Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চরিত্রহীন || Purabi Dutta » Page 2

চরিত্রহীন || Purabi Dutta

প্রথম অংক

উপেন্দ্র,  দিবাকর, সুরবালা

উপেন্দ্র– কি ব্যাপার  সুরবালা,  মেঝেতে  আসন পেতেছ….একবাটি দুধ, রেকাবীতে মিষ্টি,কার জন্য  এ আয়োজন , এ শোবার ঘরে?

সুরবালা– চুপ, ওগো তুমি যেমন শুয়ে আছো, তেমনি ঘুমিয়ে থাকো চুপটি করে, ঠাকুরপোকে ডেকেছি, তুমি জেগে থাকলে  ও আর এ ঘরে ঢুকবে না গো……

উপেন্দ্র– কিন্তু দিবাকর, ত, এখন ভাত খেয়ে কালেজ যাবার কথা, এই এগারোটার  সময়..

সুরবালা– হু সেই তো, কিন্তু, দিদি ত অনর্থ বাঁধিয়েছেন, দিবাকরকে বলেছেন কালেজ যাবার আগে আজ ঠাকুরপূজো সেরে যেতে,কিন্তু, দিবাকর  তার  কালেজের  প্রথম ঘন্টা
নষ্ট হবে বলে রাজী হচ্ছিল  না, শেষে দিদির হুকুমে পূজো সেরেছে ঠিকই  তবে না খেয়ে তিনি বেড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই ত ঝি কে দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছি।

উপেন্দ্র– সে তো বুঝলাম, মহেশ্বরী দেবী আমার দুঃখী দিদি, বছর চারেক আগে বিধবা হয়ে বাপের বাড়িতে। মানে এই নোয়াখালিতে আছেন, তিনিই  ত এখন এ বাড়ির গৃহিনী। তিনি হুকুম দিলে ত মানতেই হবে।

তো ভট্টচার্জি মশাই  কোথায়?

সুরবালা– তিনি ত বাবার সাথে পাশায় বসেছেন,এখন কত বেলায় যে উঠবেন তার ঠিক কি , আঃ চুপ চুপ —
এসো ঠাকুরপো,  এসো…..

দিবাকর— হঠাত  ডেকে পাঠালেন বৌঠান……এ কি! এসব কি?  না, আমি এখন কিছু খাবো না,  সময়  নেই। অনেক দেরী হয়ে গেছে।

সুরবালা– দেরী তোমার  হয়েছে ঠিক।  প্রথম ঘন্টা নষ্ট  করে  ঠাকুর পূজো করেছ, তাই বলে না খেয়ে যাবে,  সে আমি হতে দেবো না।

দিবাকর — আচ্ছা বলোত,   সব জুলুম কি  আমার উপর? আর কেউ কি নেই?

সুরবালা–জুলুম বলছ কেন ভাই, কে করবেন বলো?
ভট্টাচার্যি মশাইকে নিয়ে  শালগ্রাম শিলা পূজা করতে পারেন তোমরা চারজন পুরুষ।
বাবা বুড়োমানুষ, তাকে দিদি কি করে বলেন?
আর দেখতে পাচ্ছ ত, তোমার  এই ছোড়দা…..
গতকাল রাত্রে উনি থিয়েটার দেখতে গিয়েছিলেন, দেখছ ত এখন বিছানা ছাড়েন নি। এখন কত বেলায় যে উঠবেন……

দিবাকর— বেশত….. খুব, না….আর বড়দা, তার তো কাছারী বন্ধ,  তিনি ত পারতেন?

সুরবালা—বাঃ, তুমি কি ছেলে বলোত?

শুনলে  না , দিদি বললেন, কাল থেকে ওনার শরীর ভালো নেই— স্নান করবেন না, তাহলে–  পূজো করবেন কি করে?

দিবাকর– খুব ভালো। বেলা বারোটা পর ছোড়দা আদালত যাবেন, আর আমার  বুঝি কলেজের  ক্লাশে যেতে নেই? আমি সব বুঝি , আমি কে, এ বাড়ির?

সুরবালা— ঐ দেখো, আর রাগ করতে হবে না, ঠাকুরপো, এখন মিষ্টি আর জল খেয়ে কালেজ যাও দিকিন…..

আমি জানি ঠাকুরপো, রাগের মাথায় শালগ্রাম শিলার  পূজো  নমো নমো করে সেরেছ, আর শালগ্রাম শিলার উপরই রাগ করে আছো…..

দিবাকর— হু, খেতে ত হবেই, তুমি আবার  আমার  সেকেন্ড  ক্লাশও দেরী করাচ্ছ।

সুরবালা—  আর এও জানি, কালেজ  শেষে গঙ্গা স্নান সেরে ঠাকুরের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেবে।

দিবাকর– হ্যাঁ, তুমি ত সব জেনে বসে আছো।

সুরবালা– এ ঘটনা ত নতুন নয়, ঠাকুরপো, তোমার  অভিমান আমি জানি। নাও, খেয়ে নাও দিকিন।

দিবাকর–   এবার আসি বৌঠান,  অনুমতি  করো…..ফিরে এসে দেখা করবো। রোজ রোজ একটা না একটা বিঘ্ন এসে আমার  প্রথম ক্লাস  নষ্ট  হয়, আমি পরীক্ষা দেবো কেমন করে?

সুরবালা— জানি ঠাকুরপো….
সব ঠিক হবে… এখন এসো, দুগ্গা দুগ্গা…..

উপেন্দ্র— হু, মহা সমস্যা….. এবার  আমায় অনুমতি  দাও, আমি  উঠি।

সুরবালা– ঠাকুরপোর দুঃখ কোথায়, বলো  ত?

উপেন্দ্র– জানি সুরবালা জানি….. দিবাকর  আমাদের  জ্ঞাতি ভাই, সেটা সংসারে আর কেউ স্মরণে না রাখুক, সে সর্বদা মনে রাখে। সেখানেই ওর দুর্বলতা। আর তুমিও  তা স্মরণে রাখো।

সুরবালা– আমি? মানে? কিরকম, শুনি?

উপেন্দ্র– এখুনি শুনবে? না পরে?

সুরবালা— আমার  উপর তোমার  অনেক অভিযোগ জানি, এখুনি শুনতে চাই…..পাঁচ মিনিটে তোমার  আর কি ক্ষতি হবে।

উপেন্দ্র— পাঁচ মিনিট কেন, তিরিশ মিনিটেও  ক্ষতি নেই  । কিন্তু কেন বলছি। সেটা তোমায় বুঝতে হবে। তোমার  বাবা  শচীর পাত্র ঠিক করার জন্য  আবারও  পত্র দিয়েছেন।

সুরবালা– হ্যাঁ। সে তো জানি। শচী আমার  চেয়ে ছ-সাত বছরের ছোট, নেহাত  আমার  মতো  বাড়ন্ত  গড়ন নয় বলে, না হলে  ভারী বিপদ হতো।

উপেন্দ্র– বিপদ কিসের? তোমার  বাবার টাকার অভাব ত নেই, ও জিনিসটা  থাকলে  সব জিনিসই সুলভ হয়। তোমার  সময়ে এই আমি যেমন যে- রকম তাড়া করে  গিয়ে পড়েছিলাম।

সুরবালা– মানে? তুমি কি বাবার টাকা দেখে গিয়েছিলে?

উপেন্দ্র— না, বলতে পারলেই তোমার  কাছে মান থাকে বটে, কিন্তু মিথ্যে কথাই বা বলি কি করে!!!

সুরবালা— মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে, তুমি বার বার বলো  বটে, কিন্তু মোটেও  তুমি বাবার টাকা দেখে যাও নি, আমি যেখানে, যে ঘরে জন্মাতুম, ঠিক সেখানেই তোমাকে যেতে হতো আমাকে আনতে, বুঝলে, হু

উপেন্দ্র— তা কতক তোমার  কথায় বুঝতে পারছি বটে, আচ্ছা ধরো— যদি তুমি কায়েতের ঘরে জন্মাতে— তাহলেও কি আমি সেখানে আনতে যেতাম?

সুরবালা– তুমি কি গো, বামুনের মেয়ে কখনো কায়েতের ঘরে জন্মায়? এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি ওকালতি করো?

উপেন্দ্র— তাও বটে, এইজন্যই  বোধকরি পশার হচ্ছে না।

সুরবালা— কেন পশার  হবে না, খুব হবে আর তার দরকারই  বা কি, আমার  সামনে সারাদিন বসে থাকলেই, তোমায় আমি পাঁচশ করে টাকা দেবো। বাবা আমাকে মাসে মাসে কত টাকা দেন জানো ত?

উপেন্দ্র— বুঝেচি,— হাকিমের হুকুম….. তা চাকরী বজায় রাখতে পারলে হয়।
আচ্ছা। এখন বলো— শচীর সাথে দিবাকরের   বিবাহতে তোমার  আপত্তি কেন?
তোমরা দুবোন এক বাড়িতে থাকবে।
আর কোন ত ভাই বোনও নেই।

সুরবালা– তোমাকে আগেও বলেছি না, শচীর পায়ের দোষ আছে, খুঁড়িয়ে চলে, ছোটবেলা ব্যামো হয়েছিল, অনেক ডাক্তার পথ্যি করে অসুখ সারলো, কিন্তু, পায়ে খুঁত  হলো, এখন একটু খুঁড়িয়ে চলে এই আর কি?

উপেন্দ্র–কই, আমি ত শচীকে খুঁড়িয়ে চলতে দেখিনি ? আর সে টা কি খুব বড়ো কিছু একটা। শচীর দেহে কি আর কোন দোষ  আছে?

সুরবালা— পুরুষেরা কোন্ জিনিসটি দেখতে  পায়? কিন্তু, মেয়েদের চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না, তারা চক্ষের নিমেষে ধরে ফেলবে। ঠকিয়ে বিয়ে দেবার ইচ্ছে  থাকলে ত কানা মেয়েরও বিয়ে দেওয়া যায়।
আর……

উপেন্দ্র– আর? আর কি  বলো , বলো?

সুরবালা— দেখো, শাশুড়ি ননদকে বাদ দিয়ে একলা  জামাই নিয়ে সংসার   চলে না।  শচীর  যে স্বামী হবে, সে শচীকে ভালবাসবেই, কিন্তু, তুচ্ছ একটা কারণে পরে সে বিদ্বেষের চোখে পড়ুক, তা আমি চাই না।

উপেন্দ্র— বেশ ত, তাহলে ত মিটেই  গেল…..দিবাকর  তোমার  বোনকে অযত্ন করতে পারবে না আর বাড়িতে বউ বলতে হলে তুমি……. ননদ, আমার  দিদি, বাড়ির গৃহিনী, মহেশ্বরী দেবী……..তারা কেউই শচীকে  গঞ্জনা  দেবে না। বাস্ …….

সুরবালা— কিন্তু……

উপেন্দ্র–আচ্ছা, তুমি শচীর  ভাবছ,  না , দিবাকরের কথা, ঠিক কার জন্য  তোমার  আপত্তি বলো ত? কিন্তু কি?

সুরবালা— আমি ঠিক জানি……. ঠাকুরপোর সাথে  বিয়েতে আমার  বাবা রাজী হবেন না।

উপেন্দ্র— কেন  শুনি?

সুরবালা— কেন রাজী হবেন?  ওর মা নেই, বাপ নেই, বাড়িঘর নেই—- এক কথায় কিছুই নেই  যে—-

উপেন্দ্র— দিবাকর  আমার মামাত ভাই, তার সব আছে, কেন না,আমি আছি।

সুরবালা— আচ্ছা , তুমি বলো ত– তোমার  এত আগ্রহ কেন ঠাকুরপোর সাথে শচীর বিবাহ  দিতে?

উপেন্দ্র— কারণ, তোমার  বাবার অগাধ সম্পত্তি…… ভবিষ্যতে তোমরা দু বোনই এর উত্তরাধিকারী, এতো সম্পত্তি  বে-হাত হতে দেওয়া ত সু- বুদ্ধির কাজ নয়। দিদির সাথেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে।

সুরবালা— আর ঠাকুরপোর  সাথে? তার কোন মতামত নেই?

উপেন্দ্র—না……আমার  মতই তার মত। তার আপত্তির কোন কারণ দেখি না। আর দিবাকরকে আমি একথাও বলে দেবো যে, শুধুমাত্র  রূপই বিবাহের একমাত্র  মাপকাঠি নয়। এ এখন আমার  স্থির সিদ্ধান্ত।

সুরবালা— ও হো, শুনলাম, সতীশ ঠাকুরপো দিবাকর ঠাকুরপোর  সাথে গতকাল দেখা করতে এসেছিল,তার নাকি কলকাতায় ডাক্তারি পড়ায় মন বসছে না। এদিকে ত শীত পড়ে গিয়েছে, কলকাতায় নাকি একদম শীত পড়ে নি।

উপেন্দ্র— জানি। হু, ভালোকথা, শোনো— আমি সতীশকে নিয়েই কলকাতা যাবো দু-একদিনের মধ্যেই……

সুরবালা— ওমা। হঠাত?
উপেন্দ্র— কলকাতা থেকে আমার  বাল্যবন্ধু  হারাণদা– সত্ত্বর দেখা করতে বলেছেন— সে অসুস্থ।
সুরবালা– ও, তবে ত যেতেই হবে তোমায়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress