ঘূর্ণি ঝড়
আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আগমনী বার্তা অনুমান করত মানুষ। ডয়চে ভেলে বাংলার এক লেখায় গুমোট আবহাওয়া, মেঘ কিংবা সাগর ও নদীর মোহনায় পানিবৃদ্ধি দেখে ঘূর্ণিঝড় আসছে বলে ধরে নেওয়া হতো বলে জানানো হয়েছে।
তবে এখন সাহায্য নেওয়া হয় আধুনিক প্রযুক্তির। বিশেষ করে ১৯৬০-এর দশকে এ কাজে কৃত্রিম উপগ্রহের (স্যাটেলাইট) ব্যবহার শুরু হলে আসে বড় পরিবর্তন। এর সঙ্গে রাডার, বিমান, কম্পিউটার ইত্যাদির সাহায্যে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান, প্রবলতা, আকার কিংবা গঠন সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
কোনো স্যাটেলাইট পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোনো স্থানের ঠিক ওপরে থেকে সেই অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করলে সেটাকে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট বলা হয়। এমন অনেকগুলো স্যাটেলাইট আছে। সেগুলো থেকে যেমন দৃশ্যমান ছবি পাঠানো হয়, তেমনই ইনফ্রারেড ছবিও পাঠায়।
ঘূর্ণিঝড় গঠন সম্পর্কে ধারণা পেতে ইনফ্রারেড তরঙ্গের তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর স্যাটেলাইটের ছবি কেবল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানই জানায় না, প্রবলতা সম্পর্কেও তথ্য দেয়। কারণ, কিছু মেঘের প্যাটার্ন দেখে বাতাসের গতি সম্পর্কে ধারণা পান আবহাওয়াবিদেরা।
স্যাটেলাইটের ছবি থেকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সাধারণ তথ্য পাওয়া গেলেও বিস্তারিত জানতে হয় সরাসরি। আর এ কাজে পাঠানো হয় বিমান। বিশেষ করে সঠিক বিপৎসংকেত জানানোর জন্য এই তথ্য প্রয়োজন। তবে উত্তর আমেরিকায় কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে—এমন তথ্য থাকলেই কেবল গবেষণা বিমান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দেশগুলোর জন্য তা বেশ ব্যয়বহুল। এরপর সংগৃহীত তথ্য কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে দেওয়া হয় পূর্বাভাস। সে অনুযায়ী বিপৎসংকেত জারি করা হয়।
সবাই ‘যশ’ আসবে ‘যশ’ আসবে বলে কান মাথা খেয়ে নিচ্ছে। কথাটি আসলে ‘যশ’ নয় বরং ‘ইয়াস’ হবে। এর নামকরণ করেছে ওমান। ‘ইয়াস’ হল একধরনের গাছ। যার গন্ধ আছে। শব্দটি এসেছে পার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ ‘হতাশা’ বা ‘দুঃখ’। ইংরেজিতে এর অর্থ জুঁইয়ের কাছাকাছি। কিন্তু কীভাবে এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘ইয়াস’ হল একটু জেনে নেওয়া যাক।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, যে মহাসাগরে যে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তার অববাহিকার দেশগুলি সেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এই পদ্ধতি শুরু হয়। সেইমতো বিশ্বে ১১ টি প্রতিষ্ঠান ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে।
এরইমধ্যে ২০০০ সালে ওমানের মাসকটে ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন/ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড পেসিফিকের (WMO/ESCAP) ২৭ তম বৈঠক আয়োজিত হয়েছিল। বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে উৎপত্তি হওয়া সব ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করতে সেই বৈঠকে রাজি হয়েছিল সংগঠনটি।
সেইমতো ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে উত্তর ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু হয়েছিল। সেই সময় আটটি দেশ নামের পরামর্শ দিত। পরবর্তী সময়ে সেই সংগঠনে আরও পাঁচটি দেশ যোগ দেয়। আপাতত ওই সংগঠনের দেশগুলি হল – বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমর, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ইয়েমেন।