ছোট বেলার বন্ধু
সুমা পিঠে ব্যাগ নিয়ে ট্রেন ধরবে বলে ছুটছিল,একহাতে ছিল খাবারের ব্যাগ,ও আরেক হাতে ঝোলানো ব্যাগ,তাতে মোবাইল, টাকা, সাজগোজ করার সরঞ্জাম, দৈনন্দিন জীবনের খাবার ওষুধ যেটা না খেলে প্রেসার চড়চড় করে বেড়ে যাবে, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল, এছাড়া নানা ধরনের ওষুধ ,বেড়াতে গেলে অজানা জায়গায় কি না লাগতে পারে। সুমা কোনো রকমে টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে পা দিতেই ট্রেনটি দাঁড়ায়। সামনে লেডিস ক্যামরা বরকে বলে তুমি জেনারেল ক্যামরায় ওঠে পড়ো। ওস্তাদি ওই আর কি।পরের ট্রেনে এক সাথে গেলে হতো। শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা ছাড়তে তখনো দু ঘন্টা বাকি। সুমা জানত ঢাকুরিয়া প্ল্যাটফর্ম অনেক নীচে।পা তুলে উঠতে খুব কষ্ট হয়। যথারীতি উঠতে গেছে ট্রেনের সামনের যে রড থাকে আটকে গেছে।প্রায় বসা।দেহ বাইরে ঝুলছে।কেননা পিঠের ব্যাগটার ভার নিচে নেমে গিয়ে দেহ ভারী হয়ে গেছে।বগি ফাঁকা। কেউ সাহায্য করার মতো নেই। কেউ সুমাকে দেখতেও পাচ্ছে না।ট্রেন চলবে হয়তো এবার।সুমা দেখে ওর ছোট্ট বেলার প্রিয় বান্ধবী মৌহুয়া হাত বাড়িয়ে বলছে ওঠে এসো।সুমা বলে # একটু তোমার সাহায্য পেলে দাঁড়াতে পারব।হাতটা কি ঠাণ্ডা!! সুমা অনেক কষ্টে দাঁড়িয়ে দেখে মৌহুয়া নেই।দু একজন ট্রেনে বসে আছে। তিন স্টেশন পরে শিয়ালদহে নেমে সুমা এদিক ওদিক লক্ষ্য করে। তারপর বরের সঙ্গে ছোটে সাউথ থেকে নর্থে। নয় নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে কাঞ্চনকন্যা ছাড়বে।ওদের গন্তব্য ছিল মালবাজার।তারপর ওখান থেকে গরুমারা।ট্রেন আসতে ও ছাড়তে ঘন্টা দেড়েক বাকি।
সময় কাটছেই না ।মৌহুয়া কোথায় গেল!বর নিজে বলে হঠাৎ ওই ভাবে লেডিস ওঠে বসে পড়লে একটু হলে দুর্ঘটনা ঘটত।একসাথে বেড়িয়ে দুই জনে আলাদা ক্যামরায়।
কে কি ভাবে রক্ষা করেছে সুমা বরকে বলে। সুমা বলে তারপর ও কোথায় গেল!! সেটা তো ভাবছি!!
আজ সারাদিন পেপার পড়া হয় নি তাই সুমার বর একটা পেপার কিনে আনে। তাছাড়া খাবার খাওয়ার সময় পেপার লাগবে।ট্রেন ছাড়তেই রাতের খাবার খেয়ে সুমা হাত ধুয়ে পেপার দেখছে বর ওই সময় বাথরুমে গেছে। সুমা চিৎকার করে বলে এ হতে পারে না,মৌহুয়ার ছবি।ও দুদিন আগে পার্ক সার্কাসে ট্রেনে কাটা পরে মারা গেছে।আজ পোস্ট মর্টেমের পর দেহ বাড়ি র লোকদের কাছে দিয়েছে।বর বলে সুমাকে তুমি কারর কাছে শুনেছ কি ও দুর্ঘটনায় মারা গেছে।সুমা বলে না না কারর কাছে শোনে নি।তবে এক সপ্তাহ আগে ওর ছবি আমাকে হোয়াটস অ্যাপে দিয়েছিল,আমিও দিয়েছি।তারপর লিখি ফেসবুক যখন আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে,শীঘ্র দেখা করব বুঝলে। হোয়াটস অ্যাপ দেখে ট্রেনের লোকেরা ,বর। সবাই তাজ্জব হয়ে যায়।ওই প্রশ্নের উত্তর সুমা আর খুঁজে পায় না। বেড়িয়ে এসে বাড়ি ফিরে মৌহুয়াকে ফোন করলে ওর বর বলে আপনি সুমা। আপনার কথা কয়দিন ধরে খুব বলেছিল। সুমা ভাবে মৌহুয়া তোমার সাথে দেখা হল না ,এটাতো বলতে পারব না।। তুমি তো বাঁচাতে এসেছিলে।ওনারা সুমার ঘটনা শুনে অবাক। ছোট বেলার বন্ধু কে চলে যাবার পরেও বাঁচিয়ে গেছে।সত্যি সুমা ও মহুয়া ছোট্ট বেলায় খুব বন্ধু ছিল। বিয়ের পর ছাড়াছাড়ি। আবার ফেসবুক মিলিয়ে যদিও দিল ,মৌহুয়াকে ভগবান কেড়ে নিল।