Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জন্ম বৃত্তান্ত || Samaresh Majumdar

জন্ম বৃত্তান্ত || Samaresh Majumdar

একটু আস্তে হাঁটো!

ঠিক আছে।

উঁহু, ঠিক নেই। অত জোরে হাঁটা এই সময় ঠিক নয়। বরং চলো, ওই বেঞ্চটায় বসি।

না, ওখানে কে একজন বসে আছে।

থাকুক, তাতে আমাদের কী এসে গেল। আজ অনেক হাঁটা হয়েছে। সুনীত নীপার হাত ধরতে চাইলে সে ছাড়িয়ে নিল। এখন রাস্তার আলো জ্বলে গেছে। শীতের আকাশটা ময়লাটে। চারধারে। একটা ধোঁয়াটে ভাব। সুনীত দেশবন্ধু পার্কের মাঝখানে যে ফিনফিনে অন্ধকার সেখানে চোখ। রাখল, শালা, উত্তর কলকাতায় বেড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। আমাদের গাড়ি থাকলে তোমায় গড়ের মাঠ কিংবা লেকে বেড়াতে নিয়ে যেতাম।

থাক, আর আদিখ্যেতা করতে হবে না। নীপা চাপা গলায় বলল।

আদিখ্যেতা! এটা আদিখ্যেতা হল? ডাক্তার তোমাকে রোজ বেড়াতে বলেনি?

ওসব ডাক্তাররা বলেই থাকে। তুমি এমন করছ যেন আর কারও

নীপা কথাটা শেষ করল না। ওরা বেঞ্চির কাছে এসে গিয়েছিল। একজন বৃদ্ধ বিহারী সেখানে বসে আছে দেখে সুনীত নিশ্চিন্ত হল। এই সময় বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে নীপার অসুবিধে হয়। সুনীত ঠিক করল দশমিনিট বসেই বাড়ি ফিরবে। এখান থেকে ওদের ফ্ল্যাট বেশি দূরে নয়। টু-রুম ফ্ল্যাটটার একটাই সুবিধে, সুন্দর দক্ষিণমুখো ব্যালকনি আছে। ইদানিংনীপা বিকেলে বেরুতেই চায় না। রাস্তার লোকরা নাকি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। সেটা অবশ্য সুনীতেরও চোখ এড়ায়নি। ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তখন। কিন্তু কিছু করার নেই। মানুষ তার অতীত অথবা ভবিষ্যতের কথা খুব দ্রুত ভুলে যায়।

এই সময় নীপার কাছে কারও থাকা উচিত। এখন অফিসে বসে খুব চিন্তা হয়। সুনীতের মা নেই, দিদিরা দিল্লিতে। দূরসম্পর্কের এমন কোনও আত্মীয়া নেই যাকে এই সময় আনা যায়। আর নীপা তো ওর বাপের বাড়িতে যাবেই না। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হবার পর তাঁরাও সম্পর্ক রাখেননি। এতদিন কোনও মুশকিল হয়নি। বরং কেউ নেই বলে খুব ভালো লাগত। শুধু অফিসটুকু ছাড়া ওদের ছাড়াছাড়ি হয় না। নীপাকে এই দুবছর ধরে দারুণ ভালোবেসেছে সুনীত। সে সময় আর কারও উপস্থিতি অসহ্য হত।

এই, তুমি রোজ-রোজ অত ফলমূল আনবে না। নীপা চাপা গলায় বলল।

কেন?

বড্ড বেশি খরচ করছ। সামনে আরও বড় খরচ আসছে।

সে আমি বুঝব। ডাক্তার সেন বলেছেন এই সময় মেয়েদের শরীরে রক্ত কমে যায়। অ্যানিমিয়া হয়ে গেলে আর দেখতে হবে না।

আমি কি না খেয়ে আছি? আমার স্বাস্থ্য বেশ ভালো আছে।

সুনীত নীপার হাতটা ধরল, উঁহু অ্যাদ্দিন তুমি নিজের জন্য খেতে আর এখন আর একজনের কথা ভাবতে হবে।

নীপা সঙ্গে-সঙ্গে চিমটি কাটল, অসভ্য!

সুনীতের ব্যথা লাগলেও হাসলো, যাই বল, যত দিন যাচ্ছে তুমি সুন্দর হচ্ছো।

ছাই! নীপা মুখ তুলে আকাশ দেখল, আচ্ছা, আমি যদি নার্সিংহোম থেকে না ফিরি তাহলে তুমি ওকে ভালোবাসবে?

সুনীত মুখ ফিরিয়ে নিল। সম্প্রতি এই এক বুলি হয়েছে। শুনলেই বুকের মধ্যে ক্ষরণ শুরু হয়ে যায় সুনীতের। প্রথম-প্রথম প্রবল প্রতিবাদ করত, এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। আমি যদি না ফিরি তাহলে এই শাড়িগুলোর কী হবে? আমি যদি না ফিরি তাহলে এই খাটে প্লিজ শুয়ো না; এই শোনো, আমি যদি না ফিরি তুমি আবার বিয়ে করবে? এইসব শুনতে-শুনতে এক ধরনের বিষাদে ডুবে যায় সুনীত। মাঝে-মাঝে মনে হয় এইসব শুনতে হবে জানলে কে সন্তান চাইত! কিন্তু শোনার জন্যেই বোধহয় মাঝে-মাঝে সুনীতেরও মনে হয় যদি তেমন ঘটনা ঘটে? কী করে সহ্য করবে সে? নীপা নেই একথা ভাবা যায় না। কাগজপত্রে পড়েছে এখন শিশুমৃত্যুর হার খুব কম এবং মায়েরা হাজারে একজন দুর্ঘটনায় পড়ে। সেই একজন যদি নীপা হয়!

সুনীত উঠল, চলো।

অদ্ভুত সুন্দর হাসল নীপা, রাগ করলে?

না, কথাটা শুনতে আমার খুব ভালো লাগল।

তোমরা ছেলেরা সব পারে। আমার মেসোমশাই মাসিমা মারা যাওয়ার ছমাসের মধ্যে আবার বিয়ে করেছিলেন। ছোট বাচ্চা থাকলে তাকে দেখাশোনার দোহাই দেয় সবাই।

সে যে করে সে করে, আমাকে দলে ফেলছ কেন?

নীপা উঠল। তারপর খুব ধীরে হাঁটতে-হাঁটতে বলল, নাগো, তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারি না। কিন্তু ভয় হচ্ছে খুব।

কেন?

কদিন আগে যেন মনে হল কিছু নড়ছে।

কোথায়?

আঃ, কোথায় আছে জানো না?

সুনীত থতমত খেল। নীপার শরীরের সব কিছু সে জানে। কোথায় হাত রাখলে কাতুকুতু লাগে, কোথায় হাত দিলে আরাম পায়–সব। কিন্তু এই কথাটা জানা ছিল না তো! সে একটু উদ্বিগ্ন গলায় বলল, ডাক্তারকে বলেছ?

তখন হয়েছিল নাকি? খুব সামান্য।

উঁহু ভালো কথা নয়। এখনই নড়ানড়ির কী আছে!

রাখো তো! তুমি কিছু জানো যে মাথা ঘামাচ্ছে! পাশের ফ্ল্যাটের মাসিমা বলেছেন এই সময় নাকি শুরু হয়।

কালকেই চলো ডাক্তার সেনের কাছে।

এখনও তো মাস শেষ হয়নি।

তা হোক।

প্রত্যেক মাসের এক তারিখে সুনীত নীপাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। সেই তৃতীয় মাস থেকে এই চলছে। ডাক্তার সেনের মুখটা মনে পড়লেই বুকের ভেতরটা অবশ্য চিনচিন করে। ব্যাটা প্রণবের পাল্লায় পড়ে এই দুরবস্থা। এমন করে প্রশংসা করতে লাগল ডাক্তারের যেন ধন্বন্তরি। নিজেরই নার্সিংহোম, কোনও অসুবিধে নেই। তা অবশ্য সুনীতদের ফ্ল্যাট থেকে নার্সিংহোম রিকশায় মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। কিন্তু ওর ইচ্ছে ছিল কোনও মহিলা গাইনিকে দিয়ে কাজটা করায়। নীপাও তাই চেয়েছিল। প্রথম দিন ডাক্তার সেনের কাছে গিয়ে নিদারুণ অভিজ্ঞতা। ভিজিটার্স রুমে অন্তত গোটাদশেক মা-হতে যাওয়া মহিলা অপেক্ষায় ছিলেন। প্রত্যেকের সঙ্গে একজন বয়স্কা মহিলা রয়েছেন। শরীরের গড়নের জন্যে তৃতীয় মাসে নীপাকে কিছু বোঝা যায়নি। কিন্তু ওদের মধ্যে বসে থাকতে রীতিমতো অস্বস্তি হচ্ছিল। টেবিলের ওপর জড়ো করা ম্যাগাজিনের একটা তুলে নিয়ে আড়াল করেছিল নিজেকে। আর মজার ব্যাপার, ওইসব মহিলারা সবাই নীপা এবং ওকে দেখছিলেন। ডাক্তার সেনের ঘরে যখন ডাক এল তখন। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সে।

ঘরের ভেতর নীলচে আলো এবং মোটাসোটা নার্স। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে ডাক্তারের বয়স এবং বেশ হ্যান্ডসাম চেহারা। চশমার আড়ালে চোখ দুটো বেশ ঝকঝকে এবং ঠোঁটে সর্বদাই। হাসি ঝোলানো। ওদের বসতে বলে ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, বলুন?

সুনীত নীপার দিকে তাকাল। মুখ নামিয়ে বসেছে ও। সুনীত গলা পরিষ্কার করল, আমাদের দুবছর বিয়ে হয়েছে, এই প্রথম! আচ্ছা! কী নাম আপনার?

স্লিপে সুনীত নিজের নাম লিখেছিল। ডাক্তারের প্রশ্ন যদিও নীপার উদ্দেশ্যে কিন্তু সে চটপট জবাব দিল, নীপা মিত্র।

ডাক্তার একবার সুনীতের দিকে তাকিয়ে আবার নীপাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শেষ কবে?

নীপা মুখ তুলছিল না। ডাক্তার সেন হাসলেন, লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আপনি নিঃসঙ্কোচে কথা বলুন।

সুনীত উত্তর দিল, নিজেই সময়টা জানিয়ে দিল। সেটা শোনার সময় কি ডাক্তারের মুখে একটু বিরক্তির ভাঁজ পড়েছিল। বোঝা যায় নি, সুনীত কিন্তু সেই মুহূর্ত থেকে ডাক্তারকে অপছন্দ করতে শুরু করেছিল। তারপর কয়েকবার নিয়মিত ব্যবধান শুধু যাওয়া আসা। পরের দিকে নীপা অনেকটা স্বচ্ছন্দ। ডাক্তার বেশ জমিয়ে কথা বলেন। ওঁরই নার্সিংহোমে নীপার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু শেষবার সুনীতকে বেশ অস্বস্তি নিয়ে ফিরতে হয়েছে। নীপাকে একটি মেয়েলি প্রশ্ন করতে বেচারা থতমত হয়ে গিয়েছিল দেখে সুনীত নিজেই জবাবটা দিয়েছিল। তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের হাসি মিলিয়ে গিয়েছিল, মিস্টার মিত্র, আমি ওঁকে প্রশ্ন করছি তাই ওঁর মুখ থেকেই জবাবটা শুনতে চাই!

বেরিয়ে এসে নীপা বলেছিল, তুমি খামোকা কথা বলতে যাও কেন?

বাঃ, তুমি উত্তর দিচ্ছনা আর আমি জানি তাই।

জানলেই বলতে হবে? শোভন অশোভন বলে কিছু নেই?

নীপার কথাটা শুনে ডাক্তারের ওপর তার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। নীপার মনের সমস্ত আনাচ-কানাচ, শরীরের সব রকম রি-অ্যাকশান সে যতটা জানে নীপা ততটা জানে কিনা। সন্দেহ। অতএব সে কথা বললে দোষ কি? যেহেতু নীপা সুন্দরী তাই ওর সঙ্গে কথা বলার মতলব লোকটার। এইজন্যেই সর্বপ্রথম ওর লেডি ডাক্তারের কথা মনে এসেছিল। ব্যাটা প্রণবের জন্যে! অন্য সময় হলে কি করত ঠিক নেই কিন্তু এখন অপমানটা হজম করতে হল। নীপা এর মধ্যে কোনও অন্যায় দেখতে পাচ্ছে না সেটাই আশ্চর্যের কথা।

রাত্রে খাওয়া-দাওয়া চুকে গেলে সুনীত ঘরে ঢুকল। ইদানীং রাত্রে রান্নার ঝামেলা কমিয়ে দিয়েছে। ওরা। শুধু রুটিটা করে নেয় নীপা। কিন্তু বাকি কাজ সব সুনীত করে অনেক কষ্টে নীপাকে এটা মানতে বাধ্য করেছে সে। একে শীতের সময়, তারপর এই অবস্থায় নীপাকে দিয়ে পরিশ্রম। করাতে চায় না সে। নীপা অবশ্য সমানে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। গরিব-দু:খীদের তো করতেই হয়। কত গল্প শোনা গেছে, ধান কাটতে-কাটতে বেদনা উঠল, মেয়ে নিজেই সরে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে এসে আবার ধান কাটতে লাগল। কিন্তু এসবে ভুলবার পাত্র সুনীত নয়। কোনও ভারি। জিনিস তুলতে দেয় না, এমন কি পারলে নীপার নিজস্ব কাজেও হাত বাড়ায়।

নীপা শুয়েছিল। ঘরে নীল আলোটা জ্বলছে। সিগারেট ধরাতে গিয়ে থেমে গেল সুনীত। শীতের হাওয়ার জন্যে সবকটা জানলা বন্ধ। এই বন্ধ ঘরে সিগারেটের ধোঁয়া নীপার ক্ষতি করতে পারে। কোথায় যেন পড়েছিল গর্ভস্থ ভ্রুণ নাকি সিগারেটের ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়। কথাটা মনে আসতেই সুনীত সিগারেট টেবিলে রেখে সটান নীপার কাছে চলে এল, কী হয়েছে?

চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিল নীপা, সামান্য হাসল, কেন?

অমন করে শুয়ে আছো?

এমনি।

সুনীত খাটে বসে নীপার খোলা পায়ের পাতায় হাত রাখল। কেমন শীর্ণ দেখাচ্ছে। চমকে পা সরিয়ে নিল নীপা, ইস, ছি-ছি, পায়ে হাত দিচ্ছ কেন? কপালে হাত ছুঁইয়ে বলল, কি যে করো!

তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে?

একটু।

আগে জানলে–!

কী?

এসব চাইতাম না।

পাগল! তোমার ওপর খুব চাপ পড়ছে অবশ্য।

মোটেই না। সুনীত ঝুঁকে পড়ে নীপার গলায় চুমু খেল। ওখানে চুমু খেলেই নীপার চোখ বুজে যায় হাত আপনি উঠে আসে সুনীতের পিঠে। সেই অবস্থায় সুনীত বলল, তোমার ছেলে আর কষ্ট দিচ্ছে না তো?

ছেলে?

যে নড়ছিল?

ছেলে ভাবছ কেন, মেয়েও তো হতে পারে!

তুমি তো ছেলেই চেয়েছিলে।

চাইলেই কি সব পাওয়া যায়?

যায়। যে চাইতে জানে তার নাকি কোনও অভাব হয় না। হেসে সুনীত বলল কথাটা। তারপর মুখ সরিয়ে নিয়ে আলতো করে নীপার পেটে কান রাখল। নীপা মাথাটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। তারপর হাল ছেড়ে দিল। শোওয়ার সময় নীপা একটু আলগা হয়ে শোয়। শরীর বড় হওয়ার পর আর আঁটোসাঁটো হয়ে থাকতে পারে না। সুনীত সেই মসৃণ পেটের ওপর কান রাখল। না, কোনও তৃতীয় সত্তার উপস্থিতি টের পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ প্রতীক্ষার পর সে হতাশ গলায় বলল, কই, কিছু নড়ছে না তো!

নীপা হাসল, তুমি আড়ি পেতেছ জেনে চুপ করে গেছে। তোমারই ছেলে তো!

রিকশার রাস্তা কিন্তু ট্যাক্সি নিল সুনীত। এখন সামান্য ঝাঁকুনি মোটেই সুখকর নয়। নীপাকে দেখে ড্রাইভার আপত্তি করতে গিয়েও থেমে গেল এটা বুঝতে পারল ওরা। মাড় দেওয়া সুতির শাড়ি পরেছে নীপা, এতে নাকি আব্রুটা অনেক বাড়ে। ট্যাক্সিতে বসেই নীপা চোখ বন্ধ করে ঠোঁট চাপল।

কী হল?

সুনীত ওর হাত চেপে ধরতেই নীপা হাসবার চেষ্টা করল, কিছু না। তারপর একটু বাদেই সহজ হল।

সুনীতের ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না। আজ অফিসে গিয়ে প্রণবকে ঘটনাটা বলেছে।

প্রণব হেসেছিল, এরকম তো হবেই, পেটের ভেতর বাচ্চা হাত-পা ছুঁড়বেনা? তবে তোমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে যেন একটু আর্লি হচ্ছে!

তাই বা হবে কেন? কোনও অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে না তো? এই চিন্তাটা ক্রমাগত সুনীতের মাথায় পাক খেতে লাগল।

ভিজিটার্স রুম দেখে আজও মেজাজ খিচড়ে গেল। এত লোকের একসঙ্গে বাচ্চা হয়? প্রণবের কাছে শুনেছে, সভ্য মানুষেরা নাকি শীতকালেই সন্তান জন্ম দিতে পছন্দ করে আজকাল। তাই? এখন নীপা এখানে অনেক স্বচ্ছন্দ। কয়েকবার এসে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নতুন কোনও মেয়ে এলে সে-ই হাসি-চোখে তাকায়।

ডাক এল আটটা নাগাদ। ডাক্তার সেন টেলিফোনে কথা বলছিলেন। ওদের ইঙ্গিতে বসতে বলে কথা শেষ করলেন। তারপর সেই মিষ্টি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার? আপনাদের কি আজকে আসার কথা ছিল?

সুনীত বলল, না। কিন্তু একটা প্রব্লেম হওয়াতে–।

প্রবলেম? কী হয়েছে আপনার? ডাক্তারের কপালে ভাঁজ পড়ল।

নীপা সুনীতের দিকে তাকাল। কীভাবে কথাটা বলবে বুঝে উঠছিল না বোধহয়। সুনীত বলল, পেইন ফিল করে। ভেতরে বোধহয় নড়ছে।

ডাক্তার সেন কিছুক্ষণ সুনীতের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন, তারপর নীপাকে বললেন, হচ্ছে আপনার কষ্ট আর আমি ওঁর মুখে শুনছি। সেই চালু কথাটা যেন না শুনি, আপনার পেইন উঠলে উনি আপনাকে জানিয়ে দেবেন। ভেতরে আসুন।

ডাক্তারের চেয়ারের পেছনে আর একটা ঘরের দরজা। নীপাকে ইশারা করে তিনি ভেতরে চলে গেলেন। নার্সটি এবার ডাক্তারের অনুসরণ করল। নীপা ইতস্তত করছে দেখে নার্স বলল, কী হল? চলে আসুন!

নীপা উঠে দাঁড়াতে সুনীতও উঠল। ভেতরে নীপার কী দরকার তা ওর বোধগম্য হচ্ছিল না। নীপার সঙ্গে দরজা পর্যন্ত যেতেই নার্স বলে উঠল। আরে, আপনি আসছেন কোথায়? যান, চেয়ারে বসে থাকুন।

সুনীত দেখল ডাক্তার একটা পাতলা গ্লাভস পরছেন। ঘরের ভেতর ছোট্ট কিন্তু উঁচু খাট এবং জোরালো আলো রয়েছে। কথা বলতে গিয়েও সে ফিরে আসল। নীপাকে ওই ঘরে একা ছেড়ে আসতে ওর খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। সে চেয়ারে বসতেই নার্স ঘরের পরদা টেনে দিল। সুনীত প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো। এই রকম ব্যবহার সে মোটেই আশা করেনি। স্বামী হিসেবে স্ত্রীর সঙ্গে থাকার তার সব সময় অধিকার আছে।

কয়েকটা টান দেবার পর আচমকা নড়ে উঠল সুনীত। কানের পরদায় এখনও নীপার তীক্ষ্ম চিৎকারটা আছাড় খাচ্ছে। তড়াক করে সে উঠে দাঁড়াল। কিছু একটা হয়েছে নীপার। সে কি ওই ঘরে যাবে? একটু দ্বিধা করে সে কান পাতল। না, আর কোনও শব্দ হচ্ছে না। কয়েক মুহূর্ত বাদেই-বাদেই পরদাটা সরিয়ে নীপা বেরিয়ে এল। মুখে রক্ত জমেছে, চোখ নীচের দিকে ফেরানো, হাঁটছে খুব কষ্টে আড়ষ্ট পায়ে। সুনীত দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরল। নীপার হাত ঠান্ডা, খুব নার্ভাস হয়ে পড়লে ওর এমনটা হয়। সুনীত জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে?

নীপা মাথা নাড়ল, কিছু হয়নি।

কিন্তু তুমি চিৎকার করলে কেন?

চুপ করো। নীপার গলায় ধমক না অনুরোধ?

এই সময় ডাক্তার তোয়ালেতে হাত মুছতে-মুছতে বেরিয়ে এলেন। মুখে সেই হাসি যা দেখলে পিত্তি জ্বলে যায় সুনীতের, না, সব ঠিক আছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে মনে হচ্ছে আপনারা ডেট গোলমাল করেছেন।

সুনীত বলল, না, মানে আমরা তো বেশ নিশ্চিন্ত।

ডাক্তার সেন প্যাডে কিছু লিখতে লিখতে বললেন, আপনারা লাস্ট যেটাকে ধরছেন সেটা ফলস হতে পারে। আমি এই ওষুধগুলো লিখে দিলাম, আজ রাত থেকেই পারলে খাওয়াতে শুরু করুন।

প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে সামান্য দেখে সুনীত একটু নার্ভাস গলায় জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে ওর?

কিছুই হয়নি। রক্ত দরকার শরীরের, মাথা ঘোরে বললেন, সেটাও। তবে মনে হল ওর পেলভিস বোন ছোট আছে। সেক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আমাদের অপারেশনের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সিজার? প্রায় আর্তনাদ করল সুনীত।

ডাক্তার বললেন, সেকি! আপনি অত নার্ভাস হচ্ছেন কেন? বিদেশে এখন মায়েরা নিজে থেকেই সিজার করাতে চান। নর্মাল ডেলিভারির চেয়ে ওটা কম কষ্টকর এবং ফিগার ঠিক থাকে। ঘাবড়াবার কিছু নেই। আমরা নর্মালের জন্য চেষ্টা করব প্রথমে–!

কিন্তু আপনি সিজার হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন কী করে? সুনীত অনুভব করল ওর দুটো পা কেমন নিঃসাড়।

ডাক্তার সেন এবার ধীরে-ধীরে বুঝিয়ে দিলেন, কোনও-কোনও ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তবে সব কিছুই প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রথমে ধরে নেওয়া হয় নর্মাল ডেলিভারি হবেই। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে তবেই ওই প্রশ্ন আসে। অতএব এখনই এই নিয়ে চিন্তা করবার কিছু নেই।

প্রায় নিশব্দে বাইরে বেরিয়ে এল সুনীত; সঙ্গে আড়ষ্ট নীপা। এই লোকটা ব্লাফ দিচ্ছে না তো? সুনীত শুনেছে অনেক নর্মাল ডেলিভারির কেসও নাকি ডাক্তাররা পয়সার লোভে সিজার করে। থাকে। কথাটার সত্যাসত্য যাচাই করার পথ তার জানা নেই। এই ডাক্তার সে রকম কিছু করছে কি না কে বলতে পারে!

ট্যাক্সিতে উঠেই সে জিজ্ঞাসা করল, তখন কী হয়েছিল?

নীপা প্রশ্ন করার সময় তাকিয়েছিল, শুনে চট করে বাইরের দিকে মুখ ঘোরাল। সুনীত লক্ষ্য করল ওর ঠোঁটের কোণে একটু হাসি চলকে উঠল। ওরকম আর্তচিৎকারের পর এই হাসি আসে কি করে বুঝতে না পেরে সে খুব নরম গলায় জিজ্ঞাসা করল, এই, কথা বলছ না কেন?

নীপা মুখ ঘুরিয়েই বলল, জানি না, যাও!

সুনীত খুব হতাশ হল, আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।

নীপা এবার সহজ হতে চেষ্টা করল, ইন্টারন্যাল পরীক্ষা করছিল। আমি একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম তাই!

সঙ্গে-সঙ্গে সুনীতের চেয়াল শক্ত হয়ে গেল। ইন্টারন্যাল পরীক্ষা! ওর চোখের সামনে ডাক্তারের গ্লাভস পরা হাত ভেসে উঠল। সে নীপার দিকে আবার তাকাল। আজ অবধি সে ছাড়া অন্য কোনও পুরুষ নীপার শরীরে হাত দেয়নি। আর ওই লোকটা তারই কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার। স্ত্রীর মাথা ঘুরে গেল সুনীতের। বন্ধুবান্ধব কেউ বলেনি ডাক্তাররা এসব করে। কাউকে একথা জিজ্ঞাসাও করা যাবে না। হাসপাতালে যাদের বাচ্চা হয় তাদের নিশ্চয়ই এই রকম অভিজ্ঞতা হয় না। সুনীত ঠিক করল, কোনও লেডি ডাক্তারকে টেলিফোন করে সরাসরি জিজ্ঞাসা করবে এটি অবশ্যই করণীয় কিনা। সে নীপার দিকে তাকাল। নীপার মুখ এখন অনেকটা স্বাভাবিক! আশ্চর্য, একটি সুশ্রী পরপুরুষ কিছুক্ষণ আগে এমন আচরণ করা সত্বেও এমন স্বাভাবিকত্ব আসে কী করে? সুনীত এর আগের সাক্ষাৎকারগুলোর কথা ভাবতে লাগল। না, ডাক্তার এবংনীপার মধ্যে সামান্য গোলমাল সে দ্যাখেনি। তাহলে নীপার সমস্ত শরীর যা কিনা সুনীতের একদম নিজস্ব তা অন্য মানুষের কাছে উন্মোচিত হওয়া সত্বেও নীপা এমন নির্বিকার কেন? হ্যাঁ, তখন চিৎকার করেছিল বটে, আড়ষ্ট পায়ে লজ্জিত হয়ে হেঁটেও ছিল, কথাও বলতে পারেনি বেশকিছুক্ষণ। ব্যাস, তারপরই তো যে কে সেই।

বাড়ি ফিরে সুনীত প্রথম কথা বলল, শোন, এই ডাক্তারকে আমার ভালো লাগছে না।

নীপা জামা কাপড় ছাড়বে বলে এগোচ্ছিল, থেমে গেল, কেন?

মনে হচ্ছে গোলমাল আছে। তুমি পাশের ফ্ল্যাটের মাসিমাকে জিজ্ঞাসা করো তো এই সময় ইন্টারন্যাল একজামিনেশন করে কিনা! সুনীত চেয়ারে বসে ব্যালকনির দিকে মুখ করে কথাটা বলল।

নীপা হেসে ফেলল, কী পাগলের মতো যা তা বকছ!

সুনীত কঠিন গলায় বলল, তুমি এতে খুশি হতে পারো কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে।

কী বললে? নীপার গলা তীক্ষ্ম হল।

একটা লোক তোমার শরীরের ভেতরে হাত দিচ্ছে অথচ তোমার কোনও রি-অ্যাকশন নেই? তাজ্জব ব্যাপার! সুনীত ঝাঁঝিয়ে উঠল।

ছি-ছি! তোমার মন এত নীচ! নীপা কাঁপছিল, ডাক্তারি শাস্ত্রের কিছু জানো তুমি? এই সময় ওই রকম পরীক্ষা করাটা নিয়ম। তাতে পরে বিপদে পড়তে হয় না। আর তুমি একজন ডাক্তারের। ওপর জেলাস হচ্ছো! রি-অ্যাকশন! মেয়েরা শরীরে কোনও পুরুষের স্পর্শ পেলেই বুঝতে পারে তার মন কী বলছে। উনি পরীক্ষা করলেন অথচ আমি এরকম নির্লিপ্ত হতে এর আগে দেখিনি। যে মানুষ আমার উপকারের জন্য কর্তব্য করছেন আমি তাঁকে খারাপ ভাবব কেন? আসলে তুমি আমাকে সন্দেহ করো। তোমার মনে অন্ধকার। ছি ছি!

শেষের দিকে কথাগুলো এমন উঁচু পরদায় উঠে গেল যে বিব্রত চোখে সুনীত মুখ ফিরিয়েছিল। আর তখনই নীপা দুহাতে নিজের মাথা ধরে টলতে লাগল। অপ্রস্তুত ভাবটা কাটিয়ে এক লাফে সুনীত এগিয়ে এসে যদিনীপাকে জড়িয়ে না ধরত তাহলেই দুর্ঘটনাটা ঘটে যেত। সুনীত চিৎকার করে নীপাকে ডাকল। এখন ওর বুকের কাছে নীপার মুখ নিঃসাড়ে নেতিয়ে রয়েছে। দাঁতে-দাঁত আঁটা, শরীর শিথিল। কোনওরকমে সে নীপার শরীর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কয়েকবার ডাকল, নীপার কোনও সাড়া নেই। বুকের মধ্যে কনকনে হিম জমতে লাগল সুনীতের। নাকের কাছে। আঙুল নিয়ে গিয়ে বুঝল নীপা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কী করা উচিত বুঝতে পারছিল না সে। নীপা মরে গেলে পৃথিবীতে তার আর কিছু থাকবে না। এটা বোধে আসতেই সুনীত ডাক্তারের কথা ভাবল। ফ্ল্যাটে আর কেউ নেই। যেতে হলে হয় দরজা খুলে নয় পাশের ফ্ল্যাটের মাসিমাকে ডেকে যেতে হয়। এক ধরনের নার্ভাসনেস যা ওকে এতক্ষণ আচ্ছন্ন করে রেখেছিল তা কাটিয়ে ওঠার মুহূর্তে নীপার শরীর নড়ে উঠল। এবং তার চোখের পাতা উন্মুখ হতেই। সুনীতের মনে হল এর চেয়ে ভালো সময় ওর জীবনে আর কখনও আসেনি। সে দ্রুত নীপার পাশে এসে বলল, কেমন লাগছে এখন?

নীপা কোনও জবাব না দিয়ে উঠে বসতে যেতেই সুনীত বাধা দিল, উঠতে হবে না। চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমি ডাক্তারের কাছ থেকে আসছি।

খুব দুর্বল গলায় নীপা বলল, না, ডাক্তার ডাকতে হবে না, ঠিক আছি।

সুনীত একবার সন্দেহের চোখে তাকাল। নীপার মুখের ফ্যাকাশে ভাবটা ক্রমশ সহজ হচ্ছে। কিন্তু তাকে মান্য করেছে ও, ওঠার চেষ্টা করেনি, তেমনি নেতিয়ে শুয়ে আছে। মুখ একপাশে ফেরানো। সুনীত চটপট রান্নাঘরে চলে এল। তারপর গ্যাস জ্বালিয়ে দুধ বসিয়ে দিল। মনে পড়ছে এই সময় ব্র্যান্ডি এবং দুধ খুব কাজে লাগে। বাড়িতে একটা ব্র্যান্ডি রাখতে হবে। এখন ওর নার্ভ সহজ হয়ে এসেছে। ঠান্ডা মাথায় সে ব্যাপারটা ভাবল। মনে হচ্ছে নীপার আর কোনও ক্ষতি হবে না তবে ঘটনাটা ডাক্তারকে জানানো দরকার। ডাক্তারের কথা মনে হতেই সেনের। মুখটা ভাসল। নীপা তার, সেখানে আর কোনও পুরুষের মাতব্বরি সে সহ্য করতে পারবে না। ডাক্তার বলেই সাতখুন মাপ হবে এ কেমন কথা! লোকটা বলছেনীপার পেলভিস বোন ছোট, কই, সে তো কোনও অস্বাভাবিকত্ব টের পায়নি। এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হতে এক্সরে করতে বললেই চলত, হাত দেওয়ার কী আছে! সুনীত মাথা নাড়ল, লোকটা স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অন্য কোনও লেডি ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে। ব্যাপারটা ভাঁওতা বলে প্রমাণ করিয়ে একটা কেস ঠুকে দিলে কেমন হয়! মুশকিল হল, এই সময় ডাক্তার চেঞ্জ করিয়ে সমস্যা বাড়বে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, সে একটা অন্যায় করেছে। নীপার এ ব্যাপারে কোনও দোষ ছিল না। সে রাগের মাথায় ফট করে ওই কথা বলে ফেলেছে। নীপা তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। কিন্তু সুনীতের মতো নয়, এ কথাটা কেমন করে বোঝানো যায়!

এটা খেয়ে নাও! সুনীত ডাকতেই নীপা মুখ ফেরালো। আর তক্ষুনি সুনীতের মনে হল ওর কলজে কেউ খামছে ধরেছে। নীপার দুই চোখের কোল জলে ভরে আছে। এত ব্যথা একসঙ্গে ওই দুই চোখের কোলে জমা হতে পারে সুনীত জানত না। কাপ পাশের টেবিলে রেখে সুনীত দুহাতে নীপাকে জড়িয়ে ধরল।

নীপা শক্ত শরীরে কাঠকাঠ গলায় বলল, তুমি আমাকে সন্দেহ করো?

না, মোটেই না। ক্ষমা করো, আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। ডুকরে উঠল সুনীত। সে যেন বলতে চাইছিল এই মুহূর্তে যে কোনও শাস্তি তার অপরাধের জন্যে নিতে রাজি আছে।

তাহলে ওই কথা বললে কেন?

আমি ছাড়া তোমাকে কেউ জানুক আমি সইতে পারি না।

তুমি আমার সব জানো? নীপার গলার স্বর এখন একদম অচেনা।

জানি।

পাগল, কেউ কারও সব জানতে পারে? নীপা হাসল।

ওসব তত্বের কথা। আমি তোমার সব জানি আর যদি কিছু অজানা থাকে তাহলে সেটা আমিই আগে জানতে চাই।

সুনীত নীপার গলায় ঠোঁট রাখল। আশ্চর্য, আজ নীপার কোনও প্রতিক্রিয়া হল না। স্থির, তেমনি নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। সুনীত পাগলের মতো ওর ঠোঁট, গলা কপাল, বুকে চুমু খেতে লাগল। যেন প্রতিটি চুম্বন দিয়ে সে নীপাকে সহজ করতে চায়। নীপা শেষ পর্যন্ত হাসলো, চিন্তা নেই, আমি এত সহজে মরছি না। সুনীত থেমে গেল। ওর খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে।

তারিখ পেরিয়ে গেল। সুনীত অফিস থেকে মাসখানেকর জন্য ছুটি নিয়েছে। নীপাকে সে এখন কোনও কাজ করতে দেয় না। প্রতিটি মুহূর্তে ওর সজাগ নজর থাকে, নীপার সামান্য অসুবিধে। ঘটতে দেয় না। তারিখের আগের দিন মনে হয়েছিল এবার নীপার বাড়িতে খবর দেওয়া দরকার। কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটা তুলতে সাহস পায়নি। তার পরই মত। পালটেছিল, সে একাই সব দিক সামলাবে। নীপাকে কোনও অভাব টের পেতে দেবে না। এখন নীপা আবার আগের মতো স্বাভাবিক। ডাক্তার সেনের কাছে এখন প্রায় ঘনঘন যেতে হচ্ছে। নীপার আপত্তিতে সেই অজ্ঞান হবার ঘটনাটা ডাক্তার সেনকে বলতে পারেনি সুনীত। কেন হয়েছিল সেটা বোঝাতে কিছু মিথ্যে কথা বলতে হত। এর মধ্যে আর একবার নীপাকে ভেতরের চেম্বারে যেতে হয়েছিল। না, কোনও চিৎকার ভেসে আসেনি কিন্তু সুনীত চোয়াল শক্ত করে বসেছিল। কী হয়েছে বা হয়নি এই নিয়ে পরে ওরা কোনও আলোচনাই করেনি। সুনীতের কয়েকবার ইচ্ছে হলেও সেই ঘটনার কথা ভেবে মুখ বুজে থেকেছে।

দশদিন পার হওয়ার পর ডাক্তার সেন চিন্তিত হলেন, বললেন, ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না, আপনি কোনও পেইন ফিল করছেন না?

সুনীত জবাব দিল, না।

ডাক্তার সেন এবার বিরক্তি প্রকাশ করলেন, আঃ, আপনি সব কথার জবাব দেন কেন?

মানে, আমি সব জানি, তাই–।

গুড গড! ঠিক আছে, আপনি আসুন। আজই ডিসিশন নেব। নীপাকে ডেকে ডাক্তার ভেতরের চেম্বারে গেলেন। নীপা উঠল। এখন ওর শরীর এত ভারি যে হাঁটতে কষ্ট হয়। এক পা হাঁটতেই ওর মুখ বিকৃত হল। সুনীত চমকে বলে উঠল, কী হয়েছে?

কোনওরকমে সামলে নিয়ে সুনীতের হাতটা টেনে তলপেটে রাখল নীপা। এখন এই ঘরে কেউ নেই। নার্সও ভেতরে চলে গেছে। হাতের চেটোর তলায় সুনীত শক্ত এবং উঁচু কিছু অনুভব করল। তারপরেই সেটা নড়ে উঠে মিলিয়ে গেল। যাওয়ার সময় নীপা বলে গেল, পা কিংবা হাত!

সুনীতের রোমাঞ্চ হল। তার সন্তানকে সে এই প্রথম অনুভব করল। অন্যদিন অনেক নিবিড় বা সেবার মুহূর্তেও সে ওকে টের পায়নি। বেচারা নীপার শরীরের অন্ধকারে ছটফট করছে এখন! চুপচাপ বসে সে স্পর্শটার কথা চিন্তা করতে লাগল। ওইটুকুন শরীরে অত শক্তি!

হাত মুছতে-মুছতে ডাক্তার সেন চেয়ারে বসে বললেন, শুনুন। আমি আর সাত দিন দেখব, তারপরেই অপারেশন করতে হবে। বাচ্চার হেড শক্ত হয়ে গেছে।

হেড? সুনীত অবাক হল, কী করে বুঝলেন?

স্পর্শ করে। ও, আপনি তো সব জানেন। কিন্তু এটা জানতেন না। দয়া করে আর জানার চেষ্টা করবেন না। সাতদিনের মধ্যে যদি পেইন ওঠে, চটপট নিয়ে আসবেন। ডাক্তার সেন ঘাড় ঘুরিয়ে বেরিয়ে আসা নীপাকে দেখে বললেন, অন্য কোনও অসুবিধে হচ্ছে না তো?

মাঝে-মাঝে পা ফুলছে। নীপা বলল।

সুনীত ভ্রূ কুঁচকে একবার স্ত্রীকে দেখল। ডাক্তার সেন ঘাড় নাড়লেন। তারপর প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে সুনীত বলল, তোমার পা ফুলছে একথা আমাকে বলনি কেন?

বললেই তো সাতপাঁচ চিন্তা করবে।

সুনীত মুখ ঘুরিয়ে নিল। খুব বিস্বাদ লাগছিল ওর।

গতরাতে একফোঁটা ঘুমোতে পারেনি সুনীত। নীপাও জেগেছিল অনেকক্ষণ। দুজনে পাশাপাশি শুয়ে, কিন্তু কেউ কথা বলছিল না। সাতটা দিন কেটে গেল। কোনও লক্ষণ নেই তার আসার। আগামীকাল সকালে নীপাকে নার্সিংহোমে যেতে হবে। একটু আগে নীপা ঘুমিয়েছে। ঘুমোনোর আগে প্রথম কথা বলেছিল, এই, আমাকে আদর করবে না?

সুনীত চমকে উঠেছিল। তারপর আলতো করে নীপার কাঁধ ও পিঠে হাত রেখেছিল। নীপা বলল, উঁহু আরও জোরে জড়িয়ে ধরো।

সুনীত একটু দুর্বল গলায় জানাল, তোমার লাগবে।

লাগুক। আর হয়তো তোমার পাশে শুতে পাব না। তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, না? আমি না ফিরলে তুমি সব ভুলে যেও।

শিশুর মতো কাঁদতে লাগল নীপা। অন্যসময় হলে সুনীত কী করত জানে না কিন্তু এখন ও হঠাৎ সতর্ক হয়ে উঠল, চাপা গলায় বলল, এই কাঁদছ কেন বোকা মেয়ে! এই অপারেশন জলের মতো সহজ, কেউ মরে না। এইসময় কাঁদলে ওর ক্ষতি হবে।

অনেকক্ষণ বাদে নীপার কাঁপুনি কমলো এবং তারপর একটু-একটু করে ঘুমে আচ্ছন্ন হল। কিন্তু সুনীতের আর ঘুম আসছিল না। ঘরে পাতলা আলো জ্বলছে। নীপার মুখের দিকে সে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। না, তার আগে নীপা কখনই যেতে পারে না। এই মেয়ে তার আর এক অস্তিত্ব। তার মনে কোনও কষ্ট হলে নীপা ঠিক বুঝতে পারে। নীপার সামান্য অভিমান চাপা থাকলেও সে টের পায়। এই নীপাকে হারাবার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু ওর পেটে যে দশমাস ধরে তিল-তিল করে বড় হয়েছে সে যে অস্থির হয়ে উঠছে! অথচ বেরুবার পথ না পেয়ে বেচারা–। ডাক্তার সেন বলছেন, ওর মাথা শক্ত হয়ে গেছে। তার এবং নীপার রক্তে গড়া সৃষ্টির কোনও তথ্য সে জানে না। পুরো ব্যাপারটাই যে ডাক্তারের ভাঁওতা এখন আর বলা যাচ্ছে না। লোকটার হাতে এমন নিঃশর্তে সমর্পিত হওয়া তার ভালো লাগছিল না। শেষ রাতটুকু সে খুব একা হয়ে যেতে লাগল।

বিকেলে নীপাকে নার্সিংহোমে নিয়ে গেল সুনীত। বাইরে থেকে কোনও খুঁত পেল না সুনীত। সুন্দর বিছানা। আজ খুব যত্ন করছে ওরা নীপাকে। মাঝখানে ঘণ্টাখানেকের জন্যে বাইরে গিয়েছিল সুনীত কিছু জিনিসপত্র আনতে। ফিরে এসে দেখল নীপা মুখ ঢেকে শুয়ে আছে। সুনীত জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে?

নীপা লজ্জা-লজ্জা চোখে তাকাল, যাচ্ছেতাই। নার্সটা খুব অসভ্য।

কেন কী করেছে? সুনীত বুঝতে পারছিল না।

তোমার শুনে কাজ নেই। আমাকে পরিষ্কার করতে এসে বলল, দেখুন এটা কি ন্যায়বিচার হল। তেনারা ফুর্তি করবেন আর আমাদের এই কষ্ট সহ্য করতে হবে! তা ভাই, আপনার কর্তাটিকে। বলবেন ছেলে হলে নাম রাখতে অভিমন্যু।

সুনীত ঠোঁট কুঁচকালো। নার্সের এইসব কথা তার পছন্দ নয়, তবু বলল, কেন?

সহজে এসেছিল কিন্তু বেরুবার সামর্থ্য নেই। বলে হাসল নীপা।

সুনীতের কী হল সে নিজেই জানে না। হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে নীপাকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ রেখে স্থির হয়ে রইল। নীপার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে সে। আর একটু নিচে কান পাতলে আর একটি হৃদযন্ত্রের আওয়াজ শোনা যাবে। ওরা এখন তিনজন অথচ পিতা এবং স্বামী হিসেবে সে কিছুই করতে পারছে না। পুতুলের মতো তাকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

সেই রাত্রে একা এই ফ্ল্যাটে কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে ঘুমিয়ে পড়ল। বিয়ের পর প্রথম দুজনে এখানে এসেছিল। একটি রাত্রের জন্যে কেউ কাউকে ছেড়ে থাকেনি। রাত্রে ফিরে সুনীতের অসহ্য লাগছিল। অথচ কখন যে ঘুম এল জানে না। শুধু স্বপ্নটা তাকে ধড়মড় করে জাগিয়ে দিল। সুনীতের গলা শুকিয়ে কাঠ। দমবন্ধ হবার যোগাড়। চোখের সামনে এখনও ছেলেটার মুখ দেখতে পাচ্ছে, বাবা, তুমি মাকে ভালোবাসতে?

হ্যাঁ, বাবা।

আমাকে ভালোবাসো?

হ্যাঁ, বাবা।

আমি যখন অন্ধকারে ছিলাম আর খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম, মা যখন আমার শরীর-শরীরে নিয়ে খুব যন্ত্রণা পাচ্ছিল তখন তুমি কী করছিলে?

কিছু না, বাবা।

কেন?

আমার ক্ষমতা ছিল না।

অন্য কেউ কাজ করবে এবং তুমি ফলের জন্যে অপেক্ষা করবে?

তাই নিয়ম, বাবা।

তাহলে আমি তোমাকে বাবা বলব কেন? তুমি কী করেছ?

দয়া করো, দয়া করো।

মুখভরতি ঘাম অথচ সারা শরীর ঠান্ডা, সুনীত কথাটা আবৃত্তি করল, দয়া করো, দয়া করো। তারপরেই তার হুঁশ এল। উঠে এক গেলাস জল খেয়ে চারপাশে তাকাল। ওই কোণের বাক্সটা নীপা কিছুদিন আগে কিনেছে। ওতে কী রাখা আছে প্রশ্ন করেনি সুনীত কিন্তু সে জানে। কয়েকটা সুন্দর কাঁথা, কয়েকটা শিশুদের জামাইজের। নীপার সংগ্রহ করে রাখা যাতে এসেই বিপদে না পড়তে হয়। মা তার সন্তানের আগামীকালের কথা ভেবেছে। বাবা হয়েছে বলে তার কোনও করণীয় নেই। কিন্তু স্বপ্নটা যে চোখের মধ্যে আঙুল তুলে দিয়েছে।

নীপাকে যখন ও-টিতে নিয়ে যাওয়া হল সুনীত তখন সেখানে দাঁড়িয়ে। মাথাটা একদিকে কাত হয়ে আছে, চোখ বন্ধ। সুনীত দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল ডাক্তার সেনের দিকে। ডাক্তারের গায়ে এখন সাদা অ্যাপ্রন। সুনীতকে দেখে সেই মিষ্টি হাসলেন, দুশ্চিন্তা করবেন না। সব ঠিকঠাক যদি চলে তাহলে আধঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। উনি ফিরে দাঁড়ালেন।

ডাক্তারবাবু! সুনীত ডাকল।

বলুন।

আমি ভেতরে যাব।

হোয়াট?

আমি অপারেশনের সময় থাকব।

মানে?

আমাকে ওর দরকার হতে পারে।

নো, নেভার।

সুনীত জেদের গলায় বলল, আমি যেতে চাই। আমি আমার সন্তানকে দেখতে চাই।

ডাক্তার সেন কিছুটা হতভম্ব, দেখবেন, আমিই ডেকে দেখাব।

ও যেখানে আছে সেই জায়গাটা দেখতে চাই।

হোয়াই?

আজ না দেখলে কোনওদিনই দেখা হবে না। আমি আমার সন্তানের জন্মের সাক্ষী থাকতে চাই।

নো। ইটস নট পসিবল। আমি আপনাকে অনুমতি দিতে পারি না। এরকম অদ্ভুত অনুরোধ জীবনে শুনিনি। ডাক্তার চট করে ভেতরে ঢুকে যেতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। সুনীত বন্ধ দরজার গায়ে হাত রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।

ওর সমস্ত শরীরে এখন ঝিমঝিমে ভাব। এখন নীপার শরীর কাটবে ওরা। ওর পেটের ভেতর অজস্র আবরণের আড়াল থেকে শিশুটিকে বের করে আনবে। দিয়ে জুড়ে দেবে নীপাকে। একটা সেলাই-এর দাগ সাক্ষী হয়ে থাকবে এই ঘটনার। অথচ সে পিতা হয়েও জানতে পারবে না তার সন্তানের আবাস কী রকম ছিল। সে স্বামী হয়েও নীপার শরীরের অভ্যন্তরের খবর পাবে না। শুধু উদ্বেগ এবং অস্থিরতা নিয়ে তাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে।

আশরীর ভালোবাসা এবং আবেগ নিয়ে সুনীত তাকিয়ে ছিল কাঁচের ঘরটার দিকে। তার এখন কিছুই করার নেই। ডাক্তার সেনের ওপর এই মুহূর্তে তার কোনও ঈর্ষা নেই। ওর মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর যে কোনও সৃষ্টির কৃতিত্বের পেছনে পিতার কোনও কৃতিত্ব নেই। এমন কি কোন রাত্রের আনন্দের ফলে এই সন্তান আসছে তাও সে জানে না। সন্তানরা নিজেরাই মাতৃশরীর থেকে শক্তি সংগ্রহ করে আগামীকালের পথে পা বাড়ায়। আমরা খামোকা পিতৃত্বের দাবি বা বড়াই করি। আর এইখানেই নীপার কাছে হেরে গেল সে। আজ অবধি সব ব্যাপারে নীপা সমান-সমান ছিল, এখন নীপা অনেক এগিয়ে গেল।

আধঘণ্টা কেটে গেছে কখন জানে না সুনীত। একটি লাল রং চোখের সামনে ফুটতেই সে সজাগ হল। ডাক্তার সেন দাঁড়িয়ে আছেন। ওঁর সমস্ত শরীরে রক্তের দাগ। মুখে হাসি। ডাক্তার সেন, বললেন, অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি বাবা হয়েছেন।

সুনীত তখন রক্ত দেখছিল। নীপার রক্ত। এবং এই প্রথম লোকটাকে সুন্দর লাগছিল ওর। ঈশ্বরের মতো সুন্দর। ও হেসে ফেলল, ঈশ্বরকে ঈর্ষা করা যায় না।

ডাক্তার সেন বললেন, খুশি তো! আপনার মেয়ে হয়েছে।

সুনীত আবার হাসল।

ডাক্তার সেন বললেন, আপনার স্ত্রী ভালো আছেন। একটু বাদেই সেনস ফিরে আসবে, তখন কথা বলবেন। তবে এক মিনিটের জন্যে।

সুনীত আবার হাসল।

ডাক্তার সেনের যেন অস্বস্তি হল। বললেন, আপনি আমার সঙ্গে আসুন। ওপাশের একটি বন্ধ ঘরের দরজা ঠেলে সুনীতকে নিয়ে ঢুকলেন তিনি। ছোট্ট একটা কটের সামনে দাঁড়াল ওরা।

ডাক্তার সেন সুনীতের দিকে তাকালেন।

কটের ভেতরে তোয়ালে জড়ানো ছোট্ট শরীর। মাথাটি বেরিয়ে আছে। মাথা ভরতি কোঁকড়া চুল। মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত হঠাৎ উত্তেলিত হল। লাল টুকটুকে মুখে প্রতিবাদের ভাঁজ। সুনীত ঝুঁকে পড়ল। কুচকুচে কালো চোখ দুটো এবার ঢেকে গেল। এবং সজোরে একটা কান্না আছড়ে পড়ল সুনীতের ওপর।

সুনীত সোজা হয়ে দাঁড়াল। ডাক্তার সেন বললেন, নতুন পরিবেশে যতক্ষণ খাপ না খাওয়াতে পারবে ততক্ষণ এইভাবে প্রতিবাদ করবে ওরা।

সুনীত আবার হাসল। সে মনে-মনে বলল, ঈশ্বর, কোনওদিন যেন ও খাপ খাওয়াতে না পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress