Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

শরৎ বাবার সন্ধ্যা-আহ্নিকের জায়গা করে বসে ছিল, কিন্তু কেদার এখনও ফেরেন নি৷ বাইরের দোরের কাছে খুটখাট শব্দ শুনে শরৎ ডেকে বললে, কে? বাবা নাকি?

শব্দ বন্ধ হয়ে গেল৷ শরৎ চেঁচিয়ে বললে, দেখে আসি আবার কে, বাবার এখনও দেখা নেই—কোথায় গিয়ে বসে আছে তার ঠিক কি? হাড় ভাজাভাজা হয়ে গেল আমার—

দরজার কাছে কেউ কোথাও নেই৷ শরৎ মুখ বাড়িয়ে এদিক ওদিক চেয়ে দেখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির রোয়াকে এসে বসল৷

খানিকটা পরে আবার বাইরের দরজায় খুটখুট শব্দ৷ এবার যেন বেশ একটু জোরে জোরে৷ শরৎ এবার পা টিপে টিপে উঠে গিয়ে বাইরের দরজার খিলটা খুলে ফেলল৷ বাইরে বেশ অন্ধকার, কিন্তু কোথায় কে?

শরতের ভয়-ভয় করতে লাগল৷ তবুও সে খুব সাহসী মেয়ে—এই জঙ্গলের মধ্যে পোড়ো বাড়ির ধ্বংসস্তূপ চারিদিকে, কত কাণ্ড সেখানে ঘটে—একা শরৎ কত রাত্রি পর্যন্ত বাবার ভাত নিয়ে বসে থাকে৷ ভয় করলে চলে না তার৷ মাঝে মাঝে দু-একটা ঘটনাও ঘটে৷

ঘটনা অন্য বেশি কিছু নয়, খুটখাট শব্দ, একা রান্নাঘরে যখন শরৎ রাঁধছে—বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলা, তখন কে কোথায় ফিসফিস করে কি যেন বলে ওঠে—বেশ কি একটা কথা বললে সেটা বোঝা যায়, কিন্তু কথাটা কি, তা বোঝা যায় না৷

এ-সব গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে শরতের৷

শরৎ বাপের বাড়িতেই আছে আজীবন, মধ্যে বিয়ের পর বছর-তিনেক শ্বশুরবাড়ি ছিল৷ শিবনিবাসে ওর শ্বশুরবাড়ি, রানাঘাটের কাছে৷ স্বামী মারা যাওয়ার পর আর সেখানে যায় নি, তার কারণ মায়ের মৃত্যুর পর পিতার সংসারে লোক নেই, কে এই বয়সে তাঁকে দুটি রেঁধে দেয়, কে একটু জল দেয়—এই ভাবনা শরতের সব চেয়ে বড় ভাবনা৷ শরতের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা নিতান্ত খারাপ নয়, অন্তত এখানকার চেয়ে অনেক ভালো—কিন্তু দরিদ্র পিতাকে একা ফেলে রেখে সে সেখানে গিয়ে থাকতে পারে কি করে?

তার শ্বশুর বলে পাঠিয়েছিলেন, এখানে যদি না আস বৌমা, তা হলে ভবিষ্যতে তোমার প্রাপ্য অংশ সম্বন্ধে আমি দায়ী থাকব না৷

শরৎ তার উত্তরে বলে দেয়—আপনার সম্পত্তি আপনি যা খুশি করবেন, আমার কি বলার আছে সে সম্বন্ধে? বাবাকে ফেলে আমার স্বর্গে গিয়েও সুখ হবে না৷

আজ বছর দুই আগে মা মারা যান, এই দু-বছরের মধ্যে শ্বশুর সাতবার লোক পাঠিয়েছিলেন৷

শরৎ জানে, বাবার অবর্তমানে এ-গাঁয়ে তার চলা-চলতির মহা অসুবিধে৷ বাবা সামান্য কিছু খাজনা আদায় করেন, দু-তিন বিঘে ধান করেন,—কষ্টেসৃষ্টে একরকম চলে৷ কিন্তু সে একা থাকলে এ দুটি আয়ের পথও বন্ধ৷ গ্রামে লোক নেই, থাকলেও সবাই নিজেরটা নিয়ে ব্যস্ত, শরতের মুখের দিকে চেয়ে কেউ নিজের কাজের ক্ষতি করে শরতের কাজ করে দেবে—তেমন প্রকৃতির লোক এ গাঁয়ে নেই৷

সব জেনেশুনেও শরৎ এখানেই রয়ে গিয়েছে৷ তার অদৃষ্টে যা ঘটে ঘটুক৷

সন্ধ্যার পর দেড় ঘণ্টা উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে৷

কেদারের সঙ্কোচমিশ্রিত কাশির আওয়াজ এই সময় বাইরের উঠানে পাওয়া গেল৷ শরৎ বললে, কে? বাবা?

—হ্যাঁ—ইয়ে—এই যে আমি—

শরৎ ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল—হ্যাঁ, তুমি যে তা তো বেশ বুঝলাম৷ এত রাত পর্যন্ত এই জঙ্গলের মধ্যে একা মেয়েমানুষ বসে আছি, তা তোমার কি একটু কাণ্ডজ্ঞান নেই—জিজ্ঞেস করি?

কেদার কৈফিয়তের সুরে বলতে গেলেন, তাঁর নিজের কোনো দোষ নেই—তিনি এক ঘণ্টা আগেই আসতেন৷ ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেণ্ট পঞ্চানন বিশ্বাস তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল একটা গুরুতর বিষয়ের পরামর্শের জন্যে—সেখানেই দেরি হয়ে গেল৷

শরৎ বললে—তোমার সঙ্গে কিসের পরামর্শ? ভারি পরামর্শদাতা তুমি কিনা? তোমার সঙ্গে পরামর্শ না করলে তাদের কাজ আটকে গিয়েছে ভারি—

কেদার নীরবে হাত পা ধুয়ে ঘরে উঠলেন, মেয়ের সঙ্গে বেশি তর্কাতর্কি করে ঝগড়া বাধাতে তিনি এখন ইচ্ছুক নন—নির্বিরোধী লোক কেদার৷

মেয়ে আহ্নিকের জায়গা করে বসে আছে দেখে কেদার একটু বিপদে পড়লেন—সেদিকে চেয়ে বললেন—সন্ধ্যে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে এখন আবার—

—তোমার যত সব ছুতো—সন্ধ্যে উৎরে গেলে বুঝি আহ্নিক করে না? তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে, পরকালের কাজটা এখন থেকে করো একটু—

কেদার অপ্রসন্ন মুখে আহ্নিক করতে বসলেন৷

বাইরে থেকে কে ডাকল—ও শরৎদি—আলো ধরো, উঠোনে যে জঙ্গল করে রেখেছ—

হাসতে হাসতে একটি ষোল-সতেরো বছরের শ্যামবর্ণ মেয়ে ঘরে ঢুকল৷ কেদারকে দেখে সঙ্কোচের সঙ্গে গলার সুর নীচু করে শরৎকেই বললে, জ্যাঠামশায় ফিরেছেন কখন? আমি ভাবলাম বুঝি একা—

—বাবার কথা আর বলিস নে ভাই—তিনটের সময় বেরিয়েছিলেন, আর এই এখন এসে আহ্নিক করতে বসলেন—

নবাগত মেয়েটি হাসিহাসি মুখে চুপ করে রইল৷

কেদার দায়সারাগোছের অবস্থায় সন্ধ্যাহ্নিক সাঙ্গ করে বললেন, আছে নাকি কিছু?

—হ্যাঁ, বোসো৷ বাতাবি লেবু খাবে? মিষ্টি লেবু, ফকিরচাঁদের মা দিয়ে গেল আজ ওবেলা৷ আর এই নারকোলের নাড়ু দুটোও দিয়ে গেল, জল খেয়ে নাও—

জলযোগান্তে কেদার একটু ইতস্তত করে বললেন, তা হলে রাজলক্ষ্মী তো আছিস মা, আমি ততক্ষণ একটুখানি—বরং—ওই হরি বাঁড়ুজ্জের ওখান থেকে—

—না, যেতে হবে না বাবা৷ বোসো৷ রাজলক্ষ্মী দুপুর রাত পর্যন্ত আমায় আগলে বসে থাকবার জন্যে এসেছে নাকি? ও এখুনি চলে যাবে—

—আমি যাব আর আসব মা—এই আধ ঘণ্টার মধ্যে—

—না, তোমার আধ ঘণ্টা আমি খুব ভালো জানি—যেতে হবে না, বোসো তুমি৷ তার চেয়ে বসে একটা গল্প করো—

রাজলক্ষ্মীও আবদারের সুরে বললে, হ্যাঁ জ্যাঠামশাই, বলুন না একটা গল্প! আপনার মুখে কতকাল গল্প শুনি নি৷ সেই আগে আগে বলতেন—

অগত্যা কেদারকে বসতে হল৷ খাপছাড়া ভাবে একটা গল্পের খানিকটা বলে তিনি কেমন উসখুস করতে লাগলেন৷ মন ঠিক গল্পে নেই তাঁর, এটা বেশ বোঝা যায়৷ শরৎ বললে—কোথায় যাবে বাবা? বিশ্বেসকাকার ওখানে কি বড্ড বেশি দরকার তোমার?

কেদার উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলেন, বিশেষ জরুরি, দুবার লোক পাঠিয়েছে—জমিজমা নিয়ে একটা গোলমাল বেধেছে, তাই আমার সঙ্গে পরামর্শ করতে চায় কিনা, তাই—

শরৎ মুখে কিছু বললে না৷ পঞ্চানন বিশ্বাস ঘুণ বিষয়ী ব্যক্তি, সে লোক তার বাবার মতো ঘোর অবৈষয়িক লোকের সঙ্গে পরামর্শ করবার আগ্রহে দু-দুবার লোক পাঠিয়েছিল, একথা বিশ্বাস করা শক্ত৷ তা নয়, আসলে বাবা বারুইপাড়ার কৃষ্ণযাত্রার দলের আখড়ায় গিয়ে এখন বেহালা বাজাবেন, এই তাঁর বৈষয়িক কাজ৷ যদি কেউ লোক পাঠিয়ে থাকে, সেখান থেকেই পাঠানো সম্ভব৷

রাজলক্ষ্মী বললে, দিদি, উনি যান তো একটু ঘুরে আসুন—

শরৎ বললে, হ্যাঁ, উনি গেলে রাত এগারোটার কম ফিরবেন না, আমি একা কি করে এখানে বসে থাকি বল তো? থাকবি তুই আমার সঙ্গে—বাবা না আসা পর্যন্ত? বলছিস তো খুব যেতে—কেদার বিব্রত ভাবে বলে উঠলেন, আরে না না, ওর থাকার দরকার হবে না, আমি যাব আর আসব, এই ধর গিয়ে ঘণ্টাখানেক, দেরি কিসের? যাই তা হলে—

শরৎ বললে, ন’টার মধ্যে যদি না ফিরে আস, তবে আমি কি রকম রাগ করি দেখো এখন আজ—রাজলক্ষ্মী এখন রইল, তুমি এলে তবে যাবে—

রাজলক্ষ্মী হাসিমুখে বললে, বেশ ভালোই তো জ্যাঠামশাই, যান আপনি—আমি ততক্ষণ দিদির কাছে থাকি৷ আসবেন তো শীগগিরই—

কেদার আর দ্বিরুক্তি না করে বেরিয়ে গেলেন৷ শরৎ ঠিক বুঝতে পারে নি, কৃষ্ণযাত্রার দলে বেহালা বাজাতে তিনি যাচ্ছিলেন না৷

কেদারের বাড়িটার ধারে ধারে অনেক দূর পর্যন্ত ভাঙা ও পুরনো বাড়ি, সবগুলো ভাঙা নয়, তবে পরিত্যক্ত এবং সাপখোপের বাস হয়ে আছে বর্তমানে৷ চার-পাঁচ রশি কি তা ছাড়িয়েও একটা পুরনো আমলের উঁচু সদর দেউড়ির ভগ্নাবশেষ আজও বর্তমান৷ এটা পার হয়ে দুধারে সেকালের আমলের নিচু লম্বা কুঠুরির সারি, কোনো কালে এর নাম ছিল কাছারিবাড়ি, এখনও সেই নাম চলে আসছে৷ এই অর্ধেকখানি এখন মাটির ভেতর বসে গিয়েছে, দেওয়াল সেকালে হয়তো চুনকাম করা ছিল, এখন শেওলা ছাতা ধরে সবুজ রং দাঁড়িয়েছে৷ কোনো একটা ঘরেও ছাদ নেই—মেঝেতে বনজঙ্গল, শালকাঠের বড় বড় কড়ি আর ভাঙা ইঁটের স্তূপের ওপর বড় গাছ—এমন কি দেউড়ির ঠিক পাশেই এক কাছারিবাড়ির একটা অংশে প্রকাণ্ড এক তিন-পুরুষের বটগাছ—যার বয়স কোনোক্রমেই একশ বছরের কম হবে না, বেশিও হতে পারে৷

কাছারিবাড়ি পার হয়ে আর একটা দেউড়ি—এর নাম নহবৎখানা—বর্তমানে কিছুই অবশিষ্ট নেই—দুটি মাত্র উঁচু থাম ও তাদের মাথায় একটা ফাটা খিলান ছাড়া৷ থামের এক-পাশে এক সারি সিঁড়ির খানিকটা ভেঙে পড়ে গিয়েছে—বিচুটি গাছের জঙ্গলে থাম আর সিঁড়ির ধাপগুলো ঢেকে রেখেছে৷ হঠাৎ কোনো নবাগত লোক এসব জায়গায় সন্ধ্যার পর এলে দস্তুরমতো ভয় হওয়ার কথা, কিন্তু কেদার নির্বিকার ভাবে এসব পার হয়ে গিয়ে বড় খালের মধ্যে নামলেন৷

এই খালটাকে এখানে গড়ের খাল বলে, কিন্তু এতে জল নেই, খানিকটা খুব নাবাল জমি মাত্র, পশ্চিম কোণের এক জায়গায়—সদর দেউড়ি থেকে প্রায় এক মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে—এই খালের খানিকটায় জল আছে—কচুরি পানায় ভর্তি৷

পূর্বদিকের বাহু ধরে এলে গড়ের খালের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত বিরাট ধ্বংসস্তূপ সম্পূর্ণরূপে জঙ্গলাবৃত, দিনমানে বাঘ লুকিয়ে থাকতে পারে৷ এমন ঘন কাঁটা আর বেত বন, বন্যশূকরের ভয়ে সেদিকে বড় কেউ একটা যায় না৷

গড়ের এই দিকটায় বিস্তর বড় বড় ছাতিম গাছ—মানুষের হাতে পোঁতা গাছ নয়, বন্যবৃক্ষের বীজের বিস্তারে উৎপন্ন৷

যেখানে এখনও একটু জল আছে, সেখানকার উঁচু পাড়ে বসে দেখলে এই অংশের দৃশ্য মনে কেমন এক ধরনের ভয়-মিশ্রিত সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে৷ কেদার অবিশ্যি এসবের দিকে নজর না দিয়েই খালের নাবাল জমি পেরিয়ে ওধারে গিয়ে উঠলেন এবং আরও খানিকটা হেঁটে ছিবাস মুদির দোকানে উপস্থিত হলেন৷

ছিবাস মুদির চালাঘরে ঝাঁপ পড়ে গিয়েছে, কারণ এমন গাঁয়ে এই রাতে খরিদ্দার কেউ আসবে না—কিন্তু ঘরের ভেতরে চার-পাঁচজন লোক বসে৷ ছিবাস বললে, আসুন বাবাঠাকুর, আপনার জন্য সব বসে—বলি বলে গেলেন আসচেন, তা দেরি হচ্চে কেন—আসুন বসুন—

এখানে এখন গান-বাজনা হবে—শরৎসুন্দরী ঠিকই আন্দাজ করেছিল, তবে বারুইপাড়ার কৃষ্ণযাত্রার দলে নয়, এই যা তফাৎ৷ সবাই সরে বসে কেদারকে বসবার জায়গা করে দিলে৷ কেদার মহানন্দে বেহালা ধরলেন, তাঁর বেহালা বাজানোর নাম আছে এ গ্রামে৷ অনেকক্ষণ ধরে গান-বাজনা চলল, আরও দু-তিনজন লোক এসে গান-বাজনায় যোগ দিলে—তবে গ্রামের ভদ্রলোক কেউ আসে নি৷

কেদার বেহালায় কসরৎ দেখালেন প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে, তার পর আবার গান শুরু হল৷ রাত আন্দাজ এগারটার সময় কি তারও বেশি যখন, গানের আড্ডা তখন ভাঙল৷

একজন বললে, বাবাঠাকুর, আলো এনেছেন কি, না হয় চলুন আলো ধরে দিয়ে আসি খাল পার করে—

কেদারের হুঁশ হল এতক্ষণ পরে, বাইরে এসে বললেন, তাই তো, চাঁদ অস্ত গেল কখন? বড্ড অন্ধকার দেখছি যে—

পঞ্চমীর চাঁদের অবিশ্যি যতক্ষণ থাকা সাধ্য ততক্ষণ সে বেচারি আকাশে ছিল, তার কোনো কসুর নেই৷ কেদার রাজার জন্যে দুপুররাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা তার সাধ্যাতীত৷

দাসু কুমোর বললে—আমার সঙ্গে যদি কেউ আসে আমি বাবাঠাকুরকে খাল পার করে দিয়ে আসি—

দু-তিনজন যেতে রাজি হল—একা রাত্রে কেউ ওদিকে যেতে রাজি হয় না, গড়ের মধ্যে আছে অনেক রকম গোলমাল৷ এ অঞ্চলে সবাই তা জানে৷ কেদার কিন্তু নির্ভীক লোক, তিনি কোনো লোক সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি নন—দরকার নেই কিছু, তিনি এমনিই বেশ যাবেন৷

তবুও জনচারেক লোক পাঁকাটির মশাল জ্বালিয়ে তাঁকে গড়ের খাল পার করে দিয়ে এল৷ এত রাত হয়েছে কেদার সেটা পূর্বে বুঝতে পারেন নি, তা হলে এত দেরি করতেন না, ছিঃ কাজ বড় খারাপ হয়ে গিয়েছে৷

কেদার বাড়ি ঢুকে দেখলেন মেয়ে খিল বন্ধ করে ঘরের মধ্যে শুয়ে৷ মেয়েকে একা এত রাত পর্যন্ত এই বনে ঘেরা নির্জন বাড়িতে ফেলে বাইরে ছিলেন বলে মনে মনে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলেন, তবে কিনা এ অনুতাপ তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারের মধ্যে দাঁড়িয়ে গিয়েছে৷ আর মজা এই যে, প্রতিরাত্রে ফিরবার সময়েই এই অনুতাপ মনের মধ্যে হঠাৎ আবির্ভূত হয়, এর আসা আর যাওয়া দুই-ই অদ্ভুত ধরনের আকস্মিক, ন্যায়শাস্ত্রের ‘বেগবেগা’ জাতীয় পদার্থ, আসবার সময় যত বেগে আসে, ঠিক তত বেগেই নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়—মনে এতটুকু চিহ্নও রেখে যায় না৷

শরৎ উঠে বাবাকে দোর খুলে দিলে, ভাত বেড়ে খেতে দিলে৷ তার মনে রাগ অভিমান কিছুই নেই—সে জানে এতে কোনো ফলও নেই—বাবা যা করবেন তা ঠিকই করবেন৷ ওঁর ঘাড়ে ভূত আছে, সে-ই ওঁকে চরিয়ে নিয়ে বেড়ায়, উনি কি করবেন?

কিন্তু কেদারের ঘাড়ে সত্যিই ভূত চেপে আছে বটে৷ খাওয়াদাওয়ার পরে অত গভীর রাত্রেও বাবাকে বেহালার লাল খেরোর খোল খুলতে দেখে সে আর কথা না বলে থাকতে পারলে না৷ বাবা এখন আবার বেহালা বাজাতে বসলেই হয়েছে!

কেদার ব্যাপারটাকে সহজ করবার চেষ্টা করলেন৷ বেহালা যে তিনি ঠিক বাজাতে চাইছেন এখন তা নয়, তবে একটা সুর মাথার মধ্যে বড় ঘুরছে—সেইটে একবারটি সামান্য একটু ভেঁজে নিতে চান৷

শরৎ বললে, না বাবা, তোমার ঘুম না আসতে পারে, তোমার খিদে নেই, তেষ্টা নেই, শরীরের ক্লান্তি নেই, ঘুম নেই—সব জয় করে বসে না হয় আছ, কিন্তু আমি এই সারাদিন খাটছি, তুমি এখন রাতদুপুরে বেহালা নিয়ে কোঁকর কোঁকর জুড়ে দিলে কানের কাছে আমার চোখে ঘুম আসবে?

কেদার বললেন, আমি—তা—না হয় দেউড়িতে গিয়ে বসি মা—তুই ঘুমো—

—না, তা হবে না৷ আমি মাথা কুটে মরব, এই এত রাত্রে অন্ধকারে সাপখোপের মধ্যে তুমি এখন জঙ্গলের মধ্যে দেউড়িতে বসে বেহালা বাজাবে? রাখ ওসব—

কেদার অগত্যা বেহালা রেখে দিলেন৷ মেয়েমানুষদের নিয়ে মহা মুশকিল৷ এরা না বোঝে সঙ্গীতের কদর, না বোঝে কিছু৷ তাঁর মাথায় সত্যিই একটা চমৎকার সুর খেলছিল, এই নিস্তব্ধ নির্জন দুপুর রাত্রি, সুরটা বেহাগ—রক্তমাংসের শরীরে এ সময় তারের ওপর ছড় চালানোর প্রবল লোভ সামলানো যায়?

মেয়েমানুষ কি বুঝবে?

কেদার বিকেলবেলা গেঁয়োখালির হাটে যাবার পথে সাধু সেকরার দোকানে একবারটি ঢুকলেন, উদ্দেশ্য তামাক খাওয়াও বটে, অন্য একটি উদ্দেশ্যও ছিল না যে এমন নয়৷ সাধু সেকরার বয়েস হয়েছে, নিজে সে একটি হরিনামের ঝুলি নিয়ে একটা জলচৌকিতে বসে মালাজপ করে, তার বড় ছেলে নন্দ দোকান চালায়৷ ব্রাহ্মণসজ্জনে সাধুর বড় ভক্তি—কেদারকে দেখে সে হাত জোড় করে বললে—আসুন ঠাকুরমশায়, প্রণাম হই—ওরে টুলটা বার করে দে—ব্রাহ্মণের হুঁকোতে জল ফেরা—

কেদার বললেন—তার পর, ভালো আছ সাধু? তোমার কাছে এসেছিলাম একটা কাজে—আমার কিছু টাকার দরকার—তোমার এ বছরের খাজনাটা এই সময়—

সাধুর অবস্থা ভালোই, কিন্তু মুখে মিষ্ট হলেও পয়সাকড়ি সম্বন্ধে সে বেজায় হুঁশিয়ার৷ কেদারকে যা হয় কিছু বুঝিয়ে দেওয়া কঠিন নয় তা সে বিলক্ষণ জানে—সে বিনীত ভাবে হাত জোড় করে বললে, বড্ড কষ্ট যাচ্ছে ঠাকুরমশায়, ব্যবসার অবস্থা যে কি যাচ্ছে, সোনার দর এই উঠচে এই নামচে, সোনার দর না জোয়ারের জল! আর চলে না ঠাকুরমশাই—এই সময়টা একটু রয়ে বসে নিতে হচ্ছে—আপনি রাজা লোক, আপনার খেয়েই মানুষ—

কেদার চক্ষুলজ্জায় পড়ে আর খাজনা চাইতে পারলেন না৷ হাটে ঢুকে আরও দু-একজনের কাছে প্রাপ্য খাজনা চাইলেন—সকলেই তাদের দুঃখের এমন বিস্তারিত ফর্দ দাখিল করলে যে কেদার তাদের কাছেও জোর করে কিছু বলতেই পারলেন না৷

হাটের জিনিসপত্রও সুতরাং বেশি কিছু কেনা হল না—হাতে পয়সাকড়ি বিশেষ নেই৷

সতীশ কলুর দোকানে ধারে তেল নিয়েছিলেন ওমাসে—এখনও একটি পয়সা শোধ দিতে পারেন নি, অথচ সর্ষের তেল না নিয়ে গেলে রান্না হবার উপায় নেই, মেয়ে বলে দিয়েছে৷

সতীশ বললে, আসুন দাদাঠাকুর, তেল দেব নাকি?

সতীশের দোকানে কোণের দিকে যে ঘাপটি মেরে বৃদ্ধ জগন্নাথ চাটুজ্জে বসেছিলেন, তা প্রথমটা কেদার দেখতে পান নি, এখন মুশকিল বাধল—অথচ না বললেও নয়! জগন্নাথ উঠলে না হয় বলবেন এখন৷ জগন্নাথ চাটুজ্জে হেঁকে বললেন, ওহে কেদার রাজা, এস এস, এদিকে এস ভায়া—তামাক খাও—

কেদার বললেন, জগন্নাথ দাদা যে! ভালো সব?

—ভালো আর কই, আবার শুনেছ তো ওপাড়ার নীলমণি গোসাঁইয়ের বাড়ির ব্যাপার? শোন নি? তা শুনবে আর কোথা থেকে—শুধু মাছ ধরা নিয়ে আছ বই তো নয়— সরে এস ইদিকে বলি—ঘোর কলি হে ভায়া ঘোর কলি, জাতপাত আর রইল না গাঁয়ের বামুনের—

জগন্নাথ চাটুজ্জের কথা শোনবার কোনো আগ্রহ ছিল না কেদারের—পরের বাড়ির কুৎসা ছাড়া তিনি থাকেন না৷ কিন্তু এঁকে এখান থেকে সরাবার উপায় না দেখলে তো তেল নেওয়া হয় না৷ কেদার অগত্যা জগন্নাথের কাছে গেলেন৷ জগন্নাথ গলার সুর নিচু করে বললেন, কাল রাত্তিরে নীলু গোসাঁইয়ের মেয়েটা আফিম খেয়েছিল, জানো না?

কথাটা প্রথম থেকেই কেদারের ভালো লাগল না৷ তবুও তিনি বললেন, আফিম? কেন?

জগন্নাথ চোখ মুখ ঘুরিয়ে হাসি-হাসি মুখে বললেন, আরে, এর আবার কেন কি কেদার রাজা! বিধবা মেয়ে, সোমত্ত মেয়ে, বাপেরবাড়ি পড়ে থাকে—কোনো ঘটনা-টটনা ঘটে থাকবে! কথায় বলে—

কেদারের নিজের বাড়িতেও ওই বয়সের বিধবা মেয়ে, গল্প শুনবেন কি, জগন্নাথ চাটুজ্জের কথার গূঢ় ইঙ্গিত, শ্লেষ ও ব্যঞ্জনা শুনে কেদার ভেতরে ভেতরে ভয়ে ও সঙ্কোচে আড়ষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করলেন৷ তেল কিনতে এসে এমন বিপদে পড়বেন জানলে তিনি না হয় আজ তৈলবিহীন রান্নাই খেতেন!

জগন্নাথ চাটুজ্জে বললেন, আমি শুনলাম কি করে বলি শোনো তবে৷ কাল আমি ক্ষেত্র ডাক্তারের বাড়িতে ডাক্তারের স্ত্রীর ব্রত উদযাপনে নেমন্তন্ন খেতে যাই, তাদের পরিবেশনের লোক হয় না, আমি আমার খাওয়ার পরে নিজে পরিবেশন করতে লাগলুম৷ রাত প্রায় বারোটা হয়ে গেল৷ তখন ক্ষেত্র ডাক্তার বললে, এখানেই আমার বাইরের ঘরে বিছানা পেতে দিক, এখানেই শুয়ে থাকুন—এত রাত্তিরে আর বাড়ি যায় না—

শুয়ে আছি, রাত প্রায় তিনটের সময় নীলু গোসাঁইয়ের বড় ছেলে ধীরেন এসে ডাক্তারকে ডাকলে৷ আমি জেগে আছি, সব শুনছি শুয়ে শুয়ে৷ ধীরেন কাঁদকাঁদ হয়ে বললে, শীগগির যেতে হবে ক্ষেত্রবাবু, মীনা আফিম খেয়েছে—

ডাক্তার বললে, কতক্ষণ খেয়েছে?

ধীরেন বললে, কখন যে খেয়েছিল তা তো জানা যায় না৷ নিজের ঘরে খিল দিয়ে শুয়েছিল, এখন গোঙানি ও কাতরানির শব্দ শুনে সবাই গিয়ে দেখে, এই ব্যাপার৷

সেই রাত্রে ক্ষেত্র ডাক্তার ছুটে যায়৷ কত করে তখন বাঁচায়৷ তা ওরা ভাবে যে কাক-পক্ষীতে বুঝি টের পেলে না, কিন্তু আমি যে ক্ষেত্র ডাক্তারের বাইরের ঘরে শুয়ে তা তো কেউ জানে না৷ সোমত্ত বিধবা মেয়ে মীনা, কি জানি ভেতরের ব্যাপারটা কি—কাল পড়েছে খারাপ কিনা—বলে আগুন আর ঘি—আরে উঠলে যে, বোসো!

বারে বারে বিধবা মেয়ের উল্লেখ কেদারের ভালো লাগছিল না—তা ছাড়া জগন্নাথ চাটুজ্জে কি ভেবে কি কথা বলছে তা কেউ বলতে পারে না৷ লোক সুবিধের নয় আদৌ৷ সর্ষের তেলের মায়া ছেড়ে দিয়েই কেদার উঠে পড়লেন, জগন্নাথ চাটুজ্জের সামনে তিনি ধারের কথা বলতে পারবেন না সতীশকে৷

জগন্নাথ চাটুজ্জে বললেন, তা হ’লে নিতান্তই উঠলে কেদার রাজা, বাড়ি থাকো কখন হে—একবার তোমাদের বাড়িতে যাব যে—ভাবি যাব, কিন্তু গড়ের খাল পার হতে ভয় হয়, আর যে বনজঙ্গল গড়ের দিকটাতে! তা ছাড়া আবার সেই তিনি আছেন—

জগন্নাথ চাটুজ্জে হাত জোড় করে কার উদ্দেশে দু-তিনবার প্রণাম করলেন৷

কেদার বলে উঠলেন, আরে ও কখনো কেউ দেখে নি, এই তো শরৎ রোজ সন্ধের সময় উত্তর দেউলে পিদ্দিম দিতে যায়—একাই তো যায়—কিছু তো কখনো কই—

ঝোঁকের মাথায় কথাটা বলে ফেলেই কেদার বুঝলেন কথাটা বলা তাঁর উচিত হয় নি৷ জগন্নাথ চাটুজ্জের পেটে কোনো কথা থাকে না—এর কথা ওর কাছে বলে বেড়ানোই তাঁর স্বভাব—এ অবস্থায় মেয়ের কথা তোলাই এখানে ভুল হয়েছে—

কিন্তু জগন্নাথ অন্য দিক দিয়ে গেলেন পাশ কাটিয়ে৷ বললেন, তুমি বলছ কেদার রাজা কিছু নেই, আমরা বাপ-দাদাদের মুখ থেকে শুনে আসছি চিরকাল—নেই বলে উড়িয়ে দিলেই—অবিশ্যি তোমার মেয়ে ওই নিবান্দা পুরীর মধ্যে একা থাকে, সাহস বলিহারি যাই—আমাদের বাড়ির এরা এলে দিনমানেই থাকতে পারত না—

এদের কথাবার্তার এই অংশটা সতীশ কলুর কানে গিয়েছিল, সে খদ্দেরকে তেল মেপে দিতে দিতে বললে, এখন অবেলায় ও কথাডা বন্ধ করুন বাবাঠাকুর, দরকার কি ওসব কথায়? চেরকাল শুনে আসছি, বাপ-পিতেমো পজ্জন্ত বলে গিয়েছে—গড়ের বাড়িই পড়ে আছে কতকাল অমনি হয়ে তার ঠিক-ঠিকানা নেই—আমার বয়েস এই তিন কুড়ি চার যাচ্ছে, আমি তো ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি ঠিক অমনি ধারা—কেদার দাদাঠাকুরের বয়েস আমার চেয়ে কত কম—আমি ওনাকে একটুখানি দেখেছি—

জগন্নাথ চাটুজ্জে বললেন, আরে তোমার তো মোটে চৌষট্টি সতীশ, আমার ঠাকুরদা মারা গিয়েছিলেন আমার ছেলেবেলায়, তিনি বলতেন তাঁর ছেলেবেলায় তিনিও গড়বাড়ি অমনিধারা জঙ্গল আর ইটের ঢিবি দেখে আসছেন, তাঁর মুখেও আমি উত্তর দেউলের ওকথা শুনেছি—কেদার রাজা কি জানে? ও কত ছোট আমাদের চেয়ে!

কেদার বলে উঠলেন, ছোট বড় নই দাদা, এই তিপ্পান্ন যাচ্ছে—

জগন্নাথ বললেন,—আর আমার এই খাঁটি ষাট কি একষাট্টি—তা হলে হিসেব করে দেখো কতদিন হল, আমার যখন পনেরো তখন ঠাকুরদা মারা যান, তখন তাঁর বয়েস নব্বুইয়ের কাছাকাছি—এখন হিসেব করে দেখ ঠাকুরদাদার ছেলেবেলা, সে কত দিনের কথা—কত দিনের হিসেব পেলে দেখো—

কেদার তেলের আশা ত্যাগ করে উঠে পড়লেন—কোনো উপায় নেই, কারো সামনে তিনি ধারের কথা বলতে পারবেন না—বিশেষ করে জগন্নাথ চাটুজ্জের সামনে৷

সন্ধ্যার অন্ধকার ঘন হয়েছে৷ গেঁয়োখালির হাট থেকে ফিরবার পথে গড়ের সদর দেউড়ির দিকে গেলে ঘুর হয় বলে পূর্বদিক দিয়েই ঢুকলেন কেদার—যে দিকটাতে খালে এখনও জল আছে৷ এদিকটাতেই বড় বড় ছাতিম গাছ আর ঘন বন৷ এক জায়গায় মাত্র হাঁটুজল খালে, কার্তিক মাসে কচুরিপানার নীলাভ ফুল ফুটে সমস্ত খালটা ছেয়ে ফেলেছে—এতটুকু ফাঁক নেই কোথাও—অন্ধকার সন্ধ্যাতেও শোভা যেন আরো খুলেছে৷

খাল পেরিয়ে উঠে গড়ের মধ্যে ঢুকেই ছাতিম বনের ওপারে ডান দিকে এক জায়গায় ধ্বংসস্তূপের থেকে একটু দূরে গোলাকৃতি গম্বুজের মতো ছাদওয়ালা ছোটগোছের মন্দির—এরই নাম এ গাঁয়ে উত্তর দেউল৷ কেন এ নাম তা কেউ জানে না, সবাই শুনে আসছে চিরকাল, তাই বলে৷

উত্তর দেউলের পাশ দিয়ে ছোট্ট পায়ে-চলার পথ বাদুড়নখী কাঁটার ঝোপের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে৷ ছাতিম ফুলের গন্ধের সঙ্গে মিশেছে বাঁদুড়নখী ও জংলী বনমরচে ফুলের ঘন সুবাস৷ বন বাঁ-ধারে বেশ ঘন আর অন্ধকার৷ গড়ের এখানকার দৃশ্যটি সত্যিই ভারি সুন্দর৷

কেদার একবার গম্বুজাকৃতি মন্দিরটার দিকে চাইলেন৷ আজ কেন যেন তাঁর গা ছমছম করতে লাগল৷ অন্ধকার ঘরটার মধ্যে সামান্য মৃদু প্রদীপের আলো—শরৎ এই সন্ধ্যার সময় প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছে—এটা কেদার রাজার বংশের নিয়ম, আজন্ম দেখে আসছেন তিনি, উত্তর দেউলে বাতি দিয়ে এসেছেন চিরকাল কেদারের মা, ঠাকুরমা এবং সম্ভবত প্রপিতামহী৷ কেদারের আমলেও দেওয়া হয়৷

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress