Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জলছবি || Satyajit Chowdhury

জলছবি || Satyajit Chowdhury

জলছবি

রাত বারোটা । দেওয়ালের ঘড়ি সুরেলা আওয়াজে জানিয়ে দিল । ঋতুপর্ণার তন্দ্রার মতো লেগে গিয়েছিল । কিন্ত ঘুমটা গাঢ় হয়নি । বাইরে কিছু একটা শব্দ হল । বারান্দায় এসে লাইট জ্বালালো । না, কেউ নেই । ভাস্কর এখনো এল না । কিন্তু এত দেরি তো করে না । ন’টা দশ’টা নাগাদ ফিরে আসে । রেবেকাকে পৌঁছে দিয়ে কোনো কোনো দিন বসন্তবাবুদের ওখানে আড্ডা মেরে আসে ।

ভেতরের ঘরে ওদের একমাত্র ছেলে অঘোরে ঘুমিয়ে আছে । শেষের দিকে ভাস্করের স্টাডি রুম । রুমে ঢুকে আলো জ্বালালো । এটাই বিখ্যাত চিত্রকর ভাস্কর পালের চিত্রশালার আতুর ঘর । দেওয়ালে কিছু ক্যানভাস ঝুলানো রয়েছে । একটি মোনালিসার বিখ্যাত ছবির প্রতিকৃতি । অন্য একটি ঋতুপর্ণার মুখের একপাশের ছবি । এদিক ওদিক ছড়ানো কিছু সাদা ক্যানভাস ।

ঘরের মাঝে অর্ধ সমাপ্ত একটি নারীর ছবি । ছবির সামনে এল ঋতুপর্ণা । স্পষ্টই বুঝা যায়, এটা রেবেকার ছবি । ইদানিং পাহাড়ী মেয়ে রেবেকা ভাস্করের ছবির মডেল । পাহাড়ী মেয়ের রূপ সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলছে ভাস্কর তার তুলির টানে । ক্যানভাসের চারপাশে রঙের কৌটাগুলো অগোছালো ভাবে ছড়িয়ে আছে এদিক ওদিক । আজকাল ভাস্করকে কেমন অচেনা মনে হয় । যেন সবসময় অস্থিরতায় ভুগছে । ঋতুপর্ণার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে না । বুবাইকেও সেভাবে আদর করে না ।

কলেজ জীবনে ভাস্কর ছিল তারুন্যের প্রতিমূর্তি । কি বিতর্কে, কি খেলাধুলায়, কি গানে, সে ছিল সবার সেরা । ওকে নিয়ে শিপ্রা, নীলাঞ্জনা, মেঘমালারা ঋতুপর্ণাকে হিংসা করতো । ওরা সবাই আর্ট কলেজে একই ব্যাচের । মাঝে মাঝে দল বেঁধে স্টাডি ট্যুরে বেরিয়ে পড়ত । কি মজাই না হতো । সেই সময়ে ভাস্কর ঋতুপর্ণার একটি পোর্টাইট আঁকছিল । ওরা ঋতুপর্ণাকে ক্ষেপাত, ওই তোর লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আসছে রে মোনালিসা । ঋতুপর্ণা রাগ করত । কিন্ত ভাস্কর মুচকি হেসে বলতো, বেহেলা বাদকের পদটা না হয়, তোদেরই দিলাম ।

এমনিভাবে কলেজের দিনগুলো হাসি ঠাট্টা আনন্দে কেটে গেল । কলেজের ফাইনালের পর ওরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল । ঠিক হয়েছিল, ভাস্কর স্বাধীন ভাবে ছবি আঁকবে, ঋতুপর্ণা চাকরি করবে । সেইমত ঋতুপর্ণা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে আর্ট টিচারের চাকরি নিয়ে এই মফস্বল শহরে এসেছে । ভাস্কর আজ এই অঞ্চলের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী । তার আঁকা ছবিগুলো চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায় । ঋতুপর্ণা, বুবাইকে নিয়ে ভাস্করের সুখের সংসার । কিন্তু সত্যিই কি তাই?

আজকাল ঋতুপর্ণা বেশ বুঝতে পারে, ভাস্কর তাকে এড়িয়ে চলে । ঋতুপর্ণা রেবেকার ছবির দিকে ভালোভাবে তাকায় । কি উদাস চাউনি । কিন্তু ভাস্কর ছবিতে এত রঙ চাপিয়েছে কেন? একটি ছবি হয় রঙের সিম্ফনিতে । অনেক চাপা রঙের বিভঙ্গে যেন দ্যুতি বিচ্ছরিত হয় । ভাস্করের ছবিতে যেন রঙের ভান্ড উপুড় করে ঢেলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু উজ্জ্বলতার আভা নেই । তবে কি ভাস্কর পিছন দিকে
ছুটতে শুরু করেছে । খুব বেশি স্বামীত্বের দাবি করে আজকাল । নিজের পরাজয়কে মেনে নিতে চায় না ।
সে এক অদৃশ্য যুদ্ধে মগ্ন । যে যুদ্ধে আত্মহুতি ছাড়া আর কোনো পথ নেই । রেবেকার ছবিটি খুঁটিয়ে দেখে ঋতুপর্ণা । রেবেকা এখানে প্রকৃতির কন্যা । প্রকৃতির কোলে এক চঞ্চলা হরিণী । কিন্ত ছবিতে নগ্নতা এত প্রকট কেন? বিষয়বস্তু নগ্নতা হতে পারে, কিন্তু তাতে অশ্লীলতা না থাকা সম্পূর্ণ সম্ভব । কিন্ত ভাস্করের ছবিটি চিত্রকলা না হয়ে ফটোগ্রাফ হয়ে উঠেছে ।

ঠক, ঠক. । দরজার কপাট খোলে দিতেই ভাস্কর টলমল পায়ে ঘরে ঢুকলো । মুখে মদের উগ্র গন্ধ ।
-তুমি মদ খেয়ে এসেছো?
– আমাকে ক্ষমা কর পর্ণা, রেবেকার মাঝে আমি অন্য কিছু খুঁজছিলাম । দেখলাম ও খুব সাধারণ ।
ভাস্কর কান্নায় ভেঙে পড়লো । একটা আশ্রয়ের খোঁজে ঋতুপর্ণার কোলে মুখ লুকালো । প্রথমে ঋতুপর্ণার রাগ হলো, তারপর মায়া হলো । ভাস্কর এখন বড্ড বেশি অসহায়, ও একটা আশ্রয়ের দরকার । ঋতুপর্ণা ভাস্করের মাথায় হাত রাখলো, আস্তে আস্তে চুলে বিলি কাটতে লাগলো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress