খুন
খুন হয়েছে একজন হিজরা গুরু মা।
গুরু মার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।পুরুষালি চেহারা ।উনার দলে কুড়ি জনের মতো আছে।সবাইকে তিনি ছোট থেকে দলে নিয়ে কাজ শিখিয়েছেন।এখন সকলের গুরুমা।
এই কুড়িজন পাঁচজন করে এক সাথে কাজে যায়।বিশাল বাড়ি আছে গুরু মায়ের।
গুরু মা একদিন ডাক্তারখানায় গেছে।প্রেসারটা দুর্বল হওয়ায় মাথা ঘুরে পরে যেতে যাবে।দুজন হিজরা ধরে ফেলে।কথায় কথায় গুরুমা জানতে পারে ওদের নাম মুন্না,চুন্নু ,ওরা মুম্বাই থেকে রোজগার করতে এসেছে।
গুরুমা নিজের দলে নিয়ে নেয়।বেটি করে ডাকেন।ওরা এত ভালো নাচ জানে,গুরুমার আয় বাড়তে থাকে।দলের একজন মেয়ে কালি খুব হিংসুটে।নুতনদের সহ্য করতে পারে না।
বছর খানেকের মধ্যে মুন্না,চুন্নু গুরুমার দলের সবার সাথে মিলে মিশে গেছে।সন্ধ্যায় সবাই গুরু মাকে নাচ গান শোনায়।
হঠাৎ গুরু মা একদিন খুন হয়।বাইশ জন হিজরাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।।কিছুতেই বুঝতে পারে না এদের মধ্যে কে মেরেছে!!
একদল নুতন দু জনকে আবার কেউ কালি বলে হিজরে মেয়েটাকে সন্দেহ করে।
কালি নুতনদের একদম সহ্য করতে পারে না।সবার ঘর সার্চ করে পুলিশ।কিছুই পায় না।
দিন যায় কেউ ধরাপড়ে না।একদিন কালি ভাঙ জোগাড় করে সবার লস্যিতে মিশিয়ে দেয়।সবাই পাগলের মতো নাচ শুরু করে।নিজে খাইনি।তাহলে নুতনরা খুনী প্রমাণ করবে কি করে??
সবাই লস্যি খেয়ে উল্টোপাল্টা বকতে থাকে।নতুন দুজন ও অজান্তে ঐ লস্যি খায়।আস্তে আস্তে সবাই জামা কাপড় খুলে খিলখিল করে হাসতে থাকে।নাচানাচি করে।নুতন দুইজন ও খুলে পেলে বস্ত্র।কালি পুলিশকে খবর দেয়।পুলিশ দেখে একজন মেয়ে ও একজন ছেলে।
পরে পুলিশের চাপে বলে ওরা নাকি স্বামী স্ত্রী।এতদিন হিজরাদের অভিনয় করছিল।এত সুন্দর অভিনয় কেউ বুঝতে পারেনি।আস্তে আস্তে প্রচুর টাকা গুরুমার থেকে সরাচ্ছিল।পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
ওদের বক্তব্য ওরা পালিয়ে মুম্বাই এসে বিয়ে করে।দুজনে গ্রাজুয়েট।চাকরি পাচ্ছিল না।পুলিশ বলে তাহলে হিজরাদের কষ্টের জীবন,ওদের মন নিয়ে খেলবে??
ওদের দলে ভিড়ে অর্থ সংগ্রহ করবে?
ওরা বলে ওরা কোথাও চাকরি পাচ্ছিল না।
কি করবে পেট চালাতে হবে।তাই ওরা এই বৃত্তি নিয়েছিল।
স্বামী ও স্ত্রী দুজন বলে উকিল সাহেব আমরা গুরুমাকে মারে নি।খুন আমরা করি নি।কোনো টাকা ও সরায়নি। কালির এসব ষড়যন্ত্র।ও আমাদের সহ্য করতে পারত না।
পুলিশ কিছুটা বিশ্বাস করে।পুলিশ এবার সব গহনার দোকানে যায় ,সবার ছবি দেখায়।এদের মধ্যে কেউ বেচতে এসেছিল কিনা।সবাই চেনে না বলে।
পুলিশ এবার ভাঙ খাওয়ায় সবাইকে।কালিকে বেশী করে খাওয়ান।
প্রথমবার কালি খায় নি কারণ সে পরীক্ষা করতে নেমেছিল।
হঠাৎ কালি খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলে গুরুমাকে মেরেছি আমি,বেশ করেছি।সবাইকে মারব। কাউকে বাঁচতে দেব না।
পুলিশ ধরে নিয়ে যায় কালিকে।নেশায় মানুষ সত্য কথায় বলে।হত্যার অপরাধে সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
হিজরেরা নিজেদের লড়াই জীবনে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
স্বামী ও স্ত্রীকে হিজরেরা বসিয়ে খাওয়াত,যদি একবার সত্যি কথা বলতো?
হিজরেরা বলে আমাদের গলা কর্কশ হতে পারে কিন্তু আমাদের মন নরম।
হিজরেরা পুলিশের কাছে অনেক অনুনয় করে স্বামী ও স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে বলে।ছয় মাস পরে ওরা মুক্তি পেয়ে গুরুমার বাড়িতে আসে।স্ত্রী সকলের জন্য রান্না করে।আর বর সবার ক্যাশিয়ার হয়।
সবাই ভালো আছে।সামনের মাসে ওদের মেয়ে রুপসার মুখেভাত।তৃতীয় লিঙ্গের বাড়িতে ধুমধাম করে উৎসব। ঐ রুপসার আরো কুড়িটা মা।সকলের আদরের দুলালী।