ছায়া ও অক্সিজেন
সভ্যতার চাকা গড়গড়িয়ে এগিয়ে চলেছে।উন্নয়নের ঢক্কানিনাদে প্রকৃতির ওপর অবিরাম কোপের ফলে অনেক জায়গা ন্যাড়া! সামাজিক কাণ্ড-কারখানাগুলো বর্তমানে শহুরে বাসিন্দা গ্রাম্য আবহাওয়ায় মানুষ সুনত-র না-পসন্দ।
প্রায় তিনবছর গ্রাম-ছাড়া সুনত এখন কলকাতায় বেসরকারী অফিসে কর্মরত।নিসর্গের ওপর অবাঞ্চিত হামলে পড়ার ছবি তাকে ভীষণ নাড়ায়।কিন্তু গ্রামের সুশীতল নিবিড় তরুছায়াস্থলের কথা মানসপটে জীবন্ত।তাই বিষন্নতাও বন্ধু।
কখনো অজান্তে দু-ফোঁটা অশ্রুপতন। নির্বিচারে বৃক্ষছেদন কবে শেষ হবে?উন্নয়নের ধ্বজার তলে প্রকৃতির সর্বনাশে মানুষ কি কাঁপবে না?একদিন যে অক্সিজেনের অভাবে সমাজের বিপন্নতা প্রকট হবেই।
সাত-পাঁচ ভাবনার মাঝে বাঁকিপুর গ্রাম থেকে মায়ের চিঠি পায়।মা নাকি অসুস্থ।
সুনত ভাবে, মায়ের চিঠিটাই তার হাতিয়ার।অফিসের ম্যানেজারের কাছে দিন সাতেকের ছুটি আদায় করে। আবার বঁকিপুর গ্রামে! নানা বৃক্ষের সমারোহে সেই অমূল্য ছায়ার কথা ভেবে সে রোমাঞ্চিত ও উল্লসিত।
কিন্তু এ কি! বাঁকিপুর গ্রামে পৌঁছে সুনত দেখে, এ যে শহরীকরণ! কোথায় বনসৃজন? বরং গাছগুলো ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার মুখে! কিছু পথচলতি মানুষকে এর কারণ জিজ্ঞেস করে জানে,রাস্তা চওড়ার নামে যথেচ্ছ ছেদন!গাছের ছায়া এখানেও দুর্লভ হয়েছে।বিরক্ত ও চিন্তান্বিত সুনত শ্লথ পায়ে বাড়ীর দাওয়ায় পৌঁছে হাঁকে, মা, আমি এসেছি।
উৎফুল্ল মুখে বেরিয়ে দীপ্তি ছেলেকে জানায়, এবার গ্রামে উন্নয়নের বন্যা বইবে। প্রতিবাদে সুনত, এমন বিকাশ-ভাবনা সভ্যতার গরল।আমি তরুর সুনিবিড় ছায়া আর অক্সিজেনের যোগানে সমৃদ্ধ হতে চাই।তাই বাঁকিপুরে উদ্যোগের বন্যা চাই বনসৃজনে।
-তথাস্তু। কিন্তু কলকাতায় থাকলে তা কি সম্ভব? দোটানার ভেতর সুনত ভীষণ আনমনা হয়ে থাকে।