গল্প হলেও সত্যি
চৈতালী দেবীকে আজ বেশ অনেকটাই নিশ্চিত দেখাচ্ছে। গত কয়দিন ধরে যা ঝড় বয়ে গেছে ওনার ওপর দিয়ে,আজ তার সমাপ্তি ঘটল।
আজ ওনার ছোট ছেলে রূপমের বিয়ে। ছোট ছেলেকে এই বিয়েতে রাজি করাতে ওনাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
আসলে রাখী,যার সঙ্গে রূপমের বিয়ে হচ্ছে সে আর কেউ নয়, চৈতালী দেবী নিজের মেয়ের মতোই বড় করেছেন রাখীকে, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। রূপম আর রাখী ভাই বোনের মতোই বড় হয়েছে একই বাড়িতে একই মায়ের আদর যত্নে। তাই কখনো ওদের মধ্যে অন্য কোনো চিন্তা মাথায় বাসা বাঁধেনি।একান্ত নিরুপায় হয়েই তিনি এই বিয়েটা দিতে বাধ্য হন।
রাখী চৈতালী দেবীর কেউ নয়, তবু অনেককিছু। আসলে চৈতালী দেবী, ওনার স্বামী বিকাশ বাবু ( বিকাশ লাহিড়ী) ও তাদের দুই ছেলে প্রিতম আর রূপম দিল্লিতে থাকতেন,বিকাশ বাবুর চাকরির কারণে। ওনারা যে ফ্লাটে থাকতেন তার পাশের ফ্লাটটাতে থাকতেন দিব্যেন্দু বাবু (দিব্যেন্দু মিত্র), ওনার স্ত্রী ও ওনার একমাত্র মেয়ে রাখীকে নিয়ে। পাশাপাশি দুটি পরিবারের ভালো সম্পর্ক ছিল। রাখী তখন বছর পাঁচেক হবে হঠাৎই একটা অ্যাক্সিডেন্ট এ দিব্যেন্দু বাবু আর ওনার স্ত্রী মারা যায়। রাখী একেবারে অনাথ হয়ে যায়। দিব্যেন্দু বাবুর কোনো আত্মীয় পরিজন আছে কি না চৈতালী দেবীদের জানা ছিল না। তাই ছোট্ট রাখীকে অনাথ আশ্রম বা অন্য কোথাও দিতে সাহস পেলেন না চৈতালী দেবী ও ওনার স্বামী বিকাশ বাবুর বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছে ছোট্ট রাখীর ওপর। তাই ওনারা রাখীকে নিজের মেয়ের মতো করে বড় করেন । দুই ছেলেকে সেভাবে আদর যত্নে বড় করেছেন,রাখীকেও সেই ভাবে বড় করেছেন। রাখীকে কখনো বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দেননি ওনারা।
আজ পনের বছর পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে।বিকাশ বাবু গত হয়েছেন চার বছর হলো। দুবছর আগে বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছেন।তার আলাদা একটা সংসার হয়েছে। ছোট ছেলে সবে একটা ছোট খাটো একটা চাকরি পেয়েছে।সবই ঠিকঠাক চলছিল। সমস্যা হলো রাখীর বিয়ে দেওয়া নিয়ে। আর্থিক স্বচ্ছলতা আর আগের মতো নেই।বড় ছেলের সংসার আছে তাকে বিয়ের খরচের কথা বলা যায় না, আবার ছোট ছেলেকেও চাপ দেওয়া যায় না। তাই ঠিক করতে পারছিলেন না কিভাবে রাখীর বিয়ে দেবেন। অবশেষে এক বান্ধবীর পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেন নিজের ছোট ছেলের সঙ্গে রাখীর বিয়ে দেবেন। সমস্যা বাঁধল এই খানে। রূপম ও রাখী কেউই রাজি হচ্ছিল না এই বিয়েটা করতে। অনেক বুঝিয়ে, অনেক ঝড় ঝাপটা সামলিয়ে তবে রাজি করাতে পেরেছেন ওদের বিয়ের জন্য। তাই আজ চৈতালী দেবী অনেকটা নিশ্চিত ও খুশিও বটে।যাকে এতদিন মেয়ের মতো করে বড় করেছেন,সে আজ তার ছেলের বউ।