জন্মভূমি মাতৃভূমি (Janmabhumi Matribhumi) : 09
আজকে বন্ধুরা বলেছে একটা জয়েন্টে নিয়ে যাবে। খুব মজা হয় নাকি সেখানে। সত্রাজিৎ, নবনীতা, পায়েল, কিটু। ইনটারন্যাশন্যাল স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে কিটুই টিকে আছে। বাকিরা সব এইচ্ এস-এর। একটা জিনিস আমার খারাপ লাগে। বন্ধুরা সবাই এখানে আমাকে ডাক নাম ধরে ডাকে। আমার অত সুন্দর নামটা অব্যবহৃত পড়ে পড়ে মরচে ধরছে। ‘আরাত্রিকা’ মানে আরতির প্রদীপ, শিখিয়ে দিয়ে বাবা বলেছিল—কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা বলছি না। প্রদীপ ধরে দেতাকে পথ দেখানো হয়। তুমি নিজেকে এইরকম একটা স্পিরিট মনে করবে যে বড় কোনও আদর্শকে সর্বদাই স্বাগত জানাচ্ছে।’
মা হেসে বলত—‘আদর্শ-আদর্শ করে ওকে তুমি একেবারে এ-যুগের অনুপযুক্ত করে তুলবে দেখছি।’
এরকম কথা শুনলেই বাবা বলত—‘চরিত্রের গভীরে কোনও আদর্শের শেকড় না থাকলে ওর ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে কি করে?’
বাবা-মা অনেক সময়েই আমায় আরাত্রিকা বলে ডাকত। আই ওয়জ প্রাউড অফ মাই নেম। ভিকি, জেসি, স্যাডি, এইসব অর্থহীন চিহ্নের মাঝখানে আমার নামটা যেন জ্বলজ্বল করত। ওরা উচ্চারণ করতে পারত না, অ্যারাট্রিকা বলতে ওদের প্রাণ বেরিয়ে যেত; কিন্তু সকলেই স্বীকার করত নামটা ওয়ান্ডারফুল। একটা ক্ল্যাসিক্যাল ধ্বনি-গাম্ভীর্য আছে। অনেকে ভাবত নামটা কোনও রোম্যান দেবীর। কিছুতে বোঝাতে পারি না নামটা বিশুদ্ধ সংস্কৃত। অর্থ প্রদীপ। বিশেষ ধরণের প্রদীপ। হিন্দু রিচ্যুয়ালের একটা কাব্যময় চিত্রময় দিক ধরা আছে শব্দটাতে, আবার প্রতীক হিসেবেও নিতে পারা যায়। বাবা বলত—‘যাই বলো আর তাই বলো, নামে ঠিকই আসে যায়। ছেলেমেয়েকে যারা পুঁটি, পটলা, গোবরা, খেঁদি এই সব নামে ডাকে আমি তাদের দলে নেই। আমার নামকরণের মধ্যে সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধাও থাকবে।’
ওরা নামটা উচ্চারণ করতে না পারলে ওদের আড়ষ্ট জিভকে আমি ক্ষমা করে দিতাম। কিন্তু এখানে শর্মি যখন প্রথম একটা জয়েন্টে নিয়ে গেল নাম শুনে ওরা হেসেই অস্থির। একটি মেয়ে, নাম শিরিন, বলল—‘ডোণ্ট মাইন্ড ভাই, আমাদের এখানে অতবড় নাম চলবে না। তোমাকে ট্রিকসি বলে ডাকব।’
সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি ছেলে, নাম শুনলাম অম্রীশ, বলল—‘কেন ট্রিংকা আরও গ্ল্যামারাস হবে।’
শিরিন বলল—‘আই প্রেফার ট্রিকসি, বেট শী নোজ ট্রিক্স্। এনিওয়ে, ইউ উইল স্যুট হার হোয়েন শী ইজ টিপসি।’ ন্যাকা-ন্যাকা সুর করে কথাগুলো বলল শিরিন।
ব্যাথশেবার আমার মায়ের নাম ভীষণ পছন্দ ছিল। আবার টেগোরের দেওয়া ওরা অবশ্য রবীন্দ্রনাথকে তেমন চিনত না। ইন্ডিরা গ্যান্ডি পর্যন্ত ওদের দৌড়। আমরাই চিনিয়েছিলাম। ব্যাথশেবা বলত ওর মেয়ে হলে নাম রাখবে কমলিকা। জিজ্ঞেস করেছিলাম—অত বড় নাম উচ্চারণ করতে পারবে?’
ব্যাথশেবা বলেছিল, ‘সর নামেরই শর্ট ফর্ম আছে। যদি মেয়েকে কিম বলে ডাকি মনে করবে কিছু?’
দ্যাখো কাণ্ড। যে মেয়ে ওর এখনও হয়ইনি, হবে কিনা তাও জানা নেই, তার ডাক নামের জন্য ও আগাম অ্যাপলজি চেয়ে রাখছে! হাউ সুইট অফ হার!
কিন্তু শর্মির বন্ধুরা নামটার মানে শুনে বলল, ‘নেভার মাইন্ড।’ ওদের শর্টনিং-এ আপত্তি জানাতে বলল, ‘ডিড উই আস্ক ফর ইয়োর ওপিনিয়ন? গিভ ইট হোয়েন য়ু আর আসক্ড।’
এখানে আসার পর অনেক দিন হয়ে গেল। এই ক বছরে আমি যথেষ্ট বাংলা শিখে গেছি। এরা কি? নিজেদের মাতৃভাষার সম্পর্কে এদের কোনও শ্রদ্ধা নেই? আমার যখন যা মনে হয় বলে দিই। বললাম, ‘আমি অ্যামেরিকান, আমি উচ্চারণ করতে পারছি আর তোমরা কলকাতার বুকে বসে পারছো না? কি লজ্জা! শিরিন নামটা তো ফারসি আর তোমার নামটা নিশ্চয় অম্বরীষ, অবাঙালিদের মতো অম্রীশ বলছ কেন? আর য়ু অ্যাশেম্ড অফ ইয়োর বেঙ্গলি আইডেনটিটি?’
শিরিন হা-হা করে হেসে চোখ মটকে বলল, ‘কি অম্রীশ বলেছিলাম না ও ট্রিক্স জানে!’ অম্রীশ কাঁধ নাচালো। তারপর ওরা দুজন তথাকথিত ইনটেলেকচুয়াল কথাবার্তায় মেতে গেল। শর্মি চুপিচুপি বলল, ‘তুই ওদের এক হাত নিয়েছিস তো, এবার ওরা তোকে এক হাত নেবার চেষ্টা করছে।’ সল বেলো, আইজেনস্তাইন, নাভ্ৰাতিলোভা, মিক জ্যাগার, চাইকোভ্স্কি··· শুনতে পেলাম। এমন করে কথা বলছে, যেন মিক ওদের পয়লা নম্বর দোস্ত্। আর নাভ্ৰাতিলোভা এই সেদিনের বাচ্চা মেয়ে, গাল টিপে দিলেই হয়।
আমি সেদিন ওখান থেকে চলে আসতে আসতে শর্মিকে বলে ছিলাম, ‘শর্মি তুই এদের সঙ্গেই খালি মিশিস নাকি রে? এরা যে নীদার ফিশ নর ফ্লেশ নর গুড রেড হেরিং! কি সাংঘাতিক ড্রেস করেছে সব। এখানে এসে থেকে মা বাবাকে আমাকে খালি টিকটিক করছে ড্রেস নিয়ে। গোড়ায় আমি শুনিনি। তারপর রাস্তায় ঘাটে বিশ্রী বিশ্রী মন্তব্য শুনে নিজে নিজেই ড্রেস পাল্টে নিয়েছি। হোয়েন য়ু আর ইন রোম ডু অ্যাজ দা রোম্যানস্ ডু। এখানে এরা কিন্তু হট প্যান্ট ট্যান্ট পরে বসে আছে।
আজকে আবার দেখি নবনীতা, সত্রাজিৎরা কোন জয়েন্টে নিয়ে যায়। মাকে বললাম, ‘মা আজ আমার দেরি হবে, কলেজ থেকে এক জায়গায় যাব।’···
মা যথারীতি বলল, ‘ঠিকানাটা দিয়ে যা। আমি ফেরবার সময়ে গাড়ি পাঠিয়ে দেবো!’
‘আচ্ছা মা, তুমি কি মনে করো, তোমার একার মেয়ের জন্য চারদিকে সব কিডন্যাপাররা ওৎ পেতে বসে আছে?’
মা আস্তে আস্তে বলল, ‘হ্যাঁ রে মণি, আমি ঠিক তাই মনে করি। আমার মেয়েকেই কিডন্যাপ করার জন্যে কিছু নোংরা লোক ফাঁদ পেতে বসে আছে।’
আমি খুব খানিকটা হাসলাম। মা বলল, ‘হাসিস না। আমি অনেক ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর গল্প শুনেছি। তোকে বলতে পারব না। কাগজের কাটিং রেখে দিয়েছি। চাস তো দিতে পারি।’
কাগজ আমিও পড়ি। কাগজ পড়লে মনে হয় মেয়েরা এদেশে খুবই বিপন্ন। বিশেষত দিল্লিতে। তবে এটা তো দিল্লি নয়। আমি বললাম, ‘ঠিক আছে মা আমি সকাল সকাল ফিরব।’
কি করব পুজোর পর এখনও ভাল করে ক্লাস আরম্ভ হয়নি। আমার হাতে অনেক সময়। নবনীতা, সত্রাজিৎ, কিটু এল। নাদিয়াও এসেছে। নাদিয়া চুড়িদার পরেছে, নবনীতা আর সত্রাজিৎ জীন্স-এর ওপর পাঞ্জাবি, কিটু মিডি স্কার্ট, আমি আজ সম্বলপুরি শাড়ির সঙ্গে চপ্পল পরেছি। সত্রাজিৎ বলল, ‘তুমি আজ খাঁটি সাংস্কৃতিক ড্রেস দিয়েছ আরাত্রিকা, নাচতে হলে পারবে?’ আমি বললাম, ‘কত ফাস্ট নাচ? দেখো পারি কি না!’
বাসটা কয়েক স্টপ যেতে বললাম, ‘চলো না ময়দানের দিক থেকে ঘুরে আসি। কি সুন্দর হয়েছে আজকের দিনটা। ময়দানে গাছগুলোর কি অদ্ভুত শেপ। নাচের ফিগারের মতো। চলো না।’
সত্রাজিৎ বলল, ‘আরাত্রিকা তুমি এরকম কবি-কবি হয়ে গেলে আমরা পুওর ফেলোজ কী করব? ইকো স্ট্যাট্স্ ম্যাথ্স্ নিয়ে পড়ছো। এদিকে গাছের শেপটেপ কি সব আলতু ফালতু বকছ?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘দুটোর মধ্যে কোনও কনট্র্যাডিকশন আছে বুঝি?’
নবনীতা বলল, ‘সিওর। এটা স্পেশালাইজেশনের যুগ। লেট কবিজ টক অ্যাবাউট গ্রীনস্ অ্যান্ড ট্রীজ। আমরা খালি ডিমান্ড সাপ্লাই ইনপুট-আউটপুট করব।’
গলির মধ্যে গলি, তারও মধ্যে গলি। একটা পড়ো মতো বাড়ির সামনে ওরা দাঁড়ালো। ম্যাজানিনে উঠতে হবে।
আমি বললাম, ‘এরকম ডেজার্টেড লুক কেন রে বাড়িটার?’
ওরা বলল, ‘চলই না।’
মেঝেতে একদিকে ঘাসের মাদুর বিছোনো ছিল। তার ওপর কয়েকটা কুশন। প্রচুর অ্যাশ ট্রে। রঙ চটা দেয়ালে দেখলাম ব্রুসলি, বর্গ, অমিতাভ বচ্চনের পোস্টার। হার্ড রকস্ বাজছিল। দেখলাম প্রচণ্ড নাচছে সব। হার্ড রকসের সঙ্গে আমি নিজে ভালো নাচতে পারি না। সফ্ট সোল মিউজিকের সঙ্গে নাচতে নাচতে আমি স্বর্গে চলে যাই। নিউইয়র্ক সেন্ট্রালের অ্যাডাম রকহার্ট বলে ছেলেটা দারুণ নাচে। এদের নাচ কেমন এলোমেলো, বেতালা লাগল। একটু পরেই একটা ছেলে আমাকে একটা সিগারেট অফার করল। এদের এখানে ইনট্রোডাকশনের বালাই নেই। আমি সিগারেটটা রিফিউজ করতে অস্বাভাবিক লাল চোখে আমার দিকে চাইল, বলল, ‘ইদার য়ু স্মোক অর ইউল বি থ্রোন আউট অফ হিয়ার উইদাউট ইওর ক্লোদস্!’ কি স্পর্ধা! সত্রাজিৎ মিনমিন করে বলল, ‘দাও না একটা টান, কিছু হবে না।’ নবনীতা ইঙ্গিতে জানাল যে ছেলেটা ওইসব বলল সে একেবারে আউট হয়ে গেছে। কিছু যেন মনে না করি। আমি ভেতরে রাগ নিয়েও শুদ্ধু ওদের চ্যালেঞ্জটা নেব বলে একটা টান দিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে সাংঘাতিক কাশি। বিশ্রী গন্ধ একটা বুকের মধ্যে পেটের মধ্যে ঢুকে গেল। গন্ধটা আগেও পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ঘরটা বন্ধ, অতজনে স্মোক করছে তাই বোধহয়। রেগে লাল হয়ে বললাম, ‘এর ভেতরে মারিহুয়ানা আছে। আমার সঙ্গে চালাকি করছ, না? জানো আমার বাবা পর্যন্ত একদিন এক কথায় স্মোক করা ছেড়ে দিয়েছেন? তোমাদের শুট করা উচিত!’
আমি আর দাঁড়াইনি। বন্ধুদের দিকে তাকাইনি। স্রেফ দৌড়তে দৌড়তে চলে এসেছি। পেছনে অনেকগুলো হাত আমাকে ধরতে আসছে। তখনই দেখলাম বেশ কয়েকজন বয়স্কও রয়েছে দলে। বীভৎস শয়তানের মতো মুখগুলো। কে বললে, ‘স্পাই ধরো ধরো!’ কয়েকটা আঙুল আমার কাঁধের ওপরে···। লোকগুলো নেশাগ্রস্ত বলেই আমার পক্ষে বেরিয়ে আসা সম্ভব হল। রাস্তাটা ভাল চিনি না। কিছুদূর আসতে মনে হল এটা টাউনসেন্ড রোড। তার মানে দিদিমার বাড়ির কাছে এসে পড়েছি। তারপর দেখি রাস্তা দিয়ে উল্টোপাল্টা লোক ছুটছে। একজন ছুটতে ছুটতে বলে গেল ‘ইন্দিরা গান্ধী মার্ডার্ড, খুন হয়েছেন নিজের বাড়ির হাতায়, দেহরক্ষীরা খুন করেছে।’ সকালে একবার যেন শুনেছিলাম ওঁকে গুলি করা হয়েছে, কিন্তু সেটা যে এতো সিরিয়াস তা তো বলেনি। ছুটতে ছুটতে ঢুকে গেলাম বকুলবাগান রো। ‘দাদাই দাদাই!’ দিদিমা মুখ বাড়িয়ে বললেন, ‘মণি, এমন অসময়ে!’ দাদাই বললেন, ‘ভালো করেছিস। এখন কোথায় দাঙ্গা-টাঙ্গা লাগবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। যা একবার ওপরে, যা, তোর মা-বাবাকে ফোন কর। নিশ্চিন্ত করে দে ওদের।’
দাদাই রেডিও নিয়ে বসে আছেন। শুনতে শুনতে আমার ভয় হল দিদিমা যদি আমার শাড়িতে গাঁজার গন্ধ পান। বাথরুমে ঢুকে জামা কাপড় ভিজিয়ে ফেললাম। মুখ ধুলাম ভালো করে। দাঁত মাজলাম, দিদিমা বললেন, ‘ও কি রে?’
‘ভিজিয়ে ফেলেছি দিদিমা, তোমার শাড়ি দাও।’
দিদিমার শাড়ি, পেটিকোট আর ডবল সাইজের ব্লাউজ পরে বাবাকে ফোন করতে গেলাম। মানুষ-মাকড়সার স্পর্শগুলো দিদিমার শাড়ি পরতে তবে গেল গা থেকে।
এই তাহলে ইন্ডিয়া! যেসব বিকৃতি আমেরিকাকে স্পর্শ করছে, সেগুলো সাত তাড়াতাড়ি এরা পিকআপ করছে কাঙালের মতো! যেন ফ্যাশন! ট্রাইং টু বি মোর অ্যামেরিকান দ্যান অ্যামেরিকানস্! এদের পোশাক-পরিচ্ছদ কথা-বার্তা সংস্কৃতি সবই তো দেখি মার্কিন-মার্কা! আমরা আমাদের ছোট্ট ভারতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে একটা অবিকৃত ভারতবর্ষকে অটুট রাখবার চেষ্টা করতাম। আমাদের মা-বাবারা কত কাজের মধ্যে সময় করে আমাদের বাংলা শেখাতেন। মাতৃভাষা নিয়ে বেশ একটা গর্বের ভাব দেখতাম ওখানে। শশাঙ্কজেঠু ওঁর ঢাকাই বাংলা পর্যন্ত আমদানি করবার চেষ্টা করতেন। অথচ উনি বরাবর কলকাতায় মানুষ। কিন্তু এরা? এরা প্রাণপণে ভোলবার চেষ্টা করছে যে বাস এদের কলকাতায় তথা ভারতে, এবং ভাষা বাংলা। বাঙালিদের মধ্যে আবার অবাঙালিদের নকল করার চেষ্টা। কি সুন্দর হত আমাদের টেক্সাসের দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠান! এখানে এত চিৎকার করে পাড়ায় পাড়ায় লাউড-স্পিকার লাগায় যে গান শোনা তো দূরের কথা, কিছুক্ষণ পরই মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। একজন মহিলাকে, হোন না তিনি প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে এভাবে ষোল না কত রাউন্ড গুলি করে মারবে! তাঁর নিজের রক্ষীবাহিনীর লোক! কি কাপুরুষ! এরা কি কাপুরুষ! নৈরাজ্য আর কাপুরুষতার কি লজ্জাকর নিদর্শন! বাবা সেদিন মার সঙ্গে কলেজের প্রবলেমের কথা বলাবলি করছিল! দেয়ালে পোস্টার। মুখে অসভ্য ভাষা, লেখাপড়া ছাড়া সব কিছু হয়, সবচেয়ে বেশি হয় পলিটিক্স। বলতে বলতে বাবার মুখ থমথম করছিল। মা বলল, ‘দোহাই তোমার, তুমি জানপ্রাণ লাগিয়ে এসব সিস্টেম ঠিক করার চেষ্টা করতে যেও না। আমাদের কথা ভাবো!’
এই ইন্ডিয়া! এরই জন্য অত কষ্ট করে অতদূর থেকে আমার জন্মভূমি ছেড়ে আমি এলাম!
কমলিকা ফোন করেছিলেন সুদীপকে। আরও অনেককে লিফ্ট দিতে দিতে ওঁরা যখন বকুলবাগানে পৌঁছলেন, তখন মণি ঘুমিয়ে আছে। বাথরুমে বালতিতে ওর নতুন সম্বলপুরি শাড়ি, ব্লাউজ সব ভেজানো। দিদিমার চওড়া পাড় সাদা শাড়ি আর ঢোলা ব্লাউজ পরে মণি ঘুমোচ্ছে, কুঁকড়ে। কমলিকা ঝুঁকে পড়ে দেখলেন ওর গালে জলের দাগ। মণি কি কেঁদেছে? ইন্দিরা গান্ধীর জন্য? মণি তো সহজে কাঁদবার মেয়ে নয়!