Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আশিস হাতে না নিয়ে এক ঝলক দেখে বলল, নগদ প্রাপ্তি কিছু হয়েছে কি। মন অবাক হয়ে বলল, ঐটাই কি সব ! কত বড় সম্মান বলো তো ,কতজনকে টপকে আমি সেরা হলাম এর দাম কি পয়সা দিয়ে মাপা যায়। আশিস তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, বইগুলো যে ছাপালে কতগুলো বিক্রি হয়েছে! আমার তো খরচাটাও আনতে পারলে না।এই মেমেন্টো ভাঙা শিশি বোতল যে লোকটা নেয় সেও নেবে না।ওটা ধুয়ে জল খেও পেট ভরবে।যত্তোসব। মন বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আশিসের কথাগুলো শুনছে,বলা ভালো মনের কানে কেউ যেন গলানো লোহা ঢেলে দিচ্ছে।এর আগেও আশিসকে তার বিভিন্ন সাফল্য দেখাতে গিয়েছিল মন। আশিস হুঁ হ্যাঁ করে ছেড়ে দিয়েছিল,উৎসাহ দেখায় নি।কিন্তু আজ তো চরম অপমান করছে।অপমানে কাঁপতে কাঁপতে কোনও রকমে নিজের ঘরে এলো মন।পথে মানাই-এর ঘর, বাবা নিজে এসেছে বলে মেয়েকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে এনেছে।মানাই মনকে দেখে হাই মাম বলে বাবার একটা বাতিল ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মন কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালো যদি মানাই আসে। এলো না। ধীর পায়ে নিজের ঘরে এসে বুঝলো তার দু’গাল বেয়ে নেবে এসেছে জলের ধারা।মন অসহায় হয়ে সিলিং-দিকে নিষ্পলক দৃষ্টি মেনে দিল। অঝোরে জলের ধারা ভিজিয়ে দিচ্ছে তার পোষাক। হ্যাঁ এটা ঠিক সে আশিসের টাকা নিয়ে বই ছাপিয়েছে,খুব আশা ছিল বই বিক্রি করে টাকাটা তুলে দেবে আশিসের হাতে।স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেছে।একে তাকে ঠেলে ঠুলে কিছু বই গছিয়েছে, বাকিগুলো রয়ে গেছে লফ্টে।আশিস আজ ঐ খোঁচাটাই দিল।মেয়েটা,যাকে সে গর্ভে বহন করেছে,নিজের রক্তবিন্দু দিয়ে তিলতিল করে পূর্ণ শরীর দিয়েছে সে’ও আজ বাবার কথায় নিজের মা’কে ব্রাত্য করে দিয়েছে। খুব মনে পড়ছে বাবা আর মায়ের কথা।বাবা থাকলে তো বুক দিয়ে সামলাতো এখন,নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে মনের।কাজের মেয়ে জেনে গেল এখানে খাবে না ডাইনিং হলে যাবে। মন সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল- সে খেয়ে এসেছে খাবে না। সুলতা চলে গেল।ঘোর কাটিয়ে মন উঠলো,জামা কাপড় বদলে বাথরুমে গিয়ে অনেক্ষণ স্নান করে একটু স্থিতধী হলো।ঘরে এসে ফোন তুলতে গিয়েও থেমে গেল , এখনই আশিস আসবে।ঠিক তাই একটু পরেই আশিস ঘরে এসে সরাসরি বললো – ঐ সব দশ পয়সার মাল পেয়ে পেট ভরে গেল ? দেখ মন দুনিয়াটা খুব কঠিন, ঐ সব লেখালিখি করে বরের পয়সায় তোমাদের পেট চলতে পারে,আমোদ আহ্লাদ চলতে পারে, ভেবে দেখবে ঐ টাকাটা জোগাড় করতে আমার কালঘাম ছুটে যায়।প্লিস ডু সামথিং কন্সট্রাকটিভ এইসব পাতি মেমেন্টো আমি কিনে তোমার নাম লিখিয়ে নেবো, ফেসবুক পোস্ট করো ছবি দিয়ে নাম কামাও, হু কেয়ার, আর্ন সামথিং।এর পরের বই ছাপার একটা পয়সাও আমি দেবো না।অপমানে জর্জরিত মন এতক্ষণে কিছুটা সামলেছে,বলে উঠল- ধন্যবাদ তার হয়তো আর প্রয়োজন পরবে না।আশিসের ছোট্ট উত্তর- গুড। এনিওয়ে খুব টায়ার্ড আজ শুয়ে পড়ছি,প্লিস্ ঐ ফেসবুক আজ করতে হবে না, তোমার অনেক অ্যাডমায়ারার আছে আমি তো হরিদাস পাল। আজ আড্ডা কম করে সবাইকে টা টা করে দাও।মন দাঁতে দাঁত চিপে বলল – আমি অনলাইন নেই। মন ভেবেছিল বাড়ি এসে ঐ স্মারক আর মানপত্রের ছবি তুলে পোস্ট করবে, সে ইচ্ছের অকাল মৃত্যু হলো একগ্লাস জল খেয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লো।দেহগত সম্পর্ক দূরে থাক কত বছর যে আশিস তার হাত ধরেনি এই ভাবতে ভাবতে মন একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। মন সিদ্ধান্ত নিল আর এক মুহূর্ত সে থাকবে না এখানে।টেরেসে এসে ফোন করলো পল্লবকে। ফোন সুইচড্ অফ।পরের দিন সাজো সাজো রব আশিস অফিসে যাবে,সব গুছিয়ে দিয়ে যাবে,মন তো থেকেও নেই।আশিস অফিসে চলে যেতেই পল্লবকে ফোন করলো মন,দেখা করতে বলল।একটু গ্যাঁইগুঁই করে পল্লব রাজি হলো। দেখা করে মন সব কথা খুলে বলে পল্লবের সাহায্য চাইতে পল্লব বলল – সংসারে এই সব অশান্তি রোজ হয় মন একটু যেন মানিয়ে চলে। তীব্র রাগে মন পল্লবকে নপুংসক বলে গালিগালাজ করলেও পল্লব আদৌ রাগ করলো না বরং মনকে বোঝাতে লাগলো। মন রেগে বাড়ি চলে এলো।রাতে আশিস বাড়ি ফিরে প্রায় পাঁচবছর বাদে মনের থুতনিতে হাত দিয়ে বলল – ঐ রকম একটা ভিখারী মার্কা প্রেমিক পেলে,একটু হ্যান্ডসাম পেলে না ? মন হতভম্ব। পরের দিন আশিস অফিস ছুটি নিয়ে মানাইকে নিয়ে বেড়াতে গেছে, ফিরবে রাতে। সব পিছুটান ছেড়ে মন একটা বড় ব্যাগে কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে পল্লবকে ফোন করে আসতে বলল। মন সবার মঙ্গল কামনা করে ট্যাক্সি নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দেখলো পল্লব হাজির।লোক লজ্জা ভুলে পল্লবের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মন আশ্রয় চাইতে পল্লব মাথা নেড়ে মনকে একজায়গায় বসিয়ে বোঝাতে চাইলো যে সে প্রস্তুত নয়, মনের এখন সংসার করা উচিত। সব শেষে বলল – মন আই জাস্ট লাভ ইউ ইন এনি ম্যানার কিন্তু বিশ্বাস করো এইভাবে তোমার সংসার ছেড়ে আসা পছন্দ করছি না আর আমি চাইনা আমাদের প্রেমের এইখানেই মৃত্য হোক। আই জাস্ট লাভ ইউ। সময় এখনো আসে’নি। আমি চাইনি এই ভাবে তুমি আমাদের চাহিদা মেটাবে । থাক না হয় ভালোবাসাটা বুকের গভীরে।
পল্লব চলে গেল। ক্ষত বিক্ষত মন এখন ভাবছে ভুলটা কোথায় ছিল তার ।সে যে আজ জীবনের সবদিক থেকেই পরাজিত।

Pages: 1 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress