গোটা সেদ্ধ
সরস্বতী পুজোর পরের দিন পালিত হয় শীতল ষষ্ঠী। ঠাকুমা-দিদিমার কাছে এটি গোটা সেদ্ধ নামেই পরিচিত। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে এও এক বিশেষ পার্বণ। এই শীতল ষষ্ঠীর মূল উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে গোটা মুগ, গোটা বেগুন, জোড়া সিম, জোড়া কড়াইশুঁটি, শিস পালং, টোপা কুল, সজনে ফুল,আলু রাঙাআলু। সরস্বতী পুজোর সকালেই বাজার থেকে এইসব আনার পর সন্ধ্যায় শুরু হয় রান্না। আগে অবশ্য উনুনেই করা হত, তবে এখন গ্যাসই ভরসা।
পদের নামটি গোটা সেদ্ধ, কারণ যা রান্না করা হয়, তা সবই গোটা গোটা থাকে। সমস্ত সবজী গোটা সেদ্ধ করে নিতে হবে।তারপর রান্না করা হয় ভাত। তারপর টোপা কুলের চাটনি।সব রান্না শেষ হলে সেগুলি সারা রাত রেখে দেওয়া হয়। আজকাল অবশ্য রেফ্রিজারেটর রয়েছে, তবে প্রকৃতির আশীর্বাদে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে আগেকার দিনেও খাবার নষ্ট হত না।
তিথিগতভাবে সরস্বতী পুজোর পর দিন সকালে ষষ্ঠী থাকতে থাকতে হয় ষষ্ঠীপুজো। এরপর বাড়ির শীল, নোড়ারকে পুজো করা হয়। ফুল, প্রসাদ, দইয়ের ফোঁটা সহযোগে শীল-নোড়ার পুজো দেওয়া হয়। এরপর খাওয়া হয় গোটা সেদ্ধ। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথির পর ষষ্ঠী তিথিতে মায়েরা সন্তানদের মঙ্গল কামনায় এই রীতি পালন করেন।
তবে রীতি-নীতি ছাড়াও এই গোটা সেদ্ধ খাওয়ার কিন্তু একটা বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। এই সময় হল ঋতু পরিবর্তনের সময়। এইসময়ে পক্সের প্রকোপ দেখা দেয়। সেইকারণে সেদ্ধ এইসব সবজী খেলে পেটও ঠান্ডা থাকে সেইসঙ্গে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
এই খাবার পুষ্টিকরও৷ তাই এই খাবারকে কমফর্ট ফুড বলা হয়৷ উনুনের পাশাপাশি এদিন বাঙালি বাড়িতে শিল নোড়াকেও বিশ্রাম দেওয়া হয়৷
সরস্বতী পুজোর পরের দিন তাই গোটা সেদ্ধ খেতে হয়।