গ্রহণ(পর্ব-৩)
একথা শুনে গুঞ্জার খুব দেখতে ইচ্ছে করে বাউলকে।আজ তাই ভোর ভোর চলেছে গঙ্গাস্নানে! দাসী বেহুলা জানে কোথায় বাউলের আস্তানা । তাই আগে চলেছে বাউল দর্শনে।নদীর ঘাটের পাশে সাধু সন্ন্যাসী দের ডেরা!ধুনি জ্বলছে॥ দূরে আবছা আঁধারে বাঁধানো ঘাটে বসে একজন একতারা তে সুর বাঁধছে,,,, নদীর ভেজা বাতাসে সে সুর ভেসে চলেছে উজানে।থমকে দাঁড়ালো গুঞ্জা,,,,,,খুব চেনা সুর,,,,,বহু যুগের ওপার হতে ভেসে আসছে ওই সুর।গুঞ্জা দ্রুত এগিযে যায় ওড় নায় মাথা মুখ ঢেকে॥ ঘাটের পৈঠ। তে বসে একতারা নিয়ে আত্মস্থ বাউল মন্দক ! চমকে ওঠে গুঞ্জা,,,,,চেহারাতে কোন পরিবর্তন নেই, খালি চুলে
লেগেছে রূপালী ঝিলিক !মন্দকের গাওয়া পদের শেষ চরণে গলা মেলায় গুঞ্জা! চম কে গান বন্ধ করে পেছনে তাকায় মন্দক !বলে,,,”কে তুমি? এ পদ তুমি জানলে কি করে? এতো তোমার জানার কথা নয়,,,,,তুমি কে? গুঞ্জা??” মুখের ওড়না সরিয়ে
গুঞ্জা এগিয়ে গিয়ে আছড়ে পড়ে মন্দকের বুকে॥ অশ্রুর প্লাবনে ভেসে যায় দুজনে॥ দূরে দাঁড়ি য়েসব লক্ষ্য করে বেহুলা। এবার এগিয়ে এসে বলে,,”মা,বাউলকে নিয়ে ঘরে চলো ।এখানে লোকজনের ভীড় হয়ে যাবে।”গুঞ্জা মন্দকের হাত ধরে ঘরেনিয়ে আসে! নাটমন্দিরের পাশের ঘরে সাদরে বাউলকে স্হান দেয় ॥ বেহুলা কে বলে দেয় ,,,”আজ আমি কোন কাজ কোরব না॥ আজ আমার প্রায়শ্চিত্তের দিন ॥” মন্দক অবাক হয়ে এই নতুন গুঞ্জা কে দেখে!বলে,,”তুমিই যে আমার সেই গুঞ্জা ,ভাব তেই অবাক লাগছে॥”গুঞ্জা বলে ,,,,”সেদিন সুমতির শর বত খেয়ে অজ্ঞ ।ন হয়ে পড়ি দুজনেই! জ্ঞান ফেরে যখন তখন মাঝনদীতে নৌকো ভেসে চলেছে লক্ষণ।বতীর দিকে॥সুমতি আমাকে বিক্রি করে দেয় নটী পত্রলেখার কাছে! উনিই আমার গুরু!নাচ,গান,সহব ত সব শিক্ষাই দেন!পরে নগরনটীর পদে নিযুক্ত করেন ॥ অনেক কাণ্ণ।কাটি করেছি মিনতি করেছি,,,,,কেউ শোনেনি॥ কোন উপায় তো ছিল না তাই বাধ্য হয়েছি এই কাজে! আত্মহত্যা মহাপাপ , তাই মরতে পারিনি প্রতিটি মুহুর্ত নিজের মরণ কামনা করেছি॥ এই ক্লেদাক্ত জীবন শেষ হবার আগে তোমাকেসব সত্য বলে যেতে চেযেছিলাম ,,,,ঠাকুর আমার ইচ্ছা পূরণ করেছেন,,,,,॥ এবার তোমার কথা বলো ,,,,,কেন ঘর বাঁধনি? কেন বাউল হয়ে পথে পথে ঘুরছো?”
মন্দক বলে,,,”আমার যখন জ্ঞান ফেরে দেখি নদীর তীরের কাদায় পড়ে আছি!নৌকা নেই! পাগলের মতো সবাই কে বলতে থাকি তোমারকথা,সুমতির কথা॥তোমার বাবা,দাদা অনেক খোঁজ ক রে ,কিন্তু কোন খবর পায় নি॥ তখন সব ছেড়ে বাউলের
একতারা হাতেবেরিয়ে পড়ি ॥তোমায় খুঁজ তে থাকি
যত নগরে গেছি তোমার খোঁজ করেছি! মনে মনে ভেবেছি’আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আমি তোমায় পাব ই! দেখো ঠিক খুজে পেলাম তো!”আমার অন্বেষণ আজ শেষ হলো! এটাই ভগবানের লীলা !”
গুঞ্জা নিজের হাতে রান্ন। করে মন্দক কে খাওয়ায় !
তার্ পর দুজনে কথার প্লাবনে ভেসে যায় ,,,, দু যুগের কথার॥ গুঞ্জার সব ক্ষোভ ,বেদনা ধুয়ে মুছে যায় মন্দকের কথায় ,,,,”আমার গুঞ্জা কে খুজেঁ পেয়েছি ,আমার এক পরিক্রমা শেষ॥ এবার আমরা দুজনে শুরু করবো দ্বিতীয় পথের পরিক্রমা॥”গুঞ্জাবলে ,,,’
এক্লেদাক্ত শরীর নিয়ে কিভাবে তোমার সঙ্গী হবো ?”
মন্দক বলে,,,’তোমার শরীর মা গঙ্গা শুদ্ধ করে দিয়েছেন ! আর তোমার মন তো কখনও অশুদ্ধ হয় নি!” চোখের জলে বুকভেসে যায়।ধুয়ে যায় সংসারের কালিমা,শুদ্ধ হয়ে ওঠে গুঞ্জার শরীর মন॥
রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর !নিশুতি রাতের জাদুতে ঘুমিয়ে আছে চরাচর!ধীরে ধীরে নগর দ্বারের দিকে এগিয়ে চলেছে দুটি ছায়া মূর্তি,,,,,,,,পরণে গৈরিক বসন, চুড়া বাঁধা চুল ,হাতে একতারা !মন্দকের গলার তুলসী র মালা এখন গুঞ্জার গলায়॥ চন্দ্র সাক্ষী করে কন্ঠী বদল করেছে দুজনে॥এবার যুগলে যাত্রা করেছে অচিনপুরে,,,,,,,,তাদের মনের মানুষের খোঁজে॥নিস্তব্ধ নদীচর ,নগর প্রাকার,আর আকাশের অগুন্তি নক্ষত্র সাক্ষী থাকে তাদের যুগল যা ত্রার ,,,,ভালো বাসার জয়ধবজা উড় ছে বাতাসে,,,,ওরা তারই ভগ্নদূত,,,,,॥