জিহাদপুরের সেই লোকটা
পিকনিকের দিনক্ষণ আয়োজন যখন সব ঠিকঠাক তখন সুনীতকাকু হঠাৎ বলে উঠল, না, আমি গাড়ি চালাতে পারব না। তোমরা ড্রাইভার জোগাড় করো। সে-ই গাড়ি চালিয়ে আমাদের পিকনিক স্পটে নিয়ে যাবে।
সুনীতকাকু খুব ভালো গাড়ি চালায়। সেটা আমরা সব্বাই জানি। এতক্ষণ কাকু গাড়ি চালাতে রাজি ছিল। কিন্তু পিকনিক স্পটের নামটা শোনামাত্রই বেঁকে বসল। অথচ ড্রাইভার নিলে আমাদের খরচের চাপ বাড়বে।
কেন, গাড়ি চালাতে পারবি না কেন?–রীতাপিসি জিগ্যেস করল।
সুনীতকাকু কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। একটা খোলা জানলার দিকে তাকিয়ে ঘোর লাগা গলায় বলল, গড়বেতায় যেতে হলে জিহাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে হয়। আর লক্ষ টাকা দিলেও আমি জিহাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে পারব না। সে দিনে তোক কি রাতেই হোক।
কেন, জিহাদপুরে কী হয়েছে?–লিলিদি, আমার জ্যাঠতুতো দিদি, জানতে চাইল।
সুনীতকাকু তক্ষুনি কোনও উত্তর দিল না। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরাল।
সিগারেট দেখে আমার চার বছরের বোন চন্দনা বায়না করতে লাগল। সুনীতকাকুর হাত ধরে টানতে লাগল আর বলতে লাগল, সাদা লজেন খাব, লম্বা সাদা লজেন খাব।
আমি ওকে কোলে করে সরিয়ে নিয়ে এলাম, কিন্তু জেদ ধরে ও চিৎকার করতে লাগল, আর হাত-পা ছুঁড়তে লাগল। ওর মুখে সেই এক কথা, লম্বা সাদা লজেন খাব।
অন্যসময় হলে চন্দনাকে আদর করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বেশ তোয়াজ করতাম। কিন্তু এখন সেরকম মনের অবস্থা কোথায়। সুনীতকাকুর জন্যে আমাদের শীতকালের বাঁধা পিকনিকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে।
লিলিদি আবার জানতে চাইল, কেন, জিহাদপুরে কী হয়েছে?
মাত্র চার বছর আগে একটা ব্যাপার হয়েছিল–এইরকমই শীতের সময়ে। তার পর থেকে ঠিক করেছি, জিহাদপুরের ওপর দিয়ে আর কখনও গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছি না।
কথা বলতে বলতে কান ধরার ভঙ্গিতে দু-হাত কানে ঠেকাল সুনীতকাকু। ঠোঁটে সিগারেট ধরা অবস্থাতেই বলল, হনুমানের দিব্যি–ও রাস্তায় আর নয়!
আমি হেসে বললাম, হঠাৎ হনুমানের দিব্যি কেন?
আমাদের আর্লি স্টেজে হনুমান আমাদের ক্লোজ রিলেটিভ ছিল। মানে, লক্ষ লক্ষ বছর আগের কথা বলছি আর কী! তাই সিনিয়ারমোস্ট গুরুজন হিসেবে আমি হনুমানকে খুব রেসপেক্ট করি।
চন্দনা তখনও জেদ দেখিয়ে তিড়িং তিড়িং করে লাফাচ্ছিল। সেদিকে তাকিয়ে মনে হল, সুনীতকাকুর হনুমান-থিয়োরিটা বোধহয় একেবারে মিথ্যে নয়।
রীতাপিসি প্রায় চোখ পাকিয়ে বলে উঠল, চার বছর আগে মাথামুণ্ডু কী না কী হয়েছে, তার জন্যে পিকনিক পণ্ড! তোর ওসব চালাকি ছাড়, সুনীত! আসলে তুই পিকনিকে যাবি না– তাই নানান ছুতো খুঁজছিস।
আমার খুব মনখারাপ লাগছিল। কারণ, আমার কাছে বছরের ছটা ঋতু হল এইরকম : গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, পিকনিক, বসন্ত। সেই পিকনিকটাই হবে না! খোলা মাঠ আর গাছপালার মধ্যে শীতের রোদ্দুরে পিঠ দিয়ে বসে খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলো, গানবাজনা–সব মাটি!
লিলিদি চন্দনাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বলল, সুনুকা, তুমি কি সিরিয়াসলি বলছ, না কি ঠাট্টা করছ?
সিগারেটে টান দিয়ে একমুখ ধোয়া ছেড়ে সুনীতকাকু বলল, বিশ্বাস কর–সিরিয়াসলি বলছি। তোরা অন্য কোথাও পিকনিক স্পট ঠিক কর–সেটাই ভালো হবে।
কেন, কী হয়েছিল তোর ওই জিহাদপুরে সাতজন্মে নাম শুনিনি! খুলে বল দেখি! রীতাপিসি ভাইকে যেন সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাল।
শোন তা হলে!বলল সুনীতকাকু, তবে ছোটরা কিন্তু ভয় পেতে পারে।
আমি বললাম, ভয়! পিকনিক পণ্ড হওয়ার ভয়ে আমি অস্থির! এর চেয়ে বেশি ভয় আর কিছুতে আছে নাকি!
সুনীতকাকু কিন্তু বেশ গম্ভীর গলায় বলল, আছে জিহাদপুরের ভয়। শোন, বলছি…।
.
তোরা তো জানিস, ছোটবেলায় আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন। তারপর থেকে বলতে গেলে জ্যাঠামশায়ের কাছেই আমি মানুষ। জ্যাঠামশায় দারুণ মানুষ ছিলেন। আজকাল এরকম গুরুজন পাওয়াই মুশকিল। আমার ছোটবেলাটা এত দারুণ কেটেছিল যে, এখনও সেসব দিনের কথা মনে পড়লে মনটা কেমন হয়ে যায়।
জ্যাঠামশায় বরাবর মহানগঞ্জে থাকতেন, জমি-জমা দেখাশুনো করতেন। শহর ওঁকে মোটেই টানত না। বছর চারেক আগে তিনি একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমি কলকাতা থেকে গাড়ি চালিয়ে ওঁকে দেখতে গেলাম। তখন বুঝতে পারিনি যে, আমি জিহাদপুরের ওপর দিয়ে গেছি।
তিনদিন পর কলকাতার পথে যখন রওনা হলাম তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কারণ, জ্যাঠামশায়ের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। বলতে গেলে এখন-তখন।
সুতরাং গাড়ি চালিয়ে ফেরার পথে মনটা কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। বারবার ছোটবেলার কথা মনে পড়ছিল। আর ভুলে যাচ্ছিলাম যে, ছুটন্ত গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে আছি।
শীতের সময়। সন্ধে নেমে গেছে অনেকক্ষণ। সোয়েটার-জ্যাকেট পরে গাড়ির ভেতরে বসে থাকলেও কনকনে শীত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় কুয়াশা ভেদ করে কালো পিচের রাস্তা আবছা দেখা যাচ্ছিল।
দিব্যি গাড়ি চালিয়ে আসছি, হঠাৎই দেখি আমার ঠিক সামনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে চাদর মুড়ি দেওয়া একটা লোক কোত্থেকে এসে যেন দাঁড়িয়ে পড়ল।
লোকটা এত আচমকা গাড়ির সামনে এসে হাজির হল যে, মনে হল সে ঠিক একটা গাছের মতো মাটি খুঁড়ে মাথাচাড়া দিয়েছে।
ব্যস! যা হওয়ার তাই হল। আমি প্রাণপণে ব্রেক কষলাম বটে, স্টিয়ারিংও কাটালাম, কিন্তু কোনও লাভ হল না। লোকটা এত কাছে দেখা দিয়েছিল যে, পৃথিবীর কোনও ড্রাইভারই ওকে বাঁচাতে পারত না।
আমার গাড়ি সপাটে লোকটাকে ধাক্কা মারল। বীভৎস একটা শব্দ হল। লোকটা কোথায় কাত হয়ে পড়ল দেখতে পেলাম না।
আরও অন্তত হাত দশেক গিয়ে তবে আমার গাড়ি থামল। স্টিয়ারিং কাটানোর ফলে গাড়িটা পিচের রাস্তা ছেড়ে মাটির ওপরে নেমে এসেছে। আর আমি হতভম্ব হয়ে চুপচাপ বসে আছি। ভাবছি, লোকটা আছে, না খতম হয়ে গেছে!
একটু পরে যখন কাণ্ডজ্ঞান ফিরে পেলাম তখন দরজার হাতল ঘুরিয়ে গাড়ি থেকে নামতে গেলাম। বুকের ভেতরে ধড়াস ধড়াস শব্দ হচ্ছিল। এর আগে আমি কখনও মানুষকে ধাক্কা মারিনি। আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম, কোনও লোকজন চোখে পড়ে কি না।
নাঃ, কেউ নেই।
হঠাৎই বন্ধ কাচের জানলায় ঠকঠক শব্দ হল।
চমকে মুখ ফিরিয়ে দেখি বাঁ-দিকের দরজার বাইরে চাদর মুড়ি দেওয়া একজন মানুষ সামান্য কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হেডলাইটের আলো গাছের গুঁড়িতে ঠিকরে পড়ে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে যাচ্ছিল। তারই আভায় লোকটির মুখ আবছা চোখে পড়ছিল। তা ছাড়া কপালের ওপরটায় চাদরের আড়াল থাকায় চোখ দুটো প্রায় দেখাই যাচ্ছিল না।
তবে লোকটা বোধহয় পান খাচ্ছিল। কারণ, ওর ঠোঁটের কোণ দিয়ে পানের রস গড়িয়ে পড়ছিল।
লোকটা ইশারায় আমাকে জানলার কাচটা নামাতে বলল।
আমার হাত-পা থরথর করে কাঁপছিল। গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করলে তারপর যা-যা হয় সেসব মনে পড়ছিল : গণধোলাই, পুলিশের হাতে নাকাল হওয়া, ঘুষ–আরও কী কী আছে কে জানে!
কোনও কথা না বলে কাঁপা হাতে জানলার কাচটা নামালাম।
সঙ্গে-সঙ্গে রুক্ষ কর্কশ গলায় লোকটি বলে উঠল, একটু দেখে চালাতে পারেন না! স্টিয়ারিং হাতে পড়লেই কি জ্ঞানগম্যি হারিয়ে ফেলেন।
আমি সাফাই হিসেবে কিছু একটা বলতে গেলাম। কিন্তু এত অবাক হয়েছিলাম যে, ঠোঁট কেঁপে ওঠাই সার–গলা দিয়ে কোনও আওয়াজ বেরোল না। আশ্চর্য! এইরকম ধাক্কা মারার পরেও লোকটা বেঁচে আছে।
একটা ঠান্ডা ভয় আমাকে ক্রেপ ব্যান্ডেজের মতো জড়িয়ে ধরল। তারপর সেই ভয়টা টুইয়ে চুঁইয়ে ঢুকে যেতে লাগল আমার শরীরের ভেতরে।
কী যে হল আমার, আচমকা গাড়ি স্টার্ট করে পাগলের মতো ছুটিয়ে দিলাম।
ধুলো উড়ল, ইঞ্জিনের গোঁ-গোঁ শব্দ হল, ক্ষিপ্র হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি তুলে নিয়ে এলাম রাস্তায়। তারপর শুধু অ্যাকসিলারেটরে চাপ দিয়ে রাখলাম। মনে শুধু একটাই চিন্তা ও এখান থেকে যেভাবে হোক পালাতে হবে।
গাড়ি আমার কথা শুনেছে। দেখলাম, সামনের পিচের রাস্তাটা মরিয়া হয়ে ছুটে যাচ্ছে পেছন দিকে।
খোলা জানলা দিয়ে হু-হু করে বাতাস ঢুকছিল। আমার প্রচণ্ড শীত করার কথা, কিন্তু আতঙ্কে শীতের কামড়টা টের পাচ্ছিলাম না।
এই যে বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছেন–দেখবেন, আবার একটা অ্যাকসিডেন্ট হবে।
কে বলল কথাটা।
চমকে বাঁ-দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখি গাড়ির জানলায় সেই লোকটা। গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে ছুটছে। এক হাতে জানলায় নামানো কাচটা চেপে ধরে আছে।
আমি পাথর হয়ে গেলাম।
গাড়ি ঘণ্টায় অন্তত ষাট-সত্তর কিলোমিটার বেগে ছুটছে। লোকটা এই গতিবেগের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে কী করে! এ যে বেন জনসনকে হার মানায়!
সামান্য হেসে লোকটা বলল, আমরা জিহাদপুরের লোক। অন্যায় দেখলেই আমরা প্রতিবাদ করি। আপনি যে আমার বডির ওপর দিয়ে গাড়িটা চালিয়ে দিলেন, এর বিহিত করবে কে!
আমি কোনও জবাব দিতে পারলাম না। রোবটের মতো গাড়ি ছুটিয়ে চললাম।
লোকটা জানলায় ফ্রেমে আঁটা ছবির মতো গাড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বিকারভাবে ছুটে চলল। আর একনাগাড়ে ওর প্রতিবাদ জানিয়েই চলল।
জিহাদপুরের লোকদের কাছে অন্যায় জুলুম চলবে না। আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করতে জানি। মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের প্রোটেস্ট থামবে না। এমনকী মরে গেলেও আমরা প্রতিবাদ করতে ছাড়ি না–আমাদের জেদ এমন!
লোকটার শেষ কথাটা আমাকে যেন চাবুকের বাড়ি মারল।
মরে গেলেও আমরা প্রতিবাদ করতে ছাড়ি না…। তার মানে!
আমার হাতের কথা স্টিয়ারিং আর শুনল না। পলকে বেসামাল হয়ে গেল। গাড়ির পথটা এলোমেলো হয়ে গিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত ধাক্কা মারলাম রাস্তার ধারের একটা মোটা গাছের গুঁড়িতে।
যে-কোনওভাবেই হোক, আমার বাঁ-পা নিতান্ত অভ্যাসবশে চেপে বসেছিল ব্রেকের ওপরে। তাই ধাক্কাটা সেরকম মারাত্মক হয়নি।
তালগোল পাকানো শব্দ হল নানারকম। ব্রেক কষার কাচকাচ আর্তনাদ, আমার ভয়ের চিৎকার, আর সবশেষে সংঘর্ষের শব্দ।
আমি স্টিয়ারিং-এর ওপরে মাথা ঝুঁকিয়ে হাঁপাচ্ছিলাম। একটু সময় নিয়ে ভয়েভয়ে আড়চোখে তাকালাম জানলার দিকে।
ভেবেছিলাম, জানলায় জিহাদপুরের লোকটাকে আর দেখতে পাব না। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আমার চোখের ভুল ছিল–এখন সেই অলীক স্বপ্ন মিলিয়ে গেছে।
কিন্তু না, লোকটা তখনও জানলায় রয়েছে।
ওর মাথার ঘোমটা সরে গেছে। এখন ওর চোয়াড়ে মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জিনিসটাকে আগে পানের রস ভেবে ভুল করেছিলাম।
এখন বুঝলাম, ওটা রক্তের রেখা।
লোকটার বাঁ-গাল বেয়েও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। বোধহয় মাথায় চোট পেয়েছে।
আমার চিন্তাভাবনা সব জট পাকিয়ে শুধু আতঙ্ক মনে বাসা বেঁধেছিল। সেই আতঙ্কের ঠেলায় ডান হাতে আমার দিকের দরজাটা খুলে ফেললাম। পালাতে হবে! যেভাবেই হোক, এই ভয়ংকর লোকটার কাছ থেকে আমাকে পালাতে হবে!
দরজা খুলে সবে একটা পা গাড়ির বাইরে রেখেছি, তক্ষুনি লোকটা বকবক করতে করতে এক হ্যাঁচকায় ওর দিকের দরজাটা হাট করে খুলে ফেলল।
দেখুন! আমার কী হাল করেছেন দেখুন! আর আপনি এখন পালাচ্ছেন।
খোলা দরজা দিয়ে যা দেখলাম তা যেমন ভয়ংকর তেমনই অবিশ্বাস্য।
মাথা থেকে শুরু করে রক্তাক্ত কোমর পর্যন্ত পৌঁছেই লোকটার শরীর শেষ হয়ে গেছে। তারপর শুধু শুন্য!
যেন বাতাসে ভর করে একটা অর্ধেক মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমার দাঁতে-দাঁতে ঠোকাঠুকি লেগে গিয়েছিল। চোখ দুটো বোধহয় ভয়ে পাগল হয়ে বাইরে ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। বিশাল হাঁ করে ফেলেছিলাম এক প্রাণান্ত চিৎকার করে ওঠার জন্যে।
ঠিক তখনই লোকটা ঠান্ডা গলায় বলেছিল, দেখেছেন, আপনার গাড়ি চাপা পড়ে আমার বডিটা একেবারে দু-আধখানা হয়ে গেছে! নীচের অর্ধেকটা সেই অ্যাকসিডেন্টের জায়গাতেই পড়ে আছে। চলুন, দেখবেন চলুন, মিথ্যে বলছি কি না!
লোকটা হাত বাড়াল আমার হাত ধরার জন্যে।
তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।
পরদিন জেনেছি, গাড়ির জ্বলন্ত হেডলাইট দেখে স্থানীয় লোকজন আমাকে খুঁজে পেয়েছিল।
তা ছাড়া ওরা কখনও জিহাদপুরের নাম শোনেনি।
সুনীতকাকুর গল্প শেষ হওয়ার পর আমরা আর কোনও কথা বলতে পারলাম না।