কেকরাডিহির দণ্ডীবাবা
কেবলরাম বলল, যখন-তখন গেলেই হল না মাঠান! বারবেলা তিথি নক্ষত্র বলে কথা আছে না? ঠিক সময় গেলে তবে দর্শন পাবেন।
রাঙা পিসিমা মুখ ভার করে বললেন,–যখনই বলি, তোর খালি ওই এক কথা। এদিকে রোগ বাড়তে বাড়তে মাথায় ঠেকেছে। কখন একটা কিছু সর্বনাশ হয়ে গেলেই হল। বাড়ির লোকের আর কী? আমার মরার পথ তাকিয়েই আছে সবাই। হাড় জুড়বে সব্বাইকার!
এমন কথা শুনে আর চুপ করে থাকা যায় না। বললুম,–ও কী বলছেন। পিসিমা। চলুন, আজই আপনাকে নিয়ে বেরুব।
কেবলরাম মাথা চুলকোতে-চুলকোতে মুখ বেজার করে বেরিয়ে গেল। পিসিমা আশ্বস্ত হয়ে লাঠি ঠুক ঠুক করে নিজের ঘরে গেলেন। কোণার দিকে চেয়ারে বসে ভবভূতি চুরুট টানছিলেন আর পুরোনো কাগজ পড়ছিলেন। এবার বললেন, কারও অসুখ-বিসুখ করেছে মনে হচ্ছে?
বললুম, আবার কার? রাঙা পিসিমার।
–কী অসুখ?
–বোঝা যাচ্ছে না ঠিক।
–ধুস! লক্ষণ-টক্ষণগুলো কী?
–এই ধরুন, রাত্তিরে ভালো ঘুম হয় না। যেটুকু হয়, সেটুকু নাকি ভয়ঙ্কর স্বপ্নে ভরা। কখনও দেখেন, রাক্ষস আসছে হাঁ করে তেড়ে। কখনও দেখেন, সাতটা ভালুক এসে দাঁত বের করে বেজায় ঝগড়াঝাটি করছে। এইসব আর কী!
ভবভূতি একটু হেসে বললেন,–ও কিছু না। বদহজম। হজমি ওষুধ খাইয়ে দিও।
বিরক্ত হয়ে বললুম, হজমি ওষুধ! গিয়ে দেখুন না ঘরভর্তি খালি নানারকম হজমি ওষুধের শিশি।
ভবভূতি চুরুটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন,–তোমার পিসিমার বয়স হয়েছে তো! এ বয়সে অমন হয়েই থাকে। আমার বারাসতের মাসিমার অবস্থা দেখলে তো চমকে উঠতে। বেশ বসে আছেন। হেসে কথা বলছেন। হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠতেন, কী রে বংশীবদন? চল্লি কোথায়? জিগ্যেস করলে বলতেন, ওই আমাদের ঘুঘুডাঙার বংশী। বড় ভালো ছেলে ছিল। আহা! সাপের কামড়ে এই বয়সেই বেচারা মারা পড়ল।
ভবভূতি হাসতে লাগলেন। তারপর বললেন,–তা পিসিমাকে কোথাও নিয়ে যাবে বুঝি? কোনও বড় ডাক্তারের সন্ধান পেয়েছ?
ভবভূতিবাবু লোকটিই এমন। কান করে কিছু শোনে না। বললুম,–পেয়েছি।
–কোথায় শুনি?
–কেকরাডিহিতে।
–কেকরাডিহি? সে আবার কোথায় হে?
–কেবলরামের দেশ।
ভবভূতি নাক সিঁটকে বললেন, হুঃ! নিশ্চয় বেহদ্দ পাড়াগাঁ। তোমাদের কেবলচন্দ্রটিকে দেখলেই বোঝা যায়, তার দেশটা কেমন। তা সেখানে বুঝি কোনো ওঝাটোঝার খবর পেয়েছ?
–কতকটা তাই জ্যাঠামশাই। তবে তিনি মানুষ নন।
ভবভূতি চমকে উঠে বললেন,–আঁ! মানুষ নন! তবে কী–
–পক্ষী।
পক্ষী! মানে পাখি? –ভবভূতি খিকখিক করে হাসতে লাগলেন। –পাখি করবে মানুষের চিকিৎসা! ওই ব্যাটা কেবলচন্দ্রটা বলেছে বুঝি? যেও না হে, মারা পড়বে।
গম্ভীর হয়ে বললুম, জ্যাঠামশাই। ব্যাপারটা বলি শুনুন। কেকরাডিহি গ্রামের কাছে একটা পোডড়া মাঠ আছে নাকি। সেখানে মাঝে-মাঝে একটা দাঁড়কাক আসে কোত্থেকে। মানুষের ভাষায় কথা বলে। রোগিদের রোগের কথা শুনে ওষুধ দেয়। কীভাবে খেতে হবে, তাও বলে দেয়।
ভবভূতি আরও হেসে বললেন, দাঁড়কাকটার সঙ্গে একটা ওষুধের বাকসোও থাকে বুঝি?
–না, না। কথাটা শুনুন আগে। রোগের কথা আঁতিপাতি জিগ্যেস করে দাঁড়কাকটা উড়ে যায়। চক্কর মেরে কোত্থেকে ঠোঁটে করে একটা শেকড়বাকড় নিয়ে আসে।
ভবভূতির চুরুট নিভে গিয়েছিল! ফের দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে ঠোঁটে চুরুট থাকা অবস্থায় বললেন,–গাঁজা! তারপর ধোঁয়া ছেড়ে বললেন,–গুল! শেষে বললেন,–বেঘোরে মারা পড়বে। যেও না।
তারপর যেন খাপ্পা হয়েই বেরিয়ে গেলেন।
কিন্তু দুপুরবেলা যখন গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছি সবে, দেখি ভবভূতি সেজেগুজে হন্তদন্ত হয়ে হাজির। মাথায় ফেল্ট টুপি, গায়ে বুশশার্ট, পরনে ব্রিচেসের মতো আঁটো প্যান্ট, পায়ে হাটিং বুট এবং কাঁধে কিটব্যাগ, পিঠে বন্দুক। চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে একগাল হেসে বললেন,–চলল, আমিও যাই সঙ্গে। অনেকদিন শিকার-টিকার করিনি। হাতটা সুড়সুড় করছে।
রাঙাপিসিমা খুশি হয়ে বললেন, ভবদাকে পেয়ে মনে জোর এল। পাড়াগাঁয়ে আজকাল বড্ড নাকি ডাকাতের উপদ্রব।
ভবভূতি নাদুস-নুদুস হুঁড়িওয়ালা প্রকাণ্ড মানুষ কিন্তু বেজায় বেঁটে। আমার পাশে বসে বললেন, ক্যাবলা, পেছনে যা। কেবলপেছনে পিসিমার কাছে গিয়ে বসল। তারপর ভবভূতি বললেন, হ্যাঁ রে কেবলচন্দ্র, তোদের ওখানে বাঘ-টাঘ নেই?
কেবলরাম একগাল হেসে বলল,–নেই কী, তাই বলুন ছার।
ছার শুনে রাঙাপিসিমা খিকখিক করে হেসে উঠলেন। আমার ভালোই লাগল। অনেককাল পিসিমাকে হাসতে দেখিনি। ভবভূতি বললেন,–বাঘ আছে বলছিস? কিন্তু বাঘ মারা আজকাল যে বেআইনি। বাঘ মারব না। বরং দু-চারটে পাখিটাখি মারব।
কেবলরাম ভয় পাওয়া গলায় বলল, কক্ষনো ও কাজ করবেন না ছার! দণ্ডীবাবা খেপে যাবেন। শাপ দেবেন। শাপে কী হবে জানেন ছার?
ভবভূতি গোঁফ পাকিয়ে বললেন, কী হবে শুনি!
–মাথার সব চুল উড়ে যাবে।
ভবভূতি নিজের মাথার প্রকাণ্ড টাকে হাত বুলিয়ে বললেন, ধুস! আমার তো চুলই নেই! পেছনে কয়েকগাছা আছে–্যায় তো তাও যাক। ক্ষতি কীসের?
আমাদের গাড়ি শহর ছাড়িয়ে নদীর ব্রিজে পৌঁছল। তারপর ফাঁকা রাস্তা একেবারে। সারা পথ ভবভূতি কেবলরামের সঙ্গে রসিকতা করতে করতে চললেন। পিসিমা খুব হাসলেন। তার ফলে কেকরাডিহির দণ্ডীবাবার প্রতি আমার ভক্তিটা ক্রমশ বেড়ে গেল। এই হাসিখুশিটা খুব শুভ লক্ষণ বইকী।
মাইল দশেক চলার পর কেবলরাম বলল,-এবার কাঁচা রাস্তা দাদাবাবু!
কাঁচা মানে কাঁচা। জীবনে এমন অখাদ্য রাস্তায় কখনও গাড়ি চালাইনি। ভয় হচ্ছিল, গাড়ি না বিগড়ে যায়। আরও মাইল চারেক এগিয়ে পড়ল বদিকে একটা বিশাল ডাঙাজমি। ঘুটিং কাকড় যত, তত ছোটবড় পাথরের টুকরো। বাংলা বিহারের সীমান্ত এলাকা এটা। কেবলরাম চেঁচিয়ে উঠল,–এইখানে! এইখানে! গাড়ি থামালুম।
কেবলরাম মাঠের ওধারে একটা গ্রাম দেখিয়ে বলল,–এই হল গে কেকরাডিহি, দাদাবাবু। আর এই হল গে দণ্ডীবাবার থান।
ভবভূতি বললেন,–থান? কোথায় থান?
একটা বাজপড়া ন্যাড়া তালগাছ দেখিয়ে কেবলরাম টিপ করে প্রণাম করল। রাঙাপিসিমাও তার দেখাদেখি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন। ন্যাড়া তালগাছের পেছনে একটা মস্ত বড় পাথর রয়েছে। কেবলরাম বলল,-বাবার ভোগ রাখতে হবে ওই পাথরটার ওপর। আর বাবা উড়ে এসে বসবেন ওই মুড়ো তালগাছটার মাথায়। এসে যখনই কাকা করে ডাকবেন তখন ওনাকে সব বলতে হবে।
ভবভূতি বললেন, বাবার ভোগটা কী হে কেবলচন্দ্র?
–আজ্ঞে হঁদুর। মরা হলে চলবে না। জ্যান্ত চাই। লেজে সুতো বেঁধে পাথরটার ওপর রাখতে হবে। পালাতে পারবে না। সুতোটায় এক টুকরো পাথর চাপা দিয়ে রাখলেই চলবে।
পিসিমা ব্যাগ থেকে পাঁচটা টাকা বের করে বললেন, তুই তাহলে শিগগির ইঁদুর নিয়ে আয় বাবা।
কেবলরাম টাকাটা ফতুয়ার পকেটে ঢুকিয়ে বলল, আপনি থানের সামনে গে বসুন পিসিমা। হাতজোড় করে চোখ বুজে বসে থাকবেন। ভাগ্যে দর্শন থাকলে পাবেন-শইলে পাবেন না। আমার কোনও দোষ নেই। বলেছিলুম, বারবেলা তিথি নক্ষত্র দেখে আসতে হবে।
পিসিমা বললেন,–তুই যেন শিগগির ভোগ নিয়ে আসবি। দেরি করিসনে বাবা!
কেবল যেতে-যেতে বলল, যাব আর আসব। নেতাইদার ঘরে ইঁদুর পোষা আছে না? লোকেরা হরদম কিনে এনে ভোগ দিচ্ছে বাবাকে।
সে চলে গেলে পিসিমা লাঠি ঠুকঠুক করে ন্যাড়া তালগাছটার গুঁড়ির কাছে গিয়ে করজোড়ে বসে পড়লেন। ভবভূতি চারদিকটা দেখে নিয়ে বললেন,–দেখি, কোথাও শিকার পাই-টাই নাকি।
উনি বন্দুক বাগিয়ে সামনে ছোটবড় পাথরের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। গ্রীষ্মের বিকেল। কিন্তু খোলামেলা জায়গা বলে হু হু করে বাতাস বইছে। গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম। দৃষ্টি তালগাছের মাথার দিকে। উঁহু মাথাই নেই তালগাছটার। একেবারে কবন্ধ। এখন শুধু ভাবনা, কেবলরাম ভোগ আনবার আগে বাবা এসে পড়লে পিসিমা কীভাবে ঠেকিয়ে রাখবেন।
একটু আনমনা হয়েছিলাম। হঠাৎ কানে এল ভরাট গম্ভীর গলার ডাক, গা গা গা! তাকিয়ে দেখি তালগাছের বাজপড়া ডগায় কখন এসে গেছে এক দাঁড়কাক। পেন্নায় চেহারা। আর সে কী ডাক! কা কা নয়–একেবারে গা গা গাও গাও!
পিসিমা নিশ্চয় গাও গাও শুনেই ভজন গাইতে শুরু করেছেন। ভারি মিঠে গলা তো রাঙাপিসিমার! উনি যে এত সুন্দর গান গাইতে পারেন, জানতুম না তো!
দণ্ডীবাবা মুগ্ধভাবে বসে গান শুনছেন মনে হল। কিন্তু কেবলরাম আসছে না কেন? বাবা যদি রাগ করে চলে যান? পিসিমা যেন ওঁকে ঠেকিয়ে রাখতেই ভজন লম্বা করে চলেছেন। পিসিমার বুদ্ধিসুদ্ধি আছে বলতে হয়। যখনই দম নিতে থামছেন, দণ্ডীবাবা ডেকে উঠছেন,–গা গা! গাও গাও!
এক সময় পা টিপেটিপে কেবলরাম এসে পড়ল। তার হাতে মোটা সুতোয় বাঁধা তিনটে নেংটি ইঁদুর ঝুলছে অথবা দুলছে। সুতো বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কেবলরামের ঝাঁকুনি খেয়ে ফের লম্বা হয়ে পা ছুঁড়ছে। লেজ নাচাচ্ছে।
সে ভক্তিভরে সাবধানে হামাগুড়ি দিয়ে পিসিমার কাছে ভোগ পৌঁছে দিতে গেল। এখন একটাই সমস্যা। পিসিমার ইঁদুর-আরশোলাতে বড্ড ভয়। কেবলরাম অবশ্য সেটা জানে। কিন্তু পিসিমার কাছাকাছি ভোগ রাখলে পিসিমা কতটা সামলাতে পারবেন জানি না। উত্তেজনায়-উদ্বেগে তাকিয়ে রইলুম।
ইঁদুর তিনটে দেখামাত্র পিসিমার গান থেমে গেল। তিনি ইশারায় কেবলরামকে দূরে ওগুলো রাখতে বলছেন এবং সেই সঙ্গে হাউমাউ করে দণ্ডীবাবার উদ্দেশে বলছেন, ভয়ঙ্কর, ভয়ঙ্কর স্বপ্ন বাবা! বড়-বড় রাক্ষস-খোক্ষস! হাঁ করে গিলতে আসে। আর একটা কালো কুচ্ছিত পেত্নি বাবা, সাদা থানের কাপড় পরে আমাকে ভেংচি কাটে। গাল দেয়। আমি কোনও দোষ করিনি বাবা, তবু আমাকে গালমন্দ করে। শোনো বাবা, একটা-দুটো নয়–সাত-সাতটা ভালুক এসে নাচে। আমার দম আটকে যায় বাবা!
দণ্ডীবাবা ডানা চুলকোচ্ছেন ঠোঁট দিয়ে। তারপর হঠাৎ ওপাশে ঘুরে কী যেন দেখতে থাকলেন। এবার ইঁদুর তিনটে দেখিয়ে মরিয়া হয়ে কেবলরাম চেঁচাল, ইদিকে দেখুন বাবা! ভোগ এনেছি আপনার!
কিন্তু বাবার মনে কী ছিল, হঠাৎ উড়ে চলে গেলেন। পিসিমা করুণ মুখে বললেন,–বাবা যে ভোগ ফেলে চলে গেলেন কেবলরাম। তাহলে আমার কী হবে?
কেবলরাম বলল,–কিছু ভাববেন না। ভোগ থানে ছেড়ে দিচ্ছি। বাবা যখন খুশি ফিরে এসে খাবেন। চলুন, এখন আর বসে থেকে লাভ নেই।
–আমার অসুখের ওষুধ যে দিয়ে গেলেন না?
–ওই তো ওষুধ আপনার মাথায়!
পিসিমা ঝটপট মাথায় হাত দিতেই পেয়ে গেলেন কিছু। সঙ্গে-সঙ্গে আঁচলে বাঁধলেন। কেবলরাম ইঁদুরগুলো ছেড়ে দিল পাথরের ওপর। পিসিমা গাড়ির কাছে এলে বললুম,–ওষুধটা দেখি, পিসিমা!
পিসিমা বললেন, এখন দেখতে নেই। পরে দেখিস। ও কেবল, ভবদাকে ডাক।
এই সময় ভবভূতির সাড়া পাওয়া গেল বন্দুকের আওয়াজে। নিশ্চয় পাখিটাখি মারলেন। কেবল ওঁকে ডাকতে গেল।
একটু পরে ফিরলেন দুজনে। দুজনেরই মুখ গম্ভীর। কিন্তু শিকার কই? জিগ্যেস করলে ভবভূতি শ্বাস ছেড়ে শুধু বললেন, খুঁজে পেলুম না। যা পাথর চারদিকে। যাকগে! খামোক একটা গুলি খরচ হল।
সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। আবার কাঁচা রাস্তায় নড়চড় করতে করতে গাড়িটা এগোল কষ্টেসৃষ্টে।
পিসিমা ওষুধটা দেখিয়েছিলেন। শুকনো এক টুকরো কাঠি কিংবা শেকড়, বুঝতে পারিনি। সেটা হামানদিস্তায় গুঁড়ো করে কেবলরামের নির্দেশ মতো রোজ সুচের ডগায় একবিন্দু তুলে জলের সঙ্গে খেতেন পিসিমা। আশ্চর্য ব্যাপার। আর রাক্ষস, ভাল্লুক বা পেত্নিটা এসে জ্বালাত না। দিব্যি ঘুমোতেন। সবসময় হাসিখুশি মেজাজ।
একদিন ভবভূতি এসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে যাওয়ার পর কেবলরাম বলেছিল, ভবছরের মাথাটা দেখেছেন? পেছনে গোটাকতক চুল ছিল, তাও আর নেই! হুঁ–হুঁ বাবা, শাপ বলে কথা!
জিগ্যেস করেছিলাম, কীসের শাপ? কে শাপ দিল ওঁকে?
আবার কে? দণ্ডীবাবা! কেবলরাম গলা চেপে বলেছিল। বলতে বারণ করেছিলেন দুটো টাকা দিয়ে। তাই বলিনি। কিন্তু টাকা শোধ হয়ে গেছে অ্যাদ্দিনে। এবার বলে দিই দাদাবাবু ভবছার সেদিন কেকরাডিহির দণ্ডীবাবাকে গুলি করে মেরেছেন, জানেন?
–অ্যাঁ! বলিস কী রে?
–হ্যাঁ–দাদাবাবু। গিয়ে দেখি এই কাণ্ড। দণ্ডীবাবা পড়ে রয়েছেন গুলি খেয়ে। আর ভবছার মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে আমি হায়-হায় করে উঠলুম। তখন উনি বলেন কী, পানকৌড়ি উড়ে যাচ্ছে ভেবে গুলি করেছিলুম রে! তুই দুটো টাকা নেকাকেও যেন বলিস নে।
বলেছিলুম,–চেপে যা। আমায় যা বললি, বললি। কখনও পিসিমা যেন না শোনেন।
বুদ্ধিমান কেবলরাম কথাটা পিসিমাকে বলেনি আজও। তবে একথা সত্যি যে ভবভূতির মাথায় আর একগাছিও চুল নেই। কেকরাডিহির দণ্ডীবাবার অভিশাপ ছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে?