Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চিত্রচোর – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 9

চিত্রচোর – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

চা পান করিয়া উপরতলায় রোগিণীর সংবাদ লইতে গেলাম। সামাজিক কর্তব্য পালন না করিলে নয়।

অধ্যাপক সোমের মুখ চিন্তাক্রান্ত। মালতী দেবীর অবস্থা খুবই খারাপ, তবে একেবারে হাল ছাড়িয়া দিবার মত নয়। দুটা ফুসফুসই আক্রান্ত হইয়াছে, অক্সিজেন দেওয়া হইতেছে। জ্বর খুব বেশি, রোগিণী মাঝে মাঝে ভুল বকিতেছেন। একজন নার্সকে সেবার জন্য নিয়োগ করা হইয়াছে।

স্বখাত সলিল। সহানুভূতি জানাইয়া ফিরিয়া আসিলাম।

নীচে নামিয়া আসিবার কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার ঘটক আসিল।

এবেলা ডাক্তারের ভাবভঙ্গী অন্য প্রকার। একটু সতর্ক, একটু সন্দিগ্ধ, একটু অন্তঃপ্রবিষ্ট। ব্যোমকেশের পানে মাঝে মাঝে এমনভাবে তাকাইতেছে যেন ব্যোমকেশ সম্বন্ধে তাহার মনে কোনও সংশয় উপস্থিত হইয়াছে।

কথাবার্তা সাধারণভাবেই হইল। ডাক্তার সকালে মহীধরবাবুর বাড়িতে গিয়া ফাল্গুনীর লাস দেখিয়াছিল, সেই কথা বলিল। ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘কি দেখলেন? মৃত্যুর কারণ জানা গেল?’

ডাক্তার একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, ‘অটপ্সি না হওয়া পর্যন্ত জোর করে কিছু বলা যায় না।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘তবু আপনি ডাক্তার, আপনি কি কিছুই বুঝতে পারলেন না?’

ইতস্তত করিয়া ডাক্তরা বলিল, ‘না।’

ব্যোমকেশ তখন বলিল, ‘ও কথা যাক। মহীধরবাবু কেমন আছেন? কাল বিকেলে আমরা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম; কিন্তু ডাকাডাকি করেও কারুর সাড়া পাওয়া গেল না, তাই ফিরে এলাম।’

ডাক্তার সতর্কভাবে প্রশ্ন করিল, ‘ক’টার সময় গিয়েছিলেন?’

‘আন্দাজ পাঁচটার সময়।’

ডাক্তার একটু ভাবিয়া বলিল, ‘কি জানি। আমিও বিকেলবেলা গিয়েছিলাম, কিন্তু পাঁচটার আগে ফিরে এসেছিলাম। মহীধরবাবু ভালই আছেন। তবে আজকে বাড়িতে এই ব্যাপার হল—একটা শক্ পেয়েছেন।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘আর রজনী দেবী! তিনি কেমন আছেন?’

ডাক্তারের মুখের উপর দিয়া একটা রক্তাভা খেলিয়া গেল। কিন্তু সে ধীরে ধীরে বলিল, ‘রজনী দেবী ভালই আছেন। তাঁর অসুখ করেছে এমন কথা তো শুনিনি। আচ্ছা, আজ উঠি।’

ডাক্তার উঠিল। আমরাও উঠিলাম। দ্বার পর্যন্ত আসিয়া ব্যোমকেশ বলিল, ‘আপনার কলকাতা যাওয়া তাহলে স্থির?’

ডাক্তার ফিরিয়া দাঁড়াইল, তাহার চোখ দু’টা সহসা জ্বলিয়া উঠিল। সে দাঁতে দাঁত চাপিয়া বলিল, ‘ব্যোমকেশবাবু, আপনি এখানে শরীর সারাতে এসেছেন, গোয়েন্দাগিরি করতে নয়। যা আপনার এলাকার বাইরে তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।’ বলিয়া গট্ গট্ করিয়া বাহির হইয়া গেল।

আমরা ফিরিয়া আসিয়া বসিলাম। ব্যোমকেশ সিগারেট ধরাইতে ধরাইতে বলিল, ‘ডাক্তার ঘটক এমনিতে খুব ভালমানুষ, কিন্তু ল্যাজে পা পড়লে একেবারে কেউটে সাপ।’

বাইরে মোটর-বাইকের ফট্ ফট্ শব্দ আসিয়া থামিল। ব্যোমকেশ লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, ‘আরে পাণ্ডে সাহেব এসেছেন। ভালই হল।’

পাণ্ডে প্রবেশ করিলেন। ক্লান্ত হাসিয়া বলিলেন, ‘ব্যোমকেশবাবু, আপনার কথা ফলে গেল। পরী উদ্ধার করেছি।’

ব্যোমকেশ তাঁহাকে চেয়ার দিয়া বলিল, ‘বসুন। কোথা থেকে পরী উদ্ধার করলেন?’

‘মহীধরবাবুর কুয়ো থেকে। ফাল্গুনীর লাস বেরুবার পর কুয়োয় ডুবুরি নামিয়েছিলাম। ঊষানাথবাবুর পরী বেরিয়েছে।’

ব্যোমকেশ কিছুক্ষণ চক্ষু কুঞ্চিত করিয়া থাকিয়া বলিল, ‘আর কিছু?’

‘আর কিছু না।’

‘পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট পেয়েছেন?’

‘পেয়েছি। ফাল্গুনী জলে ডুবে মরেনি, মৃত্যুর পর তাকে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’

‘হুঁ। অর্থাৎ কাল রাত্রে তাকে কেউ খুন করেছে। তারপর মৃতদেহটা কুয়োয় ফেলে দিয়েছে। আত্মহত্যা নয়।’

‘তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু ফাল্গুনীর মতন একটা অপদার্থ লোককে খুন করে কার কি লাভ?’

‘লাভ নিশ্চয় আছে, নইলে খুন করবে কেন? অপদার্থ লোক যদি কোনও সাংঘাতিক গুপ্তকথা জানতে পারে তাহলে তার বেঁচে থাকা কারুর কারুর পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ফাল্গুনী অপদার্থ ছিল বটে, কিন্তু নির্বোধ ছিল না।’

পাণ্ডে বিরস মুখে বলিলেন, ‘তা বটে। কিন্তু ভাবছি, পরীটা কুয়োর মধ্যে এল কি করে? তবে কি ফাল্গুনীই পরী চুরি করেছিল? খুনীর সঙ্গে ফাল্গুনীর কি পরী নিয়ে মারামারি কাড়াকাড়ি হয়েছিল? তারপর খুনী ফাল্গুনীকে ঠেলে কুয়োয় ফেলে দিয়েছে?—কিন্তু পরীটা তো এমন কিছু দামী জিনিস নয়।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘ভাল কথা, ফাল্গুনীর গায়ে কি কোনও আঘাত-চিহ্ন পাওয়া গেছে?’

‘না। কিন্তু তার পেটে অনেকখানি আফিম পাওয়া গেছে। মদের সঙ্গে আফিম মেশান ছিল।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘বুঝেছি। দেখুন, কি করে ফাল্গুনীর মৃত্যু হল সেটা বড় কথা নয়, কেন মৃত্যু হল সেইটেই আসল কথা।’

পাণ্ডে উৎসুক চক্ষে চাহিয়া বলিলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি কি কিছু বুঝেছেন ব্যোমকেশবাবু?’

ব্যোমকেশ মৃদু হাসিয়া বলিল, ‘বোধ হয় কিছু কিছু বুঝেছি। আপনাকে আমার অনেক কথা বলবার আছে। কিন্তু আপনার শোনবার সময় হবে কি?’

পাণ্ডে ব্যোমকেশের হাত ধরিয়া দ্বারের দিকে টানিয়া লইয়া চলিলেন। বলিলেন, ‘সময় হবে কিনা দেখাচ্ছি। চলুন আমার বাড়িতে, একেবারে রাত্রির খাওয়া-দাওয়া সেরে ফিরবেন।’

পাণ্ডে ব্যোমকেশকে লইয়া চলিয়া গেলেন।

আমি আর সত্যবতী রাত্রি সাড়ে নয়টা পর্যন্ত তাস লইয়া গোলামচোর খেলিলাম।

ব্যোমকেশ ফিরিলে জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘কি হল এতক্ষণ ধরে?’

ব্যোমকেশ স্বর্গীয় হাস্য করিয়া বলিল, ‘আঃ, মুর্গিটা যা রেঁধেছিল!’

ধমক দিয়া বলিলাম, ‘কথা চাপা দিও না। পাঁচ ঘণ্টা ধরে কি কথা হল?’

ব্যোমকেশ জিভ কাটিল, ‘পুলিসের গুপ্তকথা কি বলতে আছে? তবে এমন কোনও কথা হয়নি যা তুমি জান না।’

‘হত্যাকারী কে?’

‘পাঁচকড়ি দে।’ বলিয়া ব্যোমকেশ সুট করিয়া শয়নকক্ষে ঢুকিয়া পড়িল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *