Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গঙ্গা সাগরে দুদিন || Pradip Acharyya

গঙ্গা সাগরে দুদিন || Pradip Acharyya

এই ভ্রমণ কাহিনী লিখতে বসে প্রথমেই মনে পড়ে কবিগুরুর সেই বিখ্যাত পংক্তিগুলি
” দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা মালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।”
বদনাম হোক বা সুনাম বাঙালির পায়ের নিচে সর্ষে সময় সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে। ক মাস আগেই ঢল নেমেছিল কুম্ভ স্নানের উত্তর প্রদেশ সরকারের হিসাবে প্রায় ৪৫ কোটি পূণ্যার্থী প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করেছিলেন আমি হলফ করে বলতে পারি এর ভেতর বাঙালির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কয়েক কোটি হবেই ।
বাঙালি হুজুগে এটা সত্যিকারের বদনাম ন‌ইলে ঘরের কাছে এমন এক পূণ্য স্নানের তীর্থ ক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও কেন পাপ স্খালনের জন্য এখানে সেখানে ছুটে বেড়ায়?
তীর্থ ক্ষেত্রের বর্ণনা অনুযায়ী বলা হয়েছে ” সব তীর্থ বারবার গঙ্গা সাগর একবার।”
এই কথাটা অবশ্য এখন খুব একটা প্রযোজ্য নয় স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে গঙ্গা সাগর যাতায়াত ছিল বিপদসংকুল যাত্রীরা সাধারণত জলপথে যাতায়াত করতো কিন্তু ওই পথে ছিল জলদস্যুদের ভয় যাত্রীদের কাছ থেকে তারা সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে খুন জখম করতেও দ্বিধা করতো না এছাড়াও সামুদ্রিক ঝড় প্রবল জলস্রোতে নৌকা ডুবিতে বহু পূণ্যার্থীর মৃত্যু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থলপথ ছিল আরও ভয়ংকর বেশিরভাগ অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা বাঘ ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণী ও সরিসৃপ এ পরিপূর্ণ। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ডাকাত ও ঠ্যাঙারে বাহিনীর উপদ্রব ছিল তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাদের হত্যা করতেও দ্বিধা করতো না।
বর্তমানে কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ ও নামখানা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ তৈরি করা হয়েছে এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়ক যোগাযোগ হওয়ায় যাত্রীদের যাতায়াতে আর তেমন অসুবিধা নেই। কাকদ্বীপ ও নামখানা থেকে মুড়ি গঙ্গা নদী পার হতে লঞ্চ ও ভেসেল যাতায়াত করে নদীর ওপার থেকে সাগর সঙ্গমে কপিলমুনির আশ্রম পর্যন্ত বাস ও অন্যান্য যানবাহনের সুব্যবস্থা আছে। রাত্রি বাসের জন্য ছোট বড় হোটেল ও আশ্রম আছে।
যাইহোক এবার যখন মানুষের ঢল কুম্ভ মুখী আমার মনে হলো মকর সংক্রান্তির পূণ্য স্নান এবার গ‌ঙ্গা সাগরেই করে আসি । কারণ এই গ‌ঙ্গা সাগরের এক মহান আখ্যান জড়িয়ে আছে আমাদের ঈশ্বরীয় চেতনায় । পুরাকালে রাজা সগর একশত অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন স্থির করে মন্ত্রপূত ঘোড়াকে সারা পৃথিবী জয় করতে পাঠান ঘোড়াকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সঙ্গে পাঠান তার ষাট হাজার পুত্র। দেবরাজ ইন্দ্র তার সিংহাসন হারানোর ভয়ে সেই মন্ত্রপূত ঘোড়াকে অপহরণ করে রেখে আসেন মহর্ষি কপিল মুনির আশ্রমে। সাগরের ছেলেরা অশ্ব খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে যায় কপিল মুনির আশ্রমে তারা কপিলমুনিকেই চোর ভেবে শাস্তি দিলে কপিল মুনির অভিশাপে ভষ্ম হয়ে যায়। পরে রাজা সগর পুত্রদের শাপমুক্তির উপায় কি জানতে চাইলে মুনি বলেন একমাত্র গঙ্গা স্পর্শে এদের মুক্তি লাভ হতে পারে । এরপর রাজা সগর এবং তার তিন প্রজন্ম গঙ্গাকে মর্তে আনতে অসফল হন শেষ পর্যন্ত রাজা ভগীরথ এই অসম্ভব কাজটি সম্পন্ন করেন সাগর সঙ্গমে কপিলমুনির আশ্রমে গঙ্গাকে নিয়ে এসে তার পিতৃপুরুষদের পাপমোচন করান এই মকর সংক্রান্তির দিন। সারা ভারতে কুম্ভ স্নানের পরেই গঙ্গা সাগর স্নানকে সেরা বিবেচিত করা হয়।
সেই মতো পৌষ সংক্রান্তির আগেরদিন ট্রেন ধরলাম শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ঘন্টা দুয়েকের জার্নি পৌঁছে গেলাম কাকদ্বীপ সেখান থেকে লট এইট। হাজার হাজার মানুষের লাইনে দাঁড়িয়ে মাঝরাতে চড়ে বসলাম ভেসেলে । একঘন্টা সময় লাগলো ওপাড়ে ভেসেল পৌঁছাতে নদীর মাঝ থেকেই ওপাড়ের আলোকজ্জ্বল আকাশ দেখে মন খুশিতে ভরে উঠল। ওপাড়ে পৌঁছে চড়ে বসলাম একটা ভাড়ার টাটা সুমোয়। ২৫ কিঃমিঃ পথ পেরিয়ে আমাদের নামিয়ে দিল সাগরের বালিয়ারীতে ; এরপর হাঁটা ভোর রাতে যখন সাগর সঙ্গমে এসে দাঁড়ালাম সে এক অপার্থিব দৃশ্য। চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ সামনে নীল জলরাশি মাথার উপর সুনীল আকাশ। বৈদ্যুতিক আলোয় যতটা সম্ভব আলোকিত পটভূমি। পৌষ মাস মাথার উপর খোলা আকাশ কিন্তু তেমন শীত লাগছে না। পূণ্য স্নানের সময় সমাগত নেমে গেলাম সাগর সঙ্গমের জলে।
চতুর্দিকে মন্ত্র পাঠ হচ্ছে পাপ নাশিনী গঙ্গায় অবগাহন করে মানুষ স্বর্গলোকে স্থানে পেতে চাইছে। স্নান শেষে এলাম কপিল মুনির মন্দিরে সেখানে রাজা সগর কপিল মুনি মা গঙ্গা এবং ভগীরথের বিগ্রহে পূজো দিয়ে চলে এলাম মন্দির সংলগ্ন অস্থায়ী কুটির গুলিতে জনা ত্রিশেক নাগা সন্নাসী দেখলাম ধূনি জ্বালিয়ে বসে আছেন । এরপর এলাম মেলা চত্বরে অসংখ্য দোকান নানা ধরনের জিনিসের কেনাকাটা চলছে আমি পরোটা আর আলুর দম দিয়ে উদর পূর্তি করে ফিরে চললাম সেই একই পথে কলকাতার উদ্দেশ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *