Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গ্যাবনে বিস্ফোরণ || Siddhartha Ghosh » Page 2

গ্যাবনে বিস্ফোরণ || Siddhartha Ghosh

প্লেনের ফুসিলেজে

০২.

প্লেনের ফুসিলেজে ঠেকানো সিঁড়িটার পাশেই মাটিতে পেট ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মসৃণ একটা বিদেশি গাড়ি। সিকিয়োরিটি অফিসার দরজা খুলে অপেক্ষা করছেন। ডক্টর সেনশর্মাকে আগে তুলে সুজন আর ডক্টর গোস্বামী উঠল। সিকিয়োরিটি অফিসার। শোফারের পাশে বসে দরজাটা টানামাত্র গাড়িটার রাবার টায়ার চারটে মাটি কামড়ে দৌড় জুড়ে দিল। গাড়িটার নিঃশব্দ ইঞ্জিনের সচলতার একমাত্র সাক্ষী তার গতি। বেঁটেখাটো মানুষ সেনশর্মা ডানলো পিলো গদির মধ্যে আরও হারিয়ে গেলেন। ওভারকোটের কলারটা তুলে দু-হাত বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে তিনি কুঁকড়ে বসেছেন। এই বয়সে তাঁকে এভাবে টানাটানি করাটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু উপায় ছিল না কোনও। অ্যাটমিক ফিজিসিস্ট হিসাবে তাঁর চেয়ে যোগ্যতর বিশেষজ্ঞ ভারতে নেই।

রানওয়ের চত্বর ছেড়ে লিমুজিনখানা এরোড্রমের পার্কিং স্পেসের কাছে আসতেই বুলেটের মতো ছোট্ট একখানা গাড়ি যেন ছিটকে এল বাঁ পাশ থেকে। রাস্তার মধ্যে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে লিমুজিনখানার শোফারের দক্ষতার আর ব্রেক সিস্টেমের পরীক্ষা নিল। রুষ্ট দৃষ্টিতে জানলা দিয়ে তাকিয়েই সুজন হুকুম করল, দাঁড়ান–দাঁড়ান–

ছোট গাড়িটার দরজা খুলে যে গাঁট্টাগোট্টা মানুষটা নামছে, সুজন তাকে চেনে।

সুজন নেমে পড়ল। লিমুজিনখানা ব্যাক করে মাঝরাস্তা ছেয়ে একপাশে সরে দাঁড়াচ্ছে।

গুড মর্নিং–গুড মর্নিং দাশগুপ্ত! সুজনের দুটো হাত পাকড়ে ধরে কোবায়াশি।

হরিবল–আই সে ইট ইজ হরিবল। কোবায়াশির খুদে খুদে চোখের পাতা দুটো ঘন ঘন পিটপিট করছে। আপ্যায়নে আবেগের এমন ঘনঘটা সত্ত্বেও সুজনের নিরুত্তর থাকাটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে অভদ্রতা বলেই গণ্য হত। তা ছাড়া অতিথির কৌলীন্যের বিচারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টির জন্য এটা একটা কূটনীতিক চাল কি না, সে নিয়েও নিশ্চয় জলঘোলা হত বিস্তর।

বিলিভ মি দাশগুপ্ত, আমি এত দূর ছুটে এসেছি শুধু তোমাকে একটা কথা বলব বলে।

কোবায়াশির গলার স্বর আর চোখের চাউনিতে আন্তরিকতার কোনও অভাব নেই, কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে সুজনের মনে হচ্ছে, মানুষই একমাত্র জীব, যে অভিনয়কলা আয়ত্ত করেছে।

সুজন ঠান্ডা জল ঢেলে দিতে চাইল কোবায়াশির তপ্ত আবেগের ওপর, এত দূর ছুটে আসার কোনও দরকার ছিল না। আমরা তো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিট করব।

ও নো-ও নো–আমি জানাতে চাই, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। বিলিভ মি–আমি জানি, তুমি নিশ্চয় আমাকে বিশ্বাস করবে। কোবায়াশির আর্তস্বরও এতটুকু বিচলিত করে না সুজনকে। যুক্তির ছুরি চালিয়ে সে আজ আবেগকে ফালাফালা করে দিতে বদ্ধপরিকর।

ইজ ইট সো ইম্পর্ট্যান্ট কোবায়াশি? আমি বিশ্বাস করি, না-করি, তাতে কতটুকু যায় আসে? যা হবার তা হয়েই গেছে। তুমিও জানো, আমিও জানি এবং সবাই জানে, এরপর আর আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না। আর এই ব্যাপারটা ঘটানো হয়েছে ঠিক সেই জন্যেই, যাতে সব বিশ্বাস হারিয়ে যায়। বুকে হাত রেখে বলো তো, ডোন্ট ইউ ফিল, আমরা সবাই কোটের তলায় একটা করে ধারালো ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আর মুখে বলছি, আমিও শান্তি চাই।

জানি–কিন্তু তুমিও তো জানো দাশগুপ্ত, আমি কীভাবে

সরি–দেরি হয়ে যাচ্ছে। জানাজানির ব্যাপারটা মিটিং-এই হবে। তা ছাড়া গাড়িতে ডক্টর সেনশর্মা রয়েছেন। সুজন পেছন ফিরে গাড়িতে এসে উঠে পড়ল। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িটায় নিঃশব্দে প্রাণসঞ্চার হল। সুজন যদি জানলা দিয়ে তাকাত তো দেখত, কোবায়াশি তখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *