Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঘনাদা ও মৌ-কা-সা-বি-স || Premendra Mitra » Page 3

ঘনাদা ও মৌ-কা-সা-বি-স || Premendra Mitra

ঘনাদাদু,

তোমার সাথে আড়ি। তুমি কি সব লেখো, দাদা দিদিরা মজা করে পড়ে। আমায় পড়তে দেয় না। লুকিয়ে পড়ে দেখেছি। ভালো করে বুঝতেই পারিনি। এখন থেকে আমার আর আমার মিনু পুতুলরানীর পড়বার লেখা লিখবে। নইলে আড়ি আড়ি আড়ি।

আমি মানে টুকাই আর আমার পুতুলরানী

হ্যাঁ, ঘনাদার নামে এমন চিঠিও আমাদের এখানে আসে। কেমন করে যে আসে সেইটেই আশ্চর্য। কারণ আঁকাবাঁকা অক্ষরে একটি পোেস্টকার্ডে লেখা এ চিঠির ঠিকানা যা দেওয়া ছিল তা এই—

ঘনাদাদু,
৭২ বনমালী লেন
কোলকাতা

বড় পোস্টাফিসের কেউ ঘনাদার নাম দেখে আর নেহাত ছেলেমানুষের হাতের লেখা দেখে মনটা স্নেহে কোমল হওয়ার দরুনই বোধ হয় চিঠিটা ঠিক ঠিকানাতেই পাঠিয়েছে।

টুকাই-এর চেয়ে আর একটু বড় কারওর চিঠিও আসে মাঝে মাঝে। বড় হলেও যুক্তাক্ষরের বেড়া এখনও পার না হওয়া এমন এক পিকলুর—দাদু নয়, ঘনাদাকে লেখা চিঠি—

ঘনাদা,

তুমি ভালো আছো? আমি ভালো আছি। আমার একটা কথা শুনবে? তুমি যা যা সব বললা তা আর একটু সহজ করে লেখা যায় না? তোমার সব কথা যে লেখে সেই বোকা সুধীর না অধীরকে তাই বলো না। আমি আজ তোমাকেও তাই বলছি। এখন থেকে আমার মতো ছোটরা যা বোঝে শুধু সেরকম করে সব বলবে আর লেখাবে। আর কেবল এসো পড়ি—পড়ে-ই তা যেন পড়া যায়। তাতে কোনো দ্বিতীয় ভাগের জোড়া কথা যেন না থাকে।

আর শোনো। তুমি যেখানে থাকো সে বাড়িতে আর থেকো না। ওই শিশির গোরা শিবুরা তোমায় রোজ রোজ বড় জ্বালাতন করে। তোমায় দিয়ে গলপো বলাবে বলে ভালো ভালো খাবার আনালে কি হবে, তোমার ভালো লাগা খারাপ লাগার কথা ভাবে না। যখন তখন ওদের আবদার তুমি শুনবে কেন? তার চেয়ে তুমি আমাদের বাড়ি চলে এসো। আমাদের বাড়ির তেতলায় একটা খুব ভালো ঘর আছে। সে ঘরে কেউ থাকে না। তুমি খুব আরামে থাকবে। তুমি যখন যে রকম খাবার চাইবে দামু তোমায় কিনে এনে দেবে। দামু রোজ সকালে আমাকে কে জি টু-তে নিয়ে যায় আবার ছুটি হলে নিয়ে আসে। সে সব ভালো খাবারের দোকান চেনে। দীনু মালির লেংচা, রতন ফেরিওয়ালার আলু-কাবলি আর ফুচকা খেলে তুমি বুঝবে তোমাদের ওই বনমালী লেনের কেউ ওরকম খাবার চোখেও দেখেনি। এসব কেনবার পয়সার কথাও তোমায় ভাবতে হবে না। সব পয়সা আমার বড় দাদু দেবে। বড় দাদু খু-উ-ব ভালো। আমি কিছু চাইলে না করে না। বড় দাদুকে সকালে বিকেলে তুমি ছাদে দেখতে পাবে। তোমাদের ঠিক ভাব হয়ে যাবে, দেখো। বড় দাদুও তোমার নামের সব লেখা পড়ে কিনা? পড়ে মুচকে মুচকে হাসে শুধু। বড় দাদু থাকলে তোমার কথা টুকে রাখারও ভাবনা নেই। ওই তোমার সুধীর যার নাম সে তো ভালো করে তোমার সব কথা বোধ হয় বুঝতেই পারে না। যা লেখে তার চেয়ে অনেক কথা বোধ হয় বাদ-ই পড়ে যায়। বড় দাদু থাকলে সেটি আর হবে না। বড় দাদুর খুব ভালো একটা মজার কল আছে। বানানটা ঠিক লিখতে পারি না বলে মজার কল বললাম। সে কলে তুমি যা বলবে দাদু ঠিক ঠিক তুলে রেখে দেবে। তা ফিরে ফিরতি বাজালে যে কেউ তা থেকে তোমার সব কথা নতুন করে শুনে শুনে লিখে নিতে পারবে।

তাই বলছি তুমি এখনি আমাদের বাড়ি চলে এসো। আমাদের বাড়ির ঠিকানা হল—দাঁড়াও, দাঁড়াও, তুমি তো খুব চালাক! ঠিকানাটা পুরোপুরি তোমায় বলব না। শুধু একটু আধটু ইশারা জানাব। দেখি তা থেকে ঠিকানা বার করে তুমি কেমন আমাদের বাড়ি আসতে পারো।

নদী না খাল?

তাব ওপারে শুরু

লম্বা লাল দেওয়াল।

দেওয়ালের ওখানে কারা?

ওখানে রইল ইশারা।

এখন খুঁজলে বাড়ি

পাবে তাড়াতাড়ি।

ধাঁধার ছড়াটা সব আমি লিখিনি। বড় দাদু লিখে দিয়েছে। এবার দেখি কত তুমি চালাক।

–পিকলু।

শুধু ধাঁধার ছড়াটাই নয়, পিকলুর চিঠিটাও সাজানো আর লেখার মধ্যে পিকলুর বড় দাদুর বেশ একটু হাত আছে বলে সন্দেহ হয়।

এ তো গেল ছোটদের বা তাদের বলে চালাবার মতো করে লেখা চিঠি।

এ সব ছাড়া অন্যরকম চিঠিও আসে—বেশ চোখ কপালে তোলবার মতো চিঠি।

সেরকম একটি চিঠির ঠিকানা লেখার বুদ্ধিটাই তারিফ করবার। পত্র-লেখক চিঠিটাকে যথাস্থানে পৌঁছনো নিশ্চিত করবার জন্য ওসব বাহাত্তর নম্বর-টম্বরের গোলমালে যাননি। শ্রীঘনশ্যাম দাস বলে ঘনাদার নামটা ওপরে লিখে তারপরে প্রযত্নে ঘনাদার সব লেখার নামী এক প্রকাশকের নাম-ঠিকানা বসিয়ে দিয়েছেন।

চিঠিটি তারপর ঠিকমতই আমাদের হাতে যে পৌঁছেছে তা বলাই বাহুল্য।

চিঠির ঠিকানা যেমন পড়ে যত মজা পেয়েছি, আসল চিঠিটা পড়ে পেয়েছি তার অনেক বেশি। চিঠিটা পুরোপুরি এখানে তুলেই দিচ্ছি—

শ্রীঘনশ্যাম দাস মাননীয়েষু,

আপনার মেসবাড়ির যে ঠিকানা আপনার গল্পগুলিতে পাই তাহা সম্পূর্ণ সঠিক না-ও হইতে পারে সন্দেহ করিয়া আপনার এক প্রকাশকের ঠিকানায় এ পত্র পাঠাইতেছি। আশা করি এ পত্র আপনি ঠিক মতোই প্রাপ্ত হইবেন।

বাগবিস্তার না করিয়া সংক্ষেপে এ চিঠির বক্তব্য জানাইতেছি। আপনাকে প্রতি নিয়ত বহু গল্প বানাইতে হয়। আপনার গল্পের পুঁজি ফুরাইয়া গিয়াছে, আপনার উদ্ভাবনী শক্তি তাহাতে ক্রমশ ক্ষীণ হইতে বাধ্য। আপনার মতো লেখকের সাহায্যার্থে মৌ-কা-সা-বি-স বা মৌলিক কাহিনী-সার বিপণন সংস্থা স্থাপিত হইয়াছে। সামান্য ব্যয়ে লেখক-লেখিকাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে মৌলিক কাহিনী-সার এখান হইতে নিয়মিত পাওয়া যায়। গ্রাহক যাঁহারা হন সে সব লেখক-লেখিকার নাম সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়। এইটুকু শুধু জানিয়া রাখুন বহু খ্যাতিমান লেখক-লেখিকা-ই মৌ-কা-সা-বি-স হইতে তাঁহাদের কাহিনীর সার সংগ্রহ করেন।

আমাদের সংস্থা হইতে কী ধরনের কাজ আশা করিতে পারেন তাহার একটু নমুনা বিনামূল্যে এখানে প্রদত্ত হইল।

ধরুন, জাপানের সমুদ্র উপকূলস্থ কয়েকটি বন্দরে এক মহাসংকট দেখা দিয়াছে। উপকূলস্থ সে সমস্ত বন্দর-নগর মুক্তার চাষের জন্য বিখ্যাত। সমুদ্রের অগভীর তলায় রক্ষিত নির্বাচিত বহু শুক্তির মধ্যে কৃত্রিম উপায়ে মুক্তা প্রজাত করিয়া সেখানে লালন করা হয়। যথা সময়ে কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট ও বর্ধিত হইলেও এসব মুক্তা সকল দিক দিয়া আসল স্বাভাবিক মুক্তার সঙ্গে পাল্লা দেয়। এই কৃত্রিম মুক্তার কারবারে কিন্তু দারুণ বিপদ দেখা দিয়াছে। সমুদ্রতল হইতে পরিণত অবস্থায় সংগ্রহ করিবার সময় হইতে না হইতে মুক্তাগুলি কেমন করিয়া অদৃশ্য হইয়া যাইতেছে। অনেক পাহারা বসাইয়াও এ মুক্তা বিলোপ বন্ধ করা যাইতেছে না।

এ সমস্যা সমাধানে ঘনশ্যাম দাসের ডাক পড়িল। তিনি সমস্যার সমাধান করিয়া দিলেন।

কেমন করিয়া? মুক্তা-চোরদের হাতেনাতে ধরিয়া।

কাহারা মুক্তা-চোর?

চোর আসলে এক অ্যাকোয়েরিয়াম অর্থাৎ সামুদ্রিক চিড়িয়াখানার মালিক। সে তাহার শিক্ষিত কয়েকটি ডলফিন মানে সাগর-শুশুকদের দিয়া সমুদ্রের তলা থেকে মুক্তাগুলি ঠিক পরিণত হইবার সময় চুরি করিয়া আনে। ডলফিন অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। বৈজ্ঞানিকদের মতে বুদ্ধিতে মানুষের পরেই তাহাদের স্থান। তাহাদের শিক্ষা দেওয়াও খুব কঠিন নয়। সেই অ্যাকোয়েরিয়ামের মালিক এতদিন তাই করিতেছিল। ঘনশ্যাম দাস মানে ঘনাদা-ই তাহাকে ধরিয়া ফেলিলেন।

উপরে যাহা লেখা হইল তাহা সামান্য একটু নমুনা মাত্র। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিলে বিস্তারিত আরও আশ্চর্য সব কাহিনী-সার পাইবেন। ইতি–

মৌ-কা-সা-বি-স

মৌ-কা-সা-বি-স-এর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করবার ইচ্ছা আছে। গৌর এবং আমি এক্ষুনি যোগাযোগটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে চাই। কিন্তু শিশির ও শিবু কিছুদিন অপেক্ষা করাই উচিত মনে করে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *