Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চরিত্রহীন || Purabi Dutta » Page 12

চরিত্রহীন || Purabi Dutta

একাদশ অংক

সতীশ, উপেন্দ্র, সাবিত্রী

সাবিত্রী— কে? আপনি ….হঠাত কোথা থেকে, এ সতীশবাবুর বাড়িতে তারই শয়নকক্ষে ঢুকেছেন।

উপেন– থাক, আপনি যেমন মেঝেতে বসে আছেন, থাকুন, উঠতে হবে না। ব্যস্ত হবার কিছুই নেই।

সাবিত্রী– ব্যস্ত!!! মানে, আপনার পরিচয়?
উপেন– সতীশ ঘুমুচ্ছে। থাক্, আমায় তুমি চিনবে না, আমি উপেন। সতীশের অগ্রজপ্রতিম, বন্ধু বটে।
আর তুমি বোধকরি —সাবিত্রী ?

সাবিত্রী– ও। হ্যাঁ। আপনার কথা আমি সতীশবাবুর মুখে অনেক শুনেছি আর বৌঠান, দিবাকর ঠাকুরপো সকলের কথাও শুনেছি।

উপেন– আরে থাক্ থাক্ …… আর প্রণাম করতে হবে না। ওকি আবার জুতো খুলে দিচ্ছ বুঝি।

সাবিত্রী– আসতে এতো দেরী হলো কেন? চিঠি কি সময়মতো পান নি।

উপেন– না, ভাই, পাই নি। পরে পরশু পুরীতে তোমার চিঠি পেয়ে আসছি। তুমি আমাকে দাদা বলেই ডেকো। আর তুমি ত আমার ছোট বোন।

সাবিত্রী — হ্যাঁ। দাদা

উপেন– সরোজিনীর নাম নিশ্চয়ই শুনেছো?

সাবিত্রী— হ্যাঁ, শুনেছি।

উপেন– সমস্তই শুনেছ বোধকরি।

সাবিত্রী– হ্যাঁ দাদা
উপেন– তোমার দাদা হয়ে, আমি তোমায় একটি অনুরোধ করছি বোন, এ বিয়েতে সতীশকে তোমার রাজী করাতেই হবে।

সাবিত্রী– অনুরোধ কেন বলছেন দাদা, বলুন আদেশ। আদেশ বলুন দাদা ….

উপেন– এখানে, সবাই তোমায় গিন্নীমা বলে জানে। তোমার অক্লান্ত সেবা যত্নে শাসনে স্নেহে সতীশ হতভাগা পুর্নজীবন পেয়েছে। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। জানি তুমি সতীশকে ভালবাসো, এ বিষয়ে পরে তোমার সাথে কথা বলব।
সাবিত্রী– এই ত সতীশ বাবু উঠে বসেছেন , ঘুম ভেঙেছে।

উপেন– কিরে, হতভাগা, আমায় চিনতে পারিস নি নাকি?

সতীশ — চিনতে পেরেছি, তুমি, তুমি এসেছ উপিনদা!!!

উপেন– হ্যাঁ, ভাই, না এসে পারি…..
আয় আমার বুকে আয়।আর দেরী নয়, তাড়াতাড়ি সেরে ওঠ। আমার অনেক কাজ তোর জন্য পড়ে রয়েছে।

সতীশ — কি কাজ, উপিন দা, উপিনদা আমায় ক্ষমা করেছ ত? আর বৌঠান, সে, সে কোথায়? তিনি কি আমাকে ক্ষমা করবেন!!!

উপেন– তোমার বৌঠান আর ইহজগতে নেই সতীশ।

সাবিত্রী। সতীশ — অ্যাঁ, সেকি?

উপেন– মারণরোগ ধরেছিল —যক্ষ্মা।
একমাস নৈনিতালে, পাহাড়ে, নিয়ে অনেক শুশ্রুষা করলাম, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আমি একা, দিবাও নেই, শুনেছ বোধহয়।

সতীশ– উপিনদা, আমায় আমায় তুমি মাপ করেছ ত, আমি তোমার ভাই উপিনদা। কিন্তু দিবার কি হলো?

উপেন– কলকাতায় হারানদার বাড়িতে রেখে তাকে পড়তে পাঠালাম, কিন্তু এ লজ্জার কথা কারুকে বলাও যায় না, বলতে ইচ্ছাও করে না।

সতীশ— মানে, কি হয়েছে?

উপেন–বাড়িতে আজো জানে সকলে দিবা কলকাতায় কালেজে পড়ছে। শেষকালে সুরো তাকে দেখতে চেয়েছিল, তার সে সাধ পূর্ণ করতেও পারলাম না।

সাবিত্রী– কেন দাদা, কেন পারলে না?

সতীশ– চুপ করে আছো কেন, উপিনদা, সব খুলে বলো। কি সমস্যা।

উপেন–হারানদার স্ত্রীর সাথে সে কোথায় যে চলে গেছে তার হদিশ নেই।

সতীশ— এত বড়ো ঘটনা, উঃ আমি যে কেন অধঃপাতে পড়ে ছিলাম। কতদিন পাথুরিঘাটায় যাই নি। কিরণ বৌঠান আমায় যথার্থ সহোদর ভাইয়ের স্থান দিয়েছিলেন।

উপেন– আমিও ভেবেছিলাম বৌঠান দিবাকেও ভাই য়ের মতো দেখবে। কিন্তু, সে হলো না।

সতীশ– অন্যথা কেন হবে উপিন দা?

উপেন— সে অনেক কথা, তা ছাড়া আমি নিজেও সশরীরে উপস্থিত থেকে যা দেখে এসেছি, তা বলার নয়।

সতীশ– এ হতেই পারে না,কিছুতেই সত্য হতে পারে না। পারে না…
আর কেউ না জানুক, আমি কিরণবৌঠানকে খুব ভালোভাবে জানি ও বুঝি। যে ভাবেই হউক, তাদের আমি খুঁজে ফিরিয়ে আনবই, হ্যাঁ আনবই….

সাবিত্রী– আঃ , সতীশ বাবু, আপনি উত্তেজিত হবেন না, এখনও শরীর সারে নি। আপনি শুয়ে পড়ুন, সতীশ বাবু, আপনার পায়ে পড়ি সতীশ বাবু, শান্ত হন।

উপেন– সাবিত্রী, সতীশ কে একটু খাবার জল দাও। শান্ত হও সতীশ। বিশ্রাম নাও, সুস্থ হয়ে তুমি তাদের খুঁজে অবশ্যই ফিরিয়ে এনো, তোমার উপর সে বিশ্বাস আমার আছে।

সাবিত্রী– এই নিন সতীশবাবু, জল খেয়ে শুয়ে পড়ুন, পরে কথা হবে।

উপেন– হ্যাঁ। বিশ্রাম নাও। এখন আমি যাচ্ছি। কাল এসে দেখা করে যাবো আর শোনো সতীশ তুমি এখন অনেক সুস্থ হয়েছ সাবিত্রীর সেবায়।
এবারে…

সতীশ– এবারে কি, উপিনদা?

উপিন– আমাকেও ঐ মারণরোগে ধরেছে, কাল আমি এই আমার বোনটিকেও সাথে নিয়ে যাবো। শেষ কটাদিন বোনের সেবাতে একটু শান্তি পাবো। ভাবছি, পাহাড়ে যাবো, ডাক্তারেরা সে কথাই বলছেন।

সাবিত্রী– হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই ভালো দাদা, পাহাড়ে ভালো থাকবে। আমারও ভালো লাগবে।

উপেন– তার আগে আরও একটা কাজ বাকি আছে।

সাবিত্রী– কি কাজ দাদা?

উপেন– সরোজিনী ও সতীশের বিবাহ দেওয়া।
………………………………………………

সাবিত্রী– আমার মাথার দিব্যি, কথা রাখবে বলো।

সতীশ— আমার কাল সারারাত ঘুম হয় নি সাবিত্রী, একি সাবিত্রী, তোমার দুটোই চোখই দেখি জবাফুলের মতো লাল। কাঁদছিলে?

সাবিত্রী– কাঁদছি না। বড্ড চিন্তা হচ্ছে গো, তোমার জন্য।

সতীশ– কাঁদছ না, এমনি এমনিই বুঝি চোখে জল তোমার গাল বেয়ে পড়ছে।

সাবিত্রী– কথা দাও আর কুপথে যাবে না।

সতীশ– জানো না, কেন কুপথে গিয়েছিলাম, তুমি আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলে কেন? আবারও ত চলে যাচ্ছ।

সাবিত্রী– এমন বলে না। যাচ্ছি উপেনদার সেবা করতে। কিন্তু কথা দাও, রাখবে?

সতীশ– রাখব

সাবিত্রী— মদ , গাঁজা হাত দিয়েও ছোবে না

সতীশ– না।

সাবিত্রী– আমাকে জিজ্ঞেস না করে তন্ত্র মন্ত্রের দিকেও যাবে না

সতীশ– না

সাবিত্রী– যতদিন না শরীর একেবারে সারে, দুদিন অন্তর চিঠি দেবে, আর কিছু লুকোবে না।

সতীশ– লিখব

সাবিত্রী– আর, দাদার কথা মতো সরোজিনীকে বিয়ে কোরো।

সতীশ– তুমি পাষান , তাই এ কথা বলবে জানি। আজ তোমার যাওয়া হবে না, সাবিত্রী আমি তোমায় যেতে দেবো না।

সাবিত্রী– পাগল , ছিঃ, এমন করে না। নীচে উপিনদা যে অপেক্ষা করে আছেন।

সতীশ– আমি তোমায় আটকে রাখব।

সাবিত্রী– তাতে লাভ, কি করবে আটকে রেখে?

সতীশ– তোমায় আমি বিবাহ করবো। আঃ, মুখ চেপে রেখেছ আমার, হাত সরাও সাবিত্রী, হাত সরাও…

সাবিত্রী– এমন কথা বলে না। বিয়ে কি শুধু পাত্র পাত্রীর হয়, দুটো পরিবারের মধ্যে সম্পর্কও হয়।

সতীশ — আমার কোন পরিবার নেই, বাবা ছিলেন, এখন তিনিও নেই। অগাধ টাকার মালিক আমি, আমার যা খুসী তাই করবো।

সাবিত্রী– আর আমার বুঝি খুসী বা মতামত নেই?

সতীশ– না।

সাবিত্রী– আমি বিধবা

সতীশ– বিধবাদের বিবাহ আইনসিদ্ধ।

সাবিত্রী— শুধুই কি বিধবা, আমি কুলত্যাগিনী, সমাজে লাঞ্ছিতা, আমাকে বিয়ে করার দুঃখ যে কত বড় সে তুমি বোঝনি, কিন্তু—

সতীশ– কিন্তু কি

সাবিত্রী– কিন্তু যিনি আজন্ম শুদ্ধ , শোকের আগুন যাকে পুড়িয়ে হীরের মতোন নির্মল করেছে, তিনি বুঝেছেন।

সতীশ– কে , উপিনদা। কি করে জানলে তার ভেতরে কোন্ অন্তর্দাহ অহোরাত্র তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কিনা।

সাবিত্রী– অত বুঝে কাজ নেই। দাদার হুকুম তোমাকে মানতেই হবে।

সতীশ– এসময় কিরণ বৌঠান থাকলে তোমায় বোঝাতে পারতেন। তার শাস্ত্রজ্ঞান আর বিদ্যেবুদ্ধি অনেক বেশি।

সাবিত্রী– তুমি আগে সুস্থ হও। তারপর সব কথা হবে। এখন আমি আসি।

সতীশ– আমি সুস্থ হয়ে যে ভাবে হউক কিরণ বৌঠান ও দিবাকরকে খুঁজে ফিরিয়ে আনব।

সাবিত্রী– বেশ তাই হবে। দাদাকে বুঝিয়ে বলব, এর আগে বিবাহ হবে না।
তাইত।

সতীশ– হু,

সাবিত্রী– একটু পায়ের ধুলো দাও, আশীর্বাদ করো যেন দাদাকে সুস্থ করে ফিরিয়ে আনি। চিঠি লিখে সব সংবাদ দিয়ো।
আসি–

সতীশ– এসো, সাবিত্রী , ফিরে এসো খুব তাড়াতাড়ি। এসো।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress