Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গর্বিত বাঙালী || Rana Chatterjee

গর্বিত বাঙালী || Rana Chatterjee

গর্বিত বাঙালী

“দাঁড়া তো, আবার ওই আজেবাজে বই গুলো লুকিয়ে পড়া শুরু করেছিস, তোর হচ্ছে, আজ যতক্ষণ না বইগুলো পুড়াবো শান্তি নেই দেখ আমার!”বিছানা ঝাড়তে গিয়ে রনিতের বালিশের নিচে পুরানো একটা চাঁদমামা পত্রিকা পেয়ে তনয়ার মেজাজটা সকালেই খাপ্পা হয়ে গেল।

“না গো মা, তোমার পায়ে পড়ি, অমন কথা বলো না, মা গো প্লিজ মা, আর করবো না মা দেখো”-ঘুম চোখে ব্রাশ করতে করতে একপ্রকার কাঁদো কাঁদো হয়ে দৌড়ে এলো রণিত।একদম সে ভুলে গেছে বইটা লুকিয়ে রাখতে, রাতে পড়তে পড়তে তো ঘুমিয়ে গেছে! কিছুদিন আগে রণিত, বাবার পুরানো একটা আলমারি থেকে কত্ত বাংলা পত্রিকা, দারুন দারুন বইয়ের সন্ধান পেয়েছে। মা কে বলবে কি, তার আগেই তো মা ওই সব বই গোডাউনে বস্তায় ভরে দিয়েছে। তবু চুপি চুপি সেখানেও চোরের মতো সিঁদ কেটেছে রণিত।এ যেন তার কাছে বিশাল সম্পত্তির সন্ধান।ইতিমধ্যে সে লুকিয়ে পড়ে ফেলেছে, ইশপ কথা, চাঁদের পাহাড়, কিছু কমিকস, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান কিছু দারুন পত্রিকা।

রণিত হলো ক্লাস থ্রি থেকে সবে ফোরে ওঠা তনয়া, সমরদের ছোট ছেলে, ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি দারুন ঝোঁক। রণিত ছোট থেকে পাড়ার আনন্দ মার্গ ইস্কুলে পড়তো।সত্যিকথা বলতে কি আশ্রমিক ভাবধারায় এই ছোট্ট স্কুলটি, বাচ্ছা দের ভিত গড়ার জন্য আদর্শ। রণিতের মধ্যে এই যে ভদ্রতা, নম্রতা, বড়দের সম্মান করার মানসিকতা, তা আসার পেছনে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকার বিরাট অবদান।

কিন্তু ওই যে বলে না মানুষ স্ট্যাটাস রাখতে মরিয়া, তাই এত বড় নতুন বাংলোতে আসার পর থেকে মা, বাবা পরিচয় পর্বে ছেলের স্কুলের নাম বলতে কুণ্ঠা বোধ করতো। প্রথমত বাংলা মাধ্যম, তার ওপর ছোট একটা পুরানো স্কুল বাড়ি। অন্যদিকে তাদের বড় মেয়ে রঞ্জিতা, রনিতের দিদি পড়ছে শহরের নামকরা সেন্ট পলসে, সে নিয়ে তনয়ার গর্বের শেষ নেই। রঞ্জিতা স্কুলে, ক্লাসের পরীক্ষার মেধা তালিকায় কোনো পজিশনই পায় না, অত্যন্ত সাধারণ মেধার সে, কিন্তু কাঁধ ঝাঁকিয়ে গড় গড় করে ইংরেজি টা বলে যখন, সবার সামনে মা বাবার বুক গর্বে ভরে ওঠে।তাই এই বছর ওরা, একপ্রকার মরণ পণ প্রতিজ্ঞা করেই নিয়েছিল, যেমন করে হোক রণিত কে বড়ো স্কুলে ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করাবেই।দুই লাখ দিয়ে স্কুল কতৃপক্ষ কে হাত পায়ে ধরে, খুশি করে তনয়া, সমর সত্যি বলতে কি, যেন পাঁচশ গ্রাম স্ট্যাটাস কিনেছে।

কিন্তু নতুন স্কুলে ভর্তির পর থেকে ভীষণ মনমরা ছেলেটা।আগের স্কুলের সহপাঠী, কমল, সুব্রত, দেবাশীষকে, প্রধান শিক্ষক মহাশয়, দিদি মনিদের জন্য মন হু হ করে।ওই টুকু বাচ্ছা তবু মা, বাবাকে অনেক অনুরোধ করেছিল, দিদিকে সুন্দর সুন্দর স্টিকার, দিয়ে পটিয়ে তার হয়ে একটু মা বাবাকে বোঝানোর অনুরোধ সব খড়কুটোর মতো উড়ে যায়। সমর ছেলে কে বুঝিয়েছিল, বাংলা স্কুল ভবিষ্যৎ নয়, ওসব স্কুল গরুর গোয়াল, কোনো ভালো ছেলে পড়ে না।যখন রণিত প্রশ্ন তুলেছিল, বাবা তুমি তো বাংলা স্কুলের শিক্ষক, ভীষণ রেগে ছেলের পিঠের ছাল ছাড়ানোর উপক্রম ।রনিতের মনে পড়ে সেদিন রাতে মা তাকে খেতেও দেয় নি। দিদি ভাইকে বুঝিয়েছে, রণিতও বুঝেছে তার ওই টুকু ছোট মাথায়, যে আগামীতে সর্ব ভারতীয় পরীক্ষায় ইংরেজি ছাড়া সত্যিই গতি নেই, কিন্তু তাবলে ঘরে থাকা বাংলা বই গুলোও পড়লে সবাই এভাবে খাপ্পা হয়ে যাবে, এটা খুব পীড়া দিচ্ছে তার শিশু মনে।তত সে লুকিয়ে একটার পর একটা বই শেষ করে কি যে আনন্দ পাচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারবে না।

আজ ভাষা দিবস, মানুষের বাংলা ভাষা নিয়ে আবেগের শেষ নেই, কিন্তু বাংলা পড়তে, বলতে, নিজেকে বাঙালি বলতেও লজ্জা পায় ।সন্ধ্যায় দিদির মোবাইলে ফেসবুক খুলতেই মায়ের ভাষাদিবস নিয়ে স্ট্যাটাস আর তাতে বাবার বিরাট প্রসংশামূলক মন্তব্য দেখে দুই ভাই বোনে অবাক।সত্যিই তো, বড় বড় দেশে এমন ছোট ছোট ঘটনা চলতেই থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *