Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গেটুস দ্যা গ্রেট – 3

সেদিন রাতে শোওয়ার ঠিক ঠাক ব্যবস্থা হল মামার ঘরের পাশের ঘরেই । আমরা দু ভাই সব সময়েই জড়াজড়ি করে শুই। ঘুমের ঘোরে মনে হল ভাই এর গায়ে এত লোম কেন ? আমি কি কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছি ! জেগে গেলাম আমি । বেড লাইট জ্বলছে । উঠে বসে দেখলাম আমার আর বলডুইন এর মাঝে গেটুস শুয়ে আছে । বলডুইন গেটুস কে জড়িয়ে শুয়ে আছে । গেটুস আরামে চোখ পিট পিট করছে । আর তখনই মনে হল আমিও গেটুস কে জড়িয়ে শুয়েছিলাম। মনে হতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম । বলডুইন জেগে গেল । গেটুস কে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠল । আমাদের চিৎকারে মামা,বাবা,মা ছুটে এসেছেন। গেটুস ও ভয়ে উঠে বসেছে । জিভ্ ঝুলছে গেটুস এর।

মা হৈচৈ শুরু করলেন ।—-এই জন্যই আমি এতদিন এখানে আসিনি। বিকু, তোর কি একটুও মায়া দয়া নেই ? দুটো দিন ও থাকতে দিবি না আমাকে ? আমার থেকেও তোর কাছে ঐ কুকুর টা আপন হয়ে গেল?
বাবা বললেন—চুপ করো অনু কি হচ্ছে ?

এবার মামা একখানা লাঠি নিয়ে এল । তাড়া করল গেটুস কে —বের হ এখান থেকে । আর কখনও এ বাড়ি তে ঢুকবি না ।

মামা মারতে লাগল গেটুস কে । গেটুস নট নড়ন চড়ন। বলডুইন বিছানার থেকে এক লাফে নেমে নিচে বসল। গেটুস কুঁই কুঁই করছে । গেটুস এর চোখে জল ।

বলডুইন বলল –মা গেটুস কাঁদছে । ও থাকনা মা । কিছুই করবে না । গেটুস এর চোখে জল দেখে বললাম—মা , গেটুস খুব কথা শোনে আমাদের । আমাদের থেকেও ভাল গেটুস। মামার দেখ গেটুস কাঁদছে । থাক না মা গেটুস এখানে ।

এরপর আর মা কিছুই বললেন না । বাবার চোখে খুশির হাসি। মামার চোখে কষ্টের ছাপ । মা বললেন —ছেড়ে দে বিকু । ও থাক এ ঘরে । —মন্টু, বলডুইন তোমরা জামা প্যান্ট বদলে হাত মুখ ধুয়ে শোও । আমি চাদর টা বদলে দিচ্ছি।

শেষ রাতের এই ঘটনার পর আর কারও ঘুম এলো না। আমরা ডলফিন নোজ যাওয়ার বায়না ধরলাম । কারণ আগে-ভাগে ডলফিন নোজ দেখা না হলে, আবার মায়ের কথায় ভাইজ্যাগ না দেখেই বাড়ি ফিরতে হয় তার ঠিক নেই। ভোর হতে না হতেই আমরা তৈরি হয়ে নিলাম বেড়াতে যাওয়ার জন্য।
বলডুইন বলল—দাদা , একটা মজা করেছি । এখুনি দেখবি মামা হম্বি তম্বি শুরু করবে ।

একটু পরেই মামা হৈচৈ শুরু করল ।
—আমার সার্ট প্যান্ট কোথায় গেল?

চাকর বাকর দের ধমক ধামক শুরু হতেই ভয় পেয়ে গেল বলডুইন ।
বলডুইন মামাকে বলল—দেরি করছ কেন ? তোমার আর জামা নেই? মা বোধহয় কিছু বুঝতে পেরেছিল তাই মামার আলমারি খুলে প্যান্ট সার্ট বার করে দিল । গজ গজ করতে করতেই আলমারি বন্ধ করল মা ।—তোকে কতবার বললাম একটা বিয়ে কর । তা না কতগুলো কুকুর বেড়াল নিয়ে বাস করছিস !

মায়ের কথায় মামা কিছুই বলল না । আবার রাগ ও করল না । মায়ের বার করা সার্ট প্যান্ট পড়ে নিল । মা মামার সার্ট এর কলার টা টেনে ঠিক করে দিলেন ঠিক যেমন টা আমাদের করে দেন ।

বলডুইন বলল—মা তুমি মামা কে ছোট বেলায় জামা কাপড় পরিয়ে দিতে, তাই না ? ওর কথায় মা মামার দিকে চেয়ে হাসলেন । মামাও তার শিশুকালের দিদির দিকে চেয়ে হাসল । আমার কষ্ট হচ্ছিল মামার জন্য । মামার কেউ নেই বলেই কষ্ট । মামার হাওয়াই চটি ও গায়েব । তা নিয়ে মামা কিছুই বলল না । বরং সোয়েড এর স্যু পড়ে নিল মামা । বলডুইন বলল—মামা, ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস । মামা ও মজা করে বলল— হবো না ? ডন বৈঠক করি তো । আমাকে গর্জিয়াস লাগবার জন্য ই তো আমার সব লুকানো হয়েছে।
বলডুইন চেঁচিয়ে বলল—আমি লুকাইনি ।
মামা বলল—আমি কি সে কথা একবারও বলেছি ? বলো দিদি ?
মা , বাবা হাসছিলেন বলডুইনের ভঙ্গী দেখে ।

কথা বলতে বলতেই গাড়ি চালাচ্ছিল মামা । ইয়ারাদা হিল রেঞ্জ এর ওপরে গাড়ি উঠতে লাগল এঁকে বেঁকে। সমুদ্র ঘিরে ডলফিন নোজ । তাই গাড়ি যখন ই সমুদ্রের দিকে আসছে তখনই মনে হচ্ছে গাড়ি গড়িয়ে পড়বে সমুদ্রে । রাস্তা তখন ও ভাল করে সারানো হয়নি। মনে হল মায়ের বলা সেই ক্যাপ্টেন থমাস ব্ল্যাক মোর এর কথা । সেই ঐতিহাসিক অন্তরীপের উপরে উঠছি আমরা যেখানে ক্যাপ্টেন থমাস ব্ল্যাক মোর এর রেজিমেন্ট ছিল। মামা বলল—এটা এখন ইন্ডিয়ান নেভির এরিয়া ।

একটু পরেই গাড়ি দাঁড়াল লাইট হাউজের কাছে । চার চৌকো ঘরে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে আমরা উঠে গেলাম ওপরে । যেখানে ব্যারিকেড এর মধ্যেই আমরা দাঁড়ালাম উন্মুক্ত সাগরে । মনে হল আমরা মাঝ সাগরে । ওখান থেকেই সার্চ লাইট ঘুরছে । মামা বলল—এখান থেকেই সার্চ লাইট ফেলে জাহাজের গতি পথ নির্ধারণ করা হয় । মা বললেন—বাব্বা! কি হাওয়া ! মনে হচ্ছে যেন লাংস টা বেলুনের মতো ফুলে উঠছে । মামা বলল—ইন্ডিয়া গেজেট এ উল্লখ আছে ঐ হাওয়ায় লাংস এর রোগ অনেকের সেরে গেছে । লাইট হাউজ থেকে নেমে এলাম ।

বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হল । বাড়ি ফিরেই দেখি গেটুস আমাদের বিছানায় শুয়ে আছে । মা কাঁদতে শুরু করলেন ।—-কাল ই আমি চলে যাব । বিকু তোর কাছে আর কোন দিন আসবো না ।

মামা তখনই একটা লাঠি নিয়ে গেটুস কে মারতে মারতে বাইরে নিয়ে গেল । গেটুস কাঁউ কাঁউ করে লেজ গুটিয়ে ছুটছে। মামা বাইরের গেট এ তালা লাগিয়ে দিল । গেট এর বাইরে গেটুস কেঁদেই চলেছে । মামা নিজের ঘরে ঢুকে গেল ।

আমি আর বলডুইন ছাড়া কেউ খায় নি । মা মামার ঘরে ঢুকে গেলেন । কিছুক্ষণ পর মা মামার ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বাবাকে বলেন—বিকু র জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । শরীর খারাপ ছিল একবার ও বলেনি তাহলে যেতাম না । কি যে করি! রাতে ডাক্তার ও তো পাওয়া যাবে না ।
বাবা বললেন—তালা খুলে গেটুস কে আসতে দাও।

বাবার কথা মতোই মা গেট এর তালা খুলে দিতেই গেটুস দৌড়তে দৌড়তে ঢুকে গেল মামার ঘরে । আবার গেটুস লাফাতে লাফাতে বেড়িয়ে গেল বাইরে ।
মা বললেন—মন্টু, দেখতো গেটুস কি বাইরে চলে গেল ?
বললাম—হ্যাঁ মা , কোথায় চলে গেল ।
মা বললেন—গাড়িতে চাপা না পড়ে ।
বাবা বললেন—ধারে কাছে ডাক্তার পাওয়া গেলে হত।
মা বললেন—বাড়িতে ডাক্তার আসেনা এখানে ।

মা আবার মামার ঘরে ঢুকে গেলেন । ওদিকে গেটুস এর পাত্তাই নেই । মামার ঘরে ঢুকে দেখলাম মামার গায়ে মা কম্বল টেনে দিলেন। আর তখুনই কানে এল গেটুস এর গলা ‘ঘাউ ঘাউ’ । ছুটে বাড়ান্দা য় দাঁড়ালাম । বলডুইন, বাবা আর মা ও চলে এসেছেন। গেটুস এক ভদ্রলোক এর প্যান্ট কামড়ে ধরে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসছে । তিনি ইংরাজী ভাষায় কথা বলছেন । তবে আমরা বাঙালি বুঝে বাংলায় বললেন—- কি ব্যাপার? কেউ অসুস্থ নাকি ? দারুণ ট্রেন্ড তো !! চেম্বার থেকে টেনে আনলো । কতো রোগী বসে আছে ।
বাবা বললেন—আমার শ্যালকের জ্বর ।
ডাক্তার—-কি নাম তাঁর?
বাবা বললেন—-বিকাশ। বিকাশ মৈত্র ।
ডাক্তার—ডগ্ শো তে ওঁকে দেখেছি । চলুন ভেতরে।

অনেক ক্ষণ আমরা শুয়ে পড়েছি । গেটুস একবার ও এ ঘরে পা দেয় নি । মাঝ রাত হবে তখন জেগে গেলাম। ভাবলাম মামা কে একবার দেখে আসি ।একাই তো রয়েছে মামা । কিন্তু ঘরে পা দিয়েই বুঝলাম মা ও জেগে আছেন এ ঘরে । মা বসে জল পট্টি দিচ্ছেন মামার মাথায় । আর গেটুস মায়ের পায়ে মুখ ঘষে কুঁই কুঁই করে কাঁদছে । কে বলবে যে ও একটা বাঘের মতো অতিকায় কুকুর ! মা কিচ্ছু বলছে না । কিন্তু মা বাঁ হাত দিয়ে গেটুস এর মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দে আমার চোখে জল এসে গেল । নিঃশব্দে ওখান থেকে সরে এলাম । মা ওকে আদর করবে না কেন? ও তো আমার আর বলডুইন এর থেকেও ভাল। মামার জন্য ডাক্তার ডেকে এনেছে ।

যতক্ষণ মামার জ্বর না কমছে গেটুস সেখান থেকে নড়েনি । গেটুস এর নাওয়া-খাওয়া সবই মামা করায়।

মামা চোখ খুলে ই বলল—দিদি তুমি ওকে আবার ঢুকতে দিয়েছ?

গেটুস কি বুঝল কে জানে ! মাথা নিচু করে হাঁ করে রইল । ওর লকলক্ এ জিভ ঝুলছে । মা গেটুস এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন—গেটুস ই তোর জন্য ডাক্তার ডেকে এনেছে ।
মামা বলল—-তুমিও তো বসে আছো ,খাওনি এখন ও।
মা বললেন—আমার কথা ছাড়, ওর ও দুদিন ধরে চান খাওয়া হয়নি । একবার ও তোর কাছ ছাড়া হয় নি । ওকে চান করিয়ে দিই কি বল?
মামা বলল—তুমি পারবে?
মা হাসতে হাসতে বললেন—-তোকে করাই নি ?

মামার চোখে মুখে আদুরে ভাব । চেয়ে আছে মায়ের দিকে ।

এরপর শুরু হল গেটুস এর স্নানের পর্ব । সে কি তোড়জোড়! আশ্চর্য গেটুস । চুপ করে আছে । মা জল ঢালতেই মাথা ঝাড়া দিচ্ছে গেটুস । আর মা চিৎকার করছে—গেটুস স্টপ । থেমে যাচ্ছে গেটুস।

মামা ও গেটুস এর স্নান এর দৃশ্য দেখতে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছে । তোয়ালে দিয়ে মা গেটুস এর গায়ের লোম এর জল মুছে দিচ্ছেন । এরপর লোম আঁচড়ে পাউডার দিয়ে দিলেন মা ।

পরদিন বাড়ির ভোল পাল্টে গেল । সারা বাড়িতে গেটুস বলডুইন আর আমি ছুটে বেড়াচ্ছি । মামার পড়নে পাট ভাঙা পাজামা আর পাঞ্জাবী । পরিপাটি চেহারা মামার ।

খেতে বসে অদ্ভুত ব্যাপার হল । মা ডাকলেন গেটুস কে ।—গেটুস কাম হিয়ার ।

গেটুস ভয়ে ভয়ে দরজার বাইরে দাঁড়াল । নতুন একটা স্টিলের গামলা তে মা মাংস ভাত সাজিয়ে দিলেন টেবল এর উপরে । সবার থেকে একটু দূরত্বে ই । মা আবার ডাকলেন—গেটুস কাম হিয়ার ।

গেটুস এক লাফে উঠে দাঁড়াল চেয়ারে । তারপর একবার মামার দিকে আবার মায়ের দিকে ফিরে চাইল । তারপর গামলায় মুখ দিল ।

বাবা দরাজ গলায় হাসতে লাগল । মামার ও খুশির হাসি ।
বলডুইন বলল—-তুই ও আমাদের সাথে ?

মামা বলল—-দেখলে তো দিদি গেটুস কেমন ভাল ছেলে । ওর ওপর তুমি রাগ করে থাকতেই পারবে না ।
মা বললেন—-দেখ বিকু , পশু বলে ওকে ঘেন্না করিনি তবে পরিস্কার থাকাটা সব সময়েই দরকার । সত্যি বলতে কি গেটুস তোর মতোই ভাল । তবে গেটুস এর দেখভাল এর জন্য আর একজন কে আনার বন্দোবস্ত করছি । সারাজীবন কি এমন একা একা কাটাবি? এবার তোর বিয়ে করা দরকার ।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *