Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গর্বিত সুদাম || Suchandra Bose

গর্বিত সুদাম || Suchandra Bose

গর্বিত সুদাম

রোহিণীর বাবা সুদাম দরিদ্র কৃষক । উৎকৃষ্ট ফসল ফলনের জন্য ছিলেন চিন্তায়। ডিজিটাল ইন্ডিয়া হলেও নিরক্ষরতার কারণে কৃষি কাজই গ্রামের মানুষের সম্বল। তাই তিনি কৃষি নির্ভর ছিলেন। সরকার কৃষকদের জন্য কিছু নতুন প্রকল্প চালু করে।সুদাম এই স্কিমগুলির সুবিধা পেতেই সরকারি অফিসে যেতেন। কিন্তু সেখান থেকে বারবারই তিনি হতাশ হয়ে ফিরে আসতেন। বাবার হতাশা দেখে,মেয়ে রোহিণীরও চিন্তায় দিন কাটে। একদিন বাবার কাছে তার হতাশার কারণ কি জানতে চেয়েছিল। তখনই কালেক্টরের কথা ওঠে। বলেছিলেন, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথিতে কালেক্টরের সই দরকার। এই কারণে তাকে বারবার কালেক্টরী অফিসে যেতে হচ্ছে।কিন্তু তারা ব্যবহার ভালো করে না। কাজটার গুরুত্ব দেয় না।

শৈশবে তার বাবাকে কালেক্টরি অফিসে আক্রান্ত হতে দেখে জানতে চায় এই কালেক্টরি অফিস কি? কালেক্টর হল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের জেলা পর্যায়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। যার কাজ রাজস্ব আদায় ও অসামরিক দায়িত্ব পালন। বর্তমানে এই পদটি চালু আছে সংশোধিত রূপে। আমাদের সকলকেই কোনো না কোনো সময়ে সরকারি অফিসে গিয়ে কোনো নথিতে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রতে কালেক্টরের সই করিয়ে আনতে হয়। কাজটি শেষ করে তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হয়। কিন্তু তারা দরিদ্র জনগণকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে।

রোহিণী তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বড় হয়ে সে এর বিচার করবে। কালেক্টর হয়ে বাবার মতন অসহায় মানুষকে সাহায্য করবে। সে ছাত্রী অবস্থায় স্কুলের শীর্ষ স্থানে থাকত। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে, প্রশাসনিক চাকরিতে যাওয়ার ইচ্ছা হলে ইউপিএসসি এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। পড়াশোনা করে আইএএস হয়। সে বলেছিল যে সরকারি বিদ্যালয়ে ভালো শিক্ষকের অভাব নেই তবে মৌলিক সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। এই ব্যাপারটি রোহিনী শৈশবে উপলব্ধি করেছিল। রোহিণী বলেছে যে আইএএস প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তার বাবা তাকে বুঝিয়ে দিতেন যে তার মেয়ে এখন অনেক বড়, তাকে দায়বদ্ধতা পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরও বলতেন জানিস ‘মা’ ‘সমস্ত ফাইল গুলি যখন তোর টেবিলে আসবে তখন সেই ফাইল সাধারণ কাগজের মত না দেখে রেখে দেওয়া উচিত নয়। কালেক্টরের একটি সই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। সর্বদা মানুষের মঙ্গল সম্পর্কে চিন্তা করে কাজ করতে হবে।

তিনি বলতেন শোন মা রোহিণী, জেলা কালেক্টরের সমস্ত বিবেচনা তারা যদি চান তবে তাদের সাথে কাজ করবে নচেৎ নয়। তিনি এভাবেই রোহিণীকে তার দায়িত্ব পালনের এবং গরীব ও দরিদ্রদের সাহায্য করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
রোহিণী তার বাবার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। রোহিণী তার জেলার প্রথম মহিলা কালেক্টর হয়েছিল। তাই নারীর ক্ষমতায়নের দিকে মনোনিবেশ করে।
সে তার বাবার কথা মাথায় রেখেছে এবং তার দায়িত্বগুলি ভালোভাবে পালন করছে।

গ্রাম উন্নয়ন সংস্থায় অতিরিক্ত কালেক্টর এবং প্রকল্প অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সামাজিক পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে তার কাজ এবং নম্র আচরণের দ্বারা সকলের মন জয় করেছে। বিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সচেতনতা মূলক প্রচার চালাচ্ছে। তার বাবা সরকারি কাজের জন্য যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা আর অন্য কেউ ভোগ করুক তা সে চায় নি। তাই একজন নাগরিক হিসেবে সে তার কাজগুলো নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করছে। তার দায়িত্ব গুলি ভালোভাবে পালন করে সবার জন্য মডেল স্থাপন করেছে। বাবা সুদাম একসময় কালেক্টরি অফিসে সই করানোর জন্য যেতেন, আর হতাশায় বাড়ি ফিরতেন। আজ সেই অফিসে মেয়েকে কালেক্টর হতে দেখে গর্বে জল আসে সুদামের চোখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress