Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কোথায় সে গেল || Sanjib Chattopadhyay

কোথায় সে গেল || Sanjib Chattopadhyay

কোথায় সে গেল? এখন কোথায় আছে? ভালো আছে তো!

কলেজ জীবনে আমাদের চারজনের একটা দল ছিল। সেই দলের আবার একটা নামও ছিল ঘুরঘুরে। ছুটিছাটা থাকলে আমরা বেরিয়ে পড়তুম। সেই সময়টা ভারতবর্ষের খুব একটা সুন্দর সময়। কয়েক বছর আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ওদিকে নেহরু ছুটছেন, এদিকে বিধান রায়। আমরা সব স্বপ্নে ভাসছি। নতুন ভারত জাগছে। সারা দেশে একটা দলেরই শাসন। গুচ্ছের দলের গদি ধরে টানাটানির খেলা নেই। পকেটে পকেটে আগ্নেয়াস্ত্র ঘোরে না। আর ডি এক্স জড়ানো মানববোমা তৈরি হয়নি। একটি মাত্র উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক হত্যা—মহাত্মা গান্ধির মৃত্যু। নানারকম অসুখেই মানুষ মরত। যে মৃত্যুর নাম ছিল ন্যাচারাল ডেথ। চারপাশে অনেক হাসি খুশি ডাক্তার ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে রোগীরা প্রাণ খুলে দু-চারটে রোগের কথা কইতে পারত সাহস করে। ফিজ মাত্র পাঁচ টাকা, কি দশ টাকা বাড়িতে এলে। চেম্বারে আড়াই টাকা। পেটেন্ট ড্রাগস তেমন ছিল না বললেই চলে। ডিসপেনসারি থেকেই ওষুধ দিতেন কম্পাউন্ডার। মিকশ্চার আর পুরিয়া। কম্পাউন্ডার জিগ্যেস করতেন, শিশি এনেছ—বিরাট দুটো কাচের জারে লাল, নীল তরল। শিশির গায়ে আঠা দিয়ে সেঁটে দিতেন কিরি-কিরি করে কাটা কাগজ। মাত্রার নির্দেশ। এইরকম বলতেন, সকালে এক দাগ, রাতে এক দাগ। আর এই চোদ্দোটা পুরিয়া। এবেলা একটা। ও-বেলা একটা। পয়সার যা কিছু লেনদেন এই কম্পাউন্ডারের সঙ্গে। দ্বিতীয়বার আর যাওয়ার প্রয়োজন হত না। সেকালের রোগবালাই একালের মতো খ্যাঁচড়া ছিল না। কাশতে কাশতে কাশি একদিন সরে পড়ল, কাঁপতে কাঁপতে জ্বর একদিন ছেড়ে গেল। একটাই ঘিনঘিনে ব্যাধি ছিল—টিবি। ধরেছে কী মরেছে! প্রত্যেককেই বসন্তের টিকে নিতে হত। পক্স হবে না, হবে চিকেন পক্স। তার আবার মিষ্টি দিশি নাম—মায়ের দয়া। এই দয়া দিন পনেরো মশারি-বাস। কাছে কেউ আসবে না, দূর থেকে বাক্যালাপ। দুরন্ত সাহস ছিল মানুষের। মানসিক প্রস্তুতি ছিল। মায়ের দয়ায় একজন কাত হলে বাড়িসুদ্ধ সকলেরই হওয়ার সম্ভাবনা। তবে ছাড় আছে। আগেই যে দয়া পেয়েছে সে এই মায়ের দয়া দ্বিতীয়বার আর না-ও পেতে পারে।

চারিদিকে সব বড় বড় সংসার। ভাই-বোনেদের ছড়াছড়ি। ঝগড়া আছে, ভাব-ভালোবাসা আছে। প্রাচুর্য আছে, দারিদ্র আছে তবু সময়টা তখন এইভাবে ভেঙে পড়েনি। প্রচারমাধ্যম এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেনি। আর সকলেরই পায়ের তলায় মাটি ছিল। ভবিষ্যতে কী হবে ভেবে বর্তমানটাকে কেউ ম্যাসাকার করে ফেলত না। দুজন মানুষ এক জায়গায় হলে ফাটাফাটি হাসি শোনা যেত। বড়লোকরা অবশ্য চিরকালই গ্রুমি। ছড়ি হাতে বেড়াতে বেরোলে বোঝা যেত না, ছড়ি বেড়াচ্ছে, না বাবু বেড়াচ্ছে। দুটোই সমান স্টিফ। ওই সময়টায় জমিদারদের খুব দুর্দিন চলছিল। বাড়িও ফাটছে, সম্পর্কেও চিড় ধরেছে। মামলা-মকদ্দমা, পার্টিশান। পুজোর দালানে। দুর্গাপুজোর ঢাক বাজছে কেঁদে কেঁদে। ফরসা, ফরসা মহিলারা পূজাস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঠিকই, তবে পা-ফেলার ভাষায় অনিশ্চয়তা। অ্যালসেশিয়ান কুকুর ছাড়া-কুকুর হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে মনে যেন আঘাত লাগে। বড়লোকরা গরিব হয়ে গেলে সহ্য করা যায় না। খুব দুঃখ হয়। আমাদের ঘুরঘুরে দলে সুন্দর চেহারার এক জমিদারপুত্র ছিল। বিশাল বাড়ি ভেঙে পড়ছে। বাবা, কাকারা মামলা লড়ছে। ছাদের গম্বুজে গোলা পায়রার ঝাঁক। চারিদিকে আগাছা। সুসময়ে। এই বাড়ির বিয়েতে জোড়া সানাই ভৈরবীতে তান তুলত। সন্ধ্যার পর ইমনে কাঁদত। দিস্তে দিস্তে বড়লোক চারপাশে থইথই। আমাদের এই বন্ধুর সুন্দরী বোনকে এক ঝলক দেখে আমাদের দলের এক বন্ধুর মেন্টাল-হসপিট্যাল-এ যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। পরপর কদিন ত্রিফলার জল খাইয়ে মেরামত করা হল। মাঝখান থেকে তার আর বিয়ে করাই হল না। যে মেয়েই দেখানো। হয়, বলে, ওর মতো নয়। সেই মেয়েটি হঠাৎ একদিন অদৃশ্য হয়ে গেল। খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন মনে হয়েছিল, কী আর এমন ব্যাপার! এখন এই বৃদ্ধ বয়সে আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বসে থাকতে থাকতে ভাবি, কোথায় সে গেল! এখন সে কোথায় আছে! ভালো আছে তো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *