চারি দিকে খেলিতেছে মেঘ , বায়ু আসি করিছে চুম্বন -- সীমাহারা নভস্তল দুই বাহু পসারিয়া হৃদয়ে করিছে আলিঙ্গন । অনন্ত এ আকাশের কোলে টলমল মেঘের মাঝার এইখানে বাঁধিয়াছি ঘর তোর তরে কবিতা আমার ! যবে আমি আসিব হেথায় মন্ত্র পড়ি ডাকিব তোমায় । বাতাসে উড়িবে তোর বাস , ছড়ায়ে পড়িবে কেশপাশ , ঈষৎ মেলিয়া আঁখি - পাতা মৃদু হাসি পড়িবে ফুটিয়া -- হৃদয়ের মৃদুল কিরণ অধরেতে পড়িবে লুটিয়া । এলো থেলো কেশপাশ লয়ে বসে বসে , খেলিবি হেথায় , উষার অলক দুলাইয়া সমীরণ যেমন খেলায় । চুমিয়া চুমিয়া ফুটাইব আধোফোটা হাসির কুসুম , মুখ লয়ে বুকের মাঝারে গান গেয়ে পাড়াইব ঘুম । কৌতুকে করিয়া কোলাকুলি আসিবে মেঘের শিশুগুলি , ঘিরিয়া দাঁড়াবে তারা সবে অবাক হইয়া চেয়ে রবে । মেঘ হতে নেমে ধীরে ধীরে আয় লো কবিতা , মোর বামে -- চম্পক - অঙ্গুলি দুটি দিয়ে অন্ধকার ধীরে সরাইয়ে যেমন করিয়া উষা নামে । বায়ু হতে আয় লো কবিতা , আসিয়া বসিবি মোর পাশে -- কে জানে , বনের কোথা হতে ভেসে ভেসে সমীরণস্রোতে সৌরভ যেমন করে আসে । হৃদয়ের অন্তঃপুর হতে বধূ মোর , ধীরে ধীরে আয় -- ভীরু প্রেম যেমন করিয়া ধীরে উঠে হৃদয় ধরিয়া , বঁধুর পায়ের কাছে গিয়ে অমনি মুরছি পড়ে যায় । অথবা শিথিল কলেবরে এসো তুমি , বোসো মোর পাশে -- মরণ যেমন করে আসে , শিশির যেমন করে ঝরে , পশ্চিমের আঁধারসাগরে তারাটি যেমন করে যায় অতি ধীরে মৃদু হেসে সিঁদুর সীমান্তদেশে ? দিবা সে যেমন করে আসে মরিবারে স্বামীর চিতায় পশ্চিমের জ্বলন্ত শিখায় । পরবাসী ক্ষীণ - আয়ু একটি মুমূর্ষু বায়ু শেষ কথা বলিতে বলিতে তখনি যেমন মরে যায় তেমনি , তেমনি করে এসো -- কবিতা রে , বধূটি আমার , দুটি শুধু পড়িবে নিশ্বাস , দুটি শুধু বাহিরিবে বাণী , বাহু দুটি হৃদয়ে জড়ায়ে মরমে রাখিব মুখখানি ।