খুঁজে পাওয়া
শতদল বাবুর মতো ভালো লোক সচরাচর নজরে পড়ে না। সবার আপদে বিপদে সব সময় কাছে গিয়ে দাঁড়ান।নামকরা ধনী ব্যাবসায়ী মানুষ।
যখন যে বিপদে পড়ে , ওনার কাছে আসলে তার দুঃখ মোচন করার চেষ্টা করেন।
বৌ খুব একটা এইসব দানছত্র বিশেষ পছন্দ করে না।যেহেতু বাচ্চা নেই তাই বারণ করেন না।
বারণ করলেও কে কার কথা শোনে। তিনি তো অসৎ কাজ করছেন না!
সবার মানবিকতা না থাকলে চলে!
শতদল একদিন পাড়ার পিকনিকে বেশ মদ খেয়ে উল্টো পাল্টা মনের কথা প্রকাশ করে ফেলেন।যদিও উনি ধূমপান ,মদ খান না। পিকনিকে সবাই ধরল,তাই একটু একটু করে খেয়ে আবেগ আর ধরে রাখতে পারেন নি। এখন যার সঙ্গে ঘর করছেন প্রথম বৌয়ের মাসতুতো বোন। প্রথম বৌয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে হয়,কিন্তু বৌ নিজের চাকরি নিয়ে এতটা ব্যস্ত ছিল,বরকে সময় দিতেন না।ব্যস এই মাসতুতো শালির সাথে প্রেম হয়ে যায়।
সবাই জিজ্ঞেস করে
তা র প র!
একবার উত্তরাঞ্চলে বেড়াতে গেছিলাম।বৌটা ভেসে গেল। তখন বৌয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল।বৌ কি একটা খুশির খবর দেবে বলেছিল।সেটা অফিস প্রোমোশন না বাচ্চা হবে, সেটা জানা হয় নি।কোথা থেকে হুড়মুড়িয়ে জল এসে বৌটা ভেসে গেছিল।ছয় মাস অপেক্ষা করে তারপর নীলিমাকে বিয়ে করি,তা বহু বছর হয়ে গেল। আমাদের বাচ্চা ও হয় নি। তোমাদের বৌদিকে আর খুঁজি নি। তখন তো নতুন জীবন।কি হবে অতীত ভেবে। হয়তো পাপ করেছি! ভেবেছিলাম হয়তো ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্য করে। সবাই তো ওনার টাকা মদ গিলছেন, ওনার বিরুদ্ধে কি কথা বলতে পারেন!
সবাই এক সংগে বলে না না বৌদি তাহলে ফিরে আসতেন।ওত ভালো চাকরি করতেন!
শতদল বলেন “তবু মনে হয়” ,ও ভেসে ভেসে কোথাও আছে!হয়ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে।
আমার বৌ কোনো দিন খোঁজ করার জন্য বলে নি। একবার দিদির জন্য হা হুতাশ ও করে নি। বরঞ্চ বলে যে চলে গেছে তার কথা ভেবে কাজ কি!
তোমরা আমাকে একটু সাহায্য করবে ভায়েরা!
সবাই বলে বলুন দাদা,মন খুলে বলুন।
কাল কর্পোরেশন অফিসে এ গিয়ে চমকে গেছি! অবিকল রূপা ,প্রথম স্ত্রী।
সবাই একসাথে বলে এত বছর পর চিনতে পারলেন। উনি তো পঞ্চাশ হবেন।হ্যাঁ ঠিক বলেছ তোমরা, আমি ও রূপা সমবয়সী ছিলাম।ওই পঞ্চাশ হবে।
কিন্তু এই মহিলার বাইশ -তেইশ হবে, হুবহু রূপা।
সবাই বলে ওঠে আপনার মেয়ে নয়তো!
কি করে সম্ভব,রূপা তো ছিল না।তার মেয়ে আসবে কি করে!
সবাই বলে ওই কি একটা গোপন কথা আপনাকে বলবে বলেছিল!
তারপর পিকনিক হৈচৈ শেষ।যে যার বাড়ি।
শতদল পরের দিন কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
What is your name please ?
মেয়েটি বলে শতরূপা সান্যাল।
শতদলের হাত পা কাঁপতে থাকে।
বাবার নাম শতদল ও মায়ের নাম রূপা বুঝি!
মেয়েটি হেসে বলে
Absolutely right uncle,you are perfectly right…
ব্যাস কাকু আজ ব্যস্ত আছি ,কাজ করি।
শতদল অন্যমনষ্ক বলে oh sure!
তোমার কখন ছুটি ,একটু কথা আছে। আমি অপেক্ষা করছি।
না স্যার আমি অফিসার হতে পারি, কিন্তু আলাদা কথা বলি না।
শতদল স্নান খাওয়া ভুলে আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ঠিক বিকাল ছটায় , শতরূপা বার হয় অফিস থেকে।
শতদল বলে এই যে মা, সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছি।
আরে আপনাকে বললাম না, আমি আলাদা করে কারর সম্পর্কে কথা বলি না।
না না তোমাকে শুনতে হবে না, শুধু আমার রূপার ছবি দেখো।
আরে এ তো অবিকল আমি।
না তুমি কেন!ইনি তোমার মা।
ও really…
Are you Satadal Sanyal!
Yes my daughter…
তারপর বহুক্ষণ কেটে যায়। সারাদিন না খাওয়া , কতক্ষণ রাস্তায় পড়ে ছিল জানা নেই।চোখ খুলে দেখে শতদল একা। তাহলে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলেছিল।লজ্জায় কষ্টে মাটি থেকে উঠে বসে। কতকজন ছুটে এসে বলে, অপেক্ষা করুন, আমাদের দিদি আসছেন!
শতদল বলে দিদি!
দূর থেকে এক মহিলা ও তার মেয়ে হেঁটে আসছেন।
শতরূপা বলে এনার খোঁজে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
হ্যাঁ মা , তুমি রূপাকে কোথায় পেলে!
মেয়েটি প্রণাম করে বলে , বাবা আমি তোমার মেয়ে। আমি তো আমার পরিচয় খুঁজতে কলিকাতায় এসেছি। আমার মায়ের হাতে , নিজের নাম,বরের নাম হাতে উল্কি করানো ছিল। তাই তো জানি আমার বাবার নাম ও মায়ের নাম।
আগের সব স্মৃতি ভুলে গেছেন।
জানিস মা এই উল্কি বেড়াতে যাবার আগে করেছিল।আমাকে বলেছিল রূপা লিখতে,ও তাহলে শতদল লিখবে। আমি রাজি হয় নি ।তখন নিজের হাতে এইসব করায়।ভেসে যাবার দিন গায়ে ভীষণ জ্বর ছিল।
মেয়ে বৌকে নিয়ে শতদল নিজের বাড়িতে আসে। শতরূপা বলে ,আমি আশ্রমে মানুষ হয়েছি । এতদিনে বাড়ি , পরিচয় পেলাম।
দুই বোনের জড়িয়ে কি কান্না!
রূপা আজ নাকি প্রথম কথা বলেছে।
রূপার স্মৃতি কিছু কিছু ফিরছে।
শতরূপা বাবা মা ,মাসী পেয়ে খুব খুশি। এখন সবাই এক বাড়িতে থাকে।
শতদল মেয়ে পেয়ে খুব খুশি।
আশ্রমের গুরুজী শতরূপাকে বলেন ভাগ্যিস তোর নাম আন্দাজে বাবা ও মার নামানুসারে দিয়েছিলাম।
আজ পরিবারের মিলন হলো এতদিনে….।