ছন্দ সরস্বতীর বরপুত্র
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের স্রষ্টা হিসাবে গণ্য হলেও তাঁরই জীবদ্দশায় আরেকটা
যুগের সূচনা করেছিলেন দুখুমিয়া। প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তাঁর প্রতিভার
বিকাশ ঘটেছিল।শুধু দারিদ্র্য নয় অর্থের অভাবে
পড়াশোনার সুযোগ হয়নি।জীবিকার তাগিদে
বাল্যকালে খানসামা ও চায়ের দোকানে রুটি
বানানোর কাজ করেছিলেন।ব্যক্তিগত জীবন
সাহিত্যে প্রভাব ফেলে।
সাম্প্রদায়িকতার দিনে,যুদ্ধের দিনে দ্বিজাতি
তত্ত্বের দিনে তিনি বাংলার জয়গান করে গেছেন
তা বাংলা সাহিত্যে বিরল।
তিনি গাইলেন সাম্যের গান।বললেন নারী পুরুষের অধিকার সমান। লিখলেন কৃষক মজুরের দুঃখের কথা।তাই তার মন সকলের
থেকে আলাদা। ছিল না তার মধ্যে আভিজাত্য,
ছিল যারা দলিত,অত্যাচারিত, নিলেন একেবারে নিজের করে আপন,নীচতলার থেকে ওঠা মানুষ
যারা তখন।ছিল না কোন ভাষা তাদের, পেল
খুঁজে নজরুলের কলমে ভাষা নিজেদের। তাই
সৃষ্টি করেছিলেন আরবি ও ফারসি ভাষার সংমিশ্রণে নিজস্ব দেশজ বাংলা ভাষা।
সেই যুগে একটা ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছিল।যেটা হল দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সমাজ বিপ্লবের মেলবন্ধন।বিপ্লব ছিল নজরুলের রক্তে।তিনি চেয়েছিলেন রাজনৈতিক
অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা।
সাম্প্রদায়িক সংঘাত স্বাধীনতার পথে প্রধান বাধা
বলে তিনি মনে করতেন।তাই লেখনীতে ফুটে
উঠল ‘কান্ডারী হুশিয়ার’।তার মনের ছবি খুব স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হল। সুরারোপিত করে
গাইলেন, দুর্গম গিরি কান্তার মরু…. হিন্দু না ওরা
মুসলিম ওই জিজ্ঞসে কোন জন? কান্ডারী বলো
ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।তার হৃদয় জুড়ে
সাম্যবাদী চেতনার জোয়ার। সেই চিন্তাধারায় ছিল সমাজের নীচের তলার মানুষকে আপন ভাবতে শেখা।কথিত আছে কলকাতায় কলেজস্ট্রীটে হ্যারিসন রোডের মুখে একজন রিক্সাওয়ালাকে একদিন রাত বারোটায় রিক্সায় বসতে বলেছিলেন,তাকে রিক্সায় বসিয়ে তিনি রিক্সা টেনে নিয়ে যাবেন।ধূমকেতু
পত্রিকায় ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেছিলেন এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও উল্লেখ
করেছিলেন।
তিনিই প্রথম বাঙালি,বাংলার নবজাগরণের
ঐতিহ্য ধারণ করেছিলেন এবং বাঙালিকে শক্ত
সবল করার চেষ্টা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাকে বর্ণনা করেছিলেন,
‘ছন্দ সরস্বতীর বরপুত্র’হিসেবে।
দাসত্ব শৃঙ্খলে বদ্ধজাতিকে
শোষণ উৎপীড়ন থেকে মুক্ত হবার ডাক দিয়েছিলেন কবিতায়।অথচ ভারতবর্ষেই তার মূল্যায়ন হয়নি।বলেছেন,
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।