Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চোরাবালি || Rana Chatterjee

চোরাবালি || Rana Chatterjee

চোরাবালি

“আমাকে বিরক্ত করো না তো আর, সামনে বিয়ে যখন, হবু বউকে সময় দাও” কথা গুলো লিখে, হোয়াটসঅ্যাপে নাম্বারটা ব্লক করে দিল নেহা। পরশু ঠিক এইভাবে, ফেসবুকে, আনফ্রেন্ড করেছে। বারবার বুকে কষ্ট নিয়েও বলেছে “দেখো, এটা ঠিক করছ না, তোমার হবু বউয়ের আপত্তি না থাকতে পারে কিন্তু হ্যাঁ, আমার আছে “। অন্যদিকে কিশোর, “আরে কি আছে, এখন তো আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি না কি, বলে তার প্রাক্তন অগ্নিসাক্ষী করা বউকে বারংবার অনুনয়।এক নাগাড়ে কদিন বলেই চলেছে, ” আমার হবু বউ জানে তুমি আমার কেবল বন্ধু”-কথাগুলো শুনে মাথা গরম হয়ে ওঠেছিল নেহার। কথা বলতে গিয়ে নিজেকে আটকায় আর কতই বা বলবে ওকে!খুব কষ্ট হয়, মনে পড়ে যখন, একরাশ স্বপ্ন নিয়ে, সিঁথি রাঙিয়ে কিশোরের হাত ধরেছিল সে। নতুন বউ হয়ে ও বাড়িতে প্রবেশের দিন, নিজের একটা অস্তিত্ব তৈরির স্বপ্ন যেমন দেখে আর পাঁচটা মেয়ে বিয়ের পর, কিন্তু কাঁচ ভাঙা আয়নায় সব ধূসর আজ।

সকালে এলার্ম টা বাজতেই আর একবার চাদরটা মুখ অব্দি টেনে, ঢাকা দিয়ে পাশ ফিরে শুলো নেহা।পড়তে বসে ভাই বলে উঠলো, “আচ্ছা মা, গতবছর আজকের দিনেই না, দিদির বিয়ে হয়েছিল”কথাটা বলেই, বলা ঠিক হয়নি বুঝতে পেরে জোড়ে জোড়ে পড়তে শুরু করে দেয় আবার। হ্যা ভাই ঠিকই বলেছে, গতবছর ঠিক আজকের দিনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল নেহা আর কিশোর।বাবার খুব ইচ্ছা ছিলো, সব আত্মীয় স্বজনকে বলবে, একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা, তাতে মধ্যবৃত্ত সংসারে হোক টানাটানি।নেহা কিন্তু মাকে বলেছিল, “মা দেখেশুনে সম্বন্ধে করছো তো, একটু খোঁজ নিও। আমার বিরাট ধনসম্পত্তি চাই না গো মা, কিন্তু চিনলাম না, জানলাম না, একদম বিয়ের পিঁড়িতে”ঠিক মন সায় দেয়নি নেহার।

বিয়ের আগে অবশ্য, দুবার দেখা করেছিল ওরা দুজনে। না কথা বার্তা, যেমন হয় আর কি, ঐ টুকটাক ছুঁড়ে ছুঁড়ে।বিয়ের দশ দিনের মধ্যেই নেহা বুঝে গিয়েছিল এ বাড়িতে, তার বরের ঠিকমতো ব্যক্তিত্বই গঠন হয়নি। দিনরাত শাশুড়ি মায়ের আঁচলে, মায়ের তত্ত্বাবধানে কাটায় । সে নাহয় ঠিক আছে, মেনেও নিয়েছিল বহুদিনের অভ্যাস বলে কথা, কিন্তু বাড়িতে নতুন বউ বিয়ে করে এনেছে, তার কিছু প্রয়োজন আছে কিনা, সে আদৌ নতুন পরিবেশে কেমন আছে দুদণ্ড কি কথা বলারও অনুমতি নেই! দু একবার যে কিশোর আসতে চেষ্টা করেনি তা নয় কিন্তু বাধ্য মায়ের ডাকে “হ্যাঁ মা, যাচ্ছি”বলেই উধাও।একটা মানুষের নিজের যে কোনো ভাষা থাকতে পারে কিন্তু এর কোন কিছুতেই কোন রা নেই, যা করছে বা করবে সব ওই দাপুটে ভদ্রমহিলা, শাশুড়ি মা ।

বর, রাতে দোকান বন্ধ করে ফিরে, খাওয়া দাওয়া শেষে মায়ের সাথে ঘন্টাখানেক হিসেব নিয়ে বসে।প্রতিদিন অপেক্ষা শেষে কখন যে শুতে আসে আর কোন সকালে উঠে স্নান সেরে আবার দোকানে দৌড়ানো! কিছুদিনের মধ্যেই নেহা বুঝে যায়, কিশোরের নিজস্ব কোন মত বা চাহিদা নেই।বিয়ে করতে হয়, সামাজিক অনুষ্ঠান না করলে নানা জনের নানা প্রশ্ন উঠবে তার জন্যই মায়ের বাধ্য সন্তান বৌ এনেছে বাড়িতে।এই কদিনেই শ্বশুর বাড়ির সব উদাসীন হাবভাবে সুখ, স্বপ্ন ডকে উঠে, মানসিক ভাবে জর্জরিত করে তুলেছিল নেহাকে।সংসারে মেরুদন্ডহীন বরের কলুর বলদের মতো অবস্থা, রাগে, ঘেন্নায় অসহ্য হয়ে উঠেছিল।সে, কি সংসার করবে, কিসের স্বামী স্ত্রী ওরা যে দুদণ্ড কথা বলারও ফুরসৎ জোটেনা!

অষ্টমঙ্গলায় যেতে হয় তাই জামাই, একবেলার জন্য গিয়ে, “তুমি বরং মায়ের কাছে বাপের বাড়িতে কটা দিন থাকো, দোকানে মাল ঢুকবে চাপে আছি”কথাটা বলতেই আচ্ছা করে এক প্রস্থ ঝগড়া করেছিল নেহা।জামাই পৌঁছে দিয়ে চলে যাবার পনের দিন হয়ে গেল, না কোনো ফোন এসেছে, না কিশোর এসেছে নতুন বউকে নিতে।ওই একবেলার শ্বশুরবাড়িতে কাটানো জামাই কে ফোনে কত বার যে, শ্বাশুড়ি মাকে ফিরিস্তি দিতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই ! কিশোর চলে যাবার পর, নেহা যতবার ফোন করেছে, “পরে বলছি, ব্যস্ত আছি দোকানে, খুব ভিড় “এই সব উত্তর এসেছে।পাল্টা ফোনও আসে নি, বাধ্য মায়ের সুবোধ সন্তানের।হটাৎ একদিন শাশুড়ি, ননদ মিলে গদগদ হাসিতে, “কিশোর খুব ব্যস্ত কিনা, সব সামলাতে হয়, “বলে নিতে এসেছিল নেহাকে।

ও বাড়িতে ফিরে নেহা দেখে সাত দিনের জন্য কিশোর, দোকানের মাল কিনতে বাইরে যাচ্ছে, তার প্রস্তুতি সাড়া। যাবার দিন দুজনে মুখোমুখি হয়েছিল, কথা হয়নি।দরজার পাশে চুপটি করে নেহা দাঁড়িয়ে দেখছিলো শাশুড়ি মা ছেলের কপালে দই এর মঙ্গল ফোঁটা লাগাচ্ছেন। মা কে প্রনাম করে, গৃহ দেবতার প্রতি মাথা ছুঁইয়ে হেঁকে অবশ্য ” সাবধানে থেকো”বলে রওনা দিলো কিশোর। মনের মধ্যেই “যাত্রা শুভ হোক, দুগ্গা দুগ্গা”শব্দটা এসে গিয়েছিল আর যাইহোক অগ্নিকে সাক্ষী করে বাঙালি পরিবারের বিয়ে বলে কথা।খুব অভিমান নিয়ে অবশ্য বিকেলে বাপের বাড়ি চলেছিল নেহা।বাড়িতে কতই আর মাকে এইসব মানসিক টানাপোড়েনের কথা বলবে, বাবার শরীরটাও বিগড়েছে, ভাইয়ের পড়া সম্পূর্ন হতেও এখনো বছর পাঁচেক।বিয়ের প্রচুর ধার বাকি বাজারে, এই সব দেখে শুনে একদম মন মেজাজ ভালো থাকে না নেহার, হাসি খুশিতে থাকা মেয়েটা যেন কেমন একটা চিন্তাগ্রস্থতায় ডুব দিয়েছে!

প্রায় সাত দিন পার হলো, না নেহার কোনো ফোন আসে নি, কিশোর কেমন আছে জানতে ফোনে চেষ্টা করলেও রোমিং এর চক্করে হয়তো যায় নি, আর ও বাড়িতে রিং বেজেই গেছে!পাক্কা দশটা দিন পার করে ভাইকে নিয়ে সোজা দোকানে হাজির হয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক চুপ করে বসে অপমানিত হয়ে চলে আসে ওরা। খুব কষ্ট হয় নেহার, ভাই কে দেখে ওর চোখেও এক উৎকণ্ঠা! দোকানে এত খদ্দের, কর্মচারীর মাঝে জামাইবাবু আসছি আসছি বলেও এমন পাষাণ হৃদয়, যে দুঘন্টাতেও উঠে আসতে পারলো না, দিদির কাছে! এরপর স্বাভাবিক ঘটনা চক্রেই দুজনের মধ্যে মিউচুয়াল ডিভোর্সটা হয়ে যায়।

বিয়ের চক্করে পড়ে গ্র্যাজুয়েশনের ফাইনাল পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়নি নেহার।কষ্ট হলেও, লোক লজ্জা, গুঞ্জন থেকে বাঁচতে সে আবার বইয়ের তাকের ধুলো ঝেড়ে পড়তে বসে।পার্টটাইম হিসাবে একটি কোচিং সেন্টারের বাচ্ছাদের পড়ানোর কাজও জুটিয়ে নেয়।এই ভাবে সব যখন, একটু একটু করে সাবলীলতা আসছিলো, হটাৎ কিনা একদিন ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে “কিশোর ব্যানার্জি”! এতো সাত পাঁচ না ভেবে, আবেগে অনুরোধ গ্রহণ করার পর প্রচুর ম্যাসেজ আসতেও শুরু করে! “আমরা তো শুধু বন্ধু হতেই পারি, বাড়িতে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে মা, কি যে করি এইসব”।নেহা বুঝিয়ে বলেছিলো “তোমার জীবন, তুমি কি করবে সিদ্ধান্ত নাও, আমার আবার কি মত থাকবে!” কিন্তু একদিন হবু বউয়ের ছবি পাঠিয়ে, “কেমন হবে জানিও তো”বলতেই নেহা পরিষ্কার বলে দেয়, “নিজের সংসার করতে যাচ্ছ করো, আমার কোনো পরামর্শ নেই, তবে কোনো মেয়ের স্বপ্ন যেন আর না ভাঙে, আমিও চাই না, আমার সাথে যোগাযোগ রেখে কোনো মেয়ের সংসার ভাঙুক।”এর প্রত্যুত্তরে কিশোর যখন বলে, “আরে তুমি তো আমার খুব ভালো বন্ধু, বউ তো আর নও, সন্দেহ করবেই বা কেন, তুমি কৈ সংসার ভাঙছো”এতেই নেহা আবার প্রমান পায়, সত্যিই মানসিক ভাবে কিশোর অপরিণত।কি করা উচিত আর কোনটা উচিত নয় এ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞানটাও হয়নি।

প্রথম প্রথম নেহার খুব কষ্ট হতো, এখন একা নিজের মধ্যে থেকে থেকে সে সব কাটিয়ে আসতে পেরেছে অনেকটা।কিন্তু নতুন করে কিশোরের একের পর এক ম্যাসেজ, “প্লিজ চুপ থেকো না, আমায় ভুল বুঝো না, হ্যাঁ আমি দোষী, আমায় ক্ষমা করো আবার আরে কথা বললেই তো আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে যাচ্ছি না”এসবের কি উত্তর দেবে নেহা, তাই ব্লক করে সরে আসাটাই উচিত বলে সিদ্ধান্ত নেয়।আজ চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে অবিশ্রান্ত ধারায় জল গড়িয়ে আসছে নেহার ঠিক যেমন রান্না ঘর থেকে কুকারের ঘন ঘন সিটি বাজছে এখন ভেতরের চাপা বাষ্প বেরিয়ে আসার মুহূর্ত। ঝেড়ে মেরে উঠে বসলো নেহা, রেডি হওয়ার অফিস বেরুতে হবে, পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে একটা গান, “তুমি, অন্য কারুর সঙ্গে বাঁধো ঘর”!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress