Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গিল্‌ফয় সাহেবের অদ্ভুত সমুদ্র-যাত্রা || Upendrakishore Ray Chowdhury

গিল্‌ফয় সাহেবের অদ্ভুত সমুদ্র-যাত্রা || Upendrakishore Ray Chowdhury

তোমরা ‘ইউনাইটেড্‌ স্টেট্‌স’ কোথায় জান? পৃথিবীর মানচিত্রের বাঁ ধারে গোলাকাটির নাম নূতন মহাদ্বীপ। নূতন মহাদ্বীপের বড় দেশটা আমেরিকা। আমেরিকার মাঝখানটা খুব সরু, দেখিতে দুটি দেশের মত দেখায়। এই দুইটির উপরেরটির নাম উত্তর আমেরিকা আর নীচেরটির নাম দক্ষিণ আমেরিকা। উত্তর আমেরিকার যত দেশ, ইউনাইটেড্‌ স্টেট্‌স তাহার মধ্যে সকলের বড়।

ইউনাইটেড্‌ স্টেট্‌সে গিলফয় সাহেবের বাড়ি। গিলফয় সাহেব বড় মজার লোক। বয়স তেত্রিশ বৎসর হবে। সাহেব এই বয়েসটা প্রায় জাহাজে থাকিয়াই কাটাইয়াছেন। জাহাজে চড়িয়া কত দেশে গিয়েছেন, কত তামাশা দেখিয়াছেন, কিন্তু একা ছোট নৌকায় প্রশান্ত মহাসাগর পার হন নাই, এই দুঃখে সাহেবের আর মন ঠাণ্ডা হয় না। ছুতোরকে বলিলেন, ‘আমাকে একখানা নৌকা গড়িয়া দাও।’ ছুতোর তাহাই করিল। নৌকা দৈর্ঘ্যে বার হাত, আর উচুতে দুই হাত হইল। পঞ্চাশ মন জিনিস ধরে। নাম রাখিলেন ‘প্যাসিফিক্‌’। সাহেব বলিলেন, ‘জল-বিহার করিয়া করিয়া অষ্ট্রেলিয়া যাইব।’ অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা হইতে প্রায় ছ’হাজার মাইল দূরে।

পাঁচ মাসের আন্দাজ খাদ্যসমগ্রী নৌকায় উঠান হইল। ১৮৮২ সালের ১৯ এ আগস্ট গিল্‌ফয় সাহেব যাত্রা করিলেন। প্রথম সপ্তাহ বেশ সুখে সুখে গেলেন-তবে নৌকা বড় নিচু বলিয়া জল ছিটিয়া খাবার জিনিসগুলি ভিজাইয়া দিতে লাগিল-এই একটু অসুবিধা। এরপর প্রয় একমাস পর্যন্ত কোনদিন বাতাস পান, কোনদিন বা বাতাস থাকেই না। খাবার জিনিসও বেশি নাই। সাহেব দেখিলেন অত বেশি খাইলে চলিবে না। এক জায়গায় বসিয়া থাকিতে থাকিতে এই সময়ে সাহেবের ক্ষুধা হ্রাস হইয়া উঠিল। বেশি খাইতে পারেন না- সুবিধার বিষয়ই হইল। ভোর হইবার পূর্বে তিন-চার ঘন্টা নিদ্রা যাওয়া অভ্যাস ছিল, কিন্তু নৌকায় নিচে কিসে ঠকঠক করিয়া তাহার বিলক্ষণ ব্যাঘাত জন্মাইতে লাগিল। সাহেব দেখিলেন, হাঙ্গরের তাড়ায় ছোট ছোট মাছ আসিয়া নৌকায় ঠেকে- তাহাতেই এই শব্দ হয়। তিনি হাঙ্গর তাড়াইবার উপায় দেখিতে লাগিলেন। তোমরা অনেকে বোটের মাঝিদের হাতে একরকমের লগি দেখিয়াছে, তাহার মাথায় লোহার একটা বঁড়শির মত লাগান থাকে। সাহেবের এর একটা ছিল। তিনি তাহার অগ্রভাগটা সোজা করিয়া লইলেন। এই অস্ত্র হাতে করিয়া তিনি হাল ধরিতে বসিতেন আর হাঙ্গর কাছে আসিলেই সুট করিয়া ঘা মরিতেন। হাঙ্গারগুলি ভয় পাইল, তিনি যতক্ষণ বাহিরে বসিয়া থাকিতেন ততক্ষণ আর কাছে আসিতে সাহস পাইত না। ঘুমাইবার সময় একটা পিরাণ তাঁহার বসিবার জায়গায় লটকাইয়া রাখিতেন। তাহাতে হাঙ্গরগুলি মনে করিত মানুষটাই বুঝি রহিয়াছে। সুতরাং ঠ্‌ক-ঠকি থামিল।

১০ই নভেম্বর একখানা জাহাজ দেখিতে পাইলেন। তিনি তাহার কাছে গিয়া কিছু খাবার চাহিয়া লইলেন। তাহার পর কয়েকদিন এত বাতাস পাইয়াছিলেন যে একদিন প্রায় একশত ছয় মাইল গিয়াছিলেন। ১৪ই ডিসেম্বর, ঝড় তুফানের দিন; একটা বড় ঢেউ আসিয়া তাঁহার নৌকাখানি উল্টাইয়া ফেলিল। সাহেব সাঁতরিয়া নৌকার পাশ দিয়া গেলেন এবং নোঙরের দড়ি ধরিয়া প্রাণপণে টানাটানি করিতে করিতে এক ঘন্টায় নৌকাটিকে সোজা করিলেন। জল সেঁচিতে গিয়া তিনি বেশি হুড়োহুড়ি করিতে লাগিলেন। নৌকাখানি আবার উল্টাইয়া গেল। দ্বিতীয় বার নৌকা সোজা করিতে তত কষ্ট বোধ হইল না; এবার খুব সাবধান ইহয়া জল সেঁচিলেন। এই গোলমালে সাহেবের ঘড়ি এবং কম্পাস হারাইয়া গেল। কিছু কাল পরে একটা কিরিচ মাছ আসিয়া নৌকায় ছিদ্র করিয়া দিয়া গেল। সাহেব তখন টের পাইলেন না। কিন্তু শেষে যখন দেখিলেন নৌকায় জল উঠিয়া জিনিসপত্র ভাসিতেছে, তখন চেতনা হইল। তাড়াতাড়ি ছিদ্র বন্ধ করিলেন।

নূতন বৎসর আসিল। ৭ই জানুয়ারি একটি পাখি উড়িয়া নৌকায় আসিল, সাহেব তাহা ধরিয়া খাইলেন। ১১ জানুয়ারি আর একটি পাখি ধরিলেন। কখন কখন দই একটি “উড়ক্কু” মাছ নৌকায় আসিয়া পড়িত, তাহাও বিনা আপত্তিতে ভক্ষণ করিতেন। ১৭ তারিখ তাহার হালটি ভাঙিয়া গেল; তিনি আর একটি করিয়া লইলেন। ইহার পর আর-একদি একটি পাখি ধরিয়াছিলেন। কিন্তু ২১ এ হইতে ক্ষুধায় তাহাকে রোগা করিতে লাগিল। নৌকার গায়ে যে-সমস্তক শামুক ছিল, তাহার বড়গুলি চুষিয়া খাইলেন। আর-একদিন গুলি করিয়া একটি পাখি মারিয়াছিলেন; কিন্তু জল হইতে উঠাইতে পারিলেন না। ৩০এ একটি পাখি ধরিয়া দেশলাই-এর আগুনে পোড়াইয়া খাইলেন। তারপর এত দুর্বল ইহয়া পড়িলেন যে নৌকা কোন দিকে যাইতেছে তাহার প্রতি মনোযোগ রহিল। একদিন হেঁট মস্তকে বসিয়া নিজের অবস্থার কথা ভাবিতেছেন, এমন সময় হঠাৎ মাথা তুলিয়া দেখিলেন-একটা জাহাজ। তিনি আনন্দে জাহাজের দিকে যাইতে লাগিলেন। জাহাজের লোকেরাও দেখিতে পাইয়া জাহাজ ফিরাইল। জাহাজে উঠিয়াই কিছু খাবার চাহিলেন। খাবার শীঘ্রই আনা হইল। খাইয়া ঠাণ্ডা হইলে পর সমস্ত লোক তাঁহার ইতিহাস শুনিতে আসিল। তিনি নোট বহিতে সব লিখিয়া রাখিয়াছিলেন। সেই বহি হইতে ইংরেজি পত্রিকায় এই গল্পটি ছাপা হইয়াছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress