Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঘনশ্যামের কান্ড || Abhijit Chatterjee

ঘনশ্যামের কান্ড || Abhijit Chatterjee

ঘনশ্যাম বাবুর বাড়িতে সেদিন সকালে তুমুল হৈ চৈ, চশমা পাওয়া যাচ্ছে না।সারা বাড়ি ঝাড়ু মেরে, ঝুলঝাড়া নেড়ে,টর্চ দিয়ে খুঁজে সে চশমা আর পাওয়া গেল না।এদিকে অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে,অগত্যা নাকে মুখে কোনরকমে গুঁজে ঠাকুর ঘরে গিয়ে পেন্নাম ঠুকে মায়ের কাছে যেতেই ওনার মা হৈ চৈ-এর ব্যাপার জানতে চাইতে উনি ঘটনাটা বলে মা’কে প্রণাম করার সময়ই পাঞ্জাবীর বুক পকেট থেকে চশমাটা ঠকাস করে মাঠিতে পড়তে উনি চমকে গেলেন।কৃতজ্ঞ চিত্তে মা’কে প্রণাম করে আর্শীবাদ নিয়ে হৃষ্ট মনে অফিস গেলেন।বাড়ি শুদ্ধ লোক হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।দিন কয়েক পরের কথা এবার হারালো ঘড়ি,ঐ চেঁচামেচি,হট্টগোল,শেষে খেয়েদেয়ে ঠাকুর নমস্কার করে মায়ের কাছে।বুড়ির একটু রাবড়ি খাবার ইচ্ছে জেগেছে।দিনে একবারই ছেলেকে একান্তে পায়,যাবতীয় আবদারের তখন পেশ করেন,ছেলেও সময় সুযোগ মত জিনিষগুলো এনে দেয়।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না,আদর করে ছেলেকে খাটে বসিয়ে সাতপাঁচ বকতে লাগলো,মা বকছেন,নিমপাতা খাওয়ার পর মুখ যেরকম হয় ঘনাদা শুনে যাচ্ছেন,আসল কথা তখনও আসেনি ছটফট করতে করতে মা আমি ওবেলা শুনবো বলতে বলতে পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে সময় দেখেই ধ্বসে গেলেন।ঘড়িতো উনি অনেক আগেই হাতে আটকে নিয়েছিলেন।কোনক্রমে বিদায় নিয়ে গিন্নিকে ঘড়ি পেয়ে যাবার সংবাদটা মিউমিউ করে দিয়ে একলাফে বাড়ির বাইরে।ধুতি পাঞ্জাবী ছাড়া ঘনা বাবু অন্য কিছু পড়েন না,
বাড়িতে অবশ্য লুঙ্গী আর ফতুয়া।মনেপ্রাণে বাঙালি ঘনাবাবু পুজোআচ্চাতে বেশ উৎসাহী।আর এই নিয়েই একদিন তুমুল গৃহযুদ্ধ বেঁধে গেল।সেদিন বৃহস্পতিবার, লক্ষ্মী পুজোর ফুল এনেছেন বাজার থেকে যেমন প্রতি সপ্তাহে আনেন,এনে ঠাকুর ঘরে রাখেন,ঘনা গিন্নি স্নান সেরে পুজোয় বসেন।আজও বসেছেন ফুলের প্যাকেট পাচ্ছেন না,হাঁকডাক করে কত্তাকে মুখঝামটা দিচ্ছেন। কত্তার কথা উনি পাগল ন’ন বা বুদ্ধিভ্রংশ হয়নি, দস্তুরমত বাজার থেকে কিনে এনেছেন গিন্নি কোথায় সরিয়ে রেখেছেন,তার দায়িত্ব উনি নেবেন কেন ? আধঘন্টা বাদে সেই ফুলের প্যাকেট উদ্ধার হলো রান্নাঘরে মাছ রাখার জন্য নির্দিষ্ট থলের ভেতরে।সে এক বিতিকিচ্ছিরি কান্ড।ফুলের প্যাকেট খুঁজতে গিয়ে ঘনাবাবুর একটা আঙুল কি ভাবে যেন কেটে গিয়েছিল,গিন্নির ধমকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে আনলেন,টিটেনাস ইঞ্জেকশনও নিলেন,এই অবধি ঠিক ছিল,গন্ডগোল ধরা পরলো চারদিন পরে যখন ঘনাদা মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন আর ওনার মা সারা বাড়ি পায়খানা করে বেড়াতে লাগলেন। সামান্য রদবদল, ওনার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক ছিল তা গেল ওনার মায়ের কাছে,পেট ফেঁপে একসা,অন্য দিকে ঘনাবাবুর হাই প্রেশার আর ওনার মায়ের লো প্রেশার,মায়ের ওষুধ খেয়ে ওনার প্রেশার আরও বেড়ে গেলো,ফল,মাথা ঘুরে যা হবার তাই হলো। এ হেন ঘনাবাবু অফিস ছুটি নিয়ে দিন সাতেক বিশ্রামে থাকলেন। বিধি বাম, একদিন পোষা কুকুরকে খাবার দিতে গিয়ে গিন্নির জামবাটি ব্যবহার করলেন তো আর একদিন ছেলের জুতো পরে রক্ত পরীক্ষা করতে গেলেন। গিন্নি রাগে ঐ দিন খেলই না , ছেলে হাওয়াই চটি পড়ে অফিস গেল। গিন্নির মান ভাঙাতে জামবাটি কিনতে গিয়ে প্রেশার কুকার নিয়ে এলেন তো ছেলের জুতোর জায়গাতে মেয়ের শালোয়ার কামিজ। বিশ্রাম শেষ হলো, অফিসে জয়েন করেই কেলো। দিনটা শুক্রবার,পরের দিন নিয়ম মেনে রেসের মাঠে যাবেন, অফিসে ঢোকা ইস্তক চটি বইটা খুলে অঙ্ক করছেন কোন ঘোড়াটায় বাজী ধরবেন, ইতিমধ্যে ফাইল এলো, উনি নোট দিতে গিয়ে ঘোড়দৌড়ের হিসেব লিখে দিলেন,ফলে যা হবার তাই হলো শো-কজ্ হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন,পথে দুধ কিনতে গিয়ে দাড়ি কামিয়ে গালে ঘসার ফিটকারি কিনে এনে গিন্নির হাতে দিয়ে চা দিতে বলে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিলেন। দাবড়ানি খেয়ে দুধ আনতে ফের গেলেন, নিয়ে এলেন নুনের প্যাকেট। সময় এগোয় ঘনাবাবুর পরিবর্তন হয় না, চরম কেলেঙ্কারি হলো ছেলের বৌভাতের দিন। গিন্নি সেদিন হেব্বি মাঞ্জা দিয়েছে, মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে ঘনাবাবুর মনে প্রেম জেগে উঠলো, নিমন্ত্রিত, অভ্যাগতদের আপ্যায়ন তেমন না করে গিন্নির পেছনে ছোঁক ছোঁক করতে লাগলেন। একটা ফাঁকা ঘরে গিন্নিকে একা পেয়ে ঘনাবাবু পেছন থেকে জাপটে ধরে দিলেন গালে এক মোক্ষম চুমু, ঢাক ফেটে গেল,ছিল যে ছেলের নব বিবাহিত স্ত্রী। ছেলেকে কে রোখে,লম্পট বাবার থেকে দূরে থাকবে সে। বিয়ে বাড়ির আমোদ গেল চৌপাট হয়ে দায়সারা ভাবে অনুষ্ঠান শেষ হলো,ছেলে আর বৌ রাতে ঐ অনুষ্ঠান বাড়িতেই থেকে গেল। ছেলে,ছেলের বৌয়ের,গিন্নির হাতেপায়ে ধরে দিন দশেক বাদে নিস্তার পেলেন ঘনাবাবু। ক্রমে আমাদের ঘনাবাবু চাকরি থেকে অবসর নিলেন। পাড়ার ক্লাবের সভাপতি হলেন। দুর্গাপুজোর উদ্বোধনের দিন ভাষণ দিতে গিয়ে ফুটবল খেলার সূচনা করলেন। এ হেন ঘনাবাবুর একদিন দেহাবসান হলো প্রায় নি:শব্দে। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব পাড়া প্রতিবেশীরা ভিড় জমালো বাড়িতে।তাদের চা দিতে দিতে নাজেহাল ঘনা গিন্নি।সবার প্রশ্ন কি ভাবে মারা গেলেন। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পরে গিন্নি বললেন – ওনাকে তো আপনারা সবাই জানতেন কেমন লোক ছিলেন,হয়ত ঘুমের ঘোরে নি:শ্বাস নিতেই ভুলে গিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *