Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জাগো দুর্গা || Samarpita Raha

জাগো দুর্গা || Samarpita Raha

চতুর্থীর দিন কারখানা থেকে ছুটি হবার সাথে সাথেই
ছুটছে উমার মা,
মেয়েটার সাতটার পর কোচিং এর ছুটি৷
তারপর মায়ের জন্য অপেক্ষা করবে রসুলপুরের মোড়ে।

কতজনকে জিজ্ঞাসা করে দুর্গা, ‘সাতটা বেজে গেছে’?
কিন্তু, মোড়ের মাথায় যেন অগনিত মানুষের ভিড়,
যেন দুর্গামা মণ্ডপে যাবার অপেক্ষায়।
তারই মধ্যে ভেসে আসছে করুণ আকুতি,’জ্বলে গেলো ..জ্বলে গেলো’!
“মা তুমি কোথায় গেলে”?

হৈ-হৈ জনতার মুখোরোচক কথাবার্তা!
ইসস!অ্যাসিডে মুখটা এক্কেবারে পুড়ে ঝলসে দিয়েছে!
কিছু জনতা অদ্ভুত কথা বলছে, এরকম দৃষ্টান্ত কিছুক্ষণ কষ্ট পাক!
এই বয়সে প্রেম করবি মাশুল গুনবি না!

হায়রে মানবিকতা, সব ফুলদানিতে শুকনো ফুল!
তাদের ঘরের ছেলেরা আজ কেউ ইঞ্জিনিয়ার,কেউ ডাক্তার, কেউ ধর্ষক নতুবা মীরজাফর!
হাঁপাতে হাঁপাতে দুর্গা ভাবে তার উমা নয় তো!

ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্স , পুলিশ, সমাজসেবক, কতজনের আবির্ভাব,
যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে চৌদ্দ বছরের উমা বলছে,
“মা, আজকে যে আমার নতুন জামা কেনার কথা ছিল”!
মনে মনে দুর্গা ভাবে –”সব হবে রে মা “
তুই সুস্থ হয়ে প্রাণটা নিয়ে আগে ঘরে ফের।
মা দুর্গা রক্ষা করলে সব হবে রে মা।
তুই যে আমার কনীনিকা, একমাত্র শিবরাত্রির সলতে”!

হাসপাতালে দেড় দিন কেটে যায় অশ্রুজলে,
হঠাৎ দুর্গার মনে হয়, আজ তো মা দুর্গার বোধন–
মেয়েটার নতুন জামা কিনতে হবে!
চতুর্দিকে ঢাকের আওয়াজ ঢ্যাং কুড়াকুড়, ঢ্যাং কুড়াকুড় শব্দ৷
তাতে মনে হচ্ছে যেন সবাই ইঙ্গিত করে বলছে,
দেখো কাণ্ড!
মেয়ে অ্যাসিডে আক্রান্ত,মরে কি বাঁচে তার ঠিক ঠিকানা নেই,
মেয়ের জন্য সোহাগ করে জামা কিনেছে!!!
বিবেক যেন চিৎকার করে বলছে,বেশ করেছি কিনেছি।
হাসপাতাল চত্বরে এপার প্রান্ত থেকে ওপার প্রান্ত পর্যন্ত ছুটছে দুর্গা,
“উমা মা, কোথায় গেলি,
এই দেখ তোর নতুন জামা”!
যখন জ্ঞান ফেরে দুর্গা দেখে ম্যাটাডোরে মেয়েটা কেমন আকাশপানে চেয়ে শুয়ে আছে।
পোস্টমর্টেমের পরে সারা গায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা৷
হঠাৎ, এসব কি হচ্ছে, চিৎকার করে দুর্গা বলে “বোধনে বিসর্জন”!
অভাগী মেয়েটা নতুন জামা না পরে চলে গেল!
আর দেখো, তোমরা প্রতিটি পুজো প্যাণ্ডেলে কত লাল, নীল, সবুজ উমারা প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে!
আর আমার উমা রাজকন্যার মতো, আলোর রোশনাই এর মধ্যে দিয়ে বিসর্জনে চলেছে৷

হঠাৎ দুর্গার মাথায় দাবানলের মতো আগুন জ্বলে ওঠে,
“আমি রসুলপুরের অসুরদলনী দুর্গা,
আসছি তোদের ধ্বংস করতে , মেয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে”!
মাইকে বাজছে–জাগো!
জাগো দুর্গতিনাশিনী, অসুরদলনী দুর্গা।
দুর্গার রণতাণ্ডব দেখে মর্তের সকল অসুর,দানব,ভয় পাক,নিধন হোক।
ভবিষ্যতে যেন আর কোনো দুর্গাকে অকালে বিসর্জন না হতে হয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *