চোরাই ধন – পঞ্চম অংক
পঞ্চম অংক
সুধীর, শৈলেন
সুধীর– আঃ,কি ঘোর ,বর্ষা রে বাবা, বিকেল চারটে আর মনে হচ্ছে যেন ঘোর সন্ধ্যা…
গান-হৃদয়ে মন্দ্রিল ডমরু….
সুধীর– আজ রবিবার। এক কাপ চা পেলে মন্দ হতো না সুনি কোথায় কি করছে, ডাকব—
না থাক্
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ!!…কে এলো!!
তবে কি শৈলেন!!!
আরে এসো এসো শৈলেন,
যা বৃষ্টি….
শৈলেন– হ্যাঁ, মেসোমশাই , মেঘের যা ডাক আর বিদ্যুৎ ঝলকানি।
সুধীর- তা এ দুর্যোগ ঘাড়ে এলে কেন? একি একদম ভিজে গেছে দেখছি।
শৈলেন– ভয়ানক দমকা হাওয়া। গাড়ি থেকে নেমে… মানে ছাতা খুলবারও জো ছিল না।
সুধীর– তাতো হবেই, তাতো হবেই। তো আজ মানে না বেড়োলেই পারতে , মানে ঝড়জল কেটে গেলে না হয়….
শৈলেন– না মানে ঐ…আসলে আপনি যে দুপুরে ফোন করে আসতে বললেন। না মানে ঐ চারটের সময় আসবার কথা ছিল ত?
সুধীর — ও বুঝেচি, বুঝেচি, আর বলতে হবে না। আমি কি ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়েও আসতে বলেছিলাম।
শৈলেন– না। তা বলেন নি,বলেছিলেন– রবিবার অরুণারও ছুটি তাই।
সুধীর– আমি মোটরগাড়ি পাঠিয়ে দিলেই বরং ভালো হতো।
শৈলেন — আসলে এমনটা যে হবে বুঝতে পারি নি।
সুধীর– হবেই ত , এ “ভরা বাদর মাহ ভাদর”
শৈলেন– অরুণা কি , পড়ার ঘরেই?
সুধীর- বোধকরি সে ওখানেই কিন্ত, তুমি ত একদম ভিজে গেছে । আরে আমার একটা পিরাণ দিতে বলি….
শৈলেন– না না না, মেসোমশাই, একদম ব্যস্ত হবেন না। মাসিমা হয়ত কাজে আছেন।
সুধীর– আচ্ছা চা খাবে ত?
ওরে কে আছিস দু-কাপ চা নিয়ে আয়।
শৈলেন– আপনি অনর্থক অস্থির হচ্ছেন, মেসোমশাই । আমি বরং পড়বার ঘরে যাই, অরুণা ত ওখানেই….
সুধীর– আরে যাবে যাবে। একটু এখানে বিশ্রাম নিয়ে নাও।
শৈলেন– আজ্ঞে। ঠিক বলেছেন।
সুধীর– অরুণাকে ত ভালই পড়াচ্ছ, সেই সাথে আমারও ইচ্ছে….
শৈলেন– ইচ্ছে মানে, কি মেসোমশাই?
সুধীর– তুমি পদার্থ বিজ্ঞানের কান্ডারী। আমারও একটু হাল আমলের কোয়ান্টাম থিয়োরী বুঝে নেবার এই সখ বলতে পারো।
শৈলেন– ও এ তো খুব ভাল কথা।
সুধীর– আমি গণিত বিশেষ ফলিত গণিতের ডিগ্রীধারী তবে গণিতে আমার যেটুকু দখল তাতে ফিজিক্সের তল পাই না।
শৈলেন– তাই, কি যে বলেন মেসোমশাই।
সুধীর–হু আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান খুব ভালো বুঝি না।
শৈলেন– বেশত, বাহ্ । আপনাকে পদার্থ বিজ্ঞান পড়ানো আমার সৌভাগ্য।
সুধীর– হু তবে এখুনি নয়।
শৈলেন– কেন কেন?
সুধীর–ঝড়জল কমলে এক বন্ধুর বাড়ি যেতে হবে যে, কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছেন।
শৈলেন– ও
সুধীর–অরুণা, অরুণা–
শৈলেন– থাক না মেসোমশাই, অরুণা হয়ত ব্যস্ত আছে। আমিই না হয় যাচ্ছি পড়বার ঘরে।
সুধীর– হ্যাঁ। খবর, পেয়েছে বোধহয়, যাক্ আমি উঠি। কিন্ত এখনও ত বৃষ্টিপাত কমে নি।
শৈলেন-হু
সুধীর– এই নাও শৈলেন, চা ও পাঁপড় ভাজা এনেছে, খেয়ে নাও।
শৈলেন– মাসিমা আবার কষ্ট করে পাঠালেন।
সুধীর– কষ্ট? তোমার মাসিমার এসবে কষ্ট হয় না। বরং আনন্দ হয়।
শৈলেন–হু বুঝি, মাসিমার সাথে আমার তেমন করে এখনও কোন আলাপ হয় নি, কিন্ত ওনাকে শ্রদ্ধা করি।
সুধীর — বুঝলে শৈলেন। তোমার মাসিমা একজন নক্ষত্রবিদ্ ।
শৈলেন– হ্যাঁ, অরুণা বলেছে।
সুধীর–আরে, আমি ও তোমার মাসিমা ত একসঙ্গেই ফলিত গণিত নিয়ে অধ্যাপক মানে তোমার মাসিমার পিতার কাছে পাঠ নিতাম–
শৈলেন– হ্যাঁ, জানি, অরুণা একদিন বলেছিল।
সুধীর– হু, তাই বুঝি। অরুণা তাহলে অনেক খবরই তোমায় দিয়েছে দেখছি। আরে না না, এতে এত সঙ্কোচ লজ্জা পাবার কিছু নেই।
শৈলেন– না, ঐ এক…. হঠাতই এক কথা প্রসঙ্গে…..
সুধীর— তবে তোমার মাসিমা কিন্ত আমার মতো নয়, একটু রাসভারী গোছের আর কি, হা হা হা
শৈলেন– আজ্ঞে
সুধীর– কি এ কথাও অরুণা বলেছ বুঝি, না কি বলে নি?
শৈলেন– যাক্ বৃষ্টি এবার কমেছে, মেসোমশাই, মেঘের ফাঁকে একটু আলোও দেখা যাচ্ছে।
সুধীর– তোমরা এক কাজ করো, আমার ত বন্ধুর বাড়ি এক জরুরী কাজের ডাক, ততক্ষণ….
শৈলেন– ততক্ষণ ? আজ্ঞে মানে?
সুধীর– ততক্ষণ তুমি ও অরুণা পার্লার টেনিস খেলো।
তারপর….
শৈলেন– তারপর?
সুধীর– তারপর আমি ফিরে এলে না হয় গুরুগিরি করবে।
শৈলেন– এ তো উত্তম প্রস্তাব মেসোমশাই।
সুধীর– ঐ ত দেখো, তোমার সাড়া পেয়ে অরুণা এসেছে।
শৈলেন– হ্যাঁ। এসো অরুণা।
সুধীর– তবে আমি যাই। ছুটি পেলেই চলে আসব, ততক্ষণ শৈলেন তুমি পালিয়ে যেয়ো না যেন।হা হা হা