Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবনদান || Mrinmoy Samadder

জীবনদান || Mrinmoy Samadder

সমীর উঠতি যৌবনের একটি বখাটে ছেলে। বয়স মোটামুটি উনিশ-কুড়ি হবে। বাড়িতে বাবা মায়ের কথা একদম শুনতে চায় না। স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনা করতেই চায় না। স্কুল খোলা থাকলেও ওর দৌরাত্ম্য কমে না। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে শুরু করে ওর সহপাঠীরাও বিরক্ত। ওর দৌড়াত্ম‍্যে বাবা-মাও অতিষ্ঠ এমনকি পাড়াপড়শিরাও। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অভিযোগ বাবা-মায়ের কাছে আসতো। তাতে অবশ্য ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। স্কুল বন্ধ থাকলে সারাটাদিন পাড়ায় চড়কির মতো ঘুরে বেড়ায়। বাড়িতে থাকলে বাবা-মাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়। তবে এতকিছুর মধ্যেও পড়াশোনায় বেশ ভালো। স্কুলের শিক্ষকরা একবাক্যে সে কথা স্বীকার করে নেন। ওনাদের কথায় আরেকটু যদি মন দিয়ে পড়াশোনাটা করে তাহলে ও দুর্দান্ত রেজাল্ট করবে।
বৈশাখ মাস প্রায়দিনই বিকেলের দিকে কালবৈশাখীর ঝড় উঠছে। গাছপালা যেন মনে হচ্ছে নতুন জীবন লাভ করেছে এই বৃষ্টির জলে। গাছগুলো সব হাওয়ায় দুলছে। প্রকৃতির এই দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছে। দমবন্ধ গরম ভাবটা এই কালবৈশাখী ঝড় কাটিয়ে দিয়েছে। একটা বেশ ঠাণ্ডা রেশ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে গুমোট ভাবটা কেটে গিয়ে একটা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই কালবৈশাখীর কারণে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী থেকেও একটা মনোরম বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
এমন প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেও সমীর একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম কুড়োচ্ছে আর একটা থলেতে ভরে ভরে রাখছে। আম কুড়াতে কুড়াতে একটা সময় ও নদীর পাড়ে চলে এল। নদীতে পারাপারের জন্য নৌকো বাঁধা রয়েছে। পাড়ে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে ওপারে যাবেন বলে। কিন্তু নৌকা চালানো যাবে না বলে সবাই অপেক্ষা করছে ঝড় থামবার জন্য। সমীর নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে রইল। এমন সময় হঠাৎ একটা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে পেল। সচকিত হয়ে চারিদিকে তাকাতে লাগলো। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তাকাচ্ছে। নদীর দিকে হঠাৎ চোখ পড়তেই সমীর দেখল একজন লোক ভেসে যাচ্ছে স্রোতের টানে। শরীরের পুরোটাই জলের ভেতর হাতটা জলের বাইরে। কিছুক্ষণ পর পর হাত নেড়ে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করছে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলো দাঁড়িয়েই থাকলো। কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না। একটু চুপ থেকে কোন দিকে না তাকিয়ে সমীর হঠাৎ নদীতে ঝাঁপ দিল। সাঁতরে যেতে লাগল কিন্তু স্রোতের টানে ওকে যেতে দিচ্ছিল না। তবুও প্রচুর চেষ্টা করে সমীর ওই লোকটির কাছে পৌঁছাল। এদিকে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো হইহই করে চিৎকার করতে শুরু করেছিল যখন সমীর জলে ঝাঁপ দিয়েছিল। সাঁতরে যখন পৌছালো লোকটির কাছে লোকটি সমীরকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করল। সমীর অনেক কায়দা করে নিজেকে কাটিয়ে নিয়ে লোকটির চুল খামচে ধরে টানতে লাগলো। এরপরেও লোকটি আবার সমীরকে জড়াবার চেষ্টা করতেই লোকটির গালে টেনে এক চড় মারলো। এদিকে সমীরেরও দম বন্ধ হয়ে আসছে। একবার ডুবে যাচ্ছে আবার ভেসে উঠছে। ওকে তখনও সাহায্য করবার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সমীরের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। ও হতোদ্যম হয়ে পড়ছে।
যখন সমীরের এই অবস্থা তখন নৌকার মাঝি হঠাৎ নৌকায় রাখা দড়ির কাছিটা ছুড়ে দিল সমীরের দিকে। সমীর হাত বাড়ালেও দড়িটা ধরতে পারল না মাঝি দড়িটা আবার গুটিয়ে নিয়ে ছুড়ে মারল সমীরের দিকে। এবার দড়িটা ধরে নিলো। মাঝি ধীরে ধীরে দড়িটা নৌকোর দিকে টানতে লাগলো। এবার নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো মাঝির সাথে যোগ দিল। আর সমীরদের নৌকোয় টেনে নিয়ে এলো। প্রথমে ডুবে যাওয়া লোকটিকে নৌকায় তোলা হলো। তারপর সমীরকে। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এরপর শুরু হল লোকটির শুশ্রূষা। লোকটির পেটে পিঠে চাপ দিচ্ছে আর মুখ থেকে ভলকে ভলকে জল বের হচ্ছে।ধীরে ধীরে লোকটির পেটে পিঠে চাপ দিয়ে পুরো জল বের করে দেওয়া হলো। লোকটি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো।
ওদিকে নৌকায় ওঠাবার পর সমীরও চুপ করে নৌকার পাটাতনে শুয়ে পড়ল। ও অচেতন হয়ে পড়ল। কিছু লোক ওকে শুশ্রূষা করতে শুরু করল। এদিকে সমীরের জলে ঝাপ দেবার কথা গ্রামে হাওয়ার বেগে চাউর হয়ে গেল। ওর বাবা মা দৌড়ে নদীর কাছে চলে এলেন। যতক্ষণে ওনারা নদীর কাছে এলেন ততক্ষণে সমীর সুস্থ হয়ে গেছে। এদিকে লোকটি সুস্থ হয়ে সমীরকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাতে লাগলো। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই সমীরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এইসব শুনে সমীরের বাবা মায়ের বুক গর্বে ভরে উঠলো। যে সমীরকে সবাই গালমন্দ করতো আজ সেই একজন মরণাপন্ন ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তুলেছে। নদীর পাড়ে সবাই এক বাক্যে সমীরের সাহসিকতার প্রশংসা করতে লাগলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress