Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কোচিং ক্লাস || Maya Chowdhury

কোচিং ক্লাস || Maya Chowdhury

কোচিং ক্লাস

চন্দ্রানী, তনুশ্রী, অর্পিতা, শ্রেয়া, বিশ্বজিৎ আরও অনেক নাম। ছোট বয়সে মায়েদের কাছে শিক্ষা নিয়েছে। এই প্রথম ক্লাস ফাইভ এ জয়াদির কোচিং ক্লাসে ভর্তি হল। একসাথে এতজনকে পড়তে দেখেনি ওরা। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে রোজ বসত। কত পড়া ঠিকমতো মুখস্ত করে দিত। দিন যায়, ক্রমে দিদিমনির সাথে মিশে যায়। নতুন বন্ধু তৈরি হয়। চন্দ্রানী ছিল একটু বেশি মিশুকে। ক্লাসের পড়া ছাড়াও অন্যদেরকে পড়ানোর ইচ্ছা বেশি হতো। তাই বন্ধুদের মাঝে মধ্যে পড়া বুঝিয়ে দিত। তনুশ্রী ছিল পড়াশোনায় খুব ভালো। তবে একটু দুষ্টু বুদ্ধি ছিল। মাঝেমধ্যে শকুন্তলা তনুশ্রী দিদিমনির মায়ের তৈরি আচার লুকিয়ে খেত। ছোট বয়সেই সে ছিল এক অনাবিল আনন্দ। কত ধমক খেত। চন্দ্রানীর মা প্রতিদিন আসতো দুবার করে। দিয়ে যাওয়া আবার নিতে আসা, সঙ্গে দিদার সাথে সুখ-দুঃখের গল্প। পরিবারগুলো একাত্ম হয়ে গেছিল জয়াদির সঙ্গে। সময় মত ওরা পড়াশোনা করে নিত। বেশি সময় থাকলে চলত বসে নানা রকম খেলা, বা গল্প বলা। চন্দ্রানী চক ডাস্টার নিয়ে মাঝেমধ্যে ব্ল্যাকবোর্ডের কিছু নোটিশ জারি করত।জয়াদির আদেশ উপদেশ সবই ব্ল্যাকবোর্ডে জ্বলজ্বল করত। তার সঙ্গে ছিল একটু আলপনা এঁকে দেওয়া। তারপরের দিন আবার ব্ল্যাকবোর্ড মোছা হয়ে যেত। পড়ানো হত অনেকগুলো বিষয়। দেবযানি মাঝেমধ্যে হাসির হাসির কথা বলতো। ছাত্ররা ওদের থেকে দুষ্টু ছিল বেশি। নানা অজুহাতে নান পুরি, ঘুগনি আলুর দম বাধা ছিল ওদের। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওরা পড়ার ঘরটাকে সাজাত। বাড়িতে চলত বিভিন্ন বিষয়ের উপর রিহার্সাল। সারাদুপুর ওরা দৌড়াদৌড়ি করত। পিয়ালী দীপের বন্ধু ছিল। সঙ্গে ছিল শ্রাবণী।ওরা একই পড়া বারবার দিত। এটা সব ক্লাসের মধ্যে মজাদার বিষয় ছিল। জয়া দি ভুলে গেলে, ওরা পুরনো পড়াই আবার পড়া দিয়ে চলে যেত। তারপর নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করত। অনয়, বিদ্যুৎ, অপর্ণা সবাই খুব মজা করত। রাস্তা দিয়ে আসার পথে বিদ্যুৎ কিছু একটা উপলব্ধি করে এসে লিখে ফেলত। সেটা জয়াদিকে পড়ে শোনাতো। ক্রমে ওর লেখার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল।বনানী, শর্মিষ্ঠা, পাপিয়া সবাই আসত জয়াদির কাছে পড়তে। শুধু যে পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না সব অবিভাবকরা জানতেন। একটা ছোট্ট ঘরে ওদের প্রাণগুলো খুশিতে টলমল করে উঠত। একে অপরকে বই-খাতা দিয়ে সাহায্য করতো। কত পড়া বুঝিয়ে দিত যাদের একটু বুঝতে অসুবিধা হতো। বছরে কয়েকটা পিকনিক বাধা ছিল। বাসে করে দূরে যাওয়া, আবার জয়াদির বাড়িতে হই হই করা। সরস্বতী পূজোয় বড় অনুষ্ঠান হতো। পয়লা বৈশাখে স্টেজ তৈরি করে উঠানে অনুষ্ঠান হত। শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয়, প্রতিবেশীরা এই অনাবিল আনন্দের স্বাদ গ্রহণ করতেন। তারাও সঙ্গে সঙ্গে লেগে পড়তেন নানা কাজে। এইভাবে ওদের শৈশব এগিয়ে চলল। এখন ওরা নিজেরাই অভিভাবক। ওদের ছেলেমেয়েদের ওইভাবে বড় করে তুলছে। জয়াদির চুলে পাক ধরেছে, তবে স্মৃতি রোমন্থন করতে সবাই ভালবাসে। আজও ওরা জয়াদির সাথে রয়েছে। মাঝে কয়েকটা বছর নতুনদের জায়গা করে দিয়েছে। হাসি ঠাট্টা, আনন্দ উল্লাসে কেটেছে কত চন্দ্রানী, কত বিদ্যুতের মত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন। ওরা ভালো থাক। স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করুক ওদের সুন্দর মুখ গুলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress