কোয়ারানটাইন” ও কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বর্তমানে কয়েকটি শব্দেরও প্রাদুর্ভাব হয়েছে মহামারী কভিড-19 প্রসঙ্গে– তার মধ্যে ” Quarantine “এবং “lockdown” প্রধান। Quarantine মানে এখন প্রকৃত অর্থে বোঝান হয় isolation , কোন সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ থেকে সমাজের অন্যান্যদের রক্ষার্থে।
কিন্তু “Quarantine ” কথাটি প্রথম এসেছে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন “প্লেগ” রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল । রোগীদের নিয়ে এক জাহাজ ইয়োরোপের এক বন্দরে আটকে ছিল চল্লিশ দিন, শুধুমাত্র isolationএর জন্য। চল্লিশ দিন মানে—quarantine আসলে quarantine হলো ইটালিয়ান ভাষায় চল্লিশ দিন । এবং এই কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “quadriginta ” মানে চল্লিশ । পরবর্তীতে এই quarantine ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, সংক্রমণের চরিত্র বুঝে, যে কয়দিনই হোক । বর্তমানে কভিড -19 এর জন্য যেমন সময় সীমা চৌদ্দদিন ।
প্লেগ্ রোগ অনেক বারই এসেছে মহামারীরূপে। bubonic plague 1897 সালে ভয়াবহ আকারে মহামারী হয়েছিল ভারতে। সেই সময়ে বার্মা দেশ সরকার কড়াকড়ি নিয়ম করেছিল ভারতীয় জাহাজে আসা যাত্রিদের উপর। তাদেরকে জাহাজ থেকে নামিয়ে শহরে ঢুকতে না দিয়ে সোজা এক নির্জন স্থানে কয়েকটি ঘরে আবদ্ধ রাখত, টানা দশ দিন।
কিন্তু এর মধ্যে দুঃখের বিষয়, এ বিধি আরোপ করা হতো গরীব কুলিদের প্রতি যারা দশ টাকার বেশি জাহাজ ভাড়া দিতে পারতেন না। তাদের সে দশ দিন অত্যন্ত নিম্নমানের পরিস্থিতির মাঝে দিনযাপন করতে হতো।
বাকিদের অবশ্যই ছাড় দেওয়া হতো কোন না কোন আত্মীয় স্বজনের সুপারিশে, “home quarantine” এ ।
বাংলা সাহিত্যে বোধকরি লেখক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ই প্রথম “Quarantine” কথাটি ব্যবহার করেন , ও বিবৃতি দেন।
শ্রীকান্ত উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ অধ্যায়ে, এ বিষয় উল্লিখিত আছে ।
উপন্যাসের নায়ক শ্রীকান্ত যদিও ঐ কুলিদের সাথে থাকবার কথা ছিল না, কারণ তার টিকিট দশ টাকার উর্দ্ধে, তথাপি তিনি ছিলেন, (১)অভয়ার অনুরোধে, আর (২) যেহেতু রোহিণী বাবু অসুস্থ ও রুগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, তাকে পিঠে নিয়ে শ্রীকান্ত জাহাজ থেকে দীর্ঘ পথ চলেছিলেন সেই Quarantine এর জীর্ণ আস্তানার উদ্দেশ্যে।
লেখকের বর্ণনায় ঘটনাবলীর জীবন্ত বিবরণে সব জানা ত যায়ই, আর এ এক ইতিহাসের ও সাহিত্য উপন্যাসে Quarantine এর এক দলিলও বলা যায়। সম্ভবতঃ lockdown প্রচলন হয়ত ছিল না, তাহলে লেখক অবশ্যই উল্লেখ করতেন।
Quarantine মানে বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবে বাস একাকী, সেখানে lockdown অবস্থায় একাকী অন্য কোন সুস্থ মানুষের অবস্থাও তথৈবচ। ব্যক্তি বিশেষের কথা —–সমগ্র দেশের ও দেশবাসীর অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নয়।
তথ্য সূত্র: শ্রীকান্ত, দ্বিতীয় পর্ব, চতুর্থ অধ্যায়। (কাহিনী —প্রকাশিত হয় প্রথম “ভারতবর্ষ” পত্রিকায় ধারাবাহিক রূপে, এবং পরে পুস্তকাকারে ১৯১৮ সালে।)