ছাদনাতলায় মামদো
ভুষণ্ডীমাঠে আজ হৈহৈ রৈরৈ কাণ্ড। ভূতনগরের যতরকমের অনুষ্ঠান আজকাল এখানেই হয়— বিয়ে , অন্নপ্রাশন ,শ্রাদ্ধ সবই।
অবশ্য ভূতনগর পুরসভাকে তারজন্য ধার্য্য টাকা দিয়ে মাস কয়েক আগে থেকেই বুক করতে হয়।
মামদো একটুবেশী টাকা দিয়ে তার বিয়ের বুকিং এর ডেটটা একটু এগিয়ে আনবার চেষ্টা করেছিলো।
তাতেই বাঁধল যত গোল। পুরপ্রধান ব্রহ্মদত্যি হঙ্কার দিয়ে বললেন ” ছিঁচঁকে ছোঁড়া।ভেঁবেছ ঁটা কিঁ।এঁটা কি মাঁনবসঁমাজ যেঁ ঘুঁষ দিঁয়ে কাঁজ কঁরাবে? তুঁমি তোঁ এঁখনো প্রঁকৃত ভূঁত হঁয়েই উঁঠতে পাঁরো নিঁ। তোঁমাকে প্রঁকৃত ভূঁত হঁবার জঁন্য ছঁমাস
ব্রঁহ্মজ্ঞানী ব্রঁহ্মদত্যি মঁশাইয়ের শেঁওড়া গাঁছে পাঁঠানো হঁবে।আঁগে ভূঁতত্ব শিঁখে এঁস।
তাঁরপর বিঁয়ে কঁরবে।”
কোথায় মামদো স্বপ্ন দেখেছিলো তাড়াতাড়ি বিয়ে ,হানিমুনটা সেরে তার বুক করা নতুন বাঁশঝাড়ের ফ্ল্যাটে মামদোসুন্দরীকে নিয়ে গুছিয়ে সংসার করবে।সেই স্বপ্নের জাল এভাবে ছিঁড়ে যাবে আন্দাজ করতে পারে নি।
মামদো বেচারা হাত পা ধরে বলে “স্যঁরি কাঁকু খুঁউব ভুঁল কঁরে ফেঁলেছি।আঁর কঁক্ষনো এঁমন ভুঁল কঁরবো না।এঁবারের মঁতো মাঁফ কঁরে দিঁন। আঁসলে পুঁরোনো অঁভ্যেস কিঁনা।সেঁকি আঁর এঁকজন্মে যাঁয় বঁলুন।”
হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে পুরপ্রধান ব্রহ্মদত্যিকে তুষ্ট করার চেষ্টা করে।
কিন্তু পুরপ্রধান ব্রহ্মদত্যি কোনরকম অসাধুতাকে বিলকুল প্রশ্রয় দেন না। যাতে ভূতনগরের পরিবেশ এতটুকু কলুষিত হতে পারে।
তবে সবদিক বিচার করে বলেন “ঠিঁক আঁছে তুঁমি যঁখন বঁলছো—।তঁবে তিঁনমাস তোঁ থাঁকতেই হঁবে।”
অগত্যা মামদোকে যেতেই হবে সেই শেঁওড়া গাছে।
কিন্তু এতদিন সে তার গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে কি করে থাকবে—সেটা ভেবেই সে আকুল।
আজকাল বাচ্চাবাচ্চা ভূতের খোকাদের কোন বিশ্বাস নেই।সুযোগ পেলেই কে যে কার গার্লফ্রেন্ডকে টানবে—
মামাদোসুন্দরী মামদোকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠায় সেই শেঁওড়া গাছে।
ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রহ্মদত্যির সাহচর্যে মামদো ভূতজীবনের তত্ত্বকথা আত্মস্থ করে তিনমাস পরে ফেরৎ আসে।
মামাদোর মা দই এর ফোঁটা দিয়ে বলে” আঁয় বাঁছা ঘঁরে আঁয়।এঁটা জীঁবনে বঁড় দঁরকারী জিঁনিস বাঁপ।তুঁই নঁতুন সঁংসার কঁরতে যাঁচ্ছিস তাঁর আঁগে নিঁজেকে শুঁদ্ধ কঁরাটা খুঁব জঁরুরী।”
মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সেরে শিমূলগাছে গিয়ে বসে মোবাইলটা হাতে নেয়।
এতদিন পর মামদোর মোবাইল থেকে ফোন পেয়ে মামদো সুন্দরী আবেগে আপ্লুত।
“এ্যঁই কঁ’টামাস আঁমার কিঁভাবে কেঁটেছে তুঁমি জাঁন?” বলেই নাক টানতে থাকে।
“জাঁনি সোঁনা।ওঁসব বঁলে আঁর ভেঁবে কঁষ্ট পেঁও নাঁ।সাঁমনের শঁনিবারই তোঁ সেঁই শুঁভদিন যেঁদিন আঁমাদের স্বঁপ্ন সঁফল হঁতে যাঁচ্ছে।”
মামদো সুন্দরী ধাতস্থ হয়ে ” হ্যাঁ তাঁই তোঁ আঁমি শঁপিংটা সেঁরেই রেঁখেছি।এ্যাঁই জাঁনো তোঁমার পঁছন্দের রঁঙের বেঁনারসীই কিঁনেছি।তুঁমি তো বঁলো আঁমার মিঁশকালো রঁঙে রঁক্তলালটা নাঁকি দাঁরুণণ মাঁনায়।
মামদোও এবার বেশ খুশি হয়ে ” বাঁহ্ বেঁশ কঁরেছো।তাঁ আঁমার টা।”
“তোঁমারও কিঁনেছি। কাঁলো ধুঁতি আর লাঁল পাঁঞ্জাবি।যাঁ হ্যাঁন্ডসাম লাঁগবে নাঁ যঁখন লাঁলজবার মাঁলা গঁলায় দিঁয়ে টোঁপর পঁড়বে।”
শনিবার ভোর থেকেই ভূতনগরের দুপরিবার হাজির ভুষণ্ডীর মাঠে। মাঠের দুটো দিক দু পক্ষ বেছে নিয়েছে। দধিমঙ্গল থেকে , হলুদ কোটা কোন আয়োজনের ত্রুটি নেই। নহবৎ বসেছে। ভূত ,পেত্নী কচিকাঁচা খোকা খুকিরা পরম আনন্দে গান গাইছে কখনো বা নাচ করছে। ঠিক বারবেলাতেই শুভলগ্নে বিয়েটা সারতে হবে।তাই স্কন্দকাটা পুরুত মশাই এসে হাজির।
ছাদনাতলায় মামদো ও মামদোসুন্দরী এসে পড়েছে। মামদোসুন্দরীর বাবা দুচোখ জল নিয়ে কঙ্কালসার চারহাত এক করে দেন।
মামদোও রীতিমত দায়িত্ব নিয়ে শ্বশুরমশাইকে আশ্বস্থ করে বলে ” এঁকদম ভাঁবেন নাঁ। আঁমি ওঁকে যঁত্নে রাঁখবো, ভাঁলোবাসায় রাঁখবো।”
অতিথি অভ্যাগতরা দুপক্ষের আতিথেয়তায় ভীষণ খুশি।সবচেয়ে বেশী খুশি মামদোর এই ভূতত্ব প্রাপ্তির পর আমূল পরিবর্তন দেখে।
ভুষণ্ডী গ্রাউণ্ড ম ম করছে পোলাও, বিরিয়ানির গন্ধে। ভিখিরীভূতেদের যত্ন করে পাত পেড়ে খাওয়ানো হচ্ছে।
তারাও মামদো নবদম্পতিকে খুশি হয়ে আশীর্বাদ করে “সুঁখী হঁয়ো বাঁছারা।”