যে সংসার সামলে সবার অগোচরে জীবনের অনুপম অনুভবকে খাতায় বন্দী করে রেখেছেন, তা প্রকাশ করতে পেরে আমরা ধন্য। আশাকরি পাঠককুলের কাছে উনার উপন্যাস ‘জীবনের জলছবি’ সমাদৃত হবে।’ প্রেক্ষাগৃহ উপস্থিত অতিথিদের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল।
বিনীতাদেবী এই চমকের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। আনন্দের অশ্রুধারা দুই চোখ দিয়ে নেমে আসলো। শঙ্করবাবু বিনীতাদেবীকে জীবনে অনেক মূল্যবান উপহার দিয়েছেন, কিন্তু এটাই বিনীতাদেবীর কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার। শঙ্করবাবু কখন যে ডাইরী নিয়ে গিয়েছিলেন, বিনীতাদেবীর কাছে সমস্ত বিষয় অজানাই ছিল।