Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জাপানের কবিতা || Sankar Brahma

জাপানের কবিতা || Sankar Brahma

জাপানের কবিতা

জাপান হ্রস্বতম কবিতার দেশ, হাইকুর দেশ।অন্যদিকে আমরা জানি, উদিয়মান সূর্যের দেশ,চেরী ফুলের দেশ।
জাপানী কবিতা অন্যান্য দেশের কবিতার মতো নয়।সে দেশের কবিতা অবিমিশ্র- কাব্যিক ও অকাব্যিক কোন বিবেচনা প্রসূত নয়। কবিতার আকৃতি এখানে মূলতঃ হ্রস্বতম।এদের কবিতা চীনের কবিতার কাছে ঋণী হলেও জাতীয় মানসিকতায় পরিস্রুত।জাপানী কবিতা চীনের মতোই সংযত।ফলে তাদের কবিতায় অনেক কিছুই অনুক্ত।এক ফুলের কলির বিকাশে,
সমগ্র বসন্তকে ধরার চেষ্টা।সন্ধ্যা ঝরা পাতার দৃশ্য বর্ণনায় হেমন্তকে ধরার প্রচেষ্টা।ঘাসের উপরে শিশির ফোটার দৃশ্যে সমগ্র জীবনের অনিত্যকে ধরার চেষ্টা।
জাপানে কবিতা চর্চা সমাজের সকলেই করে।
কবি বলে আমাদের মতো, ওখানে কোন রকম কোন আলাদা সম্প্রদায় নেই।সকলেই মোটামুটি লিখতে পারেন। অনুভূতির প্রাধান্য ও ছন্দের সারল্যই
এর মূল কারণ।
জাপানের বেশীর ভাগ কবিতাই ‘তানকা’ বা ‘ওয়াকা’।পাঁচ পংক্তিতে( ৫-৭-৫-৭-৭)মোট একত্রিশ মাত্রায় রচিত।তাছাড়া ‘হাইকু’ (৫-৭-৫) মোট সতেরো মাত্রা, লেখার চলও আছে।
জাপানের প্রাচীনতম কবিতা সংগ্রহ ‘কোজিকি’ (৭১২ খ্রীষ্টাব্দে সংকলিত)। এর আগেও কবিতা মৌখিক ভাবে প্রচলিত ছিল, তবে তা লিপির অভাবে তখন লিপিবদ্ধ হতে পারেনি।
৭৫৯ খ্রীষ্টাব্দে সংগৃহীত ‘মানয়োও শুউ’
( দশ হাজার পত্র সংগ্রহ) পৃথিবীর অন্যতম কবিতা সংগ্রহ।
জাপানের কবিতা মূলতঃ চিত্রকল্প প্রধান। জাপানের প্রাচীন যুগের প্রতিভাধর কবিরা হলেন, হিতোমারো,য়াকামোচি,ওকুরা প্রমুখ।

হিতোমারো(জন্ম-৬৮১-মৃত্যু সাল জানা যায়নি)

১).
প্রভাত-ঘুমের কেশ
আঁচড়াব না তো,
লেগে আছে
সুরূপ প্রিয়ের
বাহু-বালিশের পরশ।
২).
আকাশ সাগরে
ঢেউ-তোলা মেঘে
চাঁদের জাহাজ,
তারার অরণ্য দিয়ে
দাঁড় বেয়ে যায়।

য়াকামোচি(৭১৮-৭৮৫)

১).
সন্ধ্যা এলে
আগেই দুয়ার খুলে
প্রতীক্ষায় থাকি –
সে বলেছে আসবেই
স্বপ্নে দেখা দিতে।
২).
ছল করে বলেছি
‘যাই তো দেখি
কি হাল হয়েছে
বাঁশের বেড়ার’
আসলে তোমার দেখা।

ওকুরা(৬৬০-৭৩৩)

দুর্গত

যদিও প্রবাদ –
এ আকাশ,পৃথিবী বিশাল,
আমি তো দেখেছি তারা
গুটিয়েছে আমার উপর।
যদিও প্রবাদ –
চন্দ্র- সূর্য দ্যুতিময়
আমি তো দেখছি তারা
আমার উপর যেন কিরণ বিমুখ।
সব মানুষেরই কি এই দুর্ভোগ
নাকি আমর একার?
পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি মানুষের
ক্ষেতে খামারে করেছি
কঠোর শ্রম সকলের মতই।
তবু আমার পোষাক
মোটা পাটের সূতোর
পাতলা জ্যালজ্যালে ফতুয়া
কাঁধের উপর দিয়ে ঝুলে
শতচ্ছিন্ন টুকরোয়
সমুদ্রের কর্কশ শ্যাওলা
এর চেয়েও ভাল।
আমার বাড়িটা চালাঘর
ছড়ানো খড়ের নীচে
নগ্ন শীতল মাটিতে
নীচু ছাদ অর্ধেক নেমেছে।
উপরে আসনে
বাবা মা বসে গুটিশুটি
আর নীচে
স্ত্রী ছেলে মেয়েরা
বসে আমার গা ঘেঁষে
নির্দয় কান্নায়।
ঘরের উনুনে
আগুন তোলে না ধোঁয়া
হাড়িতে একাকী
মাকড়সা জাল বুনে চলে।
আমরা ভুলেছি
রান্না করাটাও
রাতের চড়াই হয়ে
ক্ষীণ কান্নায় ভাঙি।
তবুও এই শেষ নয়
দুর্দশার চূড়ান্ত পর্যায়ে।
লোককথা –
ছোটকে ছোট করতে গিয়ে
দরজায় লাঠি হাতে
ভীমমূর্তি রাজ-পেয়াদা
হাক পাড়ে
জাগো, খাজনা দাও।
এই কি তবে জীবন হবে
সাধ্যাতীত,আশাহীন
এই কি জগতের রীতি?
উপসংহার –
আমরা ভাবতে পারি কেউ
জীবন বেদনাময়
আমাদের ভাগ্য লজ্জাকর,
মানুষ তো পাখি নয়
যে উগে গিয়েও মুক্তি পাবে।
হেইয়ান যুগে(৯১৭- ১১৮৫) দেখা গেছে একটা আশ্চর্য ব্যাপার,পুরুষরা কাব্য রচনা করত চিনা ভাষায়, আর মহিলারা করত জাপানী ভাষায়।
৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে ‘ৎসুরায়াকি’ সংকলিত
‘কোকিন শুউ’ ( প্রাচীন ও আধুনিকদের একত্রিত কাব্য সংকলন)।
কামাকুরা ( ১১৮৫- ১৩৩৩)যুগের মাঝামাঝি থেকেই ‘তানকা’র ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে।
মোরুমাচি(১৩৩৩-১৬০০) যুগে রেঙ্গা বা যুক্ত কবিতার খুব প্রচলন হয়।রেঙ্গা মূলতঃ তানকা,প্রথম তিন পংক্তি একজনের বাকী দুটি অন্যের।
তোকুগাওয়া(১৬০০-১৮৬৮) যুগে কবিতার তেমন উন্নতি হয়নি।এ যুগের বৈশিষ্ট হলো, ‘এদো’ ও ‘সেনরু’।দু’টিই হাইকু ধরণের কবিতা।
‘এদো’ সম্পূর্ণ ব্যাঙ্গাত্মক লেখা।
‘সেনরু’- এ ফুটে ওঠে জীবনের অন্তর্দৃষ্টি।জাপানী সাহিত্যের মূল ধারা নয় বলে ‘এদো’ ও ‘সেনরু’র অবক্ষয় ঘটে পরবর্তীকালে।
সম্রাট মেইজীর রাজত্বকালে মেইজী যুগে (১৮৬৮-১৯১২) খ্রীষ্টাব্দে দেশে বিরাট পরিবর্তন আসে,(রুদ্ধদ্বার খুলে গিয়ে)জাপানী কৃষ্টির পুরর্জীবন ঘটে, আধুনিকতাবাদের শুরু হয়।
ইউরোপীয় কাব্যানুবাদের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ কবিতা লেখার প্রচলন ঘটে। নাম হয় ‘ শিন তাই শি’ অর্থাৎ ‘নতুন বড় কবিতা’।
বিভিন্ন মতবাদের মধ্য দিয়ে জাপানী কবিতা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠতে থাকে ।কাব্যিক উপমা, উৎপ্রেক্ষা পরিহার করে সহজ সরল গদ্য কবিতা লেখা শুরু হয়।
বর্তমানে সেখানে ‘ শোয়া’ যুগ ( ১৯২৬- ২০২০) চলছে। ইয়োরোপীয় ডাডা-ইজম, চীন-রাশিয়ার সর্বহারাবাদ,ফরাসী দেশের বিপ্লববাদ,সুকুমার ও ধ্রুপদী সাহিত্যের মেলবন্ধনে নতুর ধারার লেখার লেখালেখি
চলছে সেখানে। এখন সেখানে হাইকু বা তানকা লেখা
হয় না বললেই চলে। ওদের পরিত্যক্ত জিনিষ নিয়ে আমরা বাংলা ভাষায় গর্বের সঙ্গে চর্চা করে চলেছি। সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ।
প্রায় ষোল শতাব্দী ব্যাপী জাপানী কবিতার দীর্ঘ ইতিহাসের সংক্ষিত পরিচয় হল এই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *