পঞ্চম অংক
সতীশ, সাবিত্রী
সাবিত্রী– এই যে সতীশবাবু , উঠে পড়ুন , আর কত ঘুমোবেন, দুদিন মেসে ছিলেন না, কালেজের ত কামাই হয়েছে। উঠুন আহ্নিক করে খেয়ে কালেজ যান।
সতীশ– হু। ভাবছি, এক্সামটা দিয়েই দেবো এবারে। আজ আর ব্যায়াম হবে না। দুদিন জ্যোতিষ রায়ের বাড়িতে , ওদের বাগানে অনেক ব্যায়াম কসরত করেছি।
সাবিত্রী— আর ওনার বোন সরোজিনীকে কেমন লাগলো আলাপ করে।
সতীশ– সরোজিনীর কথা তুমি জানলে কি করে?
সাবিত্রী— কি করে জানলুম? লুকিয়ে ওখানে গিয়েছিলাম যে। হা হা হা
সতীশ– হেয়ালি রাখো, আমাকে নিয়ে রঙ্গ করা কি তোমার এক অভ্যাস?
সাবিত্রী— বেলা বাড়ছে। চান সেরে আসুন সতীশ বাবু, আমি আহ্নিকের আয়োজন করে নীচে যাবো।
সতীশ–ও বাড়ির খবর জানলে কি করে, সোজা উত্তর দাও।
সাবিত্রী— খবর!! হ্যাঁ, আমি ওখানে যাইও নি, আড়িও পাতিনি, দুদিন কোথায় ছিলে জানবার চেষ্টাও করি নি।
সতীশ– হু, তবে?
সাবিত্রী— উপেনদা লোক পাঠিয়ে বেহারিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, তাকে উপেনদা কেন ডেকেছিলেন, কি নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিছু জানি নেকো।
সতীশ– সে তো ঠিক, তার দরকারই বা কি?
সাবিত্রী — বেহারি নিজে থেকে অনেক কিছু বলছিল, কান দিই নি, সেই বললে, তুমি জানো না বেহারি সেখানে গিয়েছিল, কারণ তুমি ও জ্যোতিষ সাহেবের বোন সরোজিনী তখন বাগানে গল্প করছিলে।
সতীশ– তাতে অসুবিধে কোথায় তোমার?
সাবিত্রী– হা হা হা, হাসালেন সতীশ বাবু , আমি মেসের দাসী মাত্র, পাঁচবাবুর কাজ করে খেটে খাই। আমার কেন অসুবিধে হবে, কিসের জন্য?
সতীশ– বারবার মেস বাড়ির দাসী বলো না ….ভালো লাগে না।
সাবিত্রী– সেটাই ত বড়ো সত্য সতীশ বাবু।
সতীশ– যে কথায় আমার রাগ হয়,সে সত্য কথা বলবার বারবার দরকার পড়ে না
সাবিত্রী— হ্যাঁ। ঠিক আপনার রাগ।বিহারী বলছিল উপেনদা নাকি বলছিল সেদিন সকলের কাছে, আপনি শৌর্যে, বীর্যে, শিক্ষায়, ধনে, সবদিক থেকে যোগ্য শুধু ওর রাগ।
রাগলে আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
সতীশ– বটে, এই যে বললে, তুমি কিছু শোনো নি, বিহারী কি বলেছে না বলেছে….
সাবিত্রী— কান ত খোলাই থাকে সতীশ বাবু। কিছু কিছু ত কানে ঢুকে যাবেই আর বিশেষ যে কথা আমিও জানি।
সতীশ– তুমি একটু বেশি জানো আমার সম্পর্কে মনে হয়।
সাবিত্রী— না। সতীশবাবু , না। মেসের আর পাঁচজন বাবুদের সম্বন্ধে যা জানি। আপনার ক্ষেত্রেও তাই।
সতীশ– তাতো বলবেই, তোমার মন বলে আসলে কিছু নেই।
সাবিত্রী– হবে, দাসীদের মনের কাজ থাকে না, তাদের হাতের কাজ নিয়েই থাকতে হয়।
সতীশ— উঃ অসহ্য, কি আনন্দ পাও আমাকে বার বার আঘাত দিয়ে।
সাবিত্রী— একটা কথা বলি তোমায় , তুমি এতো বড় ঘরের ছেলে, তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও। আর মনে হয়।
সতীশ– ও, আর কি– ওমনি পাশ কাটানো।
সাবিত্রী— কেন বোঝানা বলো ত।
কত বড়ো ঘরের ছেলে তুমি, পাশ দেবে দুদিন বাদে ডাক্তার হবে। কত নামডাক হবে….আর
সতীশ– আর কি বলো? থামলে কেন?
সাবিত্রী– এ এক কথা অনেকবার বলেছি, সতীশবাবু, আপনি কি চান না আমি এখানে কাজ করি।
সতীশ– আসলে তুমি পাষাণ, মন বলে কিছু নেই।
সাবিত্রী— আমি বুঝতে পেরেছি উপিনদা চান তোমার ও সরোজিনীর বিবাহ হউক। সরোজিনীই তোমার যোগ্য পাত্রী।
সতীশ– আর তুমি ?
সাবিত্রী– আমি!! যতদিন খাটতে পারব, নিজের অন্নসংস্থান যোগাড় করতে পারব।
সতীশ– তারপর?
সাবিত্রী– তারপর ….উপিনদার কাছেই আশ্রয় চাইব।
শেষ কটাদিন না হয় উপিনদা ও বউদিদির সেবা করেই কাটাব।
সতীশ— ওহো , বউদিদির শরীর ভালো নেই, তবে উপিনদা বলছিলেন বউদিদি নাকি, হারানদার স্ত্রীকে দেখতে চেয়েছেন।
সাবিত্রী– যতদূর শুনেছি বলেছ। বউদিদি ত সতীসাদ্ধী, আমারও দেখবার সাধ হয়।
সতীশ– হু হারানদা আর বেশিদিন বাঁচবেন না। শিগ্গিরই উপিনদা বউদিদি ও দিবাকরকে নিয়ে কলকাতা আসবেন।
সাবিত্রী– বাঃ ভালো
সতীশ– তার আগে আমার হারানদার বাড়ি একবার দুবার যেতেই হবে
সাবিত্রী– কেন, কি হয়েছে?
সতীশ– পাপ
সাবিত্রী– মানে?
সতীশ– রাগের মাথায় তাকে অনেক কটু কথা শুনিয়ে এসেছি, তার উপর তার সাজগোজ কথাবার্তা কিছুই আমার ভালো লাগে নি।
সাবিত্রী– তাহলে আবার যেতে চাচ্ছ কেন?
সতীশ– মাপ চাইতে। উপিনদা আমায় যা বললন, পরে দেখলাম তার যুক্তি আছে। আমার রাগের মাথায় বলাটা ঠিক হয় নি।
সাবিত্রী– ওই তো আপনার দোষ,সতীশবাবু। রাগলে আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
সতীশ– হু, ঠিক বলেছ
সাবিত্রী– আমি কি কম ভুগেছি। আমার উপর রাগ করে কতো কান্ডই না ঘটিয়েছ। বেহারী জানে আর সেও বলে বাবু রেগে গেলে আর জ্ঞান থাকে না।
সতীশ– তুমি, তোমার মন বলে কিছু নেই, তাই…
সাবিত্রী– আচ্ছা থাক্ ওসব কথা। আমি বলি কি, তুমি হারাণদাদার বাড়ি যাও আর বউঠানের কাছে ক্ষমা চেয়ে এসো।
সতীশ–হু ভাবছি। এর মধ্যেই যেতে হবে হারাণদার কাছে উপিনদা আসবার আগেই।